ভয়- অদিতি সরকার
দূরে, অনেক দূরে, যেখানে আকাশ নেমে এসে মাটি ছোঁয়, যেখানে সব কেমন ছায়া ছায়া, ধোঁয়া ধোঁয়া, সেইখানে ভয় থাকে। দিনের বেলা পষ্ট আলোয় তাকে দেখা যায় না। তার যত কেরামতি সব আঁধার রাতে। সূর্য ডুবতে শুরু করলেই আস্তে আস্তে সে কোটর থেকে একটু একটু করে বাইরে পা বাড়াতে থাকে। দিনের আলো যত কমে, তত তার পা লম্বা হয়। অন্ধকার বাড়তে বাড়তে টুপ করে এক সময় চারদিকে আর কিচ্ছু দেখা যায় না, মায় নিজের আঙুল-টাঙুলও না, আর তক্ষুনি ভয় গা ঝাড়া দিয়ে এক লাফে বেরিয়ে আসে।
এর জানালার ফাঁক দিয়ে, ওর দরজার তলা দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ঢুকে পড়ে ঘরের একেবারে ভেতরে। ঘরের মানুষগুলো কেউ কিছু বোঝে না, দেখতেও পায় না। শুধু হঠাৎ কেমন একটু শিউরে ওঠে। পিঠ শিরশির করে, ঘাড়ে কাঁটা দেয়। কেউ পেছনে তাকায় না, জানালার বাইরে ঝুপসি অন্ধকারের দিকে দেখে না, কেবল আরও একটু ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে। ভয় মহানন্দে ঘরের মধ্যে ঘুরপাক খায়।
রোজ রাতে এ রকম। সব বাড়িতেই ভয় ঢোকে, কিন্তু তার সবথেকে পছন্দ ছোটকুর ঘরখানা। ছোটকু সে ঘরে একলা শোয় যে। কে-ই বা শোবে তার সঙ্গে। বাড়িতে তো শুধু দাদিমা আর বুয়াজি, মানে ছোটকুর পিসি। মাকে ছোটকুর মনেও পড়ে না। বাবা ফৌজের হাবিলদার। খুব লম্বা চওড়া,খুব সাহসী। কখনও মরুভূমি,কখনও পাহাড়ে তাঁর কাজ। বছরে একবার করে আসেন। তখন খুব মজা। সারাদিন যখন তখন বাবার জোর গলার হা-হা হাসি। রাতে রুটি আচারের সঙ্গে মাংস। এ ঘরে বাবার সঙ্গে শোওয়া। দেওয়ালের পেরেক থেকে বাবার ফৌজি উর্দি ঝোলে,তাতে রোদ-রোদ ঘাম-ঘাম গন্ধ। বাবা থাকলে ভয় ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে না। কিন্তু বাকি দিনগুলোয় তো ওই তিনজন। তা দাদির পায়ে ব্যথা,সিঁড়ি ভাঙতে পারে না। রাতে কাতরায়,তখন বুয়াজি রসুন তেল মালিশ করে দাদির পায়ে। তাই বুয়াজিও নীচেই শোয়। ওপরের এই পুঁচকে ঘরখানা তখন শুধু ছোটকুর। রাতে একা একা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই ভয় ছোটকুর চারপাশে ইলিবিলি কাটে। কাঠের সিঁড়ি মটমট করে,খাপরার চালে খড়খড় আওয়াজ তুলে বড়ো বড়ো ইঁদুর চলে,ছোটকু কানে বালিশ চাপা দেয়। ঘরের কোণে অন্ধকার জমে থাকে, ভয় সেখানে আরাম করে বসে। ছোটকু লেপ দিয়ে আচ্ছা করে মাথা মুখ ঢাকে।
এমনই রোজ। সকাল হলেই আবার সব যেমন কে তেমন। কে বলবে তখন, যে রাতে অমন ছমছম করে বুক কেঁপেছিল? রোদের আলোয় চারদিক ঝলমল করে। কোথাও এতটুকু ছায়া নেই, লুকোনো-চুরোনো অন্ধকার নেই, সব ফটফটে পরিষ্কার।
সক্কাল সক্কাল বুয়াজির হাত থেকে বড়ো পেতলের গেলাসে গরম ফেনাওঠা দুধ আর ভৈঁসা ঘিয়ে ভাজা পরোটা খেয়ে ছোটকু লাফাতে লাফাতে ইশকুলে যায়। গোটা রাস্তায় কোথাও ভয়ের দেখা নেই। আলো ফুটলেই যে ভয় কুঁকড়ে মুকড়ে এ্যাত্তোটুকু হয়ে পালায় কোথায় কত দূরে। মাঝে মাঝে একটু উঁকি দেয় ঠিকই। মাস্টারজির চশমা পরা বড়ো বড়ো চোখ থেকে, কিংবা খেলার মাঠে উঁচু ক্লাসের ছেলেদের পাকানো ঘুঁষিতে, তা সে নিয়ে ছোটকুর মাথাব্যথা নেই। পড়া ঠিকঠাক তৈরি করে নিয়ে গেলেই মাস্টারজির চোখ শান্ত। আর খেলার মাঠে ছোটকুকে কেউ ধরতে পারলে তবে তো কিল দেবে? প্রত্যেক বছর একশো মিটার দৌড়ে ফার্স্ট প্রাইজটা কি এমনি এমনি আসে নাকি? নাঃ, দিনের বেলা ভয়কে ছোটকু পাত্তাও দেয় না। ভয়কে নিয়ে ছোটকুর যত ঝামেলা সব শুধু সূর্য ডোবার পর।
আজকাল কদিন ধরে অবশ্য একটু অন্যরকম একটা ব্যাপার হচ্ছে। সেদিনও রাতে ছোটকু ওরকম মুড়িঝুড়ি দিয়ে পড়ে আছে আর মনে মনে প্রাণপণে রামজিকে ডেকে যাচ্ছে যাতে ঘুমটা তাড়াতাড়ি এসে যায়, হঠাৎ মনে হল পায়ের ওপর যেন কী। নরম নরম, গরম মতো। অমনি তো হাত পা ঠান্ডা, পেটের মধ্যে খালি খালি। ও বাবা, ও রামজি। একটুও না নড়েচড়ে কাঠ হয়ে শুয়ে থাকতে থাকতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে উঠে কোথায় কী। রাতে আর সে সব মনেও ছিল না। কিন্তু শোয়ার একটু পরেই আবার সেই। পায়ের ওপর নরম নরম। ছোটকু অনেক সাহস-টাহস করে একটু ডান পাটা নাড়াল। দুটো চোখই শক্ত করে বুজে। পা নাড়তেই ভারী জিনিসটা বলল,“ম্যাও।” ম্যাও মানে? ম্যাও মানে কী? এবার ছোটকুর চোখ দুটো পটাং করে খুলে গেল। ঘরের কোণায় কোণায়, চারপাইয়ের চারদিকে ভয় ঘুরঘুর করছে,তাও। ও মা, পায়ের ওপর কম্বল,কম্বলের ওপর গুটিশুটি মেরে ওটা কী রে? আরেকবার একটু বেশি করে দুটো পা-ই নাড়াল ছোটকু। আর পায়ের তালে তালে নরম গরম পুঁটলিটা বলল,“উমম, উমম, মিউ।”
এখন রাতে ভয় ঘরে থাবা গেড়ে বসে থাকলেও ছোটকুর অতটা অসুবিধে হয় না। বিল্লোরানি রোজ পায়ের ওপর ঘুমোয় তো। ও হ্যাঁ,পুঁটলিটার নাম ছোটকু রেখেছে বিল্লোরানি। ভয় বেশি বাড়াবাড়ি করলে ছোটকু পা দুটো একটু নাড়ায়,অমনি বিল্লোরানি পিঠ গোল করে সবুজ সবুজ চোখ করে বলে,“ফ্যাঁ-শ্”;আর ভয়ও তাড়াতাড়ি ছোটকুর চারপাই থেকে দূরে ঘরের কোণে সরে যায়। ছোটকুর রাতগুলো তাই আজকাল মোটামুটি শান্তিতেই কাটছে। ওদিকে বুয়াজিও খুব খুশি, ছোটকু আজকাল রাতে একটা রুটি বেশি খায়। বুয়াজি বিল্লোরানির কথা জানে না। জানলে তাড়িয়ে দেবে। বেড়াল বুয়াজির দু চোখের বিষ। ছোটকু সবার চোখ বাঁচিয়ে শেষ রুটিটা কায়দা করে পকেটে করে নিয়ে আসে ওপরে,বিল্লোরানি ঠিক সময় বুঝে খেয়ে নেয়। ভোর হলেই চারদিক ফরসা, বিল্লোরানিও ধাঁ।
আজও বেশ ঠিকঠাকই ঘুমোচ্ছিল ছোটকু। বিল্লোরানি আজকাল পা থেকে উঠে এসে পেটের কাছে শোয়া ধরেছে। ঘুঁজিমুজি তুলতুলে পুঁটলিটাকে জড়িয়ে ছোটকুর দিব্যি চোখ বুজে যায়। রামজিকে ডাকাডাকি না করেই। ঘরের কোনায় ভয় রেগে হিসহিস করে, ছোটকু উলটো-পাশ ফিরে শোয়। সেই ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ বুয়াজির কাঁদো কাঁদো গলা কানে এল – “ও ছোটকু, কত ঘুমোচ্ছিস রে বেটা। ডেকে ডেকে যে গলা শুকিয়ে গেল। ওঠ না রে বাবুয়া।”
ছোটকু বিছানা থেকেই সাড়া দেয়, “কী হল বুয়াজি?”
“একবার নীচে আয় না বাবা। দ্যাখ তোর দাদি কেমন যেন করে।”
কী সর্বনাশ! নীচে? এখন? এই অন্ধকার সিঁড়ি বেয়ে? বিল্লোরানি তো বুয়াজির আওয়াজ পেয়েই সটকেছে। এবার কী হবে? ঘরের আনাচে কানাচে, সিঁড়ির ধাপে ধাপে তো ভয়।
“কী হয়েছে বলো না।”
“আরে নীচে আয় না তুই। অত চ্যাঁচাতে পারি না রাত দুপুরে। কী ছেলে রে বাবা। একবার টঙে উঠল তো ভোর না হলে আর নামবে না।”
কী করে যে নেমেছে ছোটকু সে আর জিজ্ঞেস করে কাজ নেই। জড়িয়ে মড়িয়ে পড়ে ঠ্যাং ভাঙেনি যে, সে-ই রামজির কৃপা। কম্বল মুড়ি,চোখ বন্ধ, তার মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে নামা। বুয়াজি দেখেই আরেক চোট হাঁউমাঁউ লাগাল,“আরে তুই পাগল নাকি? এমনি করে কেউ সিঁড়ি দিয়ে নামে? ঘুম ভাঙেনি এখনও? পড়ে হাত পা ভাঙলে তোর বাবাকে কী বলব শুনি? আমার হয়েছে যত জ্বালা।”
“দাদির কী হয়েছে?”
অমনি বুয়াজির গলার আওয়াজ পালটে গেল। আবার সেই কাঁদো কাঁদো ভাব। “কী জানি কী হয়েছে। দ্যাখ না কেমন করে শুয়ে আছে, ঠোঁট-টোঁট সব নীল। ঠেললে সাড়াও দিচ্ছে না। কী করি বল দেখি।”
ছোটকু আস্তে করে দাদির হাতটা ধরল। বাপরে কী ঠান্ডা হাত। কষ্ট করে নিশ্বাস নিচ্ছে দাদি, ঘড়ঘড় শব্দ হচ্ছে।
“একবার বৈদজির বাড়ি যাবি ছোটকু? যদি আসেন দয়া করে।”
ছোটকুদের গ্রামে ডাক্তার নেই, যা কিছু চিকিৎসা ওই বৈদজিই করেন। পাতালতা দিয়ে তৈরি নানা রকম ওষুধ, বেশিরভাগই বিদঘুটে তেতো। কিন্তু নিয়ম করে খেলে অসুখ সেরে যায়। গ্রামের সবাই বৈদজিকে ভগবান মানে। বৈদজিও কখনও কাউকে ফেরান না, সে বেলা দুপুরই হোক, কি মাঝরাত। একবার গিয়ে দাঁড়ালেই হল।
“যা না বাবু,বড়ো টর্চটা নিয়ে।”
“ভোরবেলা গেলে হত না? এখন এত রাতে…”ছোটকু একটু মিনমিন করে বলার চেষ্টা করে।
“ভোরবেলা পর্যন্ত কি বুড়ি টিঁকবে রে?” বুয়াজি এবার কেঁদেই ফেলে। “আমিই যেতাম, কিন্তু মা-কে এই অবস্থায় ফেলে রেখে যাই কী করে?”
বুয়াজিকে আজ পর্যন্ত কোনওদিন কাঁদতে দেখেনি ছোটকু। তার ভেতরটাও যেন কী রকম করতে থাকে।
“আচ্ছা,আচ্ছা যাচ্ছি। তুমি কেঁদো না বুয়াজি। টর্চটা দাও।”
বুয়াজি চোখ মুছতে মুছতে চার ব্যাটারির টর্চখানা এনে দেয়। “তাড়াতাড়ি যাস মণি। সাবধানে যাস।”
দরজার বাইরে পা দিতেই ভয় ভীষণ খুশি হয়ে ঝাঁপিয়ে আসে। অন্ধকার রাত ঝিমঝিম করছে, তারা-টারাও দেখা যাচ্ছে না। চারদিক শুনশান, নিশুতি। রাস্তার মোড়ে সেই কতদূরে একটা আলো টিমটিম করে জ্বলছে,আর কোত্থাও কিচ্ছু নেই,কেউ নেই। সবার বাড়ির সব জানালা দরজা এঁটেসেঁটে বন্ধ। এ দিক ও দিক সব দিকে শুধু ভয় আর ভয়। ছোটকুর পা দুটো পাথরের মতো ভারী লাগে। বুয়াজি বলেছে তাড়াতাড়ি যেতে, পা-ই তুলতে না পারলে যাবে কী করে? তার উপর রাতে এ দিকে নেকড়ে বেরোয়। ছোটকুর গায়ে কাঁটা দেয়, সারা শরীর শিউরে শিউরে ওঠে। টর্চ থেকে বেরোনো আলোয় সামনে যে একটুখানি গোলমতো জায়গা দেখা যায়, সেই দিকে চোখ রেখে ছোটকু জোর করে একটা একটা করে পা তোলে আর ফেলে। ভয় চলে তার ঠিক পাশে পাশে,পিছনে পিছনে।
বৈদজির বাড়ি অনেকটা উঁচুতে, বেশ খানিকটা চড়াই বেয়ে উঠতে হয়। কিছুটা উঠলেই বাড়িঘর কমে আসে, দূরে দূরে এক একটা। তারপরে জোয়ারের ক্ষেত, তারও পরে জঙ্গল শুরু। জঙ্গলের ঠিক ধারটাতেই বৈদজির ছোট্টো বাড়ি। এত রাতে জঙ্গল থেকে কত রকম অদ্ভুত আওয়াজ আসে,ভয়ও আসে তার সঙ্গে সঙ্গে। ছোটকু হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়তে থাকে। ঠিক জানে, থামলেই ভয় খপ করে চেপে ধরবে।
খটখট কড়া নাড়ার শব্দে বৈদজির ঘুম ভাঙে বোধ হয়, একটা ঘরে লণ্ঠন জ্বলে ওঠে। এদিকে সব বাড়িতে বিজলি আসেনি এখনও। ঘুম জড়ানো একটা মোটা গলা হাঁক দেয়, “কে ওখানে?”
“আমি বৈদজি, ছোটকু।”
“কে ছোটকু?” গলাটা একটু বিরক্ত শোনায়।
“হাবিলদার লাখন সিং রাওয়াতের ছেলে বৈদজি, ছোট্টন সিং রাওয়াত, ছোটকু।” ভয়ে ছোটকুর ঠোঁট থরথর করে কাঁপে।
“আরে রে বেটা, এত রাতে এখানে কী করে এলি?” তাড়াতাড়ি দরজাটা খুলে যায়। বুড়ো বৈদজি হাতে লণ্ঠন নিয়ে চোখ কুঁচকে ছোটকুকে দেখেন। “কী হয়েছে বেটা? আয়, ভিতরে আয়।”
“না বৈদজি, তুমি তাড়াতাড়ি চলো, আমার দাদির খুব অসুখ। তুমি এক্ষুনি না গেলে দাদি আর বাঁচবে না।” ছোটকুর গলা ধরে আসে বলতে গিয়ে।
“তুই একা একা এতখানি রাস্তা এলি, এই অন্ধকারে? তোর তো খুব সাহস বাচ্চা! তা হবে না-ই বা কেন? কার ছেলে দেখতে হবে তো। লাখন সিং-এর মতো সাহস এই গ্রামে আর কারই বা আছে? একটু দাঁড়া, আমি আসছি তোর সঙ্গে। বাক্সটা নিয়ে আসি।” বৈদজি ভেতরে যান। লণ্ঠনটা নিয়েই যান, খেয়াল করেন না যে ছোটকুকে অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
ছোটকু কিন্তু কিছু টেরই পায় না, আলো না অন্ধকার। বৈদজির বলা কথা ক’টা তার মাথার মধ্যে গুনগুন করে শুধু ঘুরতেই থাকে। সাহস আছে তার? সাহস? তার বাবার মতন সাহস? তার ছোট্ট বুকটার মধ্যে কেমন একটা অন্য রকম অনুভূতি হতে থাকে, শরীরটা টানটান সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সাহসী বাবার সাহসী ছেলে সে, ভয় আবার কী? আসলে ভয় বলে কিছু সত্যি সত্যি ছিলই না কোনওদিন কোথাও। যা কিছু ছিল সব এই মনের মধ্যে। আজ বৈদজি তার মনটাকেও এক্কেবারে সারিয়ে দিলেন যেন। সাধে কী আর গ্রামের লোকেরা বৈদজিকে এত ভক্তি করে! দাদিমাও ঠিক সেরে যাবেন এবার, বৈদজির ওষুধ পড়লেই।
‘ম্যাও’ করে একটা ছোট্ট আওয়াজ। ছোটকু ভারী অবাক আর ভারী খুশি হয়ে দ্যাখে বিল্লোরানিও এতটা রাস্তা তার সঙ্গে সঙ্গেই এসেছে। সাহস জোগাতে। ও তো আর জানে না, ছোটকুর আর বাইরে থেকে জোগানো সাহসের দরকার নেই। তবু নিচু হয়ে তাকে কোলে তুলে নেয় ছোটকু। আদর পেয়েই বিল্লোরানি অমনি বলে, “উমম, উমম, মিউ।”
ভয় সব টের পায়, আর কুঁকড়ে গুটিয়ে এইটুকুটা হয়ে যায়। শেষ চেষ্টায় দু-একবার ঘোরে ছোটকুর এ পাশ ও পাশ, ছোটকু বুঝতেও পারে না। হাতে লণ্ঠন নিয়ে বৈদজি, বৈদজির বাক্স নিয়ে ছোটকু আর ছোটকুর কাঁধে চড়ে বিল্লোরানি উৎরাই ধরে নেমে যায়। ভয় যায় না ওদের সঙ্গে। ভয় পিছোতে থাকে, পিছোতে থাকে, পিছিয়ে পিছিয়ে চলে যায় রাত পেরিয়ে, অন্ধকার পেরিয়ে সে-ই কত দূরে, যেখানে আকাশ নেমে এসে মাটি ছোঁয় তার থেকেও দূরে। ভয় আজ নিজেই ভয় পেয়েছে যে।
ছবিঃ ইন্দ্রশেখর