অমিতাভ সাহা-র আরো গল্প ও প্রবন্ধ–> তাজ্জব ব্যাপার, অদ্ভুত ভূত , বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলসঙ্কট,
অমিতাভ সাহা
পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে পাইনের বন থেকে এক ব্যাগ ভর্তি পাইন কোণ কুড়িয়ে এনেছিল রাহুল। আনার পর খুব যত্নে রেখে দিয়েছিল। আসলে পড়ার টেবিলে বা আলমারির শো-কেসে সাজিয়ে রাখলে দেখতে এত সুন্দর লাগে! কিন্তু ছোটো ভাই রাতুল এত দুষ্টু হয়েছে যে, আনার পর থেকেই কোণগুলোর পেছনে আঠার মতো লেগে আছে। পড়ার টেবিলে রাখা একটা পাইন কোণের স্কেলগুলো ভেঙে নষ্ট করেছে।
ক’দিন পর মামা আসবে বলে মা কাঁচা আমের মোরব্বা বানিয়েছে। মামার খুব পছন্দ। আজ সকালে রান্নাঘরে গিয়ে দেখে, কাচের বয়ামের তিন ভাগের এক ভাগ ফাঁকা। নিশ্চয়ই রাতুলের কাজ। মা তাই মোরব্বার বয়াম ঠাকুরঘরে সিংহাসনের পেছনে লুকিয়ে রেখেছে।
ভাই যাতে খুঁজে না পায়, সেজন্য রাহুলও পাইন কোণগুলো ওর খাটের তলায় লুকিয়ে রেখেছে। যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছে। রাতে শোবার সময় বালিশের নিচে একটা লাঠি নিয়ে ঘুমিয়েছে। ভাই যদি কোনোভাবে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসে, তাহলে ওকে শায়েস্তা করবে। রাতে ঘুমের ঘোরে রাহুলের স্বপ্নে এসে উপস্থিত হল ‘আইস এজ’ (Ice Age) সিনেমার ঐ কাঠবিড়ালিটা। কাঠবিড়ালিটা এক তুষারাবৃত উপত্যকার বরফের মধ্যে আটকে থাকা একটা পাইন কোণ প্রাণপণে বের করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু কিছুতেই পারছিল না। শেষে অনেকবার লাফালাফি করাতে বরফের মধ্যে একটা ফাটল দেখা দিল। ফাটলটা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে লাগল সমস্ত বরফাস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে। কাঠবিড়ালির দুই পা ফাটলের দুই ধারে। চক্ষু ছানাবড়া। সেই ফাটলটা ক্রমশ বড়ো হতে হতে বিরাট আকার ধারণ করল। কাঠবিড়ালি দুই পা একেবারে ছড়িয়ে দিয়ে সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করছিল টিকে থাকার, কিন্তু পারল না; দুই পা পুরোপুরি ফাঁক করেও ফাটলের গ্যাপ মেক-আপ করতে না পেরে মাঝখানকার খাদে পড়ে গেল। পাইন কোণটা ওর অধরাই থেকে গেল।
কী দুঃস্বপ্ন! আচমকা ঘুম ভেঙে গেল রাহুলের। ওর পাইন কোণগুলো ঠিকঠাক আছে কি না দেখার জন্য খাটের নিচে যেই দেখতে যাবে, আবছা আলোয় দেখে, মেঝের মধ্যে হামাগুড়ি দিতে দিতে কে যেন এগিয়ে আসছে। ঘরের জিরো বাল্বটা সামান্য আলো দিচ্ছিল। তার উপর সদ্য ঘুম ভাঙা, তাই ভালো দেখতে পাচ্ছিল না। এটা নিশ্চয়ই রাতুলই হবে। ওর কোণগুলো নিয়ে নেওয়ার জন্য আসছে।
মাথা প্রচণ্ড গরম হল রাহুলের। ওকে শিক্ষা দিতেই হবে। বালিশের নিচে আস্তে করে হাত ঢুকিয়ে লাঠিটা শক্ত করে ধরে আস্তে আস্তে বের করে আনল। অপেক্ষা করছিল ভাই আরও কাছে আসার। হামাগুড়ি দিতে দিতে যেই খাটের নিচে ঢুকতে যাবে, অমনি জোরে লাঠির ঘা মেরে রাহুল বলল, “তোকে বারণ করেছি না আমার কোণগুলোতে হাত দিতে! তাও আবার হাত দিতে এসেছিস?”
“উহ্! আমার টাকটা গেল রে!” বলে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে উঠে দাঁড়াল বাবা।
রাহুল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, “এ কি বাবা! তুমি আমার পাইন কোণ চুরি করতে এসেছ?”
“পাইন কোণ দিয়ে আমি কী করব? আচার বানাব?” (বাবা বিরক্তিভরে)
“তবে?”
“আচ্ছা, তোর মা মোরব্বা কোথায় লুকিয়ে রেখেছে রে?”