জন্মান্তর রহস্য
সহেলী চট্টোপাধ্যায়
নিজের পূর্ব জীবন সম্পর্কে জানতে ভীষণ আগ্রহী নরেনবাবু। জন্মান্তর নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করে ফেলেছেন কিন্তু তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। তিনি চাইছেন নিজের পূর্বজন্মের স্মৃতি ফিরে আসুক।
গিন্নী অনেক বুঝিয়েছেন , দেখো এসব খেয়াল ছেড়ে দাও। লাখে একজন মানুষ হয়ত জাতিস্মর হয়। পূর্বজন্মের কথা যাদের মনে থাকে তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। কিন্তু নরেনবাবু নিজের জেদে অটল। যে করেই হোক নিজের পূর্বজন্ম সম্পর্কে জানতেই হবে।
অফিস কলিগ, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনদের অনেকেই তাঁর এই বিচিত্র খেয়ালের কথা জানে। আড়ালে হাসিঠাট্টাও করে। কেউ কেউ সামনেও করে। নরেনবাবু অনেক সাধু সন্ন্যাসী , তান্ত্রিকদের ধরেছেন কিন্তু কেউই তাঁকে পূর্বজন্ম দেখাতে পারেননি । একবার এক বয়স্ক সাধু বলেছিলেন, কী হবে ওসব জেনে? যে জীবন তুমি ফেলে এসেছ তার ব্যাপারে আর জানতে চাওয়া উচিৎ নয়। এতে ঈশ্বরের নিয়মের বিরোধিতা করা হয়।
কিন্তু নরেনবাবু জানতে চান তাঁর যে হাতের ব্যাথাটা হয় সেটা কি আগের জন্মেও হত? কপালে যে ছোট্ট জড়ুলটা আছে তা নিশ্চয় আসলে গুলির দাগ। আগের জন্মে নিশ্চয়ই তাঁর কপালে গুলি লেগেছিল আর তাতেই তিনি মারা যান । এই জন্মে সেই গুলির দাগ জরুল হয়ে গেছে। নিশ্চয়ই এসব আছে নইলে এ নিয়ে এতগুলো সিনেমা হত না।
জন্মান্তর সম্পর্কে তিনি অনেক বইপত্র পড়েছেন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকাও পড়েছেন। বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে একটা ঘটনা খুব মন দিয়ে পড়েছেন, রীতিমত আশ্চর্য বোধ করেছেন। পাস্ট লাইফ কাউন্সিলিং। বিদেশে কিছু সাইকোলজিস্ট আছেন যারা রোগীকে কিছুক্ষণের জন্য তাদের পাস্ট লাইফ অর্থাৎ পূর্বজন্মে নিয়ে যান । রোগী নিজের পূর্বজন্মের সব বিবরণ দেয়। নিজের মৃত্যু কী করে হয়েছিল সেটাও বলে দেয়। এই পূর্বজন্ম দেখার পর রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায় । এই জন্মের শারীরিক কোনো কষ্ট, মানসিক কোনো ভয় বা উদ্বেগ তারা এই পূর্বজন্মে গিয়ে কাটিয়ে ওঠে। ভয় বা অবসাদ বা শারীরিক কোনো সমস্যার সূত্রপাত তাদের পূর্বজন্মে, দুর্ভাগ্যবশত এই জন্মেও তারা সেই একই কষ্ট ভোগ করছে।
তবে এইধরনের চিকিৎসার খরচ বিশাল। আর একধরনের সাইকোলজিস্ট এদের ভণ্ড বা প্রতারক বলে প্রচার করছেন। পূর্বজন্ম নিয়ে যারা এই ধরনের গবেষণা বা রোগ নির্ণয় করছেন তারা আসলে প্যারাসাইকোলজিস্ট। সাধারণ সাইকোলজিস্টদের সঙ্গে তাদের কিছু তফাৎ আছে। এরা মানুষের মনের ধোঁয়াটে দিকগুলো নিয়ে চর্চা করেন। নরেনবাবু এই প্রবন্ধ পড়ে বেশ উত্তেজিত। তবে এই সুযোগ এখানে কোথায় পাবেন? পঞ্চাশের কাছে বয়স হয়ে গেল কিন্তু এখনও পূর্বজন্ম সম্পর্কে জানা গেল না। সরকারি অফিসে চাকরি করেন নরেনবাবু। মাইনের বেশির ভাগটাই যায় নানারকম বই কিনতে।
অবশেষে নরেনবাবুর মনস্কামনা পূর্ণ হল একদিন। এক রবিবার বিকেলে তিনি আড্ডা দিতে গিয়েছিলেন পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে। ফেসবুকের কল্যানে পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ভালোই আছে। মাঝে মধ্যেই এক একজনের বাড়িতে জমায়েত হন সবাই। এরকমই একটা জমায়েত ছিল সেদিন। বন্ধুটির নাম ছিল অজয়। সেই জমায়েতে একজন অচেনা মানুষও উপস্থিত ছিল। অজয় বলল, “আজ আমাদের মধ্যে এমন একজন উপস্থিত আছে যাকে কেউ চিনিস না, আলাপ করিয়ে দেবার জন্যই ডেকেছি , বিশেষ করে নরেনের খুব ভালো লাগবে।”
নরেনবাবুর চোখে জিজ্ঞাসা। অজয় বলল, “আর সাসপেন্স রাখব না। এ হল আমার শ্যালক আবীর। হি ইজ আ প্যারাসাইকোলজিস্ট এন্ড আ পাস্ট লাইফ রিগ্রেসর। লন্ডনে থাকে এখানে এসেছে কিছুদিনের জন্য। ”
আবীরকে বেশ সুন্দর দেখতে। বয়স পঁচিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে। নিজেই নরেনবাবুর সাথে আলাপ করল। নিজের কর্মজীবনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলল। শুনতে শুনতে নরেনবাবুর মনে হল এরকমই কাউকে তিনি খুঁজে চলেছেন এতকাল ধরে।
নরেনবাবু আবীরকে এক ফাঁকে বললেন, “আপনার মতই কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম । আমি নিজের গতজন্মের কথা জানতে চাই। এই জন্মে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। খুব ছোটোবেলায় নিজের বাবা মাকে হারিয়েছি। কাকার আশ্রয়ে বড়ো হয়েছি। আমার কোনো সন্তান নেই। আগের জন্মে নিশ্চয় কোনো গুরুতর অপরাধ করেছি তাই এই জন্মে এত শাস্তি পাচ্ছি।”
“আমাকে আপনি বলবেন না দয়া করে। আপনার ব্যাপারটা দেখছি । পৃথিবীতে জন্মালে দুঃখ কষ্ট পেতেই হবে। আপনি একদিন আমার বাড়ি চলে আসুন এর মধ্যে। আমি কিছুদিন এখানেই আছি। এই নিন আমার কার্ড।” আবীরের হাত থেকে কার্ডটা নিলেন নরেনবাবু। একমাত্র আবীরই পারবে তাঁর সমস্যার সমাধান করতে।
সেদিন অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর নরেনবাবু বাড়ি ফিরলেন বেশ খোশমেজাজে। বাড়ি ফিরেই ঠাকুর ঘরে ঢুকে গোপালকে একটা প্রণাম ঠুকলেন । গিন্নী জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ব্যাপার? এত রাতে ঠাকুরঘরে কেন?”
“যা চাইছিলাম তা পেয়ে গেছি সবিতা।”
“কী চাইছিলে? প্রোমোশন ? পেয়েছ বুঝি? অভিনন্দন!”
“আরে না না! প্রোমোশন নয়, আমি এবার নিজের পূর্বজন্ম দেখতে পাবো।”
সবিতা বিরক্তির সঙ্গে তাকালেন। মুখে কিছু বললেন না। নরেনবাবু সবিতার এই দৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত। তিনিও আর কথা বাড়ালেন না। পরের দিন অফিস করেই হাজির হলেন আবীরের বাড়ি। ফোনালাপটা অবশ্য আগেই সেরে নিয়েছেন। শ্যামনগরে গঙ্গার ধারে আবীরদের বেশ পুরানো আমলের বাড়ি। আগেকার দিনের জমিদারবাড়ির মত দেখতে। সামনে অনেকখানি জায়গা নিয়ে বাগান। আবীর বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল। নরেনবাবু বিগলিত হয়ে বললেন, “তুমি আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছো ? সত্যি তোমাকে খুব বিরক্ত করছি!”
“আরে এতে বিরক্ত হবার কী আছে? আমার কাজই তো এই,” আবীর হেসে বলল।
“আচ্ছা তোমার ফিজ কত? এ ব্যাপারে তো কথাই হয়নি।”
“আমি আপনার থেকে এক টাকাও নেব না। দয়া করে টাকার কথা তুলবেন না।”
“না না! সে কি হয়! তুমি এত পরিশ্রম করবে!”
“আপনি বরং আমাকে একদিন ডিনারের নেমন্তন্ন করবেন তাহলেই হবে,” আবীর আবার হাসল।
কথা বলতে বলতে ওঁরা ড্রয়িং রুমে চলে এসেছেন। ঘরদোর পুরানো আমলের হলেও বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কাচের শো কেস ভর্তি অ্যান্টিক এর জিনিস। বুকশেলফ ভর্তি বই। বাহারি ঝাড় লন্ঠন , অয়েল পেইন্টিং, ওয়াল ম্যাট। নরেনবাবু একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করেন, “তোমার বাড়ির লোকদের তো দেখছি না?”
“বাবা, মা দার্জিলিং গেছেন। আমিও কিছুদিন পর যাচ্ছি।”
একজন লোক দু গ্লাস শরবত দিয়ে গেল ট্রে তে করে। আবীর একটা হাতে নিয়ে আরেকটা গ্লাস নরেনবাবুকে ধরিয়ে দিল। তাঁর প্রিয় গোলাপ ফুলের শরবত। এক গ্লাস শেষ করতে সময় লাগল না। আবীরের গ্লাস তখনও শেষ হয়নি।
ঠাণ্ডা শরবতটা খাওয়ার পর নরেনবাবুর শরীরটাও জুড়িয়ে গেল। আবীর নিজের গ্লাস শেষ করে ফেলল। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বলল, “আর তো দেরি করার কারণ দেখছি না! চলুন।”
কথাগুলো বলেই ও উঠে পড়ল । নরেনবাবু আবীরকে অনুসরণ করলেন। ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ওরা দোতলায় উঠে এলেন। আবীর একটা ঘরের ভেতর তাঁকে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিল। অন্ধকার ঘরে ঢুকতেই গা-টা কেমন শিরশির করে উঠল তাঁর।
“ভয় পাবেন না,” আবীরের গলা শোনা গেলো। ঘরের আলো জ্বলে উঠল। একটা টেবিল, চেয়ার আর সোফা ছাড়া আর কিছু নেই। টেবিলে ফ্লাওয়ার ভাসে কিছু গোলাপ ফুল শোভা পাচ্ছে।
তাঁকে সোফায় বসতে বলে আবীর নিজে চেয়ারে গিয়ে বসল। টিউবলাইটটা নিভিয়ে দিয়ে একটা নাইটল্যাম্প জ্বেলে নিয়েছে। ঘরের পরিবেশ এখন আধা ভৌতিক।
“জোরে জোরে শ্বাস নিন। মনটাকে একটা জায়গায় কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করুন,” বলতে বলতে আবীর উঠে এল নরেনবাবুর কাছে। আলতো করে নরেনবাবুকে সোফায় শুইয়ে দিল।
“ভাবুন, ভাবতে থাকুন। আপনি কে? কোথায় ছিলেন? অন্য কোনো চিন্তা আনবেন না। একদম রিলাক্স করুন।”
ঘরের ভেতর মিষ্টি গোলাপের গন্ধ, কোথাও কোনো শব্দ নেই। এসি চলছে ফুল স্পিডে। মাঝে মাঝে আবীরের গলা। নরেনবাবু আর পারলেন না, চেতনা লোপ পেল তাঁর–
–একটা কাঠের দোতলা বাড়ি। প্রচুর বরফের কুচি উড়ছে। ভীষণ শীত করছে নরেনবাবুর। এটা ভারত নয়, মনে হয় ইউরোপের কোনো গ্রাম। ওক, পাইন, ফার, স্প্রুস , চেরি ইত্যাদি গাছের ছায়ায় ঘেরা বাড়িটা। দূরে পাহাড়ের রেখা দেখা যাচ্ছে। নরেনবাবু বাড়ির দরজায় ঘা দিলেন বারকয়েক। দরজা খুলে গেল। ভেতরে ফায়ার প্লেসের সামনে বসে আগুন পোয়াচ্ছেন একজন বয়স্ক সাহেব আর মেম।
নরেনবাবুর মনে হল এদের তিনি বহু যুগ ধরে চেনেন। সাহেব আর মেম তাঁকে দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলেন। দেওয়ালে ঝুলছে একটা অল্পবয়সী ছেলের ছবি। ছবির ব্যাপারে মেমসাহেবকে কিছু জিজ্ঞাসা করতেই তিনি এক অদ্ভুত কান্ড করলেন। একটা ছোটো আয়না নিয়ে এসে নরেনবাবুর হাতে দিলেন। আয়নায় চোখ পড়তেই তিনি চমকে উঠলেন। আয়নায় তাঁর প্রতিবিম্ব নেই। তার বদলে অল্পবয়সী এক ইংরেজ তরুণের মুখ দেখা যাচ্ছে। দেওয়ালে যে ছবি হয়ে ঝুলছে তারই মুখ আয়নায় দেখতে পেলেন। নরেনবাবু কেঁদে ফেললেন। যুদ্ধে গিয়ে তিনি আর ফিরে আসেননি মায়ের কোলে। স্পষ্ট সব মনে পড়ে গেল। এদের ছেড়ে যেতে মন চাইছে না।
ঘুমের ঘোর কেটে যেতেই দেখতে পেলেন সামনে আবীর বসে আছে একটা খাতা আর কলম নিয়ে। খাতায় মন দিয়ে কিছু লিখছে। আবীর টিউব জ্বেলে দিল। বলল, “আরও কয়েকবার আসতে হবে আপনাকে। ঘুমের মধ্যে যা যা বলেছেন সবই নোট করে নিয়েছি।”
নরেনবাবু সেটা দেখতে চাইলেন কিন্তু আবীর বলল, “আমি শর্টহ্যান্ডে লিখেছি। আপনি বুঝবেন না। প্রথম দিন কেমন লাগল?”
নরেনবাবু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলে গেলেন, আবীর মাথা দোলাতে থাকল। সঙ্গেসঙ্গে ডায়েরিতে নোটও নিচ্ছিল। তারপর বলল, “আপনার মনে পড়ে গেছে যে আপনি আগের জন্মে কে ছিলেন, কোথায় ছিলেন আর কীভাবে মৃত্যু হয়েছিল! আর দুবার আসতে হবে আপনাকে। অনেক রাত হয়ে গেছে। আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। এখানেই ডিনারের ব্যাবস্থা করেছি। চলুন আগে আমরা সেই কাজটা সেরে ফেলি।”
নরেনবাবুর আপত্তি ধোপে টিকল না। কাজের লোকটির রান্না বেশ ভালো। খাবার পর আবীর নিজের গাড়িতে করে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিল।
পরের দিন সকাল হতেই মেজাজটা খিঁচরে গেল নরেনবাবুর। গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে মাইনে তুলেছিলেন অথচ আজ সেটা খুঁজে পাচ্ছেন না। আর বাঁ হাতের অনামিকায় যে হীরের আংটিটা পরতেন সেটিও নেই। বিয়ের আংটি। নিজের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লেও এতটা বিচলিত হতেন না তিনি। গতকাল অফিস থেকে ফেরার পথে এ টি এম এ টাকা তুলেছেন। তারপর ট্যাক্সি নিয়েছিলেন সুতরাং পকেটমারির সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু সরাসরি আবীরকে চোর ভাবা খুব শক্ত তাঁর পক্ষে। ক্ষতিটা মুখ বুজে হজম করা ছাড়া কিছু করার নেই। সারাদিন অনেক চিন্তা করলেন। আবীরকে ফোন করলেন কিন্তু ফোন নট রিচেবেল বলছে। সন্দেহ হতে অজয়কে ফোন করে শুনলেন আবীর সেদিন ভোরেই দার্জিলিং চলে গেছে।
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন নরেনবাবু। নিজের উপরই তাঁর রাগ হতে লাগল খুব। সবিতার সঙ্গেও বাক্যালাপ বন্ধ করে দিলেন। পুরো ঘটনাটা সবিতা জানতে পারলে নরেনবাবুকেই অনেক কথা শুনতে হবে।
দু দিন পর আবীর হঠাত হাজির নরেনবাবুর বাড়ি। কিছুক্ষন গল্প করার পর আবীর নিজের পকেট থেকে একটা খাম আর সেই হীরের আংটি বার করল। বলল, নিজের জিনিসগুলো বুঝে নিন। নরেনবাবু হতবাক, “এগুলো–তোমার কাছে—”
“আমি চুরি করেছি। আপনাকে সেদিন শরবতের মধ্যে একটা ঘুমের বড়ি ফেলে দিয়েছিলাম। তার সঙ্গে কাজ করেছে আপনার মনের কল্পনা আর আমার রচিত পরিবেশ। আমি সাইকোলজিস্ট। আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু পূর্বজন্মের অলীক কল্পনা করে আপনি এই জীবনের সুন্দর দিনগুলো নষ্ট করে ফেলছেন। জীবন মানুষ একবারই পায়। এই নিয়ে সিনেমা দেখুন বই পড়ুন কিন্তু নিজের বাস্তব জীবনের সাথে মেলাতে যাবেন না দয়া করে।”
নরেনবাবুর চোখে মুখে বিস্ময় এখনও। আবীর হাসল, “আমি চাই না আপনি কোনো প্রতারকের পাল্লায় পড়ুন। আপনাকে একটু বোঝাতে চেয়েছিলাম যে এইভাবে আপনি কখনও প্রতারকের পাল্লায় পড়তে পারেন। তাই টাকা আর আংটি সরিয়ে রেখেছিলাম।”
নরেনবাবুর এতক্ষণে সব পরিষ্কার হল। বললেন, “আচ্ছা! সব বুঝলাম। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! সত্যি হয়ত এই ভাবে আমি কোনো ঠকবাজ লোকের পাল্লায় পড়তাম। এবার থেকে আমি আর বিগত জীবন নিয়ে কখন ও মাথা ঘামাবো না। সবিতাকে নিয়ে দেরাদুন ঘুরে আসব। ও বহুদিন ধরে কোথাও যাবার জন্য বায়না করছে। ”
আবীর বলল, “অবশ্যই। তবে, আমি একা কিছু করিনি কিন্তু। জামাইবাবুও যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।”
“কে? অজয়? ” চোখ কপালে তুলে বললেন নরেনবাবু।
“আমার বাড়ির কাজের লোকটাকে চিনতে পারেননি সেদিন?”
“অজয় নাকি? তাই চেনা চেনা মনে হয়েছিল। দারুন মেক আপ নিয়েছিল তো!”
“হ্যাঁ । জামাইবাবুই ছিল সেদিন চাকরের ছদ্মবেশে। তবে প্ল্যানটা আমারই। জন্মান্তর রহস্যের সমাধান হল তাহলে?” আবীর হেসে ফেলল।
“হল। তুমি কিন্তু এখান থেকে খেয়ে বেরুবে আজ,” খুব নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন নরেনবাবু।
ছবিঃ ইন্দ্রশেখর