জয়ঢাকের খবরের কাগজ জয়ঢাকের খবরের কাগজ
জলের অভাবে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতি। পাড়ি দিচ্ছে এক জঙ্গল থেকে আরেক জঙ্গলে। গভীর জঙ্গলে জলের জোগান জারি রাখতে নভেম্বর ২০১৬ তে বসলো সূর্য শক্তি চালিত দুটো জলের পাম্প। জানাচ্ছেন
অরিন্দম দেবনাথ
জঙ্গলে জল নেই! মাথায় হাত কর্ণাটকের নীলগিরি পর্বতমালার, বন্দিপুর ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষের। আটশো চুয়াত্তর বর্গ কিলোমিটার আয়তনের জঙ্গলের তিনশো’রও বেশি পুকুরের মধ্যে মাত্র একশোটার মতো পুকুরে সামান্য জল আছে। জঙ্গলের জন্তুজানোয়ার, বিশেষত দু হাজারেরও বেশি হাতির একটা বড় অংশ হানা দিতে শুরু করেছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রাম গুলোতে। শুধু কি হাতি? জঙ্গলে আছে একশো কুড়িটার মতো বাঘ। আছে লেপার্ড, ভাল্লুক, হরিন, বুনো কুকুর, বুনো শুয়োর…… অনেক প্রজাতির সরীসৃপ আর অসংখ্য পাখি। জলের অভাবে জঙ্গলের প্রাণীদের প্রান ওষ্ঠাগত।
বেশ কয়েকবছর ধরে ভাল বৃষ্টি হচ্ছে না। জঙ্গলের অনেকটাই শুকিয়ে আছে। এই জঙ্গল থেকে কাছের অন্য জঙ্গল, তামিলনাড়ু রাজ্যের মধুমালাই ন্যাশনাল পার্ক এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারিতে চলে যেতে শুরু করেছে হাতির দল। পথে গ্রামের পর গ্রামে ঢুকে তছনছ করে দিচ্ছে সব। চিরচারিত পদ্ধতি, অর্থাৎ আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাননি ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড – ইন্ডিয়ার’ স্টেট ডিরেক্টর হরি সোমাসেখর ও বন্দিপুর টাইগার রিজার্ভের ডিরেক্টর টি হিরালাল। বন্দিপুরের বুনোদের বনে ধরে রাখতে ঠিক করলেন গভীর জঙ্গলের মাঝে সৌরশক্তি চালিত গভীর নলকূপ বসিয়ে নীলগিরি পর্বতের পাথুরে জমির নিচ থেকে জল বের করবেন। ঠিক হল জঙ্গলে সবচাইতে খরাকবলিত অঞ্চল ওমকারা এবং কুন্দুকেরেতে চেষ্টা চালানো হবে।
পরীক্ষামুলক ভাবে জঙ্গলের মাঝে পাথর ফুটো করে দুটো গভীর নলকূপ বসিয়ে তার সাথে জুড়ে দেয়া হল শক্তিশালী পাম্প। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পাথুরে জমি ফুটো করতে প্রয়োজন ছিল শক্তিশালী ড্রিল মেশিনের। অনেক কসরত করে দুর্গম জঙ্গলের মাঝে সেই যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই পাম্প চালাতে প্রয়োজন ছিল হাই ভোল্টেজ বিদ্যুতের। জঙ্গলের মাঝে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার দীর্ঘকাল ধরে জেনারেটার চালানোও যাবে না। তাতে করে জঙ্গলের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে।পাম্প চালাতে কুড়ি ফুট উঁচু খুঁটির ওপর তিনশো ওয়াটের, সতেরোটা সোলার প্যানেল বসানো হল। যাতে জন্তু জানোয়ারের দল এসে উপড়ে না ফেলতে পারে তাই গভীর পরিখা খুঁড়ে দেওয়া হল সোলার প্যানেলের খুঁটি গুলো ঘিরে।
সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ঘণ্টায় পঞ্চাশ হাজার লিটার জল তুলতে শুরু করল এক একটা পাম্প। জঙ্গলের মাঝে সরু ড্রেন খুঁড়ে কয়েকটা পুকুরকে জুড়ে দেওয়া হল। পাম্প করা জল ফেলা হতে লাগলো সবচাইতে উঁচু জায়গায় অবস্থিত পুকুরটাতে। উঁচু পুকুরের উপচানো জল যেতে শুরু করল অন্য পুকুরে। কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন আপতকালিন ব্যবস্থা হিসেবে জঙ্গলের মাঝে আরও ছটা সৌরশক্তি চালিত নলকূপ বসাবেন।
জঙ্গলে জলের আকাল খানিকটা কমতে হাতির দল ও অন্যান্য পশুপাখির লোকালয়ে হামলা কমে গেছে অনেক। জঙ্গল আবার সবুজ হতে শুরু করেছে একটু একটু করে।