যাত্রা
অনুষ্টুপ শেঠ
ক্লান্তি। আলো ফোটা থেকে চার ঘন্টা টানা পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটেছে রুহিয়া। পিঠের বোঝাটা হালকা নয়, বয়সটাও বাড়ছে।
আরেকটু এগোলে মানাগ্রাম। তারপরের রাস্তাটা অপেক্ষাকৃত সুগম। লাখান বছর চার আগে অমন মাথার পাশ বুলেটে থেঁতলানো লাশ হয়ে ফিরে আসার পর অনেকবার ভেবেছে রুহিয়া, ডেরাডাণ্ডা উঠিয়ে অন্তত মানাগ্রাম চলে আসে। কিন্তু হয় না। শুধু দু’জন মিলে রক্ত জল করে বানানো দু’কামরার কাঠের বাড়িটুকুর মায়া তাই নয়। সিংজীর বিষ নজরে পড়ে গেলে প্রাণসংশয় হবে।
পাহাড়ের খাঁজে প্রায় অদৃশ্য ছোট্ট গ্রামটার কথা কেউ প্রায় জানেই না। অল্প ক’টি পরিবারের সব সমর্থ মানুষই সিংজীর পে-রোলে বাঁচে। রুটিন কাজ, সিংজীর হুকুমমতো জিনিসপত্র আনা নেওয়া করা। কিন্তু প্রচণ্ড ঝুঁকি—ওই সীমান্তরক্ষী দলের ধেয়ে আসা বুলেট।
মানাগ্রামে ঢুকল না রুহিয়া আজ। ওখানের পোস্ট অফিস কাম স্কুল কাম মুদিখানার মালিক বড্ড বেশি প্রশ্ন করে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাবার সময়ে পায়ের নিচে শুকনো পাতার আওয়াজ হয় না। অভ্যাস। কিন্তু ঝুঁকে পড়া ডালগুলোর খোঁচা থেকে পিঠের ঝুড়ি সামলাতে গিয়ে পা পড়ে যায় সরু পথ বেয়ে বয়ে যাওয়া তিরতিরে জলের ধারায়। পায়ের ছাপ ওর হেঁটে যাওয়ার খবর ধরে রাখবে কিছুক্ষণ।
বদ্রীর ট্যুরিস্টের ভিড় এখন কম। মন্দিরের পাশের গলিতে ডাঃ অনন্তর দাওয়াখানার দরজা খুলেছে, দূর থেকেই দেখতে পায়। রুগীর লাইন পড়েছে। নিশ্চিন্ত শ্বাস ফেলে তাদের পিছনে গিয়ে দাঁড়ায় রুহিয়া।
কাল সারারাত জ্বরের ঘোরে ছটফট করা আর ভুল বকা কচি মুখটার এতক্ষণে ঘুম ভাঙে। ঝুড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে জন্ম বিকলাঙ্গ পাঁচ বছরের রাজু বলে, “মা, আর কতক্ষণ?”
অলঙ্করণঃ অংশুমান
বেশ
LikeLike