অনুষ্টুপ শেঠ-এর আরো গল্পঃ… ওলটপালট, মেডেল, দোকান, যাত্রা
অনুষ্টুপ শেঠ
ফাইনালে, ‘বলয়-বলীয়ান সংঘ, জি রিং, স্যাটার্ন’ এর মুখোমুখি হল ‘তেঁতুলতলা তিমিরদলন তরুণদল, ভারত, পৃথিবী।’
এই ছায়াপথের সবচেয়ে গরীয়ান, সবচেয়ে উত্তেজক, সবচেয়ে প্রশংসিত, প্রচারিত, প্রকল্পিত টুর্নামেন্টে জায়গা পাওয়ার কথাই ছিল না তরুণদলের। এর ফর্ম তুলতে যেতে হয় মঙ্গলগ্রহের ফোবোস চাঁদের বলিষ্ঠ জোনের মর্মর ভবনে। সেটার প্যাসেজ মানি জোগাড় করাই অসম্ভব ছিল তাদের পক্ষে। তারপর সাজসরঞ্জাম কেনা, সবার জুপিটার আসার ব্যবস্থা করা – মুখের কথা নাকি! নিজের হাতে গড়া টিমকে যতই সম্ভাবনাময় ভাবুন, এদ্দূর অভ্রদীপ রয়চৌধুরীর কল্পনাতেও আসেনি।
সেই দল, শুধু ‘ইন্টার প্ল্যানেটরি পাড়াতুতো ক্রিকেট কাপ’ এ নাম লেখালই না, কেমন মাখনের মধ্যে ছুরি চালানোর মত অনায়াসে উঠে এল ফাইনালে। লিখতে যত সহজ, শুনতে মোটেই সহজ ছিল না। সিলেকশন রাউণ্ডে অস্ট্রেলিয়ার “মহান বাগাড়ম্বর সমিতি’ আর খোদ ইয়র্কশায়ারের ‘দ্য উইলো’ । নক আউট রাউণ্ডে মার্সের ‘ডিমোসপাড়ার লালচুলোরা’, নেপচুনের ‘টেলেপ্যাথেটিক প্লে অল ইউনিট’ আর পড়শী বাংলাদেশের ‘চাটগাঁ চমৎকারী দল’। কোয়ার্টার ফাইনালে চাঁদের নীল উপনিবেশের “দ্য চরকা ইলেভেন্স’। সেমিফাইনালে তো স্বয়ং বৃহস্পতির হোম টিম ‘বাবা বৃহদেশ্বর ক্রিকেট সমিতি’। প্রত্যেকটা গাঁট হেলায় পেরিয়ে গেছে তরুণদল।
এই সবই সম্ভব হয়েছে টোটোর ব্যাটের কল্যাণে।
২০৭৩ সাল থেকেই মানুষ চাঁদে আর মঙ্গলে বসবাস শুরু করে দিয়েছিল। যেমন প্রযুক্তি এগিয়েছে তেমন পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জনসংখ্যার হার। এই ৩৪৩৪ সালের জুলাই মাসে এসে একে একে সূর্যের সবকটা গ্রহই এখন ভরপুর বসবাস, নানান শেপের খুপরি বাড়িঘরে বোঝাই।
বিভিন্ন গ্রহের আলাদা মাধ্যাকর্ষণ, আলাদা কৃত্রিম আবহাওয়ার ডোম, কৃত্রিম জলাধার ও খাদ্যোৎপাদন ক্ষেত্রের আলাদা আলাদা স্থানীয় খনিজ পদার্থের প্রভাবে বাসিন্দাদের চেহারাগুলো কিছু কিঞ্চিৎ আলাদা আলাদা হয়েই গেছে৷ বৃহস্পতির লোকেরা যেমন অত্যধিক বেঁটে, বা বুধের লোকেদের মাথার পিছন দিকটা নোড়ার মত লম্বাটে শেপের।
ছ মাস আগে যখন বর্ধমানের থেকে একুশ কিলোমিটার দূরের তেঁতুলতলা গ্রামে পোস্ট ডক্টরেট রিসার্চ করতে এসেছিল টোটো, তখন ওর সজনেডাঁটার মত লম্বা লম্বা আঙুল, বুদ্ধদেবের মত ঝুলন্ত কানের লতি আর সদাসর্বদা ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ গ্রামের সবার চোখেই অভিনব ছিল।
তবে, ওদের দৌড় তো চাঁদের গোলমুখো রুপোলি চুলের স্কুল ইন্সপেকশন টিম বা বড়জোর সেই একবার শুক্রগ্রহের খাড়া নাক পিঠে কুঁজ পুরাতত্ত্ববিদদের দল যারা পুরোনো সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরটার মাপজোক করতে এসেছিল, সেই অবধি। প্লুটোর বাসিন্দারা কেমন দেখতে সে তারা আর কী করে জানবে! সেখানে যে উপনিবেশ হয়ে গেছে সত্তর বছর আগে তা-ই প্রথম জানল এখন। খুব ছোট উপনিবেশ নাকি, নানান সমস্যায় জর্জরিত জায়গা, তাই আন্তঃসৌর কোনো অনুষ্ঠানেই তারা যোগদান করতে পারে না৷
টোটো বহু কষ্টে এই স্কলারশিপটা পেয়েছে, এটুকুই সবাই জানে। ছেলেটা বাড়ির ব্যাপারে কথা বলতে চায় না, তাই কেউই খোঁচায়নি আর। কী রিসার্চ তাও কেউ ভাল জানে না। নানান প্রশ্ন করে বেড়াচ্ছিল লোককে ওদের গ্রামে ক্রিকেটের উৎপত্তি প্রতিপত্তি এসব নিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই, গ্রামের একমাত্র কোচ অভ্রদীপের খোঁজ পেতে দেরি হয়নি। গতবার নিখিল বঙ্গ ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে তেঁতুলতলাকে জেতানো কোচ, ইয়ার্কি না!
ছেলেটার লম্বা আঙুল দেখে মজা করার জন্যই এক ওভার ব্যাট করতে ডেকেছিল অভ্রদীপ। টিমের প্র্যাকটিশ ট্রেনিং চলছে তখন, বল করছে ওদের সবচেয়ে ফাস্ট বোলার মুকুল সমাদ্দার। তা বল করবে কি, রান আপ নিতে গিয়ে টোটোর ব্যাট ধরা দেখেই সে হেসে অস্থির। ব্যাটটা সোজা ধরতে অবধি জানে না ছেলেটা, উইকেটকীপার সায়ন্তনী শেষে ফ্ল্যাট দিকটা সামনে করে দিয়ে গেল।
তারপর আর কিছু দেখতে পেল না কেউই। একটা ঝলক, মাঠের একদম অন্যপ্রান্তের নিমগাছটা থেকে একগাদা কাক হাউমাউ করে উড়ে পালাল।
পরের বলটা খুব সিরিয়াসলি সর্বশক্তি দিয়ে করেছিল মুকুল। এবার মাঠের বাঁদিকের দে বাড়ির দোতলার একটা কাচ ভাঙল।
অভ্রদীপ নিজেই বল হাতে নিয়েছিল তারপর। নিখুঁত লাইন লেংথের সঙ্গে চোরা বিষাক্ত স্পিন, ওর বল মাটিতে পড়ার পরে বেমক্কা ঘোরে।
এবার নিমগাছের পিছনের মাঠের রেলিংএর বাইরে, রাস্তার ওপারের বরুণ মান্নার দোকানের দু কিলো চানাচুর স্রেফ বরবাদ হয়ে গেল ছত্রখান হয়ে পড়ে।
দে বাড়ির রাগী মাসিমা, বরুণ মান্না সবার গালাগাল একান দিয়ে ঢুকিয়ে ওকান দিয়ে বার করে দিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরেছিল অভ্রদীপ। একটাই শুধু ভাবনার জায়গা ছিল৷ তা বাড়ি ফিরে রুল ম্যানুয়াল তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে নিশ্চিন্ত হল শেষমেশ। বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন স্টাম্পের ওপর বেল না রেখেও খেলা যায়, তেমনি বিশেষ অনুমতিসাপেক্ষে ভিনদেশী বা ভিনগ্রহীকেও এই টুর্নামেন্টে নিজের টিমের হয়ে খেলানো যায়।
সেই অনুমতিটুকু অভ্রদীপ আনিয়েছিল। তারপর প্রথম ম্যাচে টোটোর খেলা দেখামাত্র হু হু করে স্পন্সরশিপ জুটে গেছে। জাম্ববান অ্যালায়েন্স তো একাই ৫০% খরচ টেনে দিল!
বলয়-বলীয়ান সংঘের প্লেয়ারদের সাংঘাতিক চেহারা৷ কম করে সাড়ে ছ ফুট লম্বা আর নব্বই কেজি ওজন একেকজনের। টসে জিতে তারা যখন সারা মাঠে ফিল্ডিং পোজিশন নিল, তরুণদলের ওপেনিং প্লেয়ার শ্যামল আর রঞ্জাবতীকে তাদের মধ্যে লিলিপুট মনে হচ্ছিল।
প্রথম বলটাই এল গাঁক করে। রঞ্জা এমনিতে মারকুটে প্লেয়ার, সেও কুঁকড়ে গেল একটু।
পরেরটা তার চেয়েও বেশি লাফাল। ব্যাট তুলেও ছোঁয়াতে পারল না রঞ্জা।
বাকি চারটে নির্বিষ হল, ঠেকাতে পারল সে। মেডেন ওভার গেল।
পরের বোলার তুলনায় ক্ষীণকায়। কিন্তু বলের জোর প্রায় তেমন, আর লাইন লেংথ নিখুঁত। তিনটে ঠেকাল শ্যামল, চার নম্বরটা মারল কিন্তু সামনেই দাঁড়ানো ফিল্ডার আটকে দিল তার বাউন্ডারি যাত্রা। পাঁচটা ব্যাটে বলে হল না, আর ছ নম্বরে এত বাইরে বল করল লোকটা যে শ্যামল স্রেফ বেকুব বনে গেল। ওর ব্যাটের পাশ দিয়ে বেশ ‘গড়ের মাঠে হাওয়া খাচ্ছি বেশ করছি’ স্টাইলে বলটা গিয়ে টুক করে বেল ফেলে দিল।
ওয়ান ডাউনে অভিষেক নামে। ওদের এত কালের স্টার প্লেয়ার। লাইমলাইট এখন পুরো টোটোর দিকে চলে গেছে বলে সে আজকাল খুবই ম্রিয়মাণ, তবে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে তার জুড়ি নেই। পরের ওভারে আগের গাঁক গাঁক করে বল করা লোকটাই এসেছিল, অভিষেক আর রঞ্জা মিলিয়ে চার রান পেল এই ওভারে।
তারপরের দু ওভারে রান উঠল সতেরো। অভিষেক ঠান্ডা মাথায় ধরে খেলল, রঞ্জা সেট হয়ে এসেছে, সে চালাল। রঞ্জার তিনটে ছয় নিয়ে স্কোর যখন ৩৯-১, নতুন বোলার আনল বলয়-বলীয়ান। এতক্ষণ ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে ছিল বলে হয়তো অতটা বোঝা যায়নি। এর সামনে শনির বাকি প্লেয়াররাও খর্বকায়, এত ঢ্যাঙা। বল ছুঁড়ছে, না মিসাইল বোঝা দায়!
প্রথম দুটো বল ডাক করেছিল অভিষেক। তিন নম্বরটা ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বাউন্ডারির দিকে দৌড়চ্ছে দেখে রানের কল নিল। দু রানই নেবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু হল না।
পরের বলটা ছেড়ে না দিয়ে রঞ্জা মারতে গেল। লোপ্পা ক্যাচটা বোলার নিজেই হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলল।
এবার টোটো নামল। এদ্দিনে খেলা দেখে ওদের স্ট্র্যাটেজি সবাই বুঝে গেছে, একদিকে অন্যরা উইকেট ধরে রাখে আর টোটো ওভারে তিনটে চারটে করে ছয় মারে। আজও ঠিক তাই হল। তফাতের মধ্যে অভিষেক একটা ভুল স্পিনে খোঁচা মেরে উইকেটকীপারের হাতে ধরা পড়ে যাবার পর অন্যরা আর সেভাবে দাঁড়াতেই পারল না বেশিক্ষণ। পুরো কুড়ি ওভার হবার আগেই অল আউট হয়ে গেল ২১৪ রানে।
ব্যাট করতে নেমে তাণ্ডব চালাল বলয়-বলীয়ান। অভ্রদীপের মুখে ক্রমশঃ কালো ছায়া ঘনাচ্ছিল। ব্যাটিংটা একটু দুর্বল হলেও, বোলিং লাইন প্রচণ্ড স্ট্রং তরুণ সংঘের। আর এরাও তো ওদের মতই পাড়ার ক্লাব, প্ল্যানেট লেভেলে খেলে এমন কোনো প্লেয়ার এতে নামতে পারে না। কিন্তু এই লোকগুলো ওদের স্পিনার পেসার সবাইকে নিয়েই ছেলেখেলা করছে পুরো। সেই ফাঁকে উইকেটও পড়ছে সেটা ঠিক, কিন্তু রান ওঠার গতির সামনে সেটা কোন সান্ত্বনা নয়।
স্কোর ১৮৯-৭ হয়ে যেতে টেনশনে কুলকুল করে ঘামছিলেন অভ্রদীপ। এত কাছে এসেও এভাবে ফসকে যাবে? এখনো তিন ওভার বাকি! কিন্তু বাকি বোলারদের কোটা শেষ প্রায়, শুধু দেবলীনা বেঁচে আছে। দেবলীনা স্পিনার, আগের এক ওভারে এদের হাতে যা মার খেয়েছে যে আর দেননি ওকে এখনো।
উপায় নেই। তিন ওভার, একটা চিন্ময় করবে যা পারে, বাকি দুটো একেই দিতে হবে। মানে চিন্ময় শেষ ভরসা। দেবলীনার এক ওভারে তিনটে চার আর একটা ওয়াইড হল। জিততে আর তেরো রান বাকি, হাতে তিনটে উইকেট, দু ওভার।
চিন্ময় অসম্ভব ঠাণ্ডা মাথায় মেপে দুর্দান্ত বল করল ওর শেষ ওভারে। একটাও চার বা ছয় নিতে দিল না। তবু ছটা রান হয়েই গেল ফাঁকফোকরে।
লাস্ট ওভার বাকি। রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মত জিভ চাটছে বলয়-বলীয়ান। পুরো স্টেডিয়ামে তাদের সাপোর্টারদের তীক্ষ্ণ সানাইয়ের মত হুইসলের শব্দে কান পাতা দায়।
বলটা এগিয়ে দেবার সময় অভ্রদীপের হাত কাঁপছিল। দেবলীনার শুধু হাত নয় সারা শরীরই কাঁপছিল, তাই হয়তো হাত ফসকে পড়ে গেল।
পাঁচটা সজনেডাঁটার মত খাড়া লম্বা আঙুল সেটা কুড়িয়ে নিল।
“আমি করতে চাই, সার্!’
দেবলীনা তখনো হিস্টিরিয়া রোগীর মত কাঁপছে। নার্ভ ফেল করছে বেচারির। ঝটিতি সিদ্ধান্ত নিলেন অভ্রদীপ, কী আর ক্ষতি! ম্যাচ এমনিও গেছে, অমনিও। চাইছে, করুক।
টোটোর ল্যাগব্যাগ করে চূড়ান্ত আনাড়ির মত ছুটে আসা দেখে সারা স্টেডিয়াম হাসিতে ফেটে পড়ল। এমনকি আম্পায়ার পর্যন্ত ওকে থামিয়ে নিচু গলায় কিছু বলছেন দেখা গেল। খুবই লজ্জিত বিব্রত মুখে আবার পা গুনে গুনে ফিরে গেল সে।
হাত ঘোরানো আর লম্বা আঙুলগুলো ফুল ফোটার মত ছড়িয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু দেখতে পেল না কেউ। উইকেটকিপার শমীক হতভম্ব হয়ে দেখল বল ভেবে সে একটা লাফিয়ে উঠে আসা স্টাম্পকে চেপে ধরেছে।
পাঁচ বল। সাত রান।
নতুন ব্যাটসম্যান ঝুঁকি নিল না। ঠুকেছিল, কিন্তু একটাই মোটে রান নিতে পারল।
তার পরের বলটা পোষা কুকুরের মত সোজা উইকেটকিপারের হাতে পৌঁছে গেল। এত জোরে এসেছে কেউ দেখতেই পায়নি।
অভ্রদীপ উত্তেজনায় লাফাচ্ছিল। সারা স্টেডিয়াম চাগিয়ে উঠেছে হিসেব ঘুরতে দেখে। কিন্তু পরের বল মাটি ঘেঁষে সুইপ – ধরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল অভিষেক।
বাউন্ডারি।
দু বল, দু রান।
টোটো অভিষেকের দিকে তাকাল একবার। তারপর আবার ল্যাগব্যাগ করে দৌড় শুরু করল।
বলটা পুরোটা আসার আগেই ব্যাট চালিয়েছিল ব্যাটসম্যান। তার দোষ নেই। এতক্ষণ যা দেখল তাতে এরকম সুপার স্লো স্পিন সে আশা করতেই পারেনি। ব্যাটে লেগে গুড়গুড় করে গিয়ে স্লিপে ফিল্ডারের হাতে জমা পড়ে গেল।
নো রান।
সারা স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়েছে এখন। শেষ বল। একটা রান হলেও ম্যাচ ড্র করে নেবে বলয়-বলীয়ান।
টোটো কারো দিকে তাকায়নি, শুধু রান আপটা একটু বেশি নিয়েছিল। সুন্দর গতির বল, পড়ে বেঁকে গিয়ে টুক করে লেগ স্টাম্পটা হেলিয়ে দিল।
সারা মাঠ গর্জনে ফেটে পড়লেও, অভ্রদীপ হাউ হাউ করে কাঁদছিলেন।
টিম তেঁতুলতলা ফিরে এসেছে গতকাল সবে। ভোরের আলো ফোটার একটু আগে, যে ঝাঁকড়া তেঁতুলগাছের নামে গ্রামের নাম তার পাশের সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পিছনের চাতালে একটা দীপ্ত আলোকশিখা দেখা গেল। তবে বেশিক্ষণ না।
সেটাকে তারপর আবার দেখা গেল এই ছায়াপথ পেরিয়ে বহু দূরে, এম ৮২ বা সিগার গ্যালাক্সির সুপারনোভার চারদিকে ঘোরা টি২০ গ্রহকণায়।
***
বহুদিন ধরে ওদের বসবাস এখানে। বিশ্বদর্শনের অংশ হিসেবে, ২০১০-এ একটা মিশন পাঠিয়েছিল পৃথিবীতে। তখন পৃথিবী দেখতে অন্যরকম ছিল, সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে গিয়ে মুম্বই কলকাতা জাপান এসব ডুবে যায়নি। মিশনটা পুরো শেষ হয়নি, পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা তাদের অতি অনগ্রসর যন্ত্রেও একটা আননোন অবজেক্ট থেকে রেডিও সিগনাল ধরে ফেলেছিলেন বলে তড়িঘড়ি ফিরে আসতে হয়েছিল সে-দলকে।
তবে অনেক অনেক জিনিস সঙ্গে আনতে পেরেছিল তারা। সেসব এখন লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটা বিশেষ সেকশনের ছবি, ভিডিও, নিউজক্লিপ, এসব নেশাগ্রস্তের মত মোহিত করে রেখেছিল তার পুরো স্কুল আর কলেজ লাইফ। কতবার পড়েছে, কতবার দেখেছে তার ইয়ত্তা নেই।
আর দিনকে দিন লোকটার ভক্ত হয়ে উঠেছে। আপাদমস্তক মুগ্ধ ভক্ত।
তার নিজস্ব ল্যাবের দেওয়াল জোড়া পোস্টারটার সামনে দাঁড়িয়েছিল টোটো। এই ছবির লোকটার জন্যই ওর রিসার্চ পেপারের নাম, ‘ক্রিকেট – সৌরজগতের এক অতুলনীয় ক্রীড়ার উদ্ভব ও বিবর্তন’। এই লোকটার জন্যই পোস্ট ডকে অমন বেমক্কা প্রোজেক্ট নিয়েছিল ও – রিয়াল এক্সপিরিয়েন্স অফ আ ক্রিকেট ম্যাচ ফাইনাল।
দেওয়াল থেকে ওর দিকে চেয়ে মিটমিট করে হাসছিলেন ২০০৮ এ হিরো কাপ ফাইনালে লাস্ট ওভার বল করে একা হাতে ম্যাচ জেতানো কোঁকড়া চুলের ব্যাটসম্যানটি।
অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর
হাহা…তুখোড়। সেই কোঁকড়া চুলের ব্যাটসম্যান না থাকলে আমাদের ছোটবেলা যে কি হত?
LikeLike