অণুগল্প পথিক নন্দিনী দাস চট্টোপাধ্যায় বসন্ত ২০২০

       জয়ঢাকের সমস্ত  অণুগল্প

পথিক
নন্দিনী দাস চট্টোপাধ্যায়

ক্লান্তি গ্রাস করেছে ছোট্ট যাত্রীদলকে। এই মুহূর্তে জনশূন্য পথে একটানা ঝিঁঝিঁর ডাক আর কয়েক জোড়া শ্রান্ত পায়ের শব্দ ছাড়া আর বিশেষ কোনও শব্দ নেই। মাঝেমধ্যে দুয়েকটা রাতচরা পাখির ডাক ভেসে আসছে। যে ক’জন পথিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সবাই বোধ হয় এতক্ষণে নিরাপদ আশ্রয়ে। অবশ্য তারা সবাইই ফিরতি পথের। নিকষ কালো পাহাড়ের গায়ে কয়েকটা অন্ধকার চলমান বিন্দু আর জোনাকির মতো আলোর ফোঁটা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি সর্পিল বাঁককে পথের শেষ বলে মনে হচ্ছে, কিন্তু তারা প্রত্যেকেই যাত্রীদলকে হতাশ করছে। পা আর চলে না।

মোবাইলের আলো ক্রমশ কমছে। সঙ্গের টর্চ কখন পকেট থেকে খাদে ঝাঁপ দিয়েছে সেটা মালুম হল প্রয়োজনের সময়। ঘণ্টা তিনেক আগে শেষ যার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়েছিল, তার কাছে খবর পাওয়া গিয়েছিল—অউর থোড়া সা। তারপর থেকে ক্রমশ চড়াই।

একটা ঝোরার শব্দ কানে আসছে। আলো ফেলে তার অবয়বটা দেখা গেল। গায়ে-গতরে নেহাত ছোটো নয়। চওড়ায় অন্তত ফুট দশেক। এলোমেলো পাথরের একটা পথের রেখা আছে, কিন্তু সেখানেও পায়ের পাতা ডোবা জল। এই ম্রিয়মাণ মোবাইলের আলোয় পেরোতে হবে! দলের নেতার কপালে চিন্তার কুঞ্চন। যদিও অন্ধকারে তা কারোর নজরে এল না। এমন সময় উপরদিক থেকে একটা তীব্র শিসের শব্দ ভেসে এল। আর তার পিছনেই একটা আলোর বৃত্ত, দুলতে দুলতে এগিয়ে আসছে। হতাশ, ক্লান্ত দলটার মনেও আশার দুলুনি।

এতক্ষণে শিসের মালিককেও দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ি লোকটি স্বয়ং ঈশ্বর, নাকি তাঁর দূত! নতুন উদ্যমের ঢেউ জাগল নুয়ে পড়া দলটায়। ভরসার হাতে হাত রেখে দলটা নির্বিঘ্নে পেরোল পাহাড়ি ঝোরা। ধীরে ধীরে একটা চলমান কালো রেখা পাহাড়ের বাঁক পেরিয়ে উঠতে লাগল তারাদের ভিড়ে ভিড়াক্কার আকাশের নিচে, যেখানে একটা টিমটিমে আলো জ্বলছে।

অলঙ্করণঃ অংশুমান

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s