বন্ধু
নন্দিনী দাস চট্টোপাধ্যায়
কাউন্সেলিংয়ে এসেই কলেজটাকে ভারি ভালো লেগে গেলো শাওনের। পরিচ্ছন্ন কলেজটার গেটের সামনেই একটা ঝাঁকড়া বকুলগাছ, ঠিক ওর প্রি-প্রাইমারি স্কুলটার সামনে যেমন ছিল। রোজ স্কুল বাসে ওঠার আগে ছোট্ট হাত ভর্তি করে ফুল কুড়িয়ে আনত ও। তারপর কখন যে বকুলগাছটা ওর বন্ধু হয়ে উঠল কে জানে। তারপর বড়ো স্কুল, আরও বড়ো স্কুল, ক্রমশ ছোটোবেলার অনেক বন্ধুর মতো বকুলগাছও চলে গেল পিছনের সারিতে।
কিন্তু কলেজের এই বকুলগাছটার সঙ্গে শাওনের বন্ধুত্ব হল না শেষপর্যন্ত। সময় কোথায়? সকালে কলেজে ঢোকার সময় মাঝে মাঝে নজরে পড়ে গাছের নিচে পাশের স্কুলের মায়েদের জটলা। আর ফেরার সময় তো দৌড়, কতক্ষণে বাস ধরবে। ফিরেই টিউশন।
সেদিন খুব একটা তাড়া ছিল না। ধীরে সুস্থে কলেজ থেকে বেরোচ্ছিল শাওন। এবারের রেজাল্টটা ভালো হয়নি। সামনের সেমিস্টারে মেক-আপ যদি না করতে পারে? স্কুলে বরাবর রেজাল্টের দিক থেকে প্রথম দিকেই থাকত শাওন। তবে কি সাবজেক্ট বাছার সময় কোনও ভুল হয়ে গেছে? অনেক চিন্তা ওর তরুণ মাথাটাকে তোলপাড় করে। কত রাত ভালো করে ঘুমোতে পারে না ও।
সাতপাঁচ ভাবনায় একটু অন্যমনস্কই ছিল শাওন। এমন সময় পায়ের ঠিক সামনে একটা বকুল ফুল ঝরে পড়ল। শাওন ফুলটা তুলে নিল ঠিক সেই ছোটোবেলার মতো। ফুলটা হাতে নিয়ে গাছের দিকে তাকাতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। গাছটা ঠিক সে-ই ছোটোবেলার গাছটার মতো, সেইরকমই সবুজ পাতার আড়ালে তারার মতো ফুলগুলো তাকে হাতছানি দিচ্ছে।
অলঙ্করণঃ অংশুমান