আনন্দের পাখি
বিভাবসু দে
হাসান মিঁয়া বড়ো পাখিয়াল। পাখি ওড়ায়। তবে বনের পাখি নয়, ওরা হাসানের পাখি। হাসান কাগজের পাখি গড়ে তার গায়ে রং ছোঁয়ায়, আর তারা জ্যান্ত হয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে যায় আকাশে। হরেকরকম পাখি। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, গোলাপি, সাতরঙা। যে পাখি আল্লা-মিঁয়া বানাননি, সেই পাখি হাসান মিয়াঁ বানায়।
গোধূলির শেষ আলো যখন মাখো মাখো হয়ে আসে সন্ধের অন্ধকারে, হাসান মিয়াঁ গিয়ে দাঁড়ায় তেপান্তরের মাঠে। তার ঝোলাভরা পাখি। রংবেরঙের পাখি। এক এক করে ওই দূর দিগন্তের দিকে উড়ে যায় তারা। হাসান মিয়াঁ দেখে—মেঘের খাঁজে খাঁজে যেমন ছড়িয়ে পড়ে অস্ত-সূর্যের সোনালি কণা, তেমনি একটুকরো হাসি ঝিলিক দিয়ে ওঠে ওর ঠোঁটে। পাখি ওড়ে। হাসান পাখিয়ালের পাখি।
“কী পান এসব করে?”
হাসান মিয়াঁ হেসে বলে, “আনন্দ।”
আস্তে আস্তে নাম ছড়িয়ে পড়ে হাসান পাখিয়ালের। লোকে বলে, ‘আল্লার পরে নবী, আর নবীর পরে হাসান।’
প্রথম যেদিন হাসানের পাখি ওড়ানো দেখে শেখ সাহেব দুটো টাকা দিয়েছিলেন, হাসানের হাসিটা আরেকটু চওড়া হয়ে উঠেছিল। বুকের ভেতর গুম গুম করে বেজে উঠেছিল জমাট বাঁধা আনন্দ। আরও বেশি করে পাখি উড়িয়েছিল হাসান পাখিয়াল।
এখন তেপান্তরের মাঠে রোজ বিকেলে ভিড় জমে। গোল করে হাসানকে ঘিরে ধরে গাঁয়ের মানুষ। হাসান পাখি ওড়ায়। শেখ সাহেব বলেন, “মিয়াঁ, ওই লালচে রঙের পাখিটা একবার ওড়ান তো দেখি।”
হাসান ওড়ায়।
“ইনশাল্লাহ্! দারুণ!” ঝনাৎ করে শেখ সাহেব দশটা টাকা নজরানা দেন।
কাজী সাহেব বলেন, “মিয়াঁ, এবার ওই সাতরঙাটা করেন।”
হাসান সাতরঙা পাখি ওড়ায়। হাততালির গর্জন ওঠে। টাকার ঝনঝন ওঠে। হাসান মিয়াঁ পাখি ওড়ায়।
“কী পান এসব করে?”
হাসান মিয়াঁ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “আনন্দ।”
অলঙ্করণঃ অংশুমান