সাইবর্গ
সুদীপ চ্যাটার্জী
নর্থ সেন্স ডট কমের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘর। ঘরে উপস্থিত তিনজনের মাথাতেই চিন্তার রেখাগুলো স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
“অপরারেশন পর থেকে কতবার এরকম হয়েছে,হার্বিসান?” গম্ভীর মুখে জানতে চান কোম্পানির ডিরেক্টর স্যাম নেইলসন।
“পাঁচ ঘন্টায় সাতচল্লিশ বার। নীচের স্পেশাল কেবিনে শুয়ে অনবরত যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে বেচারা।কগনিটিভ এবিলিটি টেস্টের কাঁটা কিছুতেই মস্তিষ্কের ব্রেন ম্যাপিং করতে পারছে না।ইমপ্লান্টের পর থেকেই ফ্রন্টল লোব থেকে এমন কিছু হাই রেঞ্জ ফ্রিকোয়েন্সির সিগনাল এসে সিমুলেটার ডিভাইসে আঘাত করছে যে ব্যাপারটা …”
হাত তুলে হার্বিসানকে থামিয়ে দিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির দিকে চাইলেন নেইলসন।বললেন,”ডক্টর স্টুয়ার্ট! আপনার কি মনে হয়?”
ডক্টর স্টুয়ার্ট একমনে নখ কাটছিলেন।কিছুক্ষণ সময় নিয়ে তিনি বললেন,” স্যাম, আমি আগেই তোমাকে বলেছিলাম। পারকিনসন রুগীদের ব্রেন ইমপ্লান্টের সময় ইমপ্লান্ট ডিভাইস থেকে নির্বাচিত কিছু স্টিমুলেসন সিগনাল পাঠিয়ে ব্রেনের নার্ভগুলো সচল রাখার চেষ্টা করা হয়।কিন্তু জেফের ব্রেন আগে থেকেই সচল ,সেখানে অডিটরি নার্ভে ইলেক্ট্রনিক হিয়ারিং এড ট্রান্সপ্লান্ট করলে ..”
“ডক্টর,ডিফেন্সের লোকেরা জোর করলে আমাদের তো কাজ করতেই হবে।আর ,এই ট্রান্সপ্লান্টগুলো সফল হলে জেফের দলের লোকেদের ফিল্ডে কতটা সুবিধে হবে বুঝতে পারছেন? ভেবে দেখুন, ওদের কোন ডিভাইস ক্যারি করতে হবে না।গুপ্তচর বৃত্তিতে সব সংকেত সোজা ওদের ব্রেনে স্টোর হবে।বলা যায় না এর পর ম্যাগনেটিক ফিল্ড ইনসেপ্টার আর এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন ইমপ্লান্ট করলে যুদ্ধক্ষেত্রে ওদের কাজটা কত সহজ হয়ে যেতে পারে …”
ডক্টর স্টুয়ার্ট কঠোর চোখে তাকিয়ে বললেন,” ডোন্ট ফুল ইওরসেলফ স্যাম।আমরা ভেবেছিলাম সাইবর্গ তৈরী করব।একের পর এক ইমপ্লান্ট করে শারীরিক-মানসিক শক্তি বাড়িয়ে তুলে জীবন্ত রোবট বানাব যুদ্ধের জন্যে,কিন্তু মানুষের মস্তিস্কের কন্ট্রোল সিস্টেম তার এক্তিয়ারে থাকা কর্মক্ষেত্রে এই বাহ্যিক অনুপ্রবেশ মেনে নেবে না। জেফের মস্তিস্কে যেই হারে বিদ্যুত তৈরি করছে ব্রেনের তন্তুরা,তাতে ওকে সাবধানবাণী দেওয়া হচ্ছে।হয় ইমপ্লান্ট ডিভাইস ওর শরীর থেকে বের করতে হবে না হলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সে মারা যাবে।”
হার্বিসান বলল,”স্যার,এখন সার্জারী করে বাঁচালে হয়ত পরে চেষ্টা ..”
এমন সময় ধড়াম করে দরজা খুলে গেল। জেফ।রক্তাক্ত কাপড়ে টলতে টলতে এগিয়ে আসছে সে।স্যামের চোখের দিকে আগুন দৃষ্টি হেনে সে বলে উঠলো,” আমার ফোনটা দেরাজে রেখেও বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলে তুমি।আমার অনুমতি না নিয়ে তোমাদের এই এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগ বানিয়েছিলে আমাকে।অথচ,তোমাদের এই ইমপ্লান্ট এর জন্যেই ফোন না থাকলেও তোমাদের এই চক্রান্ত আমার কাছে ফাঁস হয়ে গেল।তোমার এসিস্ট্যান্ট রিটার মেসেজ আমি পেয়েছি স্যাম,আমার মাথার ভিতরে এসে আঘাত করেছে তার কথাগুলো।সে জানতে পেরেছিল তোমাদের এই এক্সপেরিমেন্টের কথা,তাই আমাকে সাবধান করে দিতে চেয়েছিল।আমি প্রতিমুহুর্তে মরছি স্যাম,কিন্তু তোমরাও বাঁচবে না।”
অমানুষিক এক আর্তনাদ করে স্যামের ওপর লাফিয়ে পড়ল জেফ।
অলঙ্করণঃ অংশুমান দাশ