বুদ্ধিমান
শাশ্বত কর
দাদানদা খুব রেগেছে! দাদানদা রাগলে চেঁচায় না! ভুরু দুটোয় ভঙ্গিল পর্বতের ওঠা নামা তৈরি হয়,গলা বসে যায়! ধরা গলায় ‘আঃ! ধুৎ!’ এই সব বলতে থাকেন। আজ সেই সঙ্গে বার বার ‘মধুসূদন! মধুসূদন!’ বলছেন। মধুসূদন হলো মদনের দাদানদা ভার্শান। মানে কারও উপর বেজায় চটেছেন!
কিন্তু কার উপর? আমি কি কিছু করলাম? পাঁচিলের উপর কাঠবেড়ালিটা যখন ভাত খেয়ে হাত জড়ো করে কিচকিচাচ্ছিল তখন একটা, আর ছাত থেকে খড়ির ঘরের টালিতে একটা ঢ্যালা ফেলা ছাড়া আর কিছু তো কাল বিকেল থেকে করিনি! না! না! আরেকটা তো ঘটিয়েছি! চশমার বাক্সে চারটে কেন্নো ভরে রেখেছি। ও বাবা! বাক্সটা দাদানদার না কি!
দাদুতুতু ফিরছে। সাইকেলের দু’ হ্যান্ডেলে তিনটে ব্যাগ থেকে পেঁয়াজকলি আর ডাঁটা উঁকি দিচ্ছে। ঘরে যাবার সময় দাদানদার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বলল, ‘ক্যারে দাদা! তর আজ যে বড় ব্যতিক্রম দেখি!’ বলেই আমার দিকে তাকিয়ে দু’বার ভুরু নাচাল। মানে- হয়েছেটা কী? আমিও ঠোঁট ভেটকে দিলাম। মানে- জানি না। দাদুতুতু মাথাটা নেড়ে দিয়ে চলে গেল।
আম্মা রান্নায় এত ব্যস্ত যে কিছু জিজ্ঞেসের জো নেই! সোনামাও আম্মার সাথে। বদ্দিদি আর ছোদ্দিদি উপরে চা খাচ্ছে আর টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনছে। কাল থেকে তো কেউ আসেও নি! তা হলে হলো টা কী?
নাঃ! এ ভাবে হয় না। দু ঘন্টা হলো। আর পারা যায় না। জিজ্ঞেস করতে যাব এমন সময় আম্মা মুখ লাল করে ঘরে ঢুকল। এই রে! প্রেশার চড়েছে।
‘দইটা খাওনি? কখন দিয়ে গেছি! পেঁপেটাও খাওনি! সকালেও খেলে না! হয়েছেটা কী?’
‘কিছু না’।
‘কিছু না তো অমন মুখ করে ঘরে পায়চারি করছ কেন? তোমায় চিনি না আমি? চল্লিশ বছর ধরে দেখছি না!’
দাদানদা চুপ। আরো গম্ভীর! হাতে ফোনটা তুলে নিয়েছে। আম্মাও ভিসুভিয়াস! ‘ব্যস! হাতে সেই খন্তাটা উঠেই এলো! ওইটাই সব নষ্টের মূল। কত পড়াশুনো করতে! এই যন্ত্র সব শেষ করেছে। যখন দেখ চশমা এঁটে মোবাইল খুঁটছে! এই বয়সে এসব করে?’
দাদানদাও মাথাটাথা নেড়ে বলে উঠল, ‘ঠিক বলেছ! এটা যন্ত্র নয়, যন্ত্রণা!’
‘কেন’
‘এখান থেকে আমাদের নতুন এইচ.এম. সুমিতকে কাল মেসেজ করেছিলাম, ‘সুমিত কাল মানসকে পাঠিয়ে দিলে ভালো হত। রেয়াজি খাসি হবে। কাল আসা চাইই।‘
‘কই,মানস তো আসেনি!’
‘আসবে কেন? সুমিত যা চটেছে! ফোনই ধরছিলই না! তিনবারের বার ধরে বলল ‘যা তা বলবেন! শুনতে হবে?’
‘সে কী!’
‘আমিও তো হাঁ! শেষে আমার মেসেজটা আমাকেই ফরোয়ার্ড করেছে। দেখি তাতে লেখা, “সাবমিট ম্যান অ্যাস প্যাটি ফাইল হ্যালো হুট। রিটেইন খাকি হোম। অল অ্যাস এ চেইন!”
‘এর মানে কি?’
এর মানে কেউ না বুঝুক আমি বুঝেছি। কাল সন্ধ্যেবেলা দাদানদার নতুন ফোনে গেম খেলার সময় প্রেডিকটিভ ডিকশনারি অন করেছিলাম। তাতেই যা ঘটার ঘটেছে।
কাজেই পালাই বাবা!
অলঙ্করণঃ শিমুল
বাঃ বেশ দুষ্টুমিতে ভরা বিচ্ছু গল্প!
LikeLike
খুব স্বাভাবিক রোজকার অভিজ্ঞতা দিয়ে বানানো দুষ্টুমির গল্প। খুব মজা পেলাম, শাশ্বত।
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ কিশোরবাবু আর অনির্বাণদা!
LikeLike