অণুগল্প রঞ্জিত রঙ্গন রায় শীত ২০১৯

       জয়ঢাকের সমস্ত  অণুগল্প

রঞ্জিত

রঙ্গন রায়

বাড়িটাকে দেখে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। শহরের একেবারে শেষপ্রান্তে ফাঁকা জায়গায় থাকা বাড়ি সম্বন্ধে কারোরই খুব একটা ভালোলাগা থাকে না। কিন্তু কিছু করার নেই। ক্যুরিয়ারের পার্সেলে এই বাড়ির ঠিকানাই রয়েছে। এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এটা শেষ ডেলিভারি। এরপর বাড়ি।

কলিং বেল বাজাতে গিয়ে রঞ্জিত দেখল কলিং বেল বলে কোনও বস্তু বাড়ির দরজায় নেই। এবার সে ফাঁপরে পড়ল। ভেতরের লোকদের ডাকবে কী করে? গোটা বাড়িটাই প্রায় ফাঁকা মনে হয়। সন্ধ্যা হওয়াতেও কোনও আলো-টালোর বন্দোবস্ত নেই। এ তো মহা সমস্যা! চিৎকার করবে? কিন্তু গলা দিয়ে তো শব্দই বেরোবে না। গতকালই তো…

হঠাৎ বাড়ির ভেতরে একটা আলো জ্বলে উঠল বলে মনে হল। আর একটু পরেই একটা দরজা খুব যন্ত্রণা মিশ্রিত শব্দে খুলে গেল। একটা থুত্থুড়ে বুড়ো। বয়সের গাছপাথর আছে বলে মনে হয় না। রঞ্জিতের বুড়োটিকে দেখামাত্র অস্বস্তিটা আরও বেড়ে গেল। এ লোকটা যেন ঠিক লোক নয়।

“কী এসেছে পার্সেলে?”

রঞ্জিত বুড়োটার ঘড়ঘড়ে কন্ঠে এই প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল। সে একেবারেই প্রস্তুত ছিল না যে কেউ এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ক্যুরিয়ার বয়কেই উলটে প্রশ্ন করবে।

“আজ্ঞে, পার্সেলে কী আছে তা কী করে বলি বলুন! ওটা খোলার তো এথিকস নেই আমাদের।”

“তা বটে। আসলে আজ অনেক বছর পর কোনও পার্সেল এভাবে ক্যুরিয়ারে এল কিনা।”

“ও, আচ্ছা। নিন স্যার, এই কাগজটাতে একটা সই করে দিন।”

“আরে, আগে ঘরে তো এস। সন্ধেবেলায় এসেছ, তাও কদ্দিন বাদে একজন স্বজাতির মুখ দেখলাম। এমনি এমনি ছাড়ি কী করে! ঘরে এসো।”

স্বজাতি? কী, বলছে কী বুড়োটা? সে তার স্বজাতি হবে কী করে? না না, এই বুড়ো নির্ঘাত উন্মাদ। তার জন্যই বাড়িটাকে ভালো লাগেনি রঞ্জিতের। সে নেগেটিভ এনার্জি ফিল করতে পারে।

“সরি স্যার, আমাদের রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনে কাস্টমারের বাড়িতে বসবার কোনও নিয়ম নেই।”

“আহা! নিয়ম তো তৈরিই হয় ভাঙার জন্য।”

“না স্যার, নিয়ম ভাঙতে পারব না, আমার চাকরি চলে যাবে। প্লিজ, এখানে সই করুন আর আমাকে রিলিজ করুন।”

“আরে বাবা, তুমি বুঝতে পারছ না! তুমি তো রিলিজ হয়েই গেছ। আর তোমার চাকরিরও প্রয়োজন নেই। বরং অযথা যে মানুষের নিয়মগুলো অভ্যাসের বশে পালন করে চলেছ সেটাও তো ভাঙতে হবে, নাকি!”

“মানেটা কী? কী উলটোপালটা বকছেন!”

“তোমায় দেখেই চিনেছি। ওই তো গলায় এখনও চাকার দাগ রয়েছে। না হে বাপু, মানুষ চিনতে ভুল হলেও স্বজাতিকে চিনতে আমি ভুল করি না কখনও। ওই চাকার দাগটা তো কালকেরই, তাই না?”

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

1 thought on “অণুগল্প রঞ্জিত রঙ্গন রায় শীত ২০১৯

  1. আরে ছোটো গল্প হিসাবে, বেশ হয়েছে…..
    “শেষ হয়েও হইলো না শেষ” ব্যাপার টা আছে ❤️❤️❤️❤️❤️❤️

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s