পুনরায় দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান
১৯৩৫ সাল, বসন্তকাল। এভারেস্ট কমিটির হাতে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গারোহণের পুনরায় অনুমতি এল। শুরু হল অভিযানের তোড়জোড় কিন্তু এভারেস্টের মতো এত বড়োমাপের অভিযান করার প্রস্তুতির পক্ষে সময় বড়ো কম, তা সত্ত্বেও অঞ্চলটি ভালো করে রেকি করে অর্থাৎ এলাকাটি সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণার পর অভিযানে অগ্রসর হব মনস্থির করলাম। বিশেষত জানা প্রয়োজন বর্ষাকালে পর্বতে তুষার আচ্ছাদনের অবস্থা সম্পর্কে। দরকার পূর্বের অভিযানের জরিপ না হওয়া অঞ্চল সম্পর্কে সম্যক তথ্যাদি। অনুসন্ধান প্রয়োজন রংবুক হিমবাহের বেসিন থেকে C W M অতিক্রম করার সম্ভাব্যতা সম্পর্কে। এভারেস্টের দক্ষিণ গাত্র বরাবর আরোহণ করতে এই বিকল্প পথেই অভিযান সম্ভব। আমরা নিশ্চিত উত্তর বরাবর এভারেস্ট আরোহণ নিরাপদ নয় কারণ উত্তর গাত্রের উপরের অংশের একটি ঝুলন্ত বরফের স্ল্যাব যেকোন সময় বিপদ ঘটাতে পারে।
মে মাস। দার্জিলিং থেকে এভারেস্টের উত্তর-পূর্ব দিকের সারি সারি পর্বতশ্রেণী দেখতে দেখতে অগ্রসর হতে থাকলাম। সাথে চলল শৃঙ্গের পর শৃঙ্গ অন্বেষণ। নদীর স্রোতের মতো সময় বয়ে চলতে চলতে ৬ই জুলাই রংবুক পৌঁছলাম। আরো তিনদিন পর সেখান থেকে সোজা চলে এলাম ৩ নং ক্যাম্পে।
৩ নং ক্যাম্প থেকে কিছুদূর এগিয়েই পড়ে থাকতে দেখলাম মরিস উইলসনের মৃতদেহ। গতবছর এই অভিযাত্রীই মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গ একক অভিযানের সঙ্কল্প নিয়েছিলেন। এর বেশি আমাদের কাছে এই অভিযাত্রী সম্পর্কে কোন তথ্যই ছিল না। তাঁর মৃতদেহের কাছেই আমরা খুঁজে পেলাম একটি ডায়েরি। সেই রোজনামচা পড়ে লিপিবদ্ধ করেছিলেন আশ্চর্য সব তত্ত্বঃ তিন সপ্তাহ উপবাস করেও একজন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। পৌঁছতে পারে জীবন-মৃত্যুর সীমারেখার এক অর্ধচেতন স্তরে, যখন দৈহিক মন সরাসরি সংযোগ রক্ষা করে আত্মার সাথে। যখন মালিন্যহীন রোগমুক্ত নবজাতকের শরীর-মন নিয়ে আবির্ভুত হয় পুণরায়, পূর্বাবস্থা অপেক্ষা তাঁর শারীরিক ও আত্মশক্তি বৃদ্ধি পায় আশ্চর্যজনক ভাবে। এই তত্ত্ব যেন উইলসনের কাছে ছিল উন্মাদের বিশ্বাস। বিশ্বাস করতেন স্বপ্নাদেশ পাওয়া সেই ধর্মোপদেশ যা মানবসভ্যতাকে এক অন্যস্তরে উত্তরণ ঘটায়। উইলসন যদি একাকি এভারেস্ট শৃঙ্গ মরিসের মৃতদেহ
আরোহণ করতে সমর্থ হতেন, এই তত্ত্ব হয়তো মুখে মুখে প্রচারিত হয়ে দেশে বিদেশে অলৌকিকতায় বিশ্বাসী মানুষের কাছে মান্যতা পেত।এবং আনুষঙ্গিক নানা প্রমাণ থেকে আশ্চর্যজনক সব তথ্য সংগ্রহ করলাম। জানতে পারলাম ৩৭ বছর বয়সী এই পর্বতারোহী ফরাসী সৈন্যবাহিনীর সাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
পর্বতারোহণ সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণাই ছিল না। কিন্তু ‘হাউসটন এভারেস্ট উড়ান অভিযান’ প্রচার পেয়ে সংবাদের শীর্যে চলে আসে। স্বীকার্য হিসেবে অদ্ভুত ধারণা উপস্থাপন করলেন – উড়তে উড়তে অনেক উচ্চতায় গিয়ে এরোপ্লেন যদি বিকল করে দেওয়া যায়, যদি দুর্ঘটনার ফলে তাঁরা পৌঁছে যান এভারেস্ট শৃঙ্গের খুব নিকটবর্তী কোন উচ্চতায়, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সহজে আরোহণ করতে পারেন শৃঙ্গের চূড়ায়। এই ধারণা মাথায় রেখে প্লেন চালানো শিখলেন উইলসন। ভারতবর্ষে
পৌঁছনোর জন্য কিনে ফেললেন ছোট্ট এরোপ্লেন। কিন্তু কায়রো এয়ারপোর্ট অথরিটির বাধা পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। অবশেষে পৌঁছলেন ভারতবর্ষের পুর্ণিয়া জেলায়। কিন্তু এরোপ্লেনটি সরকার কর্ত্তৃক বাজেয়াপ্ত হল। চলে গেলেন দার্জিলিং। চারমাস সেখানে থাকলেন। পর্বতারোহণের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হল। আবার প্রস্তুতি নিলেন এভারেস্ট অভিযানের। পরিচয় হল আমাদের পূর্বপরিচিত কিছু দক্ষ শেরপার সাথে। তারা তাঁকে গোপনে সিকিম এবং তিব্বতে পৌঁছে দেবে প্রতিশ্রুতি দিল। হোটেলে ছয়মাসের অগ্রিম ভাড়া দিলেন। তালাবন্ধ করে রাখলেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সবাই জানল বন্ধুদের আহ্বানে জঙ্গলে শিকারে গেছেন উইলসন। কয়েকমাস কেটে গেল। মুখে মুখে প্রচারিত হল পর্বতারোহী উইলসন নিরুদ্দিষ্ট।
এদিকে ছদ্মবেশে গভীর রাতে পদব্রজে সিকিম হয়ে তিব্বত পৌঁছলেন মরিস উইলসন। সঙ্গে কোনো তল্পিতল্পা না থাকায় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিলেন তাঁরা। বড় শহরকে এড়িয়ে চলায় তিনি এবং তাঁর তিন শেরপার প্রতি কৌতূহল ছিল না কোনো ব্যক্তির। এভাবেই পৌঁছে গেলেন রংবুক। রংবুক মনাস্ট্রিতে গিয়ে মঠকর্তার কাছে ১৯৩৩ সালের অভিযাত্রী দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে পরিচয় দিলেন। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে ফিরে পেলেন ফেলে যাওয়া অভিযানের সাজসরঞ্জাম। মঠের সন্ন্যাসীর কাছে স্পষ্ট একটি ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল উইলসনের। ১৯৩৫-এর এভারেস্টে অভিযানের সময় ঐ মনাস্ট্রিতে পৌঁছে আমরা তার প্রমাণও পেয়েছিলাম। রংবুকে শেরপাদের রেখে তিনি হিমবাহ ধরে রওনা হলেন। প্রতিজ্ঞা করলেন তিন থেকে চারদিনে শৃঙ্গ আরোহণ করবেন। দাড়ি কামানোর সরঞ্জামের মধ্যে তাঁর একটি ছোট্ট আয়না ছিল। ঠিক করলেন আয়নাটিকে হেলিওগ্রাফ (সূর্যরশ্মিকে প্রতিফলিত করে সংকেত-বার্তা পাঠানোর যন্ত্র) হিসেবে ব্যবহার করে রংবুকের সহ অভিযাত্রীদের কাছে শৃঙ্গ থেকে আরোহণের প্রমাণ হিসেবে বার্তা পাঠাবেন। উপবাসের অভ্যাস তাঁর ছিল। জানতেন রাইস ওয়াটার অর্থাৎ ছাঙ খেয়ে দিনের পর দিন কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়। তখন এপ্রিলের শুরু– বসন্তকাল। পূর্ব রংবুক হিমবাহে অপ্রত্যাশিত ঝোড়ো বাতাসের মুখোমুখি হলেন। চেষ্টা করতে থাকলেন ঝড়ের বেগ উপেক্ষা করে যত দ্রুত সম্ভব দ্বিতীয় শিবিরের নিরাপদ স্থানে যাতে পৌঁছনো যায়।
পনেরো দিন বিশ্রামের পর পুনরায় যাত্রা শুরু করলেন। যদিও এবারে শেরপাদের সঙ্গে নিয়ে তৃতীয় শিবির পৌঁছলেন এবং খুব কাছেই স্তূপীকৃত খাদ্যসামগ্রীর সন্ধান পেলেন তাঁরা। চকোলেট, ওভালটন, সাবডিনস, বেক্ড্ বিন্স এবং প্রচুর পরিমাণ বিস্কুট দেখে তখন তাঁরা উত্তেজিত।
তৃতীয় শিবিরে শেরপাদের রেখে আবার একাকি আরোহণ শুরু করলেন মরিস। সে বছর মরিসের আগেই সেই খাড়াই পথে আমরা ধাপ কেটে কেটে আরোহণ করি অবশ্যম্ভাবী ছিল সেই পথেই তাঁর পক্ষে অগ্রসর হওয়া। কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় অতিরিক্ত তুষারপাতে বরফের গায়ে নির্মিত সিঁড়ি নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায়। তাঁর সাথে ছিল আইসঅ্যাক্স। কিন্তু বরফকুঠারের সঠিক ব্যবহার জানতেন না মরিস। পাথুরে একটা জায়গায় শিবির স্থাপন করলেন তিনি। কল অতিক্রম করবার নিষ্ফল প্রয়াস চলতেই থাকল দিনের পর দিন। সঙ্গে প্রচুর খাবার থাকা সত্ত্বেও মানসিক অবসাদ এবং ক্লান্তিতে ধীরে ধীরে বিধ্বস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। রোজনামচায় পরিষ্কার এমন কিছু কথা লেখা ছিল যা সংক্ষেপে সামঞ্জস্যহীন— শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবার পূর্ব পর্যন্ত স্বর্গীয় অনুপ্রেরণাকে আঁকড়ে ধরার তথাকথিত বিশ্বাস। তাঁর হাতে লেখা ডায়েরির শেষ তারিখ ৩১ মে, ১৯৩৪। ছোট্ট তাঁবুতে চিরনিদ্রায় শায়িত মরিস উইলসন। ঝড়ে বিধ্বস্ত ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাওয়া তাঁবুর ভাঙা অংশ বড় পাথরে কোন রকমে সংলগ্ন।
শেরপাদের কাছ থেকে জানা গেল তৃতীয় শিবিরে তাঁরা মাসখানেক মরিসের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।
১৯৩৫-এ আমাদের সাথে ঐ শিবিরে যে দুজন শেরপা ছিল তাদের একজন ছিল জরিপের দলের সঙ্গে এবং অন্যজনকে ঐ দিন দ্বিতীয় শিবির পাঠানো হয়েছিল আরো কিছু শেরপা আনার জন্য। যাদের সাহায্যে আমরা মরিসের দেহ বরফের চোরা ফাটলে সমাধিস্থ করলাম।
আমরা ধরেই নিলাম বর্ষায় এভারেস্ট অভিযানের পরিকল্পনা অর্থহীন। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কারণ আমাদের বিশ্বাসের পাল্লা ভারী করছিল।
১৯৩৩-এর পূর্বে বর্ষা শুরু হওয়ার ঠিক কয়েকসপ্তাহ আগের আকর্ষণীয় মরসুমের প্রতি বেজায় ভরসা ছিল পর্বতারোহীদের। ফলে অভিযানে অকারণ বাড়তি নানা সম্ভাবনার চিন্তা মাথায় থাকত না তাঁদের। কিন্তু সেই বিশ্বাসের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল ১৯৩৩-এর অভিজ্ঞতা। কেউ কেউ মন্তব্য করলেন বিলম্ব-বসন্তের চেয়ে বর্ষাকালে এভারেস্ট অভিযানে অগ্রগতির পক্ষে নিরাপদ এবং আরোহণের সফলতার সম্ভাবনাও বেশি। এই সিদ্ধান্তের প্রতি আমার দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ১৯২৯ এবং ১৯৩১-এ যথাক্রমে কারাকোরাম এবং জার্মান অভিযাত্রীদের কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের ভিত্তিতে। ১৯৩৫-এ অনেক কাজের মধ্যে আমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল পূর্বোক্ত অভিযান সম্পর্কে সত্যান্বেষণ।
শুধু দুরকম পরিস্থিতির কথা আমাকে ভাবাত। নর্থকলের নীচের ঢাল থেকে তুষারধ্বস নামার সম্ভাবনা এবং পর্বতের উপরের অংশের তুষার-অবস্থা। এ বিষয়ের সপক্ষে অনেক বছর আগের বিচ্ছিন্ন ঘটনার উদাহরণ কিছু আমার ছিল। যদিও সাম্প্রতিক কালে ঐ অঞ্চলের সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতাই আমার নেই। ১৯২২ সালের জুন মাসে দলটি নর্থকলে পৌঁছনোর সময় ভয়ঙ্কর তুষারধ্বসকে পাশ কাটিয়ে কোনো রকমে রক্ষা পেল। ১৯৩৩-এর জুন মাসে ক্রফোর্ড (Crawford)এবং ব্রকলব্যাঙ্ক (Brocklebank) নর্থকলের বিপজ্জনক ঢালের কথা জানালেন। (ক্রফোর্ড যদিও ১৯২২-এ তুষারধ্বসের সম্মুখে পড়া সেই অভিযাত্রী দলেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।) অন্যদিকে ১৯২১-এর সেপ্টেম্বর মাসের অভিযানে তাঁরা নিরাপদেই নর্থকলে আরোহণ করেছিলেন কিন্তু পর্বতারোহী হিসেবে ম্যালরির দক্ষতার প্রতি পূর্ণ সম্মান দিয়েই বলা যায় – সঠিক সিদ্ধান্তে থেকেও বেশি দরকারি হল অনুকূল পরিস্থিতি, যাকে আমরা সৌভাগ্য বলি। সঠিক প্রাকৃতিক জগৎ ও নিয়মসমূহ সম্পর্কিত অধ্যয়ণের মাধ্যমে আল্পসের আবহাওয়া, তুষারচরিত্র সম্পর্কে আমরা বিবিধ তথ্য জানতে পারি। কিন্তু তুলনায় হিমালয় সম্পর্কে আমরা এখনও অজ্ঞতার অন্ধকারে।
আমাদের বিশ্বাস পুরো জুন মাস জুড়েই এই ভয়ঙ্কর অবস্থা চলতে থাকে নর্থকলে। পশ্চিমদিক থেকে প্রবাহিত ঝোড়ো হাওয়ার সাথে চলতে থাকে তুষারপাত। তাপমাত্রা উত্তরোত্তর কমতে থাকায় পূর্বদিকের ঢালে অতিরিক্ত তুষারের আস্তরণে নির্মিত হয় কঠিন বরফের স্ল্যাব। পর্বতারোহণের পরিভাষায় কথিত এই ‘উইন্ড স্ল্যাব’ সর্বাপেক্ষা মারাত্মক তুষার বাধা। ফলে গ্রীষ্মকালের পর যে এই পথ ব্যবহারযোগ্য থাকে না, এই অনুসন্ধানের সপক্ষে যুক্তি খাড়া করতে অসুবিধা হয় না পর্বতারোহীদের।
১৯৩৫-এর জুলাইয়ের মাঝামাঝি যখন পৌঁছলাম, নর্থকলের পাদদেশের বিপজ্জনক ঢাল পরীক্ষা করলাম অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে। দলের অন্যতম সদস্য কেম্পসনের আল্পসে শীতকালীন পর্বতারোহণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছিল। হিমালয়ের তুষার চরিত্র বুঝতে কেম্পসনের অভিজ্ঞতা সামান্য হলেও অগ্রসর হতে সাহায্য করল। ঢাল অতিক্রম করার সময় কোনো সন্দেহজনক বিপদসংকুলতার চিহ্ণ খুঁজে পেলাম না। দশজন শেরপাকে নিয়ে কলের শীর্ষে পৌঁছোতে তিন দিন কেটে গেল।আবার শিবির স্থাপন করলাম। উইলসনের মৃতদেহ দেখে শেরপারা ভীত হয়ে পড়ল। তাদের বিশ্বাস এই মৃতদেহ কোনো অশুভ বার্তা বয়ে আনার পূর্বলক্ষণ। কলের উপর দিয়ে অগ্রসর হতে হতে পথের মাঝখানে হঠাৎ-ই তারা আর অগ্রসর হতে অস্বীকার করল। সেই রাতে শিবির স্থাপনের পর খুব আন্তরিকভাবে নিজেদের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হল।
আমাদের মধ্যে তিনজন ওয়ারেন, কেম্পসন ও আমি এবং আটজন শেরপা ষোলো দিন থাকতে পারার মত পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত করে নর্থকলে শিবির স্থাপন করলাম। সংকল্প করলাম অন্ততঃ ২৭০০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত আমরা আরোহণ করব। মানসিক দিক দিয়ে আমরা এমনই অবস্থায় ছিলাম যে অনায়াসে শৃঙ্গ আরোহণ করতে পারি। বিচ্ছিন্নভাবে নগ্ন পাথুরে কিছু অংশ ছাড়া পুরো নর্থকল তখন পুরু বরফে আচ্ছাদিত। সূর্যের কম তাপমাত্রা এবং রাতের অতিরিক্ত শীতলতার যৌথ প্রতিক্রিয়ায় আরোহণের পক্ষে অনুকূল তুষারাচ্ছাদিত পথ তৈরি হয়। অভিযানের ফেলে আসা পনেরো দিনের আবহাওয়া শুধু সুন্দরই ছিল না, ২৬০০০ ফুট পর্যন্ত অতর্কিতে বরফ গলার সম্ভাবনাও দেখা যায়নি। কিন্তু এই উচ্চতা থেকেই অতিরিক্ত বায়ুচাপে গুঁড়ো তুষারের মাত্রা বাড়তে থাকে। সামান্য তুষারাচ্ছাদিত আপার স্ল্যাব আরোহণ যে কত কঠিন ১৯৩৩-এর অভিযানে হাতে-নাতে প্রমাণ পেয়েছিলাম আমরা। আট থেকে দশ ফুট পুরু এই তুষারাচ্ছন্ন পথে প্রায় অনতিক্রম্য বাধা তৈরি হয়। তুষার আচ্ছাদনের মাত্রা বাড়তে বাড়তে এই কারণেই অন্যান্য ঋতুর তুলনায় বর্ষাকালই আরোহণের অনুকূল পরিবেশ।
ক্রমশ