হাসান হাবিবের আগের গল্পঃ টারজানের গান, ভুলভুলাইয়ার জঙ্গলে
হাসান হাবিব
“হঠাৎ ঘাড়ের পিছনে কার যেন নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজ পেলাম। পিছন ঘুরেই দেখি পুলওভার সহ কালো রেনকোট পরা এক ছায়ামূর্তি! তাকে দেখেই আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল!” বলে চুরুটে একটা টান দিলেন অরণ্যমামা।
“ওটা কে ছিল, মামা?” প্রশ্ন করে রাজা।
“চুপ কর না! মামাকে বলতে দে।” রূপসা গল্পের মাঝে রাজার ঘন ঘন প্রশ্ন করা একদম পছন্দ করে না।
“আমি ভয়ে চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় উনিই বলে বসলেন, ‘আপ আরণ্যবাবু?”
বাইরে তখন নিম্নচাপের একটানা বৃষ্টি। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে একটা বাজ পড়ল কোথাও। জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর অরণ্য সেন তাঁর জীবনের গল্প শোনাচ্ছেন। শ্রোতা ভাগ্নে ক্লাস ফোরের ছাত্র রাজা, ভাগ্নি ক্লাস সিক্সের রূপসা। আর রাজা-রূপসার খুড়তুতো বোন ক্লাস সেভেনের ছাত্রী ঝিলমিল।
“জায়গাটা ভাগলপুর স্টেশন থেকে রেলপথে পঁচাত্তর কিমি দূরে, নাম অভয়পুর। সেটা একটা গঞ্জ এলাকা। সেখান থেকে প্রায় পনেরো মাইল দূরে একটা জঙ্গুলে জায়গায় বসেছিল আমাদের ফিল্ড ক্যাম্প। দিন কুড়ি ভালোই কাটল। তারপরই শুরু হল অসম্ভব বর্ষা। বৃষ্টিতে ভিজে আমাদের তখন একেবারে জুবুথুবু অবস্থা। ফিল্ড ক্যাম্পে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠল। ছোট্ট গঞ্জে খোঁজ করে পাওয়া গেল রাজ্য বন দপ্তরের একটা ইন্সপেকশন বাংলো। সেটা নামেই বাংলো। দুটো রুমের একটায় ঠাসাঠাসি কাঠের লগ ভর্তি। অন্যটায় কোনওমতে একজন থাকা যায়। সেখানে উঠলেন আমাদের সিনিয়ার যোগেশ্বর শর্মা। বাকি রইলাম আমি আর মহেশ্বর তারানিয়া, দুই জুনিয়র অফিসার। ওখানে তখনও কোনও লজ, হোটেল ছিল না। তাই আমরা ভাড়া বাড়ির খোঁজ করতে লাগলাম।”
“তারপর কোথায় পেলে বাড়ি?” আবার রাজার প্রশ্ন।
যথারীতি রূপসা, ঝিলমিল বিরক্ত। মামা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে বললেন, “সেটাই তো বলছি, শোন।
“একদিন ভাগলপুর থেকে একটা কাজ সেরে ট্রেনে অভয়পুর ফিরছিলাম। টিকিট কাউন্টারের পাশের দেওয়ালে একটা বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞাপন দেখলাম।
‘किराए के लिए चार कमरों वाला एक दो मंजिला घर।
इच्छुक व्यक्ति कृपया संपर्क करें।’
“গোটা বাড়িটার চার কামরার জন্য ভাড়াটা দেখলাম খুব সস্তা। তখন সন্ধ্যা নেমে এসেছে। স্টেশনের লাগোয়া পান দোকান থেকে ফোন করলাম বিজ্ঞাপনে দেওয়া নাম্বারে। নির্দেশিত রাস্তাটা জেনে নিলাম। ওদিকটায় রিকশা বা এক্কাগাড়ি কিছুই চলে না। স্টেশন থেকে মিনিট পনেরো হাঁটা রাস্তা। আমি হাঁটতে শুরু করে দিলাম। কিছুটা যাওয়ার পরই অন্য একটা সরু পায়ে চলা পথ ধরতে হল। বোঝা যাচ্ছিল, সে রাস্তায় বেশি মানুষের চলাচল নেই।
“সন্ধ্যার আঁধারে পথঘাট অস্পষ্ট। কিছুক্ষণ আগেই একপশলা জোর বৃষ্টি হয়ে গেছে। রাস্তার দু’পাশে গজিয়ে ওঠা লতাগুল্মের ঝোপ তখনও বৃষ্টির জলে ভিজে। প্রায় মিনিট দশেক হাঁটা হয়ে গেল, অথচ একটা লোকেরও দেখা মিলল না। নিস্তরঙ্গ দেহাতি গ্রাম্য জীবন, মনকে এমন প্রবোধ দিয়ে আমি এগিয়ে চললাম। কাউকে না পাবার ফলে জিজ্ঞেস করতে পারছিলাম না ডাক্তারবাবুর বাড়িটা আর কতদূর। ঘড়ি মিলিয়ে মিনিট পনেরো হাঁটার পর একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম বাড়িঘর সেখানেই শেষ। তারপর জঙ্গুলে বাগান আর ফাঁকা মাঠ। বাড়ি মালিক নন্দকিশোর উর্ফ নন্দু ডাক্তার ফোনে যেমনটা বর্ণনা দিয়েছিলেন তা মিলে গেল। এক্কেবারে শেষে রাস্তার দু’দিকে দুটো বাড়ি। বামদিকের হলুদ রং করা দোতলা বাড়িটার দরজার উপর গ্রিলের গেট। দেখে বুঝলাম, ঠিক জায়গাতেই পৌঁছেছি। দরজার বাইরে কলিং বেলে চাপ দিলাম। প্রথমবার কলিং বেলের আওয়াজে কেউ সাড়া দিল না। দ্বিতীয়বার চাপলাম বেলখানা। এবারে পরপর দু’বার। ঘরের ভিতর বাজতে লাগল, ‘ইয়ে দুনিয়া, ইয়ে মহফিল…’
“বাইরের রাস্তায় কোনও আলো নেই। বাড়িটাতেও আলো জ্বলছে না। সেই নির্জনে ডাকাতরা মেরে ধরে সবকিছু কেড়ে নিলেও কেউ সাহায্য করতে আসবে না। বাড়ির লোকেরা সব গেল কোথায়! সেটা তো ঘুমানোরও সময় নয়, যে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে!
“আমার বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক মনও হঠাৎ যেন নাড়া খেয়ে গেল। মনে হল সন্ধ্যাবেলা বিদেশ-বিভূঁইয়ে হঠাৎ এভাবে দেখতে আসাই ঠিক হয়নি। অন্য কোনও দিন দিনের আলোয় এলেই ভালো হত। অন্ধকারে এতদূর অচেনা রাস্তায় আসাটাও বোকামো। সাথে একটা পেন্সিল টর্চ পর্যন্ত নেই।
“আরেকবার কলিং বেলে চাপ দিলাম। কিন্তু হাতখানা কেমন যেন কেঁপে গেল! মনে মনে সাহস সঞ্চয় করলাম। হয়তো ডাক্তারবাবু এখন বাড়িতে একাই আছেন, বাথরুমে গেছেন। এমন সব যুক্তি মনে মনে সাজাতে লাগলাম।
“হঠাৎ পিছনে ঘাড়ের কাছে কার যেন নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজ পেলাম। পিছন ঘুরেই দেখি পুলওভার সহ কালো রেনকোট পরা এক ছায়ামূর্তি! আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল!
“আমি হয়তো চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলাম। এমন সময় উনিই বলে বসলেন, ‘আপ আরণ্যবাবু?’
“হ্-হ্-হ্যাঁআ, আপ… আপ?’
“ওঁর সাথে আমি আমার সাধ্যমতো হিন্দিতেই কথা বলতে লাগলাম। তোদের সুবিধার জন্য বাংলায় বলছি।” অরণ্যমামার এই কথা শুনে খুশি হয়ে ঘাড় কাত করে রাজা।
“আমিই তো নন্দকিশোরবাবু। আপনার সাথে ফোনে কথা হল, তারপর হঠাৎ মেন সুইচের ফিউজ উড়ে গেল। তাই আমি ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ডাকতে একটু বাইরে গেছিলাম। সে ব্যাটাও আজ আবার সসুরাল গেছে।’
“গ্রিলের দরজায় ভিতর দিকে চাবি দেওয়া ছিল খেয়ালই করিনি আমি। ভদ্রলোক চাবি খুলে বললেন, ‘আসুন। একটু কষ্ট করে অন্ধকারেই কাজ চালাতে হবে।’ বলে আমার দিকে পিছন ফিরে হাসলেন।
“যাবার আগে জায়গার লোকেশন, সেই অন্ধকার নির্জনতা, তার মধ্যে ভূতুড়ে বাড়ি—সেটা বুঝে উঠতে পারিনি। ভেবেছিলাম লোকজন, আলো এসব তো নিশ্চয়ই থাকবে। তখন মনে হতে লাগল না এলেই ভালো হত। আমার বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক মনও প্রতিকূল পরিবেশে একাকী পড়ে গিয়ে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিল।”
রাজা একটু রূপসার কোল ঘেঁষে বসল। তাই দেখে হাসল ঝিলমিল। ওদের মধ্যে রাজাই ছোটো। গল্প যত রোমাঞ্চকর জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়, রাজা তত কারও গাঁ ঘেষে বসতে থাকে। বাঘ যখন হালুম করে, বা ভূত যখন দাঁত বের করে এগিয়ে আসে তখন রাজা গিয়ে কারও কোলের উপর উঠে পড়ে।
“নন্দকিশোরের বাড়ির একতলার বারান্দায় একটা ডাইনিং টেবিল পাতা ছিল। তার দু’দিকে দুটো চেয়ারে বসলাম আমরা। ওঁর বয়স ওই পঞ্চাশ-বাহান্ন হবে। পাতলা চেহারা। সরু শৌখিন গোঁফ। হাইট পাঁচ ফুট সাত-আট ইঞ্চির মতো। উনি রেনকোট-পুলওভার পরা অবস্থাতেই কথা বলতে লাগলেন।
“শুনুন আরণ্যবাবু, এই বাড়ির একটা হিস্ট্রি আছে। লুকিয়ে তো লাভ নেই। সব পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেওয়াই ভালো। তাছাড়া এসব জিনিস লুকিয়ে তো ভাড়া দেওয়া যায় না। প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও পরে জেনে যাবেন।’
“হ্যাঁ, সে তো ঠিকই বলেছেন।’
“তাই ভাড়ার আগে আপনাকে হিস্ট্রিটা একটু বলে দিই। বাড়িটায় একটু প্রবলেম আছে। আর সেটা আমি জেনেশুনেই কিনেছিলাম। কারণ, ওই প্রবলেমের কারণেই প্রায় জলের দরে পেয়ে গেছিলাম আমি বাড়িটা।’
“গলাখাঁকারি দিয়ে নন্দকিশোর একটু গলা পরিষ্কার করে নেন। গলার ভিতর থেকে কেমন ফ্যাঁসফেঁসে আওয়াজ বের হয়। হয়তো সর্দি হয়েছে, তাই। আমি শুনতে থাকি।
“আজ আলো নেই। আপনাকে একটু চা খাওয়াতে পারলাম না।’
“না না, থাক। তার কোনও প্রয়োজন নেই। আপনি প্রবলেমটা কী বলুন।’
“হ্যাঁ, ওই আর কী, মাঝেমধ্যে তেনারা দেখা দেন।’ একটা ভয়াল দেঁতো হাসি হেসে সমস্যাটার কথা উচ্চারণ করেন নন্দু ডাক্তার। চমকে উঠি আমি। বাড়ি খোঁজার তাড়ায় হঠাৎ করে অমন জায়গায় চলে যাওয়াটা বোকামি হয়েছে বলেই মনে হতে লাগল। ঠিকানাটা নিয়ে পরে একদিন মহেশ্বর তারানিয়ার সাথে দিনের বেলা গেলেই হত।
“আরেকবার গলা পরিষ্কার করে নেন নন্দবাবু। ফের ফ্যাঁসফ্যাঁস শব্দ। আমার ওঁর দিকে তাকাতেই ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল এক দৌড়ে পালিয়ে যাই। কিন্তু মনে হচ্ছিল, পালাচ্ছি বুঝলেই উনি হয়তো ক্যাঁক করে ঘাড়ের কাছটা ধরবেন!”
এবার রাজা রূপসার গায়ে সেঁটে যায়। মুখে ফুটে ওঠে ভয়ের চিহ্ন।
“আমি ঘামতে থাকি। মনে হতে থাকে অমন বাড়ি ‘ভাড়া নেব না’ বলে যদি উঠে চলে আসতে চাই, উনি হয়তো আমাকে আর উঠে আসতেই দেবেন না। মনে হতে থাকে আমি কেমন যেন একটা ফাঁদে পড়ে গেছি।
“নন্দু ডাক্তার ফের গলা পরিষ্কার করেন। ফের সাইঁসাঁই শব্দ। ফ্যাঁসফেঁসে আওয়াজ। আমাকে আড়চোখে একবার দেখে নেন। আমি চমকে উঠি। কান্না ভেজা চোখে আলো পড়লে যেমন জ্বলজ্বল করে, ওঁর চোখগুলো কি সেরকমই লাগল! ঘরে তো কোনও আলো ছিল না। উনিও কিছু জ্বালানোর নামটি করলেন না।
“আপ-আপ-আপনি এক-একাই থাকেন?’ কথা তোতলাতে তোতলাতে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
“ঐ বিবি মারা গেল তেনাদের হাতে… তারপর একা।’
“বলে কী লোকটা! আমার তো হৃৎপিণ্ড চলকে উঠল!
“তারপরই বাড়িটা ভাড়া দেবার জন্য ইস্টিশানে একটা অ্যাড লটকিয়ে দিলাম, বুঝলেন।’ আমার দিকে তাকিয়ে ফের আস্তে আস্তে নন্দু ডাক্তার উচ্চারণ করলেন, ‘তারপর থেকে মাঝেমাঝেই আপনার মতো দুয়েকজন কাস্টমার চলে আসেন, তাই আর একা লাগে না।’
“আমি ওঁর দিকে ভয় ভয় চোখে তাকালাম। ওঁর চোখে কেমন যেন একটা ক্রুর দৃষ্টি। ঠিক শিকারের উপর লাফিয়ে পড়ার আগে ঝোপের আড়ালে লুকানো চিতার চোখে যেমন থাকে।
“ওই দেখুন,’ বলে বাড়ির উঠোনের বাগানের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন নন্দকিশোর। ‘একটা বাঁশের মাচা দেখতে পাচ্ছেন?’
“দেখলাম, একটা অন্ধকার ঝুপসি মতো। হ্যাঁ, মাচার মতোই লাগছে। কিন্তু হঠাৎ বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সেখানে দুটো চোখ যেন জ্বলজ্বল করছে আমার দিকে তাকিয়ে। হ্যাঁ, তাকিয়ে আছে আমারই দিকে।
“ম্যাঁও!’ বলে হঠাৎ করে একটা আওয়াজ। আমি চমকে উঠলাম। আমার চমকে উঠা দেখে হাসলেন নন্দকিশোর।
“ও কিছু না। এখন একটা কালো বেড়াল শুয়ে থাকে ওখানে।’ উনি একটা বিশ্রী হাসি মাখা মুখে বললেন।
“আমি কিছুটা ধাতস্থ হই। তবুও ভিতরে ভিতরে মনে হয় যত তাড়াতাড়ি হোক পালাতে হবে।
“হ্যাঁ, যা বলছিলাম। ওই মাচার উপর মৃত অবস্থায় দেখতে পাই আমার বিবিকে একদিন সকালে। চিৎ অবস্থায় আকাশের দিকে মুখ। দু’চোখ বিস্ফারিত। গলায় পরনের শাড়ি জড়ানো। আর বুকে গভীর আঁচড়ের দাগ। মাচার নিচে রাখা ছিল একটা থালা। আর সেই থালাটা ভর্তি রক্ত!’
“প্লিজ, স্টপ! জল… জল… একটু জল দেবেন আমাকে?’ শুকনো গলায় হাঁফাতে হাঁফাতে বলি আমি।
“আমার অবস্থা দেখে জল আনতে উঠে গেলেন নন্দকিশোর। উনি ভুলটা করলেন। আর তাতেই আমি সেদিন বেঁচে গেলাম।”
“কী হল, মামা?” উদ্বিগ্ন স্বরে ঝিলমিল প্রশ্ন করে। রাজা আর রূপসাও অবাক চোখে তাকায়।
“পালালাম। এক দৌড়ে। বাইরে বেরিয়েই ছিটকানি লাগিয়ে দিলাম দরজায়। বিশ পা এগোতেই দেখি সামনে একটা ছায়ামূর্তি! নন্দকিশোর নাকি! ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যাই। আমার বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যায়। ছুটে পালাব কি না ভাবতে লাগলাম। উফ্, আজ এখানে আসাটা কি চরম বোকামিই না হয়ে গেল! আমি ঘামতে শুরু করলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাল। দেখলাম, একটা দেহাতি বুড়ো কাঁধে কুড়ুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারলাম, রাতে গাছ-টাছ কাটতে বেরিয়েছে হয়তো। গলা তুলে লোকটা জিজ্ঞেস করল, ‘কৌন হ্যায়?’
“ম্যায়।’ বলে এগিয়ে গেলাম লোকটার দিকে। জ্বলন্ত বিড়ির আগুনে লোকটার ঈষদুজ্জ্বল মুখের দিকে তাকালাম।
“কোথায় যাবেন বাবু?’ লোকটা প্রশ্ন করল।
“যাব না, এসেছিলাম। এই নন্দু ডাক্তারের বাড়ি।’
“কেউ তো ওরা বাড়িতে নেই! একমাস আগেই এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।’
“ডাক্তারবাবু তো আছেন। ওঁর সাথেই কথা হল।’
“ডাক্তারবাবু!’ আঁতকে ওঠে লোকটা।
“হ্যাঁ, নন্দু ডাক্তার!’
“অ্যাঁ! নন্দু ডাক্তার খুন হবার পরই তো বৌদি ছেলেমেয়েদের নিয়ে পালাল!’
“কী!’ চিৎকার করে উঠি আমি। আমার হৃৎপিণ্ড ছিটকে যেন গলার কাছে উঠে আসে।
“লোকটা হঠাৎ দৌড় লাগাল বন-বাদাড় ভেঙে। হয়তো আমাকেই সে ভূত ভেবে বসেছিল। আমার বুক তখন ধকধক করে আওয়াজ করছে। লোকটা চলে যেতেই হঠাৎ আমার খুব শীত করতে লাগল। হাত-পা যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আর এই বুঝি কেউ যেন আমার ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, ভেবে আমি পিছন ফিরে বাড়িটার দিকে তাকালাম। দোতলার অন্ধকার বারান্দায় তখন কার যেন দুটো চোখ জ্বলজ্বল করছে। পড়িমড়ি করে দৌড় লাগালাম আমিও।”
“মামা, এটা গল্প, না সত্যি?” আদুরে গলায় প্রশ্ন করে ঝিলমিল।
রূপসার কোলের উপর উঠে বসা রাজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ফের একটা চুরুট ধরালেন অরণ্যমামা।