প্রোফেশনাল প্রাইড
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
লোকটা সবে ঘুম থেকে উঠে এসেছে। একটা চা নিল। দুটো লেড়ো বিস্কুট। অবিনাশবাবুর গা ঘেঁষেই বসল এসে। চোখদুটো ঘুমে ঢুলছে যেন। তারপর চুপচাপ চায়ে বড়ো বড়ো চুমুক মেরে দু’মিনিটের মধ্যে উঠে গেল।
অবিনাশবাবু চুপচাপ চা খেতে খেতে তাকে দেখলেন। দিন তিনেক ধরে এখানে এসে বসছেন। লাভ হচ্ছে না। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে একদিন না একদিন তো পাবেন! এখানেই পাবেন। আজকেই হয়তো…
চায়ের দাম দিতে গিয়ে অবিনাশবাবু বুঝলেন, সন্ধান শেষ হয়েছে। তারপর পাঞ্জাবির চোরাপকেট থেকে পাঁচটা টাকা বের করে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে পড়লেন।
***
সন্ধেবেলা লোকটা ফের এল। মুখটা বেশ হাসি হাসি। বোঝা যাচ্ছে দিনটা ভালো গেছে। সকালের সেই করুণ ঘুম ঘুম ভাবটা আর নেই। একটা বিরিয়ানি আর চাপ অর্ডার করে বসে পড়ল টেবিলে।
অবিনাশবাবু এবার দূরের টেবিলটা থেকে উঠে এসে লোকটার সামনে বসলেন। তারপর লোকটার সামনের থালা থেকে মাংসের একটা বড়ো টুকরো তুলে নিয়ে হাওয়ায় ছুড়ে দিলেন। হাঁ হাঁ করে উঠেছিল লোকটা। অবিনাশবাবু মুচকি হাসলেন। তারপর হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়া মাংসের টুকরোটা লোকটার পকেটে হাত ঢুকিয়ে বের করে এনে তার থালায় রেখে দিলেন ফের।
সবাই দেখছিল এদিকে। দুয়েকটা হাততালিও পড়ল। অবিনাশবাবু মিষ্টি হেসে উঠে পড়লেন। তাঁর খাওয়া আগেই হয়ে গেছে। দামও মিটিয়ে দিয়েছেন।
***
পথে বেরিয়ে সদ্য জোগাড় হওয়া মোটা মানিব্যাগটা খুলে দেখলেন অবিনাশবাবু। ছ’টা দু’হাজারি নোট আর কিছু খুচরো। ব্যাটা আজ ভালো দাঁও মেরেছিল বটে।
দিন চারেক আগে এইখানেই তাঁর পকেট মেরে একশোটা টাকা হাওয়া করে দিয়েছিল লোকটা। সাফ হাত। অবিনাশবাবু-হেন পেশাদার ম্যাজিশিয়ানও ধরতে পারেননি কে কখন কাজটা সারল। সেই থেকে এই দোকানে ওঁত পেতে থেকে থেকে…
***
সেদিন একশো টাকা আর আজ মেরেছে টোপ দেয়া দশ টাকাটা। টোটাল ইনভেস্টমেন্ট একশো দশ। চারদিনের চা-খরচ তিরিশ টাকা। একুনে একশো চল্লিশ। খুচরোগুলো থেকে টাকাটা সরিয়ে রাখলেন অবিনাশবাবু। কাল আরও চল্লিশ টাকা নেবেন। পোস্টাল চার্জ। মানিব্যাগে একটা ভিজিটিং কার্ড আছে। বাকি টাকাটা সুদ্ধু ব্যাগটা কাল ডাকে ফেলে দিলেই হবে। লোকটা আশা করি কিছু মনে করবে না। সার্ভিস চার্জ বলে তো একটা কথা আছে, তাই না!
বিখ্যাত ম্যাজিশিয়ান প্রোফেসর অবিনাশ মজুমদার খুশি খুশি মনে বাড়ির পথ ধরলেন। প্রোফেশনাল প্রাইড বলে কথা! তাঁর পকেট মেরে একটা ছিঁচকে চোর পার পাবে সেটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
অলঙ্করণঃ অংশুমান
দেবজ্যোতি, আপনার অণুগল্প পড়লাম। একেবারে অভিনব প্লট! অসাধারণ উপস্থাপন! এমন একটা অণুগল্প উপহার দেওয়ার জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
LikeLike