ওয়াইল্ড কার্ড এন্ট্রি
সহেলী রায়
দামাল এখানে এসেছে প্রায় ঘণ্টা তিনেক হল। আসার ইচ্ছে তেমন ছিল না। ওই ষণ্ডামার্কা আঙ্কেল বলল, ‘এখেনে এলে একটু আরাম পাবি।’ যা যন্ত্রণা চলছে দামালের! আরামের লোভে লোকটার কথা ফেলতে পারল না। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, দামাল এখন স্বর্গরাজ্যে। স্বয়ং যমরাজের ডাকেই এসেছে সে। পরীক্ষার পর ক’দিন একটু খেলাধূলায় কাটছিল, তা সহ্য হল না কারও। ধুম জ্বরে গত সাতদিন ধরে হসপিটাল হয়ে এখন এখানে। তারও দিন পাঁচেক আগে স্কুলের রেজাল্টে সায়েন্স, ম্যাথে গোল খেয়ে প্রিন্সিপাল স্যর যখন ‘নট প্রোমোটেড’ লিখে সই দিচ্ছিলেন, দামালের বাবা কোনওক্রমে কাকুতিমিনতির জোরে বাঁচিয়ে নিলেন। দামালও বচন দিল, এখন থেকে খেলা কম, পড়া বেশি। যদিও পরদিন থেকেই আবার খেলা ধর্ম, খেলা স্বর্গ।
“এ কী যমরাজ, এ কাকে আনলেন! আক্কেল কি কখনওই হবে না? কাঁচা শরীর নিয়ে টানাটানি…”
যম-আঙ্কেলের বৌ ঊর্মিলা-আন্টি একদম দামালের মায়ের মতো। আঙ্কেলও বাবা যেমন আমতা আমতা করে মায়ের সামনে, তেমনই করছে। “কী করি দেবী? খুব তাড়ায় ছিলাম। গোটা স্বর্গরাজ্য জুড়ে এত বড়ো রিয়্যালিটি শো, আমি জাজ, অনুষ্ঠান শুরুর আগে পৌঁছানো জরুরি।”
এখানে এসেই পোস্টার দেখেছে দামাল। অভিনব শো। লোক হাসানো, গান, নাচ বা স্টান্ট দেখানো নয়। মর্ত্যে যার যাতে অরুচি, এখানে তাকে সেটাই করতে হবে। পুরস্কার, মর্ত্যে রি-এন্ট্রির ওয়াইল্ড কার্ড।
“এই ছোঁড়া পার্টিসিপেট করবে।”
যদিও অডিশন কমপ্লিট, তাও ঊর্মিলার কথা ফেলা দুঃসাহস।
***
অঙ্কের কোশ্চেন পেপার। হুবহু পরীক্ষায় যেটা দিয়েছিল। সেসময় দামালের মাথাব্যথা ছিল না। তবে আজ টিউশন স্যরের স্টেপগুলো মনে করতে লাগল।
***
“নাউ পেশেন্ট ইস আউট অব ডেঞ্জার।” ডক্টর রায় স্বস্তি দিলেন দামালের পরিজনদের।
ঘন্টা পাঁচেক আগে হঠাৎ বেগতিক দেখায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছিল তাকে। দামালের বন্ধ চোখে তখনও অঙ্ক খাতার দামালপনা।