সাঁঝবাতি –শিবশঙ্কর ভট্টাচার্য
চাংরীপোতা থেকে হরিনাভির গঙ্গার ঘাট বড়োজোর দেড় ক্রোশ পথ। এ পথটুকু হাঁটতেই সার্বভৌম মশায়ের পায়ে ঝিন্ঝিনি ধরে গেল। বড্ড বয়েস হয়ে গেছে। ছেলেবেলায় হারজিচণ্ডীতলার মাঠ, গোড়ের খাল, ঠাকুরঝিপুকুর পেরিয়ে কালীক্ষেত সুতানুটি অবদি হেঁটে যেতেন তুড়ি মেড়ে। পালকি আর নৌকো থাকলেও পয়সা লাগত বলে চড়তেন না। আর আজকালকার বাবুদের তো এপাড়া থেকে ওপাড়া যেতেও পালকি চাই। পোড়ারমুখো সাহেবরা আবার ঘোড়ায় টানা হাওয়াগাড়ি বার করে ছেলেছোকরাদের মাথা খেয়েছে। ত’বিলে কড়ি থাকলে অমন আরো কত কী বা হবে!
তালপাতার ছাতাখানা পুরোনো হয়ে প্রায় খসে পড়েছে, এবার নতুন আর একখানা না হলেই নয়। খড়মটাও পাল্টানো দরকার। পাঠশালের চাল ছাইবার খড়ও চাই কয়েক কাহন। চাই বললেই তো হবে না, তার জন্য কড়িও চাই ঢের। শুধু তাঁরই নয়, এ তল্লাটের আরও দশ বিশটা পাঠশালের ওই একই অবস্থা। কালাজ্বরে গাঁয়ের পর গাঁ উজাড়, লোকে আসবে কোত্থেকে? বারুইপুরের বড়ো কাছারিতে এক ম্যাজিস্ট্রেট এয়েছে। নৈহাটির চাটুয্যে। বড়ো ভালো ছোকরা। এত বড়ো চাকুরে তার কোন দেমাক নেই। ওই ভরসা। চাটুয্যে ছোকরা কথা দিয়েচে কোম্পানি না করলে ও নিজের থেকেই সাহায্য করবে। আহা বেঁচে থাক, এটুকু ভরসাই বা কে দেয় আজকাল।
এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে টুক টুক করে হাঁটছেন বুড়ো মানুষটা। পথে দেখা হলো দুকড়ি ডোমের সাথে। দুকড়ির ছায়া হয়ে সেঁটে আছে ওর ছেলে পরাণ। পথের ধুলোর ওপরেই সাষ্টাঙ্গ পেন্নাম করলেন দুকড়ি। তাড়ির গন্ধে বাতাস ভরপুর।
“পেন্নাম হই গো পণ্ডিতমশাই।”
“ওরে ধুলোর ওপর গড়াস না , বেঁচে থাক্ বেঁচে থাক্। শরীর গতিক ভালো তো?”
“আপনাদের কিপায় ভালোই আজ্ঞা। বউটার সান্নিপাতিক হয়ে যাই যাই হয়েছেল, দয়াময়ী সতীমায়ের থানে হত্যে দেবার পর থেকে অষুধ ধরতেছে, কবরেজ মশাই আজ্ঞা করেছেন গেল হপ্তায় ঠিক হয়ে যাবে’খন।”
দয়াময়ী সতীমায়ের কথা শুনে সার্বভৌম ঠাকুর আনমনা হয়ে পড়লেন। চোখের কোণায় জল। ছেলেবেলায় দয়াময়ী ঠাকরুণকে সতী হতে দেখেছেন তিনি। দশ বছরের বাচ্চা মেয়েটাকে কড়া সিদ্ধি খাইয়ে বুড়ো বরের সাথে চিতায় পুড়িয়ে মেরেছিল সামন্তরা। ধর্মের নামে কত বড়ো অন্যায়! তাঁর নিজেরও তখন দশ বারো। দয়াময়ীর খেলার সাথি। দয়াময়ীর বুড়ি সতীনের ছেলে পিতেম্বর সামন্ত সেই চিতার ওপর মঠ বানিয়েছিল। টাকাকড়ির মুখে আগুন! আশি বচ্ছর আগেকার সেই তুমুল ঢাকঢোলের শব্দ আজও তাঁকে অসাড় করে দেয়। রাগে আপাদমস্তক জ্বলতে থাকে। দয়াময়ীর পর আর কেউ সতী হয়নি এ গাঁয়ে। ছোকরা পণ্ডিতের দল লাঠি হাতে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
“হত্যে দিয়ে আর মন্তর দিয়ে কিছু হয়না রে ব্যাটা, কবরেজের ওষুধই সব। সান্নিপাতিক বড়ো সাধারণ অসুখ নয়! সাবধানে রাখিস।”
বেলা পড়ে আসছে। হেমন্তের বিকেলে বাতাসে শীত শীত ভাব। গঙ্গার জলে জোয়ারের টান লেগেছে। বুড়ো বটগাছের ছায়ায় চওড়া বাঁধানো ঘাটে বসে হাঁপ ছাড়লেন নব্বই বছরের ভবনাথ সার্বভৌম। লাল কাপড়ে যত্ন করে বাঁধা তল্পি কপালে বুকে ঠেকিয়ে নাবিয়ে রাখলেন। আড়াইশো বছরের পুরোনো চণ্ডীমঙ্গলের পুঁথি আছে এতে। ভবনাথের ভুরু কোঁচকানো। দুকড়িকে বলা হয়নি, কথাটা ‘গেল হপ্তায়’ নয়, বলতে হবে ‘আসছে হপ্তায়’। বামুন কায়েতরাই ভুল করে, এ হতভাগা তো ডোম। এদের লেখাপড়া শেখাবে কে?
“নমস্কার পণ্ডিত মশাই।”
অবেলায় নজর ঠিক থাকে না, তবু গলার আওয়াজে চিনতে পারলেন ভবনাথ।
“আরে দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ মশাই! আসতে আজ্ঞা হোক আসতে আজ্ঞা হোক!”
“ঠাকুর্দা! দয়া করে আপনি আজ্ঞে করবেন না। তার চাইতে গাল বাড়িয়ে দিচ্ছি, চড় মারুন একটা।”
“আয় আয় বোস্। তুই তোকারি করলেই কি আর পান্ডিত্য কমবে তোর! তুই আমার বিদ্যার জাহাজ।”
“আর তোমার বিদ্যের সাগরটি কী রকমের?”
“কে, ঈশ্বর! ওরে বাবা ওতো জলবিছুটি, বুনো ওল্। মাথাটা দেখেছিস! যশুরে কই। ওর তো আজ আসবার কথা এখেনে। এতো দেরি তো করেনা সে!”
“বলেছে যখন আসবেই। হাঁটাপথে পটলডাঙ্গা থেকে হরিনাভি, অনেকটা দূর। তোমার তল্পিতে আজ কার অধিষ্ঠান? মনসা, কালিকা না চণ্ডী? ”
“ওদিকে নজর দিস্নে ছোঁড়া, ঈশ্বরের বায়না করা আছে।”
“কার রচনা ?”
“তাঁর নামের জায়গাটি উই না ইঁদুর রসিকতা করে খেয়ে রেখেছে, মূল অংশটা অবশ্য ঠিক আছে এখনও। আড়াইশো বছরের প্রাচীন পুঁথি, চণ্ডীমঙ্গল।”
“কালকেতু-ফুল্লরা!”
“ফুল্লরার বারোমাস্যার জায়গাটি কেমন খাসা বল! ঠিক যেন আমাদের ঘরের ঠাকুরানীদের চোপা থেকে তুলে সাজানো। পদকর্তার গিন্নীটি নির্ঘাৎ কুঁদুলে ছিলো। আহাঃ
আষাঢ়ে রবির রথ চলে মন্দগতি।
ক্ষুধায় আকুল হই লোটাই আহ্মি ক্ষিতি।।
ক্ষণে ক্ষণে উর্বি অহ্মি চারিদিকে চাহি।
হেন সাধ করে মনে অন্য জাতি যাই।।”
******
“জয় মাকালী ঘ্যাচাং!”
কচি গলার শির ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছে পরাণ। কলাগাছের থোরের গায়ে কাঠের টুকরোর ঘা পড়ছে ঘপা ঘপ্। পরনের ত্যানাটুকু কোথায় গেছে কে জানে। কালো হাড় জিরজিরে শরীরে তেজের অবশ্য কমতি নেই। কম নেই কাদামাটিও। হুঁকোর কল্কিতে ফুঁ দিতে দিতে হাসছে দুকড়ি।
“চুপ করবি রে ছোঁড়া!”
“পাঁঠা বলি দিচ্ছি যে!”
“এখন চুপ্ কর। কালীপুজোর দেরি আছে আরো এক হপ্তা, তখন পাঁঠাবলি দিস্।”
হুঁকোর মাথায় কলকি চড়িয়ে কলাপাতের নল বসিয়ে একটু দূর থেকে হাত বাড়ালো দুকড়ি, “বাবাঠাকুর, আজ্ঞা হোক।”
ভবনাথ হাত বাড়িয়ে হুঁকো নিলেন। গুরগুর করে শব্দ হচ্ছে। আবছা অন্ধকারে কালচে দেখাচ্ছে গঙ্গার খোলা জলে দুলন্ত কলমির দাম। তারা ফুটে উঠেছে একটি দুটি। হুঁকোর নীলচে ধোঁয়া মিশে যাচ্ছে হেমন্তের জোলো বাতাসে। একটা বজরা ভেসে যাচ্ছে সুতানুটি কলকাতার দিকে। বজরার জানলায় লন্ঠন জ্বলছে। লালচে আলোয় কে একজন সাহেবি পোশাকের মানুষ মাথা নিচু করে বসে আছেন। দুই পণ্ডিত চেয়ে দেখলেন। কম আলোয় এত দূর থেকে ঠিক ঠাহর হল না। বজরার গুণটানা মাঝি একটু বসল এসে ঘাটের পৈঠেতে।
“কে যায় হে মাঝির পো?”
“বারুইপুরের কাছারি সাহেব আজ্ঞা।”
আবার উঠে হাঁটা দিয়েছে মাঝি। বজরা ধীরে ধীরে ভেসে যাচ্ছে ঘর ফিরতি ক্লান্ত রাজহাঁসের মতো। দেখতে দেখতে ডাইনে রাজপুর জগদ্দলের ঘাট পেরিয়ে গেল। জানালার আলো এখনও দেখা যায় মিট্মিটে আকাশপিদিমের মত, ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল অন্ধকারে। আলো নেই আর একটুও। আকাশের অগুণতি তারা ফুটে উঠেছে। রাজপুর শ্মশানে চিতা জ্বলে উঠলো কারো। আকাশে আগুনের ফুলকি উড়ছে। উড়ছে অনেক জোনাকিও। গঙ্গার ওপারে মানিকপুর। কয়েকঘর লোকের বাস সেখানে। তাদের ঘরে সাঁঝবাতি জ্বলে উঠল। গেরস্তঘরের শাঁখে ফুঁ পড়ল।
দ্বারকানাথের দিকে হুঁকো বাড়িয়ে দিলেন ভবনাথ। দ্বারকানাথের দড়ি উড়ছে ফুরফুরে বাতাসে। কলকের টানে টানে উল্সে ওঠা আগুনে আনমনা চোখ দুটি দেখা যায়, গলার স্বর চাপা, গম্ভীর।
“বঙ্কিম চাটুয্যে মশাই কলকেতা চল্লেন। এই অবেলায়, কে জানে কী কারণ? কোম্পানির বড়োকুটুমদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তো ভালো নয় একেবারেই। বেশিদিন এখানে তাঁকে পাবো বলে মনে হয় না ঠাকুদ্দা।”
“ঠিকই আন্দাজ করেছো।”
অন্ধকারে চেহারা দেখা যায়না, যেন আর একটা জমাট অন্ধকার এসে বসল গা ঘেঁষে। মাথায় খাটো, গলার আওয়াজ রুক্ষ আর জোরালো। ভবনাথ নড়ে চড়ে বসলেন।
“কে গো, ঈশ্বরচন্দ্রমশাই নাকি? স্বাগতম্!”
“প্রণাম নাও ঠাকুর্দা, বেঁচে আছো দেখছি।”
“বুড়ো আরও বিশ বচ্ছর বাঁচবে। তারপর কী বলছিলি?”
“বলছি ঠিকই ধরেছ। বঙ্কিম চাকরিতে ইস্তফা দিল। ভালো করে বল্লে কোম্পানি চাকরি ছাড়তে বাধ্য করল।”
“সে কী !”
“মর্যাদাবোধ খুব ওর। রসবোধের ও তুলনা নেই। লেখার হাতও ভাল। চাটুয্যের পো’কে চিনি অনেকদিন। ভারী মিশুকে। আমার তালতলার চটির মাথা কেমন বেঁকে বেঁকে যায়। বঙ্কিম আমায় বল্লে বিদ্যেসাগর মশায়ের চটি তো উর্দ্ধমুখী হয়ে স্বর্গবাসী হতে চাইছে!
“তুই কী বললি?”
আমি বললাম, “চট্টোপাধ্যায় বুড়ো হলেই বঙ্কিম হয়।”
দুই পণ্ডিত হা হা করে হাসছেন। ঈশ্বরচন্দ্র মুচকি হাসছেন।
“রসিক বটে! তা কোম্পানি তো হাতে মাথা কাটছে সবার! সাদা শকুনের দল তো রাখলে না কিছু!”
“দেরি আমার এ জন্যেই। ঝগড়া করে এলাম সাহেবগুলোর সঙ্গে। চব্বিশ পরগনা অন্ধকার হয়ে গেল হে!”
“একে কি এঁটে উঠতে পারবে সায়েবরা? মোকদ্দমা করবে না চাটুয্যে?”
“ওকে ওর কথা ভাবতে দাও। বঙ্কিমের ধাত আলাদা। শান্ দেয়া ইস্পাত।” ঈশ্বরচন্দ্র ভবনাথের দিকে তাকালেন, “ঠাকুদ্দা আমার চণ্ডীমঙ্গল?”
ভবনাথ অন্ধকারে তলপি বাড়িয়ে দিলেন। ঈশ্বর দু’হাতে যত্ন করে ধরে মাথায় ঠেকিয়ে পাশে রেখে গুছিয়ে বসলেন। ভবনাথ নরম হাতে ছুঁলেন ঈশ্বরকে।
“এত দেরি করে এলি যে, কলকেতা ফিরবি কী করে?”
“কাল ফিরব। তোমাদের সঙ্গে কথা আছে ঢের। দ্বারকা দু’কড়িকে পাঠাও তো, পালকিতে আলো এনেছি, নিয়ে আসুক।”
“পালকি কোথায়?”
“রাজপুরের ঘাটে। পালকি চড়তে দেখলে বুড়োটা গাল দেয় বলে এ অবধি আনতে ভরসা পাইনি। দোখনো বুড়োর ঝাঁঝ খুব!”
পরাণকে পণ্ডিতমশাইদের পাশে বসিয়ে দুকড়ি গেল আলো আনতে। রাত হলেই পরাণের জারিজুরি খতম, ঢুলে পড়েছে ঘুমে। ঈশ্বর ওকে দ্বারকার কাছ থেকে নিজের কোলের কাছটিতে নিয়ে বসালেন। ভবনাথ দ্বারকার সাথে চোখাচোখি করে মুচকি হাসলেন।
“বিদ্যেসাগর, পোলাটি কিন্তু চণ্ডালের।”
“আরে আমরা তিনমূর্তিই বুঝি বড্ডো বামুন? জাতপাত মানো না বলে তোমাদের চতুষ্পাঠীতেও তো পোড়ো পাঠাতে চায়না লোকে। ডোমের হাতে হুঁকো খাও।”
“বেশ করি জাত মানি না। মানুষে মানুষে ভেদ থাকা উচিৎ শুধু জ্ঞান আর অজ্ঞানে, বোধ আর নির্বোধে।। জাত পাত চুলোয় যাক ।”
পরাণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন ঈশ্বর পণ্ডিত। ঘুমিয়ে কাদা পরাণ।
“আমার নতুন বই করছি এদের সবার জন্যে। বাংলায় হরফ, বানান, চলতি কথা লিখতে শেখা এসব ব্যাপার আর কি। নাম দিয়েছি ‘বর্ণপরিচয়’। বামুনের তবিলের তালপাত নয়, কাগজে ছাপা বই হবে। সব জাতের ছেলে মেয়েরা পড়বে।”
“তালপাতের মতো টিঁকবে তো?”
“টিকবে টিকবে। তা ছাড়া দুচারখানি না ছিঁড়লে আমার বিক্রি বাড়বে কী করে?”
“ব্যাটা বামুন ব্যাপারী! হ্যাঁরে ঈশ্বর, তোর দ্বারা ব্যবসা বাণিজ্য হবে?”
“ওরে শালা, বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী! দুবোনের ভাব না হলে লেখাপড়া এগোবে? তোর ইচ্ছে হয় চালকলা খেয়ে বামনাই করগে যা।”
দু’কড়ি ফিরে এলো আলো নিয়ে। পিছু পিছু যমদূতের মতো পালকি বেহারাদের সর্দার ধরণী সাঁতরা, হাতে সড়কি মাথায় পাগ। তার লাল চোখ, গম্ভীর আওয়াজ।
“বেহারাদের রেতে থাকবার ব্যবস্থা করে এলাম আজ্ঞা। আমি এলাম আপনাকে পাহারা দিতে। জায়গা তো ভালো নয়।”
“কোন দরকার নেই। তুই যা। রাত্তিরে বাইরে যেতে বারণ করিস, বড়ো শেয়ালের ভয় আছে এদিককার জঙ্গলে। দু’কড়ি চক্মকি আন।”
হেমন্তের রাত বাড়ছে। দূরে দূরে শেয়ালের ডাক শোনা যায়। ঘাটের পৈঠের গায়ে ভরা জোয়ারের ঢেউ ভাঙছে কুল্ কুল্ ছ্ল্ ছ্ল্। বিন্দু বিন্দু হিম জমা হচ্ছে গাছের পাতায় পাতায়।
ঘাটের ফাঁকা চত্বরে তিন পণ্ডিত বাতি ঘিরে গুছিয়ে বসেছেন। দু’কড়ি নতুন করে কল্কে সাজাচ্ছে। ন্যাংটো শিশু পরাণ ঘুমিয়ে পড়েছে ঈশ্বরের চাদরের ওপর, ভবনাথের কোলে তার মাথা। কাঁধের ঝোলা থেকে নতুন লেখা কাগজের তাড়া বের করছেন ঈশ্বর। মুখপাতে খয়েরের রঙে বড়ো করে লেখা।-‘বর্ণপরিচয়’।
দ্বারকা আস্তে আস্তে ঠেলা দিচ্ছেন পরাণের গায়ে, “ওঠ্ বাবা ওঠ্। পড়তে হবে!” বড়ো বড়ো চোখ করে উঠে বসেছে পরাণ। কাঁচা ঘুম ভেঙে চোখ কচলাচ্ছে কচি দুহাতে। কাঁপা কাঁপা প্রদীপের আলোয় মন্দির কাঁপছে, ছায়া কাঁপছে। ঈশ্বর পণ্ডিত বলছেন-
“বল্ তো পরাণ, আমার সঙ্গে সঙ্গে বল্–
কাক ডাকিতেছে।
গরু চরিতেছে।
পাখি উড়িতেছে।
জল পড়িতেছে।
পাতা নড়িতেছে।”
ছবিঃশিবশংকর ভট্টাচার্য