অণুগল্প চাপ কৌশিক ভট্টাচার্য বসন্ত ২০২০

       জয়ঢাকের সমস্ত  অণুগল্প

চাপ
কৌশিক ভট্টাচার্য

ঘুম পাচ্ছে প্রচণ্ড অথচ ঘুমোনো চলবে না। সামনের সারিতে চিত্র সাংবাদিক ভোঁদড়টা ক্যামেরা বাগিয়ে বসে। ঘুম তো দূরের কথা, একটা হাই তুললেও সে ছবি চলে আসবে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায়। হার্মাদ হায়নাগুলো ঘাপটি মেরে বসে আছে এরকম সুযোগের অপেক্ষায়। জেগে থাকলে আবার অন্য সমস্যা—দেহজল নিষ্কাশনের ইচ্ছেটা তখন প্রবল থেকে প্রবলতর হতে থাকে। বয়স বাড়ার ফল এসব।

প্রস্ট্রেটের সমস্যাটা সিংহমশাইকে আজকাল বেশ ভোগাচ্ছে। ফল, তেষ্টায় ছাতি ফাটলেও সভাসমিতিতে জল খাওয়া বন্ধ।

অথচ অধ্যাপক গাধাটা বকেই চলেছে, বকেই চলেছে। একবার মাইক হাতে পেলে এই অধ্যাপক ব্যাটারা দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যায়। এভারেস্টের চুড়োর থেকে শুরু করে অতলান্তিকের গভীর পর্যন্ত এদের যাতায়াত।

এধরনের সাহিত্যসভায় সিংহমশাই সচরাচর সভাপতি হতে রাজি হন না, কিন্তু উপায় নেই। আজ তাঁর বড়ো শালী সাহিত্যশ্রী সম্মান পাচ্ছে। বৌয়ের ফতোয়া মাথার উপর। বাপের বাড়ির কোনও অবহেলা সিংহী সহ্য করবে না। সেই যে সেবার সিংহের খুড়তুতো পিসির ছেলের বিয়েতে পাঁচশো মাইল দূরের গণ্ডগ্রামে যাওয়া হল, তাতে সময় নষ্ট হয় না?

বড়ো শালীর সাহিত্যশ্রী সম্মানের মূলেও স্বয়ং সিংহী। গতবছর তাঁর বাড়ি বেড়াতে এসে বড়ো শালী এইসব সাহিত্য সম্মান পাওয়া-টাওয়া নিয়ে কিছু উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন—ঐ সুযোগসন্ধানী দাঁড়কাকটাকে প্রচুর ধনরত্ন সমেত বন-রত্ন পুরস্কার দেবার কোনও মানে হয়? এতদিন ধরে এত কবিতা লেখার পরও কেন যে তাঁর এত ফাটা কপাল?

ছোটো বোনের দুঃখে খুবই কাতর হয়েছিলেন সিংহী। আহ্লাদী গলায় সিংহমশাইকে একটি কটাক্ষ হেনে বলেছিলেন, “তা দাও না ওকে একটা প্রাইজ-টাইজ পাইয়ে!”

অভিজ্ঞ সিংহমশাই বুঝলেন, এ কটাক্ষের আদেশ অমান্য করলে কপালে অঢেল দুঃখ। তখন কে জানত কটাক্ষের আদেশ মানলেও এত দুঃখ আসবে জীবনে!

গাধাটা এখনও সুররিয়ালিজমের উৎস নিয়ে বকছে, মনে হয় না পরশুর আগে থামার ইচ্ছে আছে। সিংহমশাই তাঁর সেক্রেটারি শেয়ালের দিকে তাকালেন। ইঙ্গিতটা লুফে নিয়ে চেয়ার থেকে উঠে গাধার কানে ফিসফিস করে কী যেন বলল শেয়াল। গাধা মাথা নাড়ল। ফিরে এসে শেয়াল সিংহমশাইকে কানে কানে বলল, “গাধার জন্য আর্জেন্টিনার পম্পাসের ঘাসের চপ ভাজা হচ্ছে টিফিন হিসেবে। ওকে মনে করিয়ে দিলাম যে গরম গরম খেতে হবে। দেখবেন, এবার থামবে।”

ঠিক তাই। মধুর হেসে অধ্যাপক গাধা এবার বললেন, “আরও অনেককিছু বলার ছিল, কিন্তু সব তো আর একদিনে হয় না।”

সভা শেষ হল। টানা তিন ঘণ্টা তলপেটের চাপ সহ্য করা সিংহমশাই উপোসী জাগুয়ারের মতন একটি দৌড় দিতে যাবেন ওয়াশ-রুমের উদ্দেশ্যে, এমন সময়…

“হর্যক্ষদা!”

মেজ শালী। হাতে একগুচ্ছ কাগজ। “শুধু মেজদি নয়, আমিও কিন্তু কবিতা-টবিতা লিখি।”

“অ্যাঁ!”

“সে কি? জানেন না? শোনাব তো আপনাকে। বড়দির সাথে কথা হয়ে গেছে। আজ রাতে আপনার বাড়িতে হানা দিচ্ছি আমরা।”

দীর্ঘশ্বাস ফেললেন সিংহমশাই। ফের সেই দিন আসছে। জল খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে আবার তিন ঘণ্টা।

অলঙ্করণঃ অংশুমান

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s