নতুন সকাল
বিভাবসু দে
যতবার ওই ক্যানভাসটার দিকে তাকাচ্ছে, একটা তীব্র হতাশা, একটা প্রচণ্ড না-পারার যন্ত্রণায় যেন হু হু করে উঠছে ওর বুকের ভেতরটা।
এটা ছবি ? এই ছবি এঁকে কেউ কোনওদিন শিল্পী হতে পারে ! ইতালির সেই মহান স্রষ্টা, কোনওদিন ওঁর মতো হতে পারবে সে?
ছেলেটির বুক ঠেলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস বেরিয়ে এল। সোফায় এলিয়ে পড়ল সে। ভারী হয়ে আসছে চোখদুটো। একটু একটু করে আবছা হয়ে যাচ্ছে ঘরের হলদেটে আলোটা। ঝাপসা হয়ে আসছে ক্যানভাসটাও।
হঠাৎ কীসের একটা শব্দে হকচকিয়ে উঠল সে। এদিক-ওদিক চাইতেই চোখে পড়ল দরজার পাশে দাঁড়ানো ওই ছায়ামূর্তিটা।
“কে ? কে ওখানে ?”
একটা ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট গলা ভেসে এল, “নিজের স্বপ্নের নায়ককে চিনতে পারছ না?”
“মানে ? কে তুমি ?” গলাটা একটু যেন কেঁপে উঠল ছেলেটির।
এবার ছায়ামূর্তিটা নড়ে উঠল। আবছা অন্ধকার ঠেলে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগল হলদে আলোর সীমানায়। তীব্র বিস্ময়ে যেন চোখদুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল ছেলেটির। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ! এও কি সম্ভব ?
“তুমি আমার মতো ছবি আঁকতে চাও, তাই না ?” সাদা দাড়ির আড়ালে যেন একচিলতে হাসি কেঁপে উঠল।
“হ্যাঁ। আমি বারবার চেষ্টা করি, কিন্তু কিছুতেই আপনাকে ছুঁতে পারি না। আমার তুলি বারবার ব্যর্থ হয়েছে লিওনার্দো।”
বৃদ্ধের ঠোঁটে তখনও সেই হালকা হাসির রেখা। “আমার সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ মোনালিসা। কিন্তু সে মোনালিসা না হয়ে লিসা ডেল জিওকোন্দোর একটা পোর্ট্রেটই হতে পারত। ওকে মোনালিসা বানিয়েছিলাম আমি, আমার কল্পনার রঙে গড়েছিলাম ওকে। তুমিও হয়তো হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে একটা দ্বিতীয় লিওনার্দো হয়ে উঠতে পারো, কিন্তু কী লাভ তাতে ?”
“আপনার মতো যে আর কেউ নেই।”
“কেউ কারোর মতো হয় না বন্ধু, সবাইকে নিজের মতো করেই নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। খুঁজে নিতে হয় নিজের মোনালিসাকে।”
চারপাশটা হঠাৎ তীব্র আলোয় ভরে উঠতে লাগল। ক্ষীণ হয়ে আসতে লাগল লিওনার্দোর শেষ শব্দগুলো।
ঘুমজড়ানো চোখে উঠে বসল ছেলেটি। বাইরে তখন নতুন দিনের সোনালী রোদ। আর তারই একটুকরো এসে পড়েছে ওর ক্যানভাসটার গায়ে, ঠিক যেখানটায় ছোট্ট করে ওর নামটা লেখা; পাবলো পিকাসো।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ