অণুগল্প ভূতনাথবাবুর ডায়েরি-২ কৌশিক ভট্টাচার্য শীত ২০১৯

       জয়ঢাকের সমস্ত  অণুগল্প

ভূতনাথবাবুর ডায়েরি: ২

কৌশিক ভট্টাচার্য

১৬ মার্চ, ২০১৯

ইস্কুলে শক্তিবাবু চোখ পাকিয়ে বলতেন, “পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্ত কাজ কী জানিস?”

এই এক প্রশ্ন এর আগে আমরা অন্তত পঞ্চাশবার শুনেছি। তবুও শক্তিবাবুর বিখ্যাত গাঁট্টার ভয়ে আমরা ভালো মানুষের মতন মুখ করে বলতাম, “কী স্যার?”

শক্তিবাবু তখন আমাদের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলতেন, “মানুষ চেনা!”

আজ কয়েক মাস হল গলায় দড়ি দিয়ে ভূত হবার পর বুঝতে পারছি কথাটা কত মিথ্যে। পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্ত কাজ হল ভূত চেনা।

২৩ মার্চ, ২০১৯

লেখালেখির কাজ মাথায় উঠেছে। থাকার মতন ভালো, ভদ্র-সভ্য গাছ চাই একটা আগে। শ্মশান বা জঙ্গলের পাশে হলে সবচেয়ে ভালো, কিন্তু যা ভাড়া হাঁকবে মালিকেরা আর যা সেলামি চাইবে, শুনলে ভয়ে শিউরে উঠতে হয়। নেহাত জ্যান্ত নই, তাই হার্টটা আবার ফেল করেনি।

সব ভালো গাছ গায়ে ঘুণ ধরা পুরনো ভূতেদের দখলে। আবার সব ব্যাটাই কায়দা করে গলা কাঁপিয়ে বলে, “আমরা ব-অ-নে-এ-দি ভূত!” থুঃ!

প্রায় গরু খোঁজার মতন খুঁজে একটা শেওড়াগাছের সন্ধান পেয়েছি ভূষণ্ডির মাঠের ঠিক গায়ে। কাল অমাবস্যা। কাল যাব কথা বলতে। বৈষয়িক কথাবার্তার জন্য অমাবস্যার রাতই সবচেয়ে ভালো সময়।

২৪ মার্চ, ২০১৯

গাছওয়ালা মধু সামন্তর মুখ দিয়ে মধু ঝরছে, কিন্তু এক নম্বরের চশমখোর পাবলিক। হবে না কেন? জ্যান্ত অবস্থায় মধু সামন্ত ফাঁসুড়ে ছিল। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে নাকি মোট চল্লিশজনের ফাঁসি দিয়েছে। একচল্লিশতম ফাঁসি নিয়ে সে নির্বিকার থাকলেও মধু সামন্তর হাতে ফাঁসিতে যাবার বোধহয় তার কোনও ইচ্ছে ছিল না, তাই একটি ক্যারাটে চপে ওর ঘাড় ভাঙে।

কী লোক দেখুন মধু সামন্ত! মরবার পর এখন সে সেই ফাঁসি যাওয়া ভূতেদের নিয়ে দল পাকিয়ে তোলাবাজি করছে। ভূষণ্ডির মাঠের সব গাছ এখন ওর দখলে।

আমার কাছে এক লাখ টাকা অ্যাডভান্স চেয়েছে মধু সামন্ত। দেখি, কোনও একটা ব্যাঙ্ক-ট্যাঙ্ক যদি লুঠ করা যায়।

২৫ মার্চ, ২০১৯

অনেক কষ্টে মধু সামন্তকে রাজি করিয়েছি। না, এক লাখ টাকা সেলামির এক পয়সাও কমায়নি ব্যাটা। শুধু টাকাটা ধার হিসেবে দিয়েছে। ভাড়ার সাথে প্রতি মাসে মাসে ওই টাকাটাও গুনতে হবে আমায় যতদিন না ধারটা পুরো শোধ হয়। প্রথম মাসের টাকাটা শুধু অ্যাডভান্স দিতে হবে। মধু সামন্ত কথাবার্তায় বাঙালি, তবে জিনগুলো সবই কাবুলি!

২৬ মার্চ, ২০১৯

প্রথম মাসের টাকাটা দিতে আজ রাতে এসেছিলাম মধু সামন্তর ডেরায়। দেখি, মধু সামন্ত আলিবাবার সেই দস্যু-সর্দারের মতন তার চল্লিশজন ফাঁসি যাওয়া ভূত সাগরেদকে নিয়ে মিটিং করছে। সক্কলের হাতেই একতাড়া করে কাগজ। আমাকে দেখে দাঁত কেলিয়ে বলল, “আসুন, আসুন! আপনি লেখক মানুষ, শুনলে খুশি হবেন যে প্রতি শনিবার রাত্রে আমরা একসাথে জড়ো হয়ে… ওই মানে একটু কাব্যচর্চা করি আর কী।”

বলেছিলাম না, পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্ত কাজ হলো ভূত চেনা!

অলঙ্করণঃ অংশুমান

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s