লুকোচুরি
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
“বনি, লুকোচুরি খেলবি?”
“কোথায়?”
“কেন, এই মাঠে!”
“ধুস বোকারাম। মাঠে কেউ লুকোচুরি খেলতে পারে? কেমন ছেলে তুই? কিচ্ছু জানিস না যে! এখানে লুকোবার জায়গা কই? তাছাড়া বাড়ি যাবার সময় হল যে!”
পিপো গালে হাত দিয়ে ভাবল খানিক। ভুল হয়ে গেছে। ছোটাছুটি খেলার কথা বললে হত। তাহলে বোধ হয় খেলত। এমনিতে কেউ তার সঙ্গে মেশে-টেশে না। এই মেয়েটা আজ তাকে ডাকল। এখন কী করা যায়?
খানিক ভেবে তার মুখে হাসি ফুটল। “লুকোনোর জায়গা আমি যদি বানিয়ে দিই তোকে? ধর, ওই গাছটার পেছনে?”
“ধুস। সব্বাই খুঁজে পেয়ে যাবে তো! তাহলে আর মজা কোথা? আমি খেলব না। টা টা।”
পিপোর মুখটা করুণ হয়ে উঠল। “ও বনি, যাস না। প্লিজ। আচ্ছা ঠিক আছে, ওখানে লুকিয়ে দ্যাখ একবার, তোকে কেউ খুঁজে পাবে না!”
“আর তুই?”
“আচ্ছা বাপু, আচ্ছা। আমিও খুঁজে পাব না। হল তো!”
“প্রমিস?”
“প্রমিস।”
ছুটন্ত বনির দিকে ঘুরে গাছটার দিকে একটা ইশারা করল পিপো। সহজ ব্যাপার।
গাছটার পেছনদিকে যেতেই সেখানে সদ্য জেগে ওঠা একটা অদৃশ্য অন্ধকার ঘূর্ণি তাকে টেনে নিল নিজের বুকে। সেখানে আলো, হাওয়া, সময় কিচ্ছু নেই। শুধু বনি।
পিপো গাছটার পেছনদিকে এসে দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে ভাবল একটু। মানুষগুলো ভারি অদ্ভুত। কেউ খুঁজে পাবে না এমন জায়গা হলে লুকোচুরি খেলার মজা কোথা? অমন জায়গা তো একটাই হয়!
খানিক ভেবে হাতের একটা ইশারায় নেই-রাজ্যের দরজাটা বন্ধ করে দিল পিপো। আস্তে আস্তে অনেক ওপরের দিকে ভেসে যেতে যেতে সে ভাবছিল, ধুস! এদের সঙ্গে খেলায় মজা নেই। মা ঠিকই বলে। কবে যে বাড়ি ফেরা হবে!
অলঙ্করণঃ অংশুমান