আখের রস
অরিজিৎ পাত্র
সকাল থেকে গল্পের বইটা খুলে নিয়ে বসেছি। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা লুচি আর আলুর তরকারির গন্ধ কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে দিচ্ছে না। রোববারের সকালটা লুচি আর দুপুরে কচি পাঁঠার মাংস না হলে আমার মতো ভেতো বাঙালির ঠিক জমে না।
“রস খাবেন বাবু, আখের রস…”
রাস্তা থেকে শব্দটা শুনে কান খাড়া হয়ে উঠল আমার। নাহ্, আজ আর গল্পের বইটা পড়া হবে না দেখছি! চারপাশে যদি এমনসব খাদ্য-পানীয়ের আয়োজন থাকে তাহলে তো…
“এই আখের রস, এদিকে আসবে তো!” আমি চেয়ারে বসে হাঁক দিলাম।
রস আসার আগে খুন্তি হাতে গিন্নি এসে হাজির। “তুমি কি পাগল হলে? সকাল থেকে বাড়িতে এতকিছু হচ্ছে, তার মধ্যে তোমাকে আখের রসও খেতে হবে? ওদের গ্লাসগুলো দেখেছ? মাছি ভনভন করছে!”
“আমি গ্লাসগুলো ভালো করে ধুয়ে দিব।”
তাকিয়ে দেখি, একটা দশ-বারো বছরের বাচ্চা দাঁড়িয়ে।
“তুই কে রে?”
“আজ্ঞে, আখের রস বিক্রি করছি।”
“তুই? কেন, বাড়িতে বড়ো কেউ নেই?” অবাক হলাম।
“আছে তো। রোজ বাবাই বিক্রি করে। কাল থেকে বাবার শরীরটা ভালো নেই। তাই…”
“স্কুল যাস না তুই?”
“হ্যাঁ, যাই। কেলাস সিক্সে পড়ি আমি।”
“সকাল থেকে পেটে কিছু পড়েছে?” গিন্নি নরম গলায় জিজ্ঞেস করল।
উত্তরে কিছু না বলে মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল ছেলেটি। তাড়াতাড়ি রান্নাঘরে গিয়ে একটা প্লেটে করে চারটে লুচি আর তরকারি এনে ছেলেটার হাতে দিয়ে গিন্নি বলল, “চট করে এগুলো খেয়ে নিয়ে আমাদের জন্য ভালো করে আখের রস বানা তো দেখি।”
আমি বললাম, “তোমার না সুগার!”
গিন্নি হেসে উত্তর দিল, “এক গ্লাস খেলে কিচ্ছু হবে না।”
অলঙ্করণঃ অংশুমান
অরিজিৎ, তোমার অণুগল্প পড়লাম। বেশ সুন্দর লিখেছ ! ডায়াবেটিস থাকা সত্ত্বেও তোমার স্ত্রী আরো এক গ্লাস আখের রস বাচ্চা ছেলেটিকে দিতে বলল যে কার, তা মনছুঁয়ে গেল! খুবই মানবিক অণুগল্প!
LikeLike