অনিরুদ্ধ সেনের আরো গল্পঃ পেঁচোর সাত সতেরো, সোনার কাঠি, পেঁচো ও বেয়ারা ইমেল, কাছে থেকে দূর রচিল, ঔপন্যাসিকা- রক্ষক,পঞ্চু প্রধানের দোয়ায়
জটিল হিসেব
অনিরুদ্ধ সেন
সুরঞ্জনবাবু একজন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ। রিটায়ার করার পর অনেকেই বোর হয়। সুরঞ্জনবাবু তেমন নন। তিনি নিজের মনে লেখা, পড়া, ক্রসওয়ার্ড নিয়ে থাকেন। আর দিনে নিয়ম করে ঘণ্টা খানেক হাঁটেন। প্রোমোটার-বিল্ডারদের হাতে পড়ে কলকাতার সবুজ এখন প্রায় উধাও। যেটুকু ছিটেফোঁটা টিঁকে আছে, সৌভাগ্যবশত তার এক বড়ো অংশই দক্ষিণ কলকাতার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা সুরঞ্জনের বাড়ির থেকে হাঁটা দূরত্বে। রোজ বিকেলে তিনি সেখানে গিয়ে প্রথমে কিছুক্ষণ হাঁটেন। তারপর কোনও বেঞ্চে বসে চোখ ভরে দেখেন চারপাশের সবুজ আর প্রাণ ভরে উপভোগ করেন বাচ্চাদের হুটোপুটি।
বাচ্চারা অবশ্য আজকাল আর তত খেলে না। অনেকেই বিকেলে ব্যাকপ্যাক পিঠে বেরিয়ে পড়ে একের পর এক টিউশনের জন্য। কেউ আবার ঘরে বসে স্মার্টফোন বা ট্যাবে চ্যাট করে অথবা ভিডিও গেম খেলে। তবুও বেশ কয়েকজন এখানে এসে জোটে। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল বা স্রেফ ছুটোছুটি—দেখতে মন্দ লাগে না। নিজের ওই বয়সের কথা মনে পড়ে যায়।
সেদিন বিকেলে হাঁটা সেরে বেঞ্চে বসতে গিয়ে কিন্তু সুরঞ্জন একটু অবাক হলেন। একটি ছেলে সেখানে বসে কীসব যেন করছে। প্রথমে ভেবেছিলেন ওই চ্যাট বা ভিডিও গেম। কিন্তু তারপর দেখলেন, ওর হাতে খাতা আর পেন। তাহলে হয়তো হোম টাস্ক করছে বা টিউশনে যাওয়ার আগে পড়া একটু ঝালিয়ে নিচ্ছে।
ছেলেটিকে দেখে অবশ্য তাঁর একটু খাপছাড়া লাগল। চোখে হালকা ফ্রেমের চশমা। বয়স বোঝা শক্ত। তবে মুখে এক সহজ সারল্য আছে, যার থেকে অনুমান এখনও স্কুলের গণ্ডী পেরোয়নি। সেই সরল মুখে কিন্তু চিন্তার ছাপ পড়েছে। ভুরু কুঁচকে ওপর দিকে তাকিয়ে কী যেন আকাশপাতাল ভাবছে। মাঝে মাঝে খাতার পাতায় কীসব আঁকিবুকি কাটছে, তারপর হতাশায় ঘাড় নাড়ছে।
কী মনে হল, সুরঞ্জন পাশে বসে তার পিঠে হাত রাখলেন। ছেলেটি ঘুরে তাকিয়ে হাসল। সরল, প্রাণখোলা হাসি। সুরঞ্জন তার দিকে চেয়ে সহানুভূতির সুরে বললেন, “কোনও সমস্যায় পড়েছ মনে হচ্ছে?”
যেমন ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, তেমনভাবে ছেলেটি সুরঞ্জনের হাত চেপে ধরে বলল, “হ্যাঁ কাকু, একটা অঙ্ক মিলছে না।”
“দেখি।” সুরঞ্জন খাতার দিকে তাকালেন। তিনি অবশ্য বিজ্ঞান নয়, অর্থনীতি পড়েছেন। আর তাঁদের সময় অর্থনীতি পড়তে অত অঙ্ক লাগত না। তবে তিনি অন্তত দশ ক্লাস অবধি অঙ্ক ভালো করে শিখেছেন আর তা এখনও ভোলেননি।
খাতাটা দেখে কিন্তু তিনি হতাশ হলেন। বিভিন্ন আঁকিবুকি আর সংকেতে ভরা খাতার পাতার অঙ্কটা স্পষ্টতই তাঁর সীমার বাইরে। ইকোনমিকস পড়তে গিয়ে অবশ্য এসবের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় হয়েছিল, তবে সে ওই প্রাথমিক স্তরেই।
“ওহ্, ক্যালকুলাস বুঝি!” তিনি দুঃখিতভাবে ঘাড় নাড়লেন, “আজকাল বুঝি স্কুলেই এসব পড়াচ্ছে? না বাপু, এ ব্যাপারে আমি একেবারে অক্ষম। না পারলে তুমি বরং কাউকে দেখিয়ে নাও।”
“কাকে যে দেখাই!” ছেলেটি অসহায়ভাবে ঘাড় নাড়ল।
“কেন, তোমার স্যারকে!”
“স্যার?” ছেলেটি আর কিছু না বলে ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে রইল।
একটু পরে সুরঞ্জন জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি থাকো কোথায়?”
ছেলেটি যেন একটু সতর্ক হয়ে গেল। তারপর বলল, “এই, কাছাকাছিই।”
“আমি এ-পাড়ায় অনেক বছর আছি, তোমাকে দেখেছি বলে তো মনে হয় না।”
“না, আমি সবে এসেছি।” ছেলেটি মিষ্টি করে হাসল।
“আমার মুরোদে তো কুলোল না।” সুরঞ্জন বললেন, “দেখি, যদি অন্য কাউকে পাই তাহলে তোমায় জানাব।”
“খুব ভালো হয় কাকু।” ছেলেটি ব্যাকুল স্বরে বলল, “এই অঙ্কটা না মিললে যে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।”
“কার ক্ষতি?”
“আমার, আপনার, সবার ক্ষতি।”
“কী ক্ষতি?” অবাক সুরঞ্জন জিজ্ঞেস করলেন।
“সে অনেক বড়ো ক্ষতি।” ছেলেটি বিড়বিড় করে বলল। তবে বোঝা গেল, সে আর কিছু ভেঙে বলবে না।
সুরঞ্জন অগত্যা জিজ্ঞেস করলেন, “কিন্তু তোমাকে আমি এরপর পাব কোথায়?”
“এখানে, এই সময়।” বলে ছেলেটি আবার অঙ্কটার ওপর ঝুঁকে পড়ল আর দেখতে না দেখতে তন্ময় হয়ে গেল। সুরঞ্জন দেখলেন সে বারবার নানারকম হিসেব কষছে, কাটছে আর ঘাড় নাড়তে নাড়তে অস্ফুট স্বরে কীসব যেন বলছে।
পরদিন সুরঞ্জন বিকেলে পার্কে গিয়ে আবার ছেলেটিকে দেখতে পেলেন। একটি বেঞ্চে একান্তে বসে আছে, তবে এবার তার পাশে খাতা, পেন ছাড়াও একটা চৌকোমতো পাত। দেখে মনে হয় কোনও স্মার্ট কার্ড গোছের জিনিস। মাঝে মাঝে সেটা খুলছে ছেলেটি, তখন দেখা যাচ্ছে ভেতরের সার্কিট বোর্ড আরও কীসব যেন। সুরঞ্জন আবার এসব ব্যাপারে তেমন ওয়াকিফ হাল নন।
ছেলেটি তাঁর দিকে ফিরে আবার মিষ্টি হাসল। ভরসা পেয়ে সুরঞ্জন জিজ্ঞেস করলেন, “কী করছ? ওটা কী?”
ছেলেটির মুখটা করুণ হয়ে গেল। বলল, “ওটা চাবি। আমার ফেরার চাবি।”
“তোমার ঘরের চাবি?” সুরঞ্জন অবাক হলেন। নামী হোটেল-ফোটেলে স্মার্ট কার্ড দিয়ে রুম খুলতে হয়, তা বলে বাড়িতে? আর স্মার্ট কার্ড তো সাধারণত পাতলা হয়। তাতে স্ট্রিপ আর চিপ থাকে, এমন মোবাইলের মতো সার্কিট নয়। তিনি একটু ভেবে বললেন, “কিন্তু ওটা নাড়াঘাঁটা করছ কেন? নষ্ট হয়ে গেলে তো আর দরজা খুলবে না।”
“দরজা তো খুলছেই না। আর হিসেবটা না মিললে খুলবেও না।”
সুরঞ্জন অবাক হলেন। ছেলেটা কি তামাশা করছে? কিন্তু ওর চোখমুখের ছলছল ভাব দেখে তো তা মনে হয় না। সে একমনে একবার খাতার পাতায় আর একবার ঐ চ্যাপ্টা পাতটায় কী যেন করে চলেছে। কিন্তু ওর মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
ছেলেটা যেন কেমন রহস্যময়। কী একটা ব্যাপার আছে যা ও বলতে চাইছে না, উনিও বুঝতে পারছেন না। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে সুরঞ্জনের মনে হল, ওর সাহায্য দরকার, যে সাহায্য করার ক্ষমতা তাঁর নেই। কিন্তু কী করা যায়?
ভাবতে ভাবতে আরও দুয়েকদিন গেল। রোজই বিকেলে ছেলেটি ওখানে বসে একইভাবে ঐ খাতা-পেন আর চাকতি নিয়ে নাড়াচাড়া করে। তারপর একদিন সুরঞ্জনের মাথায় একটা আইডিয়া এল।
পরদিন সুরঞ্জন যখন গেলেন, তাঁর সঙ্গে আর এক মাঝবয়েসি ভদ্রলোক। “ইনি কলেজের অঙ্কের মাস্টারমশাই দীপক সাঁতরা।” সুরঞ্জন পরিচয় করিয়ে দিলেন। “তোমার সমস্যাটা একবার দেখাতে পারো।”
ছেলেটি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল। একটু দ্বিধার পর খাতাটা এগিয়ে দিল। দীপক খাতাটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। তারপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন, “কোন ক্লাসে পড়ো?”
ছেলেটি কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যালিয়ে তাকিয়ে থেকে বলল, “মানে?”
“তুমি কি ইয়ার্কি মারছ? ক্লাস মানে বোঝো না?” দীপক ধমকে উঠলেন।
“এই, ধরতে পারেন আমি এইবার ওই আপনারা যাকে বলেন গ্র্যাজুয়েট, তাই হব।” ছেলেটি অনেক ভেবে বলল।
“এইটুকু ছেলে তুমি বি.এস.সি পড়ছ? আর বি.এস.সিতে এতসব কঠিন অঙ্ক করায়, যা আমার মতো ঘাগু মাস্টার একবর্ণও বুঝতে পারে না? উঁহু, তোমার অন্য একটা ব্যাপার আছে। কী নাম তোমার? কোথায় থাকো?”
ছেলেটি থতমত খেয়ে বলল, “নাম, মানে ধরুন দীপ্ত। আর ওঁকে তো বলেছি, আমি কাছেপিঠেই থাকি।”
“বুঝলাম।” দীপক হঠাৎ চুপ করে গেলেন। তারপর সুরঞ্জনের হাত ধরে বললেন, “একটু এদিকে আসুন, কথা আছে।”
কিছু দূরে গিয়ে দীপক বললেন, “কেস গড়বড়। ছোঁড়া সুবিধের নয়। যা বলছে সব উলটোপালটা, যা প্রশ্ন করছি সব উত্তর দিচ্ছে ভাসা ভাসা। আমার মনে হয়, এর পেছনে কিছু ব্যাপার আছে। হয়তো ও ডাকাত বা টেররিস্টদের সঙ্গে যুক্ত, এখানে বসে ওয়াচ করছে আর সাংকেতিক ভাষায় কিছু লিখছে।”
সুরঞ্জন চিন্তিতভাবে বললেন, “তাই কি? আমার কিন্তু মনে হয় না। দ্যাখো, ওর মুখে একটা সরলতা আছে যা বুঝিয়ে দেয় এ-ছেলে কোনও খারাপ কাজ করতে পারে না।”
দীপক হেসে বললেন, “আপনি নিজে খুব সরল সুরঞ্জনদা। সেইজন্যেই তো মানুষ আজীবন আপনাকে ঠকিয়ে গেল। অত বিশ্বাস করবেন না। ঠিক আছে, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, যা করার আমিই করব।”
পরদিন বিকেলে সুরঞ্জন গিয়ে দেখলেন, দীপ্ত যথারীতি এসে বসেছে। কিন্তু তার পাশে বসে এক অমায়িক চেহারার ভদ্রলোক কীসব যেন জিজ্ঞেস করছেন। সুরঞ্জনকে দেখে তিনি বিনীত নমস্কার করে বললেন, “আসুন, আপনিই নিশ্চয়ই সুরঞ্জনবাবু? আমি অবিনাশ চৌধুরী, একটা এনজিওতে কাজ করি। দীপকের কাছে খবর পেলাম, একটি ছেলে এখানে এসে বসে থাকে। সম্ভবত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে। তাই দেখছিলাম ওকে কীভাবে সাহায্য করা যায়।”
“ও, তাই!” সুরঞ্জন বললেন। কিন্তু মনে মনে তিনি কেমন একটা অস্বস্তি বোধ করলেন। অবিনাশ ইতিমধ্যে দীপ্তকে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছেন, যেগুলো শুনতে খুব মোলায়েম কিন্তু আসলে সন্ধানী। দীপ্তও উত্তর দিয়ে চলেছে, তবে প্রায়ই তা ওই কেমন দায়সারাভাবে।
কিছুক্ষণ পর অবিনাশ যেন ধৈর্য হারিয়ে বলে উঠলেন, “বেশ বেশ, তোমার সবকথা ভালো করে শোনা যাবে। কিন্তু এখানে বসে নয়। আমার সঙ্গে চলো, ওই রেস্তোরাঁটায় বসে কিছু খেতে খেতে বাকি কথাগুলো সারব। তারপর দেখছি তোমার অঙ্কটা নিয়ে কী করা যায়।” বলেই তিনি খপ করে দীপ্তর হাত চেপে ধরলেন।
সুরঞ্জন একটু দোটানায় পড়লেন। লোকটা যা বলছে সত্যি তো? নাকি কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে ছেলেটাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে? কিন্তু দীপকের নাম তো বলল। এইসব ভাবছেন, হঠাৎ দেখলেন দীপ্ত কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে অবিনাশের দিকে তাকিয়ে। এমন সময় অবিনাশের পকেটের ফোনটা বেজে উঠল।
“হ্যাঁ স্যার। অ্যাঁ, ইমার্জেন্সি? না, মানে আমি একটা কেসের খবর পেয়ে এখানে এসে… হ্যাঁ হ্যাঁ, এক্ষুনি ফিরে ফোর্স নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি।”
কটমট করে দীপ্তর দিকে তাকিয়ে অবিনাশ তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। আর দীপ্ত সুরঞ্জনের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বলল, “উনি আসলে গোয়েন্দা পুলিশ, তাই না?”
“তাই তো মনে হচ্ছে।” সুরঞ্জন মাথা নীচু করে উত্তর দিলেন।
“জানেন, আমার একজন গোয়েন্দারও দরকার ছিল।” দীপ্ত একইরকম উদাস স্বরে বলল, “যে গোয়েন্দা অঙ্কও জানেন।”
“তাই কি আর হয়!” সুরঞ্জন বিষণ্ণ স্বরে বললেন। তারপর উঠে পড়লেন। আজ আর ভালো লাগছে না, মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।
কিন্তু তাই হল! পরদিন দুপুরে সুরঞ্জন দিবানিদ্রার উদ্যোগ করছেন, এমন সময় দরজার বেল বেজে উঠল। সাধারণ হিসেবে এই সময় কারও আসার কথা নয়। হয়তো কোনও সেলসম্যান ভেবে তিনি এগিয়ে গেলেন। খুলে দেখেন, দরজায় দাঁড়িয়ে একটি বছর পঁচিশ-ত্রিশের গোবেচারা মতন ছেলে।
সুরঞ্জনকে দেখে সে চমকে উঠে বলল, “সুকান্ত দত্তকে একটু ডেকে দেবেন?”
সুরঞ্জন কিছুক্ষণ সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকার পর বললেন, “ভুল করছেন, ওই নামে এখানে কেউ থাকে না। আমার নাম সুরঞ্জন মজুমদার। অনেকদিন ধরেই আমরা এখানে আছি, আপাতত আমি একাই থাকি।”
“ওহ্।” ছেলেটি একটু হতাশ হয়ে বলল, “এটা তেরো নম্বর সলিল চৌধুরী সরণি না?”
সুরঞ্জন ঘাড় নাড়লেন, “তেরো নম্বর, কিন্তু সলিল চৌধুরী সরণি নয়, লেক টেরেস।”
“তা কী করে হয়? ট্যাক্সিওয়ালাকে ঠিকানা বলতে তো ও এখানে ছেড়ে দিয়ে গেল। আর জিপিএস দেখে চালিয়েছে, ভুল তো হবার কথা নয়।”
সুরঞ্জন হেসে বললেন, “দেখুন, আমি প্রবীণ মানুষ। আপনাদের ওসব অটোমেশন প্রযুক্তিতে আমার নিখাদ বিশ্বাস নেই। ওরা প্রায়ই রামের জায়গায় গঙ্গারাম করে ফেলে।” তারপর হঠাৎ তাঁর ভ্রূ কুঞ্চিত হল। বললেন, “আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান। ভুল কি ড্রাইভার করেছে, না আপনি? এই লেক টেরেসের নাম কিছুদিন আগে বদলে হয়েছে দেবব্রত বিশ্বাস সরণি। আপনি কি ড্রাইভারকে তাই বলেছেন?”
থতমত খেয়ে ছেলেটি বলল, “তা হবে, বোধহয় ভুল হয়ে গেছে। আসলে সলিল চৌধুরীর কথা ভাবতে ভাবতে আমার মনে পড়ে গেছিল তাঁর অনেকবার শোনা ‘আমার প্রতিবাদের ভাষা’ গানটা…”
সুরঞ্জন এবার হা হা করে হেসে উঠলেন। “আর তার থেকে সলিল চৌধুরীর বদলে আনমনে ড্রাইভারকে বলে দিলেন গায়ক দেবব্রত বিশ্বাসের নাম! ফলে কসবার রাজডাঙা রোডের বদলে এসে হাজির হলেন বালিগঞ্জের লেক টেরেসে!”
ছেলেটি অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “সরি, অমন ভুল আমার…”
“মাঝে-মাঝেই হয়ে যায়। হুঁ, বোঝা যাচ্ছে, আপনি খুব ভাবুক। তা, করেন কী? কবিতা-টবিতা লেখেন নাকি?”
“না, না। আমি আসলে ম্যাথেমেটিশিয়ান। মানে, স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে অঙ্কে রিসার্চ করি আর পড়াই।”
“স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট?” সুরঞ্জন ভুরু কুঁচকে বললেন, “মশায়ের নাম? আমার শালার ছেলেও ওখানে আছে।”
“আজ্ঞে, জ্যোতির্ময় চক্রবর্তী। তবে আপনার আত্মীয় হয়তো ওই নামে চিনবে না। পি. চক্রবর্তী বললে…”
সুরঞ্জন এবার অট্টহেসে বললেন, “চিনবে মশাই, চিনবে। আপনাকে জ্যোতির্ময় আর ওই যে কী বলে, পেঁচো, দুই নামেই ও চেনে। কিন্তু আপনি তো বিখ্যাত লোক মশাই। অঙ্কে অত শার্প ব্রেন নাকি ওখানে আর কারও নেই! তা, ভুল করে যখন এসেই পড়েছেন একটু বসে যান।”
পেঁচো একটু ইতস্তত করে ভেতরে গিয়ে বসল। তারপর বলল, “তবে বেশিক্ষণ নয়। আমাকে আবার গবু মানে, ওই আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুকান্তর বাড়ি যেতে হবে। সম্প্রতি ও বাড়ি শিফট করেছে। কিন্তু একটা কেসে আমার ওকে খুব তাড়াতাড়ি দরকার।”
“অ্যাসিস্ট্যান্ট… কেস… কী ব্যাপার বলুন তো? আপনি কি…”
“আজ্ঞে, ওই একটু আধটু শখের গোয়েন্দাগিরি করে থাকি। সামান্য নামও হয়েছে।”
“কী বললেন! অঙ্ক আর গোয়েন্দাগিরি?” সুরঞ্জন হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠে গিয়ে পেঁচোর হাত দুটো চেপে ধরে বললেন, “আমায় একটু সাহায্য করতে হবে। দয়া করে না বলবেন না।”
“ছি ছি, আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, অমন করবেন না। আর আমাকে প্লিজ ‘তুমি’ বলবেন। বেশ, বলুন আপনার কী সমস্যা। তবে একটু তাড়াতাড়ি, আমাকে কিন্তু সত্যিই অন্য একটা সমস্যার সমাধানে যেতে হবে।”
“বলছি। সংক্ষেপে। একটি ছেলে, তার একটা অঙ্ক আর একটা স্মার্ট কার্ড…”
একটু পরে সুরঞ্জন যখন তাঁর কাহিনি শেষ করলেন, পেঁচোর চোখ উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করছে। বলল, “চলুন, দেখে আসি। এই সময়েই বোধহয় সে আসে?”
হ্যাঁ, সেদিনও সুরঞ্জন গিয়ে দেখলেন দীপ্ত ঠিক ঐ বেঞ্চিতে বসে। পেঁচোকে দেখে তার চোখে ফুটে উঠল এক খুশির হাসি। বলল, “তুমি…”
“ওই, তুমি যা খুঁজছ, অঙ্ক জানা গোয়েন্দা। নাও, চলো তো দেখি তোমার কী সমস্যা।”
এরপর পেঁচো ছেলেটির পাশে বসল আর তারপর দু’জন মশগুল হয়ে গেল নিবিড় আলোচনায়। আর সুরঞ্জন, “তোমরা কথা বলো, আমি একটু ঘুরে আসি।” বলে হাঁটতে বেরোলেন।
কিছুক্ষণ পর তিনি ফিরে এসে দেখলেন, দীপ্তর মুখে এক তৃপ্তির জ্যোতি। কিন্তু পেঁচোর মুখে আষাঢ় মেঘ। সুরঞ্জনের দিকে ফিরে দীপ্ত বলল, “কাকু, এই দাদা আমার অঙ্কটার সমাধান করে দিয়েছে। এবার আমি বাড়ি ফিরতে পারব।”
“কিন্তু এই ভাইটি আমার সাড়ে সর্বনাশ করে আরেক জটিল সমস্যা আমার ওপর চাপিয়ে যাচ্ছে। সেটা ভেদ করতে না পারলে নাকি আমাদের আর ওদের সর্বনাশ হবে।” বিরস বদনে বলল পেঁচো।
কিন্তু তার কথায় পাত্তা না দিয়ে দীপ্ত বলে উঠল, “আপনি ভাববেন না কাকু। এই দাদার যা ব্রেন, ও ঠিক দু’দিনে ব্যাপারটার সমাধান করে ফেলবে। আচ্ছা, আসি কাকু। অনেক উপকার করলেন।”
তার প্রসারিত হাত মুঠোয় চেপে সুরঞ্জন বললেন, “আর আসবে না?”
“কে জানে কাকু, হয়তো আপনাদের টানেই আবার একদিন আসব। কিন্তু এখন চলি, কেমন?”
দীপ্ত চলে গেল। কিছুক্ষণ উদাসভাবে সেইদিকে তাকিয়ে থেকে সুরঞ্জন বললেন, “একটু খুলে বলবে? আমার তো কিছুই মাথায় ঢুকছে না জ্যোতির্ময়।”
গম্ভীর মুখে পেঁচো বলল, “সবই বলব। কিন্তু ওই যে বলে গেল, একটা সমস্যার জট ছাড়ালাম তো তার পেটে আরেকটা। আগে সেটা ভেদ করি, তারপর আপনার কাছে এসে সব বলে যাব।”
“কিন্তু তুমি কী একটা দরকারি কাজে যাবে বলছিলে?”
“সেসব এখন চুলোয়। আগে আরও জরুরি এই কাজটা সারি। আচ্ছা, আসি কাকু।”
সপ্তাহ খানেক কেটে গেছে। ইতিমধ্যে ছেলেটি আর আসেনি। নিশ্চয়ই কথামতো তার বাড়ি ফিরে গেছে। পেঁচোর অপেক্ষায় আছেন সুরঞ্জন। কিন্তু তারও দেখা নেই। সুরঞ্জন একটু অস্থির হয়ে উঠছেন। এই অদ্ভুত রহস্যটা বোঝার কৌতূহল, তার সঙ্গে একটা চাপা আশঙ্কা। কী এক সমস্যার যদি পেঁচো চটজলদি সমাধান না করতে পারে তবে নাকি বিরাট সর্বনাশ হবে। পারল কি পেঁচো কিছু করতে? নাকি…
যাই হোক, এক সময় যখন ভাবছেন শালার ছেলেকে দিয়ে পেঁচোর খোঁজ নেবেন, তখন একদিন দুপুরে আবার দরজার বেল বাজল। খুলে দেখেন, মূর্তিমান। দেখে আশ্বস্ত হলেন, তার মুখে তৃপ্তির ভাব।
“কী, আবার পথ হারিয়ে ফেলেছিলে নাকি?”
“না কাকু, সোজা চলে এসেছি। আসলে ভীষণ চাপে ছিলাম এ ক’দিন।”
“সমস্যার সমাধান হল?” সুরঞ্জন আর উত্তেজনা চাপতে পারছেন না।
“মোটামুটি।” স্মিত হেসে বলল পেঁচো, “বলছি। এক গ্লাস জল হবে?”
একটু সুস্থ হয়ে পেঁচো শুরু করল, “দীপ্তর সমস্যাটা ছিল, অঙ্কের ভাষায় বললে, একটা ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন। ওটার সমাধানের ওপর নির্ভর করছিল ওর বাড়ি ফেরার সংকেত বা পাসওয়ার্ড। এই ইকুয়েশনগুলি ইঞ্জিনিয়ারদের খুব প্রিয়। তাঁরা কোনও বাস্তব সমস্যাকে একগাদা ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন দিয়ে ‘মডেল’ করেন, তারপর সেগুলোর সমাধান করে করেন সিস্টেম ডিজাইন।
“এখন, দীপ্তর ইকুয়েশনটা দুর্ভাগ্যবশত ছিল বেশ জটিল আর অঙ্কের ভাষায় বললে, ইনকমপ্লিট বা অসম্পূর্ণ। তাই দীপ্ত ওটার সমাধান করতে পারছিল না।”
“তুমি সেটা করে দিলে?”
“ইয়ে, হ্যাঁ। আসলে তার জন্য দরকার ছিল কিছু ‘বাউন্ডারি কন্ডিশন’ জানা। অর্থাৎ ধরুন, যাত্রার শুরুতে একটা বস্তু কোথায় আছে, কত বেগে চলছে ইত্যাদি। দীপ্ত খুব ধীমান, কিন্তু এখানকার অবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞান না থাকায় সে ওটা ধরতে পারছিল না।”
“মানেটা কী? ও এখানকার নয়? বলল তো কাছাকাছিই থাকে।”
“ইয়ে কাকাবাবু, সে ব্যাপারে একটু পরে আসছি।” পেঁচো এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গীতে বলল, “যাক, আমি সমস্যাটার সমাধান করে দেওয়ার পর ও তো বাড়ি চলে গেল। কিন্তু আমাকে রেখে গেল এক মহা সমস্যায়।”
“হ্যাঁ, বলছিল কী এক বিরাট বিপদ, ওদের আর আমাদের।”
“তাই।” পেঁচো কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল, “আর তার জন্যই ওর দরকার ছিল একজন গোয়েন্দার।”
“কী সেই বিপদ? তুমি পারলে সামলাতে?” সুরঞ্জন আর ধৈর্য ধরতে পারছেন না।
“হ্যাঁ। কিন্তু ও ব্যাপারটা যত সহজে সম্পন্ন হবে ভেবেছিল, ততটা হয়নি। আসলে ও যে পরিবেশে বড়ো হয়েছে, সেখানে কোনও সমস্যার সমাধান বেরোনোটাই ব্যাপার। একবার সমাধান বেরিয়ে গেলে তার কার্যে পরিণত হতে কোনও অসুবিধা হয় না। কিন্তু ও তো আমাদের মতো মানুষদের চেনে না।”
“আমাদের মতো মানে, ও কি অন্য দেশে থাকে?”
আবার এড়িয়ে গিয়ে পেঁচো বলল, “ও সমস্যাটা ওর মতো করে বুঝেছে। আর সেটা আমার বোঝার জন্য আমার মতো ভাষায় জানিয়ে গেছে।”
“তোমার মতো ভাষায় মানে, দীপ্ত তো স্পষ্ট বাংলায় কথা বলে।”
“ঠিক। কিন্তু সে তো সাধারণ কথাবার্তা। বিজ্ঞান বা টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলি অত সহজ নয়। আপনি এখনকার ইংরিজি মাধ্যমে পড়া ছেলেমেয়েদের দেখুন, এমনিতে পরিষ্কার বাংলায় কথা বলছে। কিন্তু বিজ্ঞানের বিষয়গুলি বাংলায় বুঝিয়ে দিতে বলুন, দেখবেন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক শব্দের পরিভাষা হাতড়াচ্ছে। দীপ্তও তেমন।”
সুরঞ্জন কিছুটা বুঝলেন, কিছুটা সংশয়েই রয়ে গেলেন। বললেন, “তা, ওর জানানো সমস্যাটা কী?”
“শুনতে একটু অদ্ভুত। খানিকটা এরকম, ভারী জল ভেঙে জুড়ে উদ্ভুত বিপুল শক্তি আগুনে বিশাল জলরাশি ঢেলে মহাপ্রলয় ঘটাতে চলেছে। তারপর অঙ্কটার সমাধান করে পাওয়া তিনটে সংখ্যা দিয়ে বলল, তার মধ্যেই সেই সম্ভাব্য বিপর্যয় স্থলের নিশানা আছে।”
“তুমি তার থেকে বুঝতে পারলে কী সেই মহা বিপর্যয়, আর কোথায় তা ঘটতে চলেছে?”
“কিছুটা তখনই আন্দাজ করেছি। বাড়ি গিয়ে নেট ঘেঁটেঘুটে ব্যাপারটা কনফার্মও করে নিলাম। কিন্তু সমাধানটা তো আর আমার হাতে নয়। সেটার ব্যবস্থা করতে গিয়েই জান কয়লা।”
“আগে সমস্যাটা কী বুঝলে, সেটাই খুলে বলো বাপু। আমার আর তর সইছে না।”
“দেখুন, বিজ্ঞানে ভারী জল মানে হাইড্রোজেনের তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ডিউটিরিয়ামের অক্সাইড। তাকে ভেঙে পাওয়া যায় হাইড্রোজেনের আইসোটোপ ডিউটিরিয়াম, যার দুই পরমাণু জুড়ে অর্থাৎ ‘ফিউশন’ করে তৈরি হয় ফিউশন বোম বা হাইড্রোজেন বোম। সেই বোম বিস্ফোরণের ফলে কোথাও আগুনে জল পড়ে বিপদ ঘটতে চলেছে। এখন, এই আগুনটা কী আর জলটাই বা কী? একটা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু আগে জায়গাটার অবস্থান সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া দরকার ছিল। দীপ্ত তার জন্য যে তিনটি সংখ্যা আমাকে জানিয়ে গিয়েছিল, তার তাৎপর্য ও নিজেও ঠিক বোঝেনি। কিন্তু আমি এটা ওটা ঘেঁটে বুঝতে পারলাম, ওগুলো হচ্ছে অক্ষাংশ, দ্রাঘিমা আর পৃথিবী-পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, যা দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে কোনও বিন্দুর অবস্থান চিহ্নিত করা যায়, ওই যে, যেভাবে থ্রি-ডি জিপিএস করে। তারপর কিছুক্ষণ মগজমারির পর বুঝলাম, সেটা প্রশান্ত মহাসাগরের কোনও অঞ্চলে, সমুদ্রের নিচে!”
অবাক সুরঞ্জন বললেন, “সমুদ্রের নিচে… কী বিপদ?”
“আশেপাশে পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরীক্ষার দরুন একটা ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির গহ্বর আর মহাসাগরের মধ্যে দূরত্ব একটা জায়গায় বিপজ্জনকভাবে কমে এসেছে। আর কোনও বিস্ফোরণ ওখানে হলে মাটির দেওয়ালে চিড় ধরে সমুদ্রের জল আগ্নেয়গিরির জ্বলন্ত গহ্বরে পড়তে শুরু করবে আর তাহলে মাটির তলায় উৎপন্ন বিপুল বাষ্পরাশির চাপ এমন এক মহা বিস্ফোরণের সৃষ্টি করবে, যা পৃথিবী আগে কখনও দেখেনি। ফলে পৃথিবীর এক বিরাট অংশ ধ্বংস হয়ে অজস্র প্রাণহানি হবে, বাকি অংশও বহু যুগ ধরে মানুষ বা উন্নত প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে।”
সুরঞ্জন বিস্মিত হয়ে বললেন, “বুঝেছি, কেন বলছিলে সমস্যা বুঝলেই সেটার সমাধান হয় না! এ তো আন্তর্জাতিক ব্যাপার, বিভিন্ন দেশের নেতাদের বিশ্বাস করানো…”
এক গাল হেসে পেঁচো বলল, “সৌভাগ্যক্রমে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট সুকান্তর এক জামাইবাবু বড়ো কম্যান্ডো অফিসার। তাঁর কানেকশন থেকে গোপনে রাষ্ট্রসঙ্ঘে খবর পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করতে একটি বিজ্ঞানী দল সেখানে গেছেন ও দেখেছেন আশঙ্কাটা বাস্তব। খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্ট দেশগুলির প্রতিনিধিদের ডেকে ওই অঞ্চলে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সুরঞ্জন বিস্ফারিত নেত্রে শুনছিলেন। বললেন, “তাহলে শেষ অবধি…”
“স্বস্তি, অন্তত আপাতত।”
“কিন্তু দীপ্তর ব্যাপারটা তো বললে না। ওইটুকু ছেলে, ও এতসব কীভাবে জানল?”
“ও অনেক কিছুই জানতে পারে কাকু, যেমন একজন গোয়েন্দা পুলিশ ওকে অ্যারেস্ট করতে এসেছিল। তাকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারেও ওর কিছু অবদান আছে। আর ও অনুভূতি দিয়ে এও বুঝতে পেরেছিল যে আপনি একজন ভালোমানুষ। ওরা এসব বুঝতে পারে। শুধু অঙ্কটায় একটু আটকে গিয়েছিল।”
সুরঞ্জনের মনে এক চাপা আশঙ্কা। বললেন, “ওরা মানে, ও কি আমাদের মতো মানুষ নয়?”
“কে জানে, হয়তো তাই, হয়তো না।” পেঁচো উদাস স্বরে বলল, “জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি।”
“কিন্তু ও যে বলল কাছেপিঠেই থাকে?”
“নিশ্চয়ই থাকে। সেইজন্যেই তো আমাদের কোনও মহা বিপর্যয় হলে ওদেরও ক্ষতি হবে। কিন্তু আমাদের কাছেপিঠেও তো কত জগত থাকতে পারে, যা আমরা দেখতে পাই না। তাই না? এমনকি পদার্থবিজ্ঞানীরাও তাই বলেন।”
“হ্যাঁ, আর তাদের দেখতে হলে সঠিক চাবি লাগে।” সুরঞ্জন হাসি মুখে বললেন, “ঠিক আছে, এবার মধুরেণ সমাপয়েৎ করে যাও।”
“না না, আজ আর বসব না কাকু।” তাঁকে ফ্রিজের দিকে এগোতে দেখে পেঁচো তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “একটা জরুরি কাজ আছে। মিটুক, তারপর একদিন সদলবলে এসে মিষ্টি খেয়ে সেলিব্রেট করে যাব।”
ছবি: মৌসুমী