আয় আয় ঘুম তিমি আর ডলফিনের গল্প সৌরাংশু সিংহ ও ঈশান মিস্ত্রী শীত ২০১৯

আগের সংখ্যার গল্প– আমাদের ছোট্ট শুঁয়োপোকাটিকোকিলের গান, লাল বেলুনের গল্প, রামধনুর গল্প, আলুর গল্প, বাড়ি আর ক্রেনের গল্প

এই গল্পদের সৌরাংশু তার খুদেকে ঘুম পাড়াবার জন্য বানায়। আপনারাও আপনাদের খুদেদের এই গল্পগুলো বলে ঘুম পাড়াবেন।

তিমি আর ডলফিনের গল্প

কথনঃ সৌরাংশু সিনহা  ছবিঃ ঈশান মিস্ত্রী

“নীল তিমিরা বিশশাল বড় হয়। তারা তিনটে ট্রলারের সমান লম্বা আর দশটা ট্রলারের সমান ভারী হয়!” টিচার ডলফিন যখন তিমির গল্প শোনাচ্ছিল তখন বলল। ক্লাসের মধ্যে সবচেকে ছোট্টখাট্টো যে ডলফিন, সেই আমাদের বন্ধু ডলফিন। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াইয়ের কাছাকাছি তার বাড়ি। হাওয়াই চেনো তো? যেখানে সবাই হাওয়াই চটি পরে সাগরকূলে ঘোরাফেরা করে।

সে তখন গোলগোল চোখ করে শুনছিল। এমন সময় স্কুলের বড় ক্লাসের দাদা দিদিরা এসে খবর দিল, খাঁড়ির জলে একটা বিশশাল বড় তিমিকে দেখা গেছে। অতএব টিচার ম্যামরা সবাই মিলে ছুটি দিয়ে দিল স্কুল যাতে ছোট ছোট ডলফিন ছেলেমেয়েরা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে পারে। কে জানে তিমিটা যদি ক্রিল ভেবে ডলফিনদেরই খেয়ে ফেলে!

আসলে তারা ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছে তিমিরা অন্য গ্রহের প্রাণী। মানে এলিয়েন। মানে পৃথিবীর লোক নয়। বাইরে থেকে এসেছে। কে জানে কী করে বসে। তাই ভয়ে ভয়ে কক্ষণোই তারা তিমি মাছের তিন কিলোমিটারের মধ্যেও যেত না। এক কিমি মানে এই এখান থেকে মাদার ডেয়ারি। অথবা কাঁকুড়গাছি থেকে বাগমারি!

তার পরে পরেই, বাচ্চারা স্কুল বাসে করে বেরিয়ে পড়ল যে যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমাদের সেই বন্ধু ডলফিন, যে নাকি খুব ছোট্টখাট্টো ছিল, সে কেমন করে জানি না বাড়ি না গিয়ে সকলের নজর এড়িয়ে খাঁড়ির দিকে সাঁতরে চলল। তিমিটাকে এত কাছ থেকে দেখা কি চাট্টিখানি কথা? আর কেন জানি না গল্প শুনে মনে হয়েছে তিমিগুলো ভালো হয়। অন্তত নীল তিমি কাউকে মেরেছে খেয়েছে এসব শোনেনি কখনও। ডলফিনটা ছোট্ট হলেও বুদ্ধিমান ছিল কিনা!

খাঁড়ির দিকে জল কমে আসে আর এদিক ওদিক খাঁজখোঁজে পাথর জেগে থাকে জলের উপরে। কাছাকাছি ভেসে যেতে যেতেই বিশাল জোরে একটা আওয়াজ শুনল। সে আওয়াজ নিচু দিয়ে ওড়া প্লেন বা ড্রিলিং মেশিনের থেকেও বেশি জোর। কিন্তু অনেক ধীইরে ধীইরে বাজছে। আমাদের বন্ধু ডলফিনটার ভয় যে একদম করছিল না তা নয় কিন্তু। কিন্তু তার মনে অনসন্ধিৎসা তার থেকেও বেশি ছিল। অনুসন্ধিৎসা মানে কি হচ্ছে তা খুঁজে বের করার ইচ্ছা।

সে যাই হোক, সাঁতরে তো গেল ডলফিনটা, ভয়ে ভয়েই। কিন্তু গিয়ে যা দেখল তাতে ভয়ের থেকে চিন্তা বেশি হল তার। ওই বিশশাল তিনটে ট্রলারের সমান লম্বা আর দশটা ট্রলারের সমান ভারী নীল রঙের তিমিটা ও কম জলে আটকা পড়ে গিয়ে ছটফটও করতে পারছে না।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল আমাদের ছোট্ট ডলফিন, ‘কষ্ট হচ্ছে? জল খাবে? ও জল আবার কেন খাবে জলের মধ্যে থেকে! যাই হোক, কষ্ট হচ্ছে?’ নীল তিমিটা, ওই বিশাল নীল তিমিটা আমাদের ছোট্ট ডলফিনটার কোন কথা বুঝতে পারল না বোধহয় কিন্তু এমন করুণ চোখে তাকাল আর ডেকে উঠল যে ডলফিনের আর বুঝতে বাকি রইল না তিমির কষ্ট। তারপর?

তারপর আর কী! ডলফিনটা ছুটতে ছুটতে প্রথমে স্কুলে টিচারের কাছে গেল। টিচার যদিও বা বকবে ভাবছিল, কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত দমকল, পুলিশ আরও অনেককে নিয়ে সেখানে গেল। তারপর বেশ পরিশ্রম করে তিমিকে খাঁড়ির কমজল থেকে ঠেলতে ঠেলতে বেশি জলের দিকে নিয়ে গেল। আর ছোট্ট ডলফিনটা দূর থেকে দেখল, নীল তিমিটা যেন তার দিকে তাকিয়েই আনন্দে ডাকতে ডাকতে জল ছুঁড়ে যাচ্ছে আকাশে।

বাবা মা একটু বকেছিল যে টিচারের কথা না শুনে আমাদের ছোট্ট ডলফিন কেন একা একা পাকামো করতে গেছিল বলে। কিন্তু এটাও বুঝতে পেরেছিল যে আমাদের ছোট্ট ডলফিনটা একটা বিশাল বড় কাজ করে ফেলেছে।

এর পর থেকে যখনই আমাদের বন্ধু ছোট্ট ডলফিনটাকে খুঁজে পাওয়া যেত না, তখন বাবা মা টিচার স্কুলের দাদা দিদি সকলেই জানত যে যেখানে ঠিক বেশি জল আর কম জল মিশেছে সেখানে আমাদের ছোট্ট ডলফিনটা তার নতুন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছে। কেউ হয়ত কারুর কথা বুজছে না তবুও তারা নিজের নিজের ভাষায় আকাশ পাতাল গল্প করে চলেছে। হয়ত কদিনেই একে অপরের মুখের ভাষাও বুঝতে পারবে তারা, যেভাবে এখন চোখের ভাষা বুঝতে পারে।

<–আগের আয় আয় ঘুম

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s