হলদে আঁধার
বিভাবসু দে
ভীমের ভীষণ গদার আঘাতে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে দুঃশাসন। মৃত্যু আসন্ন, বেশ বুঝতে পারছে সে। ওই তো মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে ও—ডানপায়ে লেগেছে চোটটা। সঞ্জয় কাতর গলায় বলল, “মহারাজ, এ দৃশ্য আমি আর দেখতে পারছি না।”
বৃদ্ধ ধৃতরাষ্ট্র কম্পিত কণ্ঠে বললেন, “কেন সঞ্জয়? কী হয়েছে, সত্য বৃত্তান্ত শোনাও আমাকে। আমি জানতে চাই।”
“মহারাজ, রাজকুমার দুঃশাসনের দক্ষিণ উরু গদার ঘায়ে কী নৃশংসভাবে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল ভীম। আহ্! রক্তে ভেসে যাচ্ছে যুদ্ধভূমি, রাজকুমারের আর্তনাদ…”
হাতের মুঠিটা ক্রমশ শক্ত হয়ে উঠছিল ধৃতরাষ্ট্রের।
আস্তে আস্তে আবার উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিল দুঃশাসন, কিন্তু ভীমের পরবর্তী আঘাতে আর টাল সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে পড়ল এক ভাঙা রথের চাকার ওপর। তার বুক চিরে ঢুকে গেল সেই ভাঙা অক্ষদণ্ড। দুঃশাসনের রক্ত এসে ছিটকে পড়ল ভীমের চোখেমুখে।
হাহাকার করে উঠল সঞ্জয়, “হায়! সব শেষ মহারাজ… আমি আর সহ্য করতে পারছি না। কোনও মানুষ এমন পাশব আচরণ কীভাবে করতে পারে?”
“দুঃশাসন কি তবে…”
“মহারাজ, ওই ভীম আপনার প্রিয় সন্তানের বুক চিরে ফেলেছে। রাজকুমারের রক্ত এখনও লেগে আছে ওই নরপশুর মুখে।”
স্তম্ভিতের মতো চুপ করে বসে রইলেন অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। তাঁর সারাটা শরীর থরথর করে কাঁপছে। বুক ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ক্রোধের কালানল—মহাভারতের শেষ অধ্যায় লেখা হবে ভীমের রক্তেই। এই নৃশংসতার প্রতিশোধ তিনি নেবেন, নিশ্চয়ই নেবেন।
সবার অলক্ষ্যে একটা অস্পষ্ট কুটিল হাসি ঝলসে উঠল ব্যাসদেবের মুখে। সঞ্জয় দেখবে সবকিছু, কিন্তু বলবে সেটাই যেটা তিনি চাইবেন।
অলঙ্করণঃ অংশুমান