গল্প আলো ছায়ার খেলা ঋতা বসু শরৎ ২০২০

ঋতা বসুর আরো গল্পঃ শিকার ও শিকারীমিষ্টিবুড়ির কাণ্ড, ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি, মৌটুসীর বাসা, বিজু যা দেখে

আলোছায়ার খেলা

ঋতা বসু

ছেলেকে ছবি আঁকার ক্লাসটায় ছেড়ে দিয়ে সমীরণ আবার ভালো করে উলটোদিকের বাড়িটার দিকে তাকাল। বাড়িটার গায়ে আলো এমন অদ্ভুতভাবে এসে পড়েছে যে তুলতে পারলে একটা বেশ অন্যরকম ছবি হবে।

একটি নামকরা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির মাঝারি মাপের কর্তা সমীরণের শখ হল ফটোগ্রাফি। সে শুধু সাদাকালো ছবি তোলে বলে বাড়িতেই একটা ডার্ক রুম বানিয়ে নেগেটিভ ডেভেলপ করা থেকে ছবি প্রিন্ট করা পর্যন্ত সমস্ত কাজটাই সে নিজে করে। অফিসের সময়টুকু বাদ দিয়ে পুরো সময়টাই তার এই শখের জন্য বরাদ্দ।

গত রবিবারেই সে লক্ষ করেছিল, ড্রয়িং ক্লাসের ঠিক উলটোদিকে দুটো বাড়ির মাঝখান দিয়ে আসা আলোর জন্য দেয়ালের গায়ে একটা অদ্ভুত নকশা তৈরি হয়েছে। সেইজন্য সে এই রবিবারে ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত হয়েই এসেছে। আজ ছেলে বেরোতে একটু দেরি করেছে। আলোটা সরে গিয়েছে অন্যদিকে। সে যেমন ভেবেছিল তার থেকে একটু অন্যরকম হয়ে গিয়েছে ছবিটা। তা হোক। আজ সে মনস্থির করে এসেছে তুলবে বলে। দেখাই যাক না কেমন হয়। এখন কয়েকটা তুলবে। তারপর পরের রবিবার আবার চেষ্টা করবে। একটা মনের মতো ছবির জন্য এটুকু কষ্টস্বীকার করাই যায়। সমীরণ ল্যাম্প পোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে শুরু করল। ভালোই হয়েছে ল্যাম্প পোস্টের আড়াল থাকায়। নয়তো এখনই দু-চারটে লোক এসে জড়ো হবে। হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে, আর সমীরণের মনঃসংযোগের বারোটা বাজবে। খুবই বিরক্ত লাগে। মোবাইল ফোন হলে কেউ ফিরেও তাকায় না। কিন্তু হাতে ক্যামেরা থাকলে এখনও লোকজন যেন কেমন কৌতূহলী আর সন্দিগ্ধ হয়ে পড়ে। শুধু শুধু একটা লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে—এটা ঠিক হজম করতে পারে না। সমীরণের এক ফটোগ্রাফার বন্ধুকে হাওড়া ব্রিজের কাছে তো একবার স্পাই বলেও মন্তব্য শুনতে হয়েছে। সমীরণের অবশ্য অতটা কখনও হয়নি। সে শান্তিপ্রিয় মানুষ, ঝুটঝামেলা এড়িয়ে নিজের কাজটা করতে ভালোবাসে।

সমীরণ কিন্তু এখনও পর্যন্ত জানে না আজকের এই ছবি তোলা নিয়ে কী ঘটতে চলেছে তার জীবনে।

রোদ একটু চড়া হয়ে আলোটা অন্যরকম হয়ে গিয়েছে। সমীরণ মন দিয়ে ছবি তুলতে লাগল। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলে চলেছে। হঠাৎ পেছনের কালো কাচের জানালা দিয়ে ঘেরা বাড়িটার একটা ছোট্ট ঝুল বারান্দায় একটা লোক বেরিয়ে এল। আর একটা সিগারেট প্যাকেট রাস্তায় ছুড়ে দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেল।

আচমকা একটা অবাঞ্ছিত মুখ ঢুকে পড়ে ছবিটা নষ্ট হয়ে গেল বলে সমীরণ বিরক্ত হয়ে ক্যামেরা ব্যাগে ভরে ফেলল। মনে মনে ভেবে রাখল পরের রবিবার আর একটু আগে এসে সে ছবিটা তুলবার চেষ্টা করবে।

নির্দিষ্ট দিনে সমীরণ আবার এল। সবে দু-তিনটি ছবি তুলেছে, এমন সময় কালো কাচওলা বাড়ির ভেতর থেকে দারোয়ান বেরিয়ে এসে বলল, “আপনি কেন আমাদের বাড়ির ছবি তুলছেন?”

সমীরণ বিরক্তি চেপে যথাসাধ্য হাসি মুখে জবাব দিল, “তোমাদের বাড়ির ছবি তুলছি না।”

দারোয়ানটি তবুও বলতে লাগল, “আপনি ওদিকে সরে যান। বড়ির সামনে দাঁড়ালে আমাদের বাবু রাগ করেন।”

সমীরণ এই আকাট লোকটাকে কী করে বোঝাবে আলোছায়ার খেলাটা এখানে। ওদিকে সরে গেলে সে কীসের ছবি তুলবে? বাড়িটা নিয়ে বাবু আর বাবুর কর্মচারীর বোধহয় খুব গর্ব আছে। নয়তো এই কালো কাচে ঢাকা বিকটদর্শন বাড়িটা যে তার ছবি তোলার বিষয়বস্তু হতেই পারে না, সেটা তারা বুঝতে পারত। সমীরণ লোকটিকে একেবারে পাত্তা না দিয়ে আরও দশ-বারোটা ছবি তুলে গম্ভীরভাবে গাড়িতে স্টার্ট দিল।

ছেলের আঁকার ক্লাসে বসে ম্যাগাজিনের পাতা ওলটে প্রায় ঘণ্টা দুই সময় কাটিয়ে ছেলেকে নিয়ে সমীরণ ক্লাসের বাইরে বেরিয়ে দেখে বেজায় ভিড়। ছেলে ভয়ে ভয়ে বলল, “বাবা, এখানে খুব গোলমাল হয়েছে মনে হয়। দেখো পুলিশের গাড়ি।”

সমীরণও দেখল কিন্তু কাউকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল না। সারাক্ষণই তো কিছু না কিছু গোলমাল লেগেই আছে আর তা দেখতে বেকার লোকজনের ভিড়ও বেড়ে চলেছে পাল্লা দিয়ে। এখন ভিড় কাটিয়ে এখান থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

এইসব ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাছে এসে সে অবাক হয়ে গেল। তার গাড়িটার গায়ে চেপে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ ভ্যান। সেটা না নড়লে তার গাড়ি একচুলও নড়ানো সম্ভব নয়। সমীরণ আশ্চর্য হয়ে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ অফিসারটিকে জিজ্ঞেস করল, “কী ব্যাপার বলুন তো?”

সে বলল, “এটা আপনার গাড়ি?”

সমীরণ ঘাড় নাড়তেই সে বলল, “আপনাকে ধরার জন্যই আমরা দাঁড়িয়ে আছি। আপনার নামে অভিযোগ আছে।”

“আমার নামে!” শান্তিপ্রিয় ভালো মানুষ সমীরণ এত অবাক হয়ে গেল যে বলার নয়।

“হ্যাঁ। আপনি সন্দেহজনকভাবে মিঃ বোসের বাড়ির ছবি তুলছেন। গত রবিবারেও আপনাকে দারোয়ান দেখেছে। আজ বারণ করা সত্ত্বেও ছবি তুলেছেন। মিঃ বোসের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা এসেছি। আপনাকে একবার থানায় যেতে হবে।”

সমীরণ তখনও ভাবছে কোনও সুস্থ মানুষের পক্ষে কি এতটা ভুল বোঝা সম্ভব? সে নিজের কার্ড বার করে অফিসারের হাতে দিয়ে বলল, “দেখুন আমি এই ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছি আজ সতেরো বছর। ফটোগ্রাফি আমার হবি। যারা এই ব্যাপারে খোঁজ রাখে তারা আমার নাম জানবে। এই আমার ঠিকানা, ফোন নম্বর। ছবিটা প্রিন্ট করলে পর আমার বাড়িতে গিয়ে দেখে আসবেন কী ছবি তুলেছি।”

পুলিশ অফিসারটির মুখ দেখে মনে হল ব্যাপারটা এখানেই মিটিয়ে ফেলতে পারলে সে বেঁচে যায়। কিন্তু মিঃ বোস লোকটির জন্য সমীরণকে থানায় যেতেই হল। তবে দু-চারটে উড়ে আসা মন্তব্য থেকে সমীরণ বুঝল, এই মিঃ বোস মানুষটির মোটেই সুনাম নেই। থানার ওসির সঙ্গে বন্ধুত্বের সুবাদে এর আগেও অনেককে এভাবে হেনস্থা করেছে।

থানায় কথা প্রসঙ্গে জানা গেল মিঃ বোসের গয়না, দামি পাথরের ব্যাবসা। হয়তো বাড়িতে সবসময় কিছু না কিছু মজুত থাকে বলে তিনি অতিরিক্ত সাবধানী। সেটা বুঝেই সমীরণ শান্তভাবে বলল, “আমাকে দেখে কি আপনার বদ লোক বলে মনে হচ্ছে? আপনার পাড়ায় আমি তো প্রত্যেক রবিবারেই আসি। সবাইকে দেখিয়েই ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়াই, ছবি তুলি। লুকিয়ে তো কিছু করি না। তাছাড়া এটা নিষিদ্ধ এলাকা নয়। যে কেউ ছবি তুলতে পারে। আমি বলছি, আপনার বাড়ির ছবি তোলা আমার উদেশ্য নয়। তবুও যদি না বিশ্বাস করেন তো আমি নাচার।”

ওসি ভদ্রলোক বন্ধুর খাতিরে প্রথমে একটু পুলিশি ভাবভঙ্গী করলেও পরে অনুরোধ করেই বললেন, “যাক গে, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিছু মনে করবেন না। তবে মিঃ বোস এত আপসেট হয়ে পড়েছেন বলে রিকোয়েস্ট করছি ছবির নেগেটিভটা একটু দেখিয়ে যাবেন।”

সমীরণেরও আর ভালো লাগছিল না। এদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। যদিও কিছুই বুঝবে না, তবুও শুধু নেগেটিভ দেখেই যদি এই অসুখী সন্দিগ্ধ চেহারার লোকটা শান্তি পায় তো সে দেখিয়ে যাবে।

বন্ধুবান্ধবরা রাগারাগি করলেও পরদিন সমীরণ থানায় ওসিকে সাক্ষী রেখে মিঃ বোসকে ছবির নেগেটিভ দেখিয়ে এল।

এমন বহুবার হয়েছে, ঠিক মনের মতো হয়নি বলে রোলের পর রোল ছবি তুলে সমীরণ আর ডেভেলপই করেনি। এই ছবিটারও হয়তো সেই দশাই হত, কিন্তু এই গোলমালটার জন্য সমীরণ ঠিক করল সময় পেলেই এই ছবিটা সে ডেভেলপ করবে এবং এক কপি অতি অবশ্যই মিঃ বোসকে পাঠাবে। ওঁর একটু দেখা দরকার কী সামান্য নিরীহ একটা ব্যাপার নিয়ে উনি কতদূর বাড়াবাড়ি করেছেন।

এরপর সমীরণ অফিসের নানারকম কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ছবিটা ডেভেলপ করার আর সময়ই পেল না। কয়েকদিনের মধ্যে সমীরণদের ক্লায়েন্ট গোল্ডলাইন গয়নার দোকানে বিরাট বড়ো ডাকাতি হয়ে গেল। মাত্র দু’জন ডাকাত মিলে অত বড়ো কাণ্ডটা করেছে। দারোয়ান প্রাণের ভয় না করে গুলি চালিয়েছিল। একজন ডাকাত আহত হয়েছিল। তার সঙ্গী কোনও ঝুঁকি না নিয়ে দারোয়ান এবং আহত ডাকাত দু’জনকেই গুলি করে সব কর্মচারীদের স্ট্রং রুমে বন্ধ করে লুটের মাল নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। ডাকাতির বহুক্ষণ বাদে পুলিশ খবর পায়।

সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল লুটের মালের সঙ্গে দোকানের কাগজপত্র, বিল ইত্যাদিও কীভাবে যেন লোপাট হয়ে গেল, তা বোঝাই গেল না। ডাকাতির পর জরুরি কাগজপত্র না পাওয়া যাওয়াতে ব্যাপারটা আরও জটিল হয়ে উঠল। গোল্ডলাইন দোকানের মালিক রমণীবাবুর সঙ্গে সমীরণের বেশ হৃদ্যতা। ব্যাবসার কাজ ছাড়াও মাঝে মাঝে অন্যান্য ব্যক্তিগত কথাও হয়। সেইজন্য সমীরণ নিজে যথেষ্ট আগ্রহ নিয়েই আগাগোড়া এই তদন্তের কাজে জড়িয়ে ছিল। বিশেষ কিছু করা গেল না। ইনস্যুরেন্স থেকে কাগজপত্রের গরমিলের দরুন যত টাকা পাওয়া গেল, ক্ষতি হয়েছে তার চতুর্গুণ। রমণীবাবু অত্যন্ত ভেঙে পড়লেন। এই ক্ষতি কতদিনে যে সামলে উঠতে পারবেন তার ঠিক নেই। অল্প বয়সে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এই দোকান দাঁড় করিয়েছেন। এই বয়সে আর সেটা সম্ভব নয়।

সবথেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হল, প্রথম অবস্থায় মনে হয়েছিল নিহত ডকাতের সূত্র ধরে এই রহস্যের মীমাংসা খুব সহজেই করা যাবে। কিন্তু এই লোকটিরও পরিচয় কিছুতেই বার করা গেল না। কোনও পুলিশ রেকর্ড নেই। কাগজ-টেলিভিশনে ছবি দিয়েও কোনও লাভ হল না। অবশেষে পুলিশ আর ইনস্যুরেন্স কোম্পানি দু-দলই হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিল। কোনও কিনারা হল না। বহুদিন বাদে হাঁফ ছেড়ে সমীরণ আবার ছবি নিয়ে বসল। তখন মনে পড়ল সেই বিতর্কিত ছবিটার কথা। প্রথমদিন তোলা ছবি থেকে কতগুলো বাছাই করে সলিউশন রেডি করে কয়েকটা ছবি সে এনলার্জ করল। একটা ছবিতে একটি মুখের তলার অংশটা ফুটে ওঠায় সমীরণ ভাবতে লাগল কীভাবে মুখটাকে বাদ দেওয়া যায়। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটা শিহরণ খেলে গেল। মুখটা চেনা চেনা লাগছে। গত কয়েক মাস এই মুখেরই নানা অ্যাঙ্গেলে তোলা ছবি দেখে দেখে একেবারে মনে গেঁথে গিয়েছে। সমীরণ একটার পর একটা ছবি এনলার্জ করে সম্পূর্ণ মুখটাকে ফুটিয়ে তুলল। এটি যে সেই মৃত ডাকাতটিরই ছবি, তাতে আর কোনও সন্দেহ রইল না।

এর পরের ঘটনা খুবই সংক্ষিপ্ত। সমীরণ সোজা লালবাজারের সি.আই.ডিতে যোগাযোগ করায় পুলিশ আবার নড়েচড়ে উঠল। তদন্তে প্রকাশ পেল রমণীবাবুদের সঙ্গে কালো কাচওলা বাড়ির মিঃ বোসের পারিবারিক শত্রুতা ছিলই। তার ওপর ব্যাবসায় রমণীবাবুদের বাড়বাড়ন্তের ফলে রেষারেষি আরও বেড়ে যায়। তার পরিণামে এই ডাকাতি। প্রতিবেশী রাজ্য থেকে অভিজ্ঞ নিরীহ দর্শন অথচ দুর্ধর্ষ দুটি লোককে এনে বাড়িতে কয়েকদিন রেখে পুরো ব্যাপারটার ছক কষা হয়। সবাই জানে লোক দুটি চিকিৎসার জন্য এসেছে। অসুস্থতার জন্য শুয়ে-বসেই থাকে। ঘর ছেড়ে বেরোয় না। বাড়ির মালিক মিশুকে নন বলে বাইরের কেউ যায়ও না ওই বাড়িতে।

কাকপক্ষীও টের পায়নি ভেতরে ভেতরে কী চলছে। সমীরণের ছবি তোলার মুহূর্তে লোকটি যদি আচমকা বাইরে না আসত, তাহলে এই ডাকাতি রহস্যেরও আর সমাধান হত না। সমীরণ সবার কাছেই খুব বাহবা পেল। তার সবথেকে ভালো লাগল রমণীবাবুর মুখের হাসি দেখে। ছবিটা অবশ্য যেমন ভেবে ছিল তেমন হল না। তা হোক। ভালো ছবি সে আবার তুলবে। কিন্তু নিজের অজান্তে একটা অসম্ভব কাজ সম্ভব করে যে আনন্দ সে পেল, পৃথিবীর কোনও পুরস্কারের সঙ্গেই তার তুলনা মেলে না।

ফটোগ্রাফি: মহাশ্বেতা

জয়ঢাকের গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s