ব্যাকটেরিয়া
অরিন্দম দেবনাথ
“হ্যাঁ রে, আজ তোদের ‘প্লাস্টিক বর্জন করুন’ পদযাত্রা কেমন হল?”
স্নান করে খালি গায়ে হাফপ্যান্ট পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমার কথা শুনে খানিক থম মেরে থেকে, কোনও উত্তর না দিয়ে ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে বারান্দায় গিয়ে চুপ করে মেঝের ওপর হাঁটুতে মাথা গুঁজে বসে রইল টুকু।
“কী হল, কিছু বলছিস না যে? শরীর খারাপ লাগছে? অনেক পথ হেঁটেছিস বুঝি?”
ছেলের মুখে কোনও কথা নেই। দুই হাঁটুর মাঝে লুকিয়ে থাকা মাথা কেঁপে কেঁপে উঠছে। খবরের কাগজটা নামিয়ে রেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে মাথায় হাত রাখতে মাথা তুলে আমার দিকে চাইল টুকু। দু’চোখ বেয়ে নেমে আসছে জল।
“কারও সঙ্গে ঝগড়া-টগরা করে এসেছিস নাকি?”
“আমি কারও সঙ্গে ঝগড়া করি না।”
“সে তো আমি জানি। তাহলে কাঁদছিস কেন?”
“বাবা, একটা কথা বলব?”
“বল।”
“তুমি আমাকে আর কোথাও পড়াশুনা করে যেতে বলবে না।”
“কেন?”
“পড়াশুনা করে গেছিলাম বলেই আজকে বন্ধুদের সামনে আমাকে অপদস্থ হতে হল।”
“বাহ্, বেশ ভালো বাংলা শিখছিস তো! অপদস্থ! তোর বয়সে এই শব্দের মানে আমি জানতাম না। বই না পড়লে এই শব্দ জানতিস?”
খানিক প্রশংসা শুনতে টুকু নিজেকে ফিরে পেলে যেন। “জানো বাবা, ‘একপর্ণিকা’ পত্রিকায় অমিতাভ আঙ্কেলের প্লাস্টিক নিয়ে লেখাটা পড়া ছিল। আজকে পদযাত্রায় গিয়ে দেখি প্লাস্টিকের, মানে ওই কী যেন বলে, ফ্লেক্সের ওপর লেখা ‘প্লাস্টিক বর্জন করুন’। ব্যানারটা দেখে আমি আমাদের গেম-টিচারকে বললাম, স্যার, ‘প্লাস্টিক বর্জন করুন’ না লিখে ‘প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে আনুন’ লিখলে ভালো হত না? কারণ, এই লেখাটা তো লেখা হয়েছে প্লাস্টিকের ওপরেই। এই যে আপনি পিঠে ব্যাগটা নিয়ে আছেন সেটা তো সিনথেটিক। মানে প্লাস্টিকে তৈরি। আমরা সবাই যে জুতোগুলো পরে আছি, তার সোলগুলো প্লাস্টিকের। জামার বোতামগুলো প্লাস্টিকের…”
“ঠিকই তো বলেছিস। প্লাস্টিক বর্জন তো অসম্ভব। তারপর কী হল?”
“স্যার আমাকে কান মলে দিয়ে বললেন, ‘তোকে জ্যাঠামি করতে হবে না। বেশি বুঝে গেছে। চুপ করে লাইনে গিয়ে দাঁড়া।’”
“তাহলে তুই কী করবি? পাঠ্যবইয়ের বাইরে আর বই পড়বি না?”
ফিক করে হেসে ফেলে টুকু বলল, “মোটেই না। আমি আরও বেশি করে বই পড়ব। স্যারকে এর জবাব আমি দিয়েই ছাড়ব।”
“কীরকম?”
“আমি এমন একটা জিনিস আবিষ্কার করব যে প্লাস্টিককেও ধ্বংস করে দেবে। সেটা কী জানো? ব্যাকটেরিয়া।”
অলঙ্করণঃ অংশুমান
ভীষণ ভালো লাগল। খুব জরুরি ভাবনা।
LikeLike