ভোররাতে আবার স্বপ্নটা দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলাম। টেবিলের ওপর থেকে জলের গ্লাসটা হাতে নিয়েও খেলাম না। মাথাটা ভার হয়ে আছে। ইদানীং লক্ষ করেছি যখনই স্বপ্নটা দেখি এই মাথাব্যথাটা শুরু হয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ ঠায় বিছানার উপর বসে থেকে আমি গায়ের থেকে চাদর সরিয়ে ফেললাম। যত দিন যাচ্ছে এই একটা স্বপ্নই যেন বারবার ফিরে আসছে আমার ঘুমের মধ্যে। আগে মাসে একবার, ইদানীং সপ্তাহে একবার করে আমি একই স্বপ্ন দেখি। কিছু যেন বলতে চায় স্বপ্নটা। একটা ঘটে যাওয়া ইতিহাস। যতবারই দেখি মনটা খারাপ হয়ে যায়।
আমি বিছানা ছেড়ে উঠে আড়মোড়া ভাঙলাম। একটু আগে বোধ হয় একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। বাইরে গাছের মাথাগুলোতে গাঢ় সবুজ রঙ ধরেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম প্রায় সাড়ে ন’টা বাজতে চলেছে। সায়ন্তন এখুনি এসে পড়বে।
রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের ব্যবস্থা করলাম। শুধু ঘুমের মধ্যেই না, সারাদিনের কাজের মধ্যেও ঘুরেফিরে আসে দৃশ্যগুলো। কতগুলো ছেঁড়াছেঁড়া ছবি। অর্থহীন কয়েকটা শব্দ। তাও সবকিছুর মধ্যে কীসের যেন একটা যোগসূত্র আছে। লোকে বলে ভোররাতের স্বপ্ন সত্যি হয়। আমার কিন্তু মনে হয় স্বপ্নটা ভবিষ্যতের নয়, অতীতের। যেন আমার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। কথাগুলো আমার মনে পড়া খুব জরুরি। কিন্তু এতবার দেখেও আমি বিশেষ কিছু বুঝতে পারিনি। কাঠের উপর নখের আঁচড়ের শব্দ, একগোছা হাতে লেখা কাগজ, একটা দোতলা পুরনো ধাঁচের বাড়ি। এসব ঘুরে ফিরে আসে স্বপ্নটায়। কোনটা আগে কোনটা পরে তা আমার ঠিক মনে পড়ে না। শুধু সবশেষে ঘন অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটা শীর্ণ ক্ষতবিক্ষত হাত খোলা আঙুলগুলোকে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমার অবচেতন মনে বারবার মনে হয় কোন একটা ভুল, একটা মারাত্মক ভুল করেছি আমি, কিন্তু সেটা কী তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না।
প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে অত গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে আমাকে যেন গ্রাস করছে স্বপ্নটা। বুঝতে পারছি ওই হাতের আঙুলগুলো আমার স্বাভাবিক জীবনের শান্তি ভেঙে খানখান করে দিছে।
দরজায় খটখট আওয়াজ হতে আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দরজা খুলে দিলাম। সায়ন্তন একগাল হাসি নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “ তোর প্রবলেম সল্ভড।“ আমি চেয়ারটা টেনে তাকে বসতে নির্দেশ করে বললাম,” প্রবলেম বলতে?”
“ ওই যে স্বপ্নের ব্যাপারটা, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল…”
আমি তাকে মাঝপথে থামিয়ে বললাম,” তোদের ওই সাইকোঅ্যানালিসিসের থিওরি তোদের কাছেই রেখে দে। চা খাবি?”
সে হাসতে হাসতে রোল করা একটা কাগজ আমার সামনে বিছিয়ে দিল,” দেখ তো, চিনতে পারিস কিনা।”
আমি নিচু হয়ে কাগজটা হাতে তুলতেই চমকে গেলাম। কাগজটায় একটা বাড়ির ছবি কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করা আছে। অবিকল আমার স্বপ্নে দেখা বাড়িটার মত, না মত নয়। একদম সেই বাড়িটাই। যেন আমার স্বপ্নটাকে কম্পিউটারে ফেলে প্রিন্ট করেছে কেউ। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,” এটা ক্যামেরায় তোলা?”
“নাহ, ইন্টারনেট এ পুরনো একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম, স্কেচ আর্টিস্টকে দিয়ে তোর স্বপ্নে দেখা বাড়িটার যে স্কেচটা বানিয়েছিলাম না, সেটা রাখা ছিল সামনেই। হঠাৎ দেখলাম ঠিক ওরকমই একটা বাড়ি, হুবহু, কোথাও একটুও ফারাক নেই। ব্যাস! বুঝলাম–কই চা নিয়ে আয়।”
ছবিটার দিক থেকে চোখ না ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কোথায় বাড়িটা?”
“ঠিকানা রেডি আছে। কালই রওনা দেব।”
সায়ন্তন ঘোষ পেশায় মনস্তত্ত্ববিদ। উত্তর কলকাতার কোথায় একটা চেম্বারও আছে। স্কুলজীবনটা দুজনে একসাথেই পড়াশোনা করেছি। তারপর বছরপাঁচেক আর যোগাযোগ নেই। মাসদুয়েক আগে শেয়ালদায় দেখা। একরকম টেনেহিঁচড়েই নিয়ে এসেছিলাম বাড়িতে।
স্কুলে পড়ার সময় ভদ্র ও শান্ত বলে ওর একটা কুখ্যাতি ছিল। এখন সে ভাব খানিকটা কমেছে। সে মনস্তত্ত্বে হাত পাকিয়েছে শুনে খুশি হয়েছিলাম। আমার স্বপ্নের কথাটা বলতেই দেখলাম তার চোখে মুখে ডাক্তারসুলভ বিজ্ঞ ভাব ফুটে উঠল। তখন থেকেই বোধ হয় সে আমাকে পুরনো বন্ধুর বদলে রোগি হিসেবে দেখছে। অনেক ফ্রয়েডট্রয়েড আউরে জ্ঞান দেওয়ার পর বলল, “আমার কী মনে হয় জানিস?”
“কী?” আমি তাপ-উত্তাপ দেখালাম না। সে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরিয়ে বলল “ ব্যাপারটা তোর ছোটবেলার কোন মানসিক চোট থেকে হতে পারে। মানে তোর ছোটবেলার দেখা কোন স্মৃতি তুই ভুলে গেছিস অথচ তোর সাবকনশাস মাইন্ডে সেটা থেকে থেকে অন্য রূপে হানা দিচ্ছে।”
অনেক কাল আগে এরকম একটা বই পড়েছিলাম। আগাথা ক্রিস্টির স্লিপ মার্ডার। সেখানেও ঠিক এরকমই একটা ঘটনা ঘটত। প্রথমটা মনে হবে ভৌতিক উপন্যাস পড়ছি, পরে দেখা যাবে… যাকগে সেকথা, সায়ন্তন ভাবনাচিন্তা করে বলল, “একবার আমার চেম্বারে আসিস তো, এরকম কেস বড় একটা পাওয়া যায় না।”
তার চেম্বারে আমি যাইনি। উলটে সে-ই থেকে থেকে আমার ফ্ল্যাটে হানা দেয়। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে। নোট নেয়। মাঝে মধ্যে হিপনোসিস করার চেষ্টাও করে। তাতে কিছুই লাভ হয় না। আমার স্বপ্নের অত্যাচার দিনদিন বাড়তে থাকে। সাথে পাল্লা দিয়ে মাথা যন্ত্রণা। একেক সময় বিছানায় শুয়ে কাতরাই। কাল সন্ধেয় সে বলল আশ্চর্য একটা খবর আছে। সকালে যেন আমি বাড়িতেই থাকি। অতঃপর আজ সাত সকালে তার এই আবির্ভাব।
****************
বাড়িটার নাম ম্যান্টন হাউস । হুগলী জেলার এক ধার ঘেসে ছোট্ট গ্রাম মিনামুখি,সেখানে একমাত্র পাকা বাড়ি এই ম্যান্টন হাউস। শোনা যায় সেটা নাকি সাহেবি আমলে তৈরি। কুড়ির দশকে বিপ্লবী আন্দোলনে তাড়া খেয়ে এসে হেনরিক ম্যান্টন বলে এক সাহেব নাকি বানিয়েছিলেন বাড়িটা। অবশ্য সে বাড়িতে তিনি বেশিদিন থাকেননি। এখানকার পাত্তাড়ি গুটিয়ে বিলেত যাত্রা করেন। তার আগে বাড়িটা বেচে দিয়ে যান রবার্ট হিল নামে আরেক সাহেবকে। এই রবার্ট হিল নাকি পেশায় ছিলেন বিজ্ঞানী। এখানকার লোকেরা তাকে বব সাহেব বলে ডাকত। লোকটার ব্যবহার খারাপ ছিল না, তবে ওই একটু পাগলাটে গোছের। বন্যার সময় দু-একজন গ্রামবাসীকে বাড়িতে থাকতেও দিতেন।
ম্যান্টন হাউস ছিল দোতলা,একতলায় তিনি নিজে থাকতেন আর দোতলায় তাঁর গবেষণা চলত। আশ্চর্যের ব্যাপার হল ষাটের দশকে গোড়ার দিকে একদিন হঠাৎ করে তিনি বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে গেলেন। বয়স হয়েছিল ভালই। লোকেরা ভেবেছিল মাঠে ঘাটে মরে পড়ে আছেন। কিন্তু না,সেখানেও কোথাও তাঁকে পাওয়া গেল না।
তারপর থেকে খুব বেশি লোক সেখানে থাকেনি। গ্রামবাসীরা বাড়িটার যত্ন নেয়। বেশি জিনিসপত্র বাড়িতে নেই। কিছু পুরনো আসবাব আর সাহেবের বইটই কিছু থাকতে পারে।
আমরা ম্যান্টন হাউসের সামনে যখন পৌছলাম তখন সন্ধে পার হয়ে গেছে। আমরা বলতে আমরা আর সায়ন্তনের বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা হলু। আসার পথেই সে জানিয়ে দিয়েছে তার আসল নাম হলধর, তবে এইখানে কেউ তাকে ওই নামে চেনে না। হলু বললে এক ডাকে চিনবে। মোটা টাকা বখশিস দিতে হয়েছে তাকে, তবে লোকটা খারাপ না। আমাদের আনতে স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছিল।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,“এইখানে থাকা যাবে তো?” সে মাথা নাড়ল, “আমি তো থাকি। আপনারা কলকাতার লোক, একটু অসুবিধে হবে। তবে শীতকাল কিনা, তেমন কষ্ট হবেনা। আসুন এদিকে।”
এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি বাড়িটা কিন্তু মোটেও ভূতের বাড়ির মত দেখতে নয়। চারপাশ মোটেও ভেঙে পড়েনি, তবে জায়গাটা অপরিষ্কার, দু একটা ঝোপঝাড় বাড়িটার চারপাশ ঘিরে রয়েছে, সেটুকু থাকাই ভাল। বেশ একটা ইতিহাসের গন্ধ পাওয়া যায়। আমরা যে এই বাড়িটায় দু-একদিন থাকতে চাই সেটা শুনে হলধর প্রথমে বেশ বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। এখানে দেখার মত কিছু নেই। তায় বাড়িটার কেবল হানাবাড়ি বলে কুখ্যাতিই নয়, থাকাখাওয়ারও এখানে বড্ডো অসুবিধে। তবে তার কথায় জানতে পারলাম এখানে নাকি একটা সাহেব আমলের পুরনো কবরস্থান আছে। আগে যখন এখানে সাহেব কলোনি ছিল তখন তাদের সমাধি হত সেখানে, কবরের সংখ্যা সব মিলিয়ে পচিঁসের বেশী নয়, আমরা যদি দেখতে চাই সে নিয়ে যেতে পারে।
বাড়িতে ঢুকে সায়ন্তন আমায় জিজ্ঞেস করল- “কীরে কিছু মনে পড়ছে নাকি? আগে এসেছিস এখানে?”
আমি চারপাশটা দেখতে দেখতে বললাম, “না ,কিন্তু বাড়িটা হুবহু এক।”
“হুম! থাক কটা দিন, দেখ কিছু রিলেট করতে পারিস কি না! না পারলেও মন্দ নয়, কলকাতার ধুলো-ময়লা-চিৎকার থেকে দুরে শান্তিতে ক’টা দিন কাটালে তোর স্বপ্নবাবাজি এমনিতেই পলায়ন করবে।”
প্রথম দিনটা আমরা বাড়িতেই কাটালাম, দোতলাটা তুলনায় খানিকটা পরিষ্কার, বব সাহেবের বইয়ের ঘরটাও দেখলাম। বেশিরভাগই গবেষণাসংক্রান্ত বই। তবে সংখ্যায় বেশি না। গোটা আটেকের মত। একটা জার্নালও আছে, তাতে সাহেব কী নিয়ে গবেষণা করছিলেন সেটা লেখা থাকতে পারে। তবে এখন ক্ষীণ আলোয় সেটা পড়ার ইচ্ছা হল না আমাদের।
সন্ধে আরও ঘন হয়ে আসতে হলধর দুটো হ্যারিকেন জ্বেলে দিল, তারপর আমরা চায়ে চুমুক দিতে দিতে তার মুখে গ্রামের ইতিহাস শুনতে লাগলাম। ইতিহাস অবশ্য বেশি কিছু না, তাতে আমার কিছুই চেনা লাগলো না, এক বাড়িটা ছাড়া।
কথা বলতে বলতে সায়ন্তন হঠাৎ তাকে প্রশ্ন করল, “আচ্ছা এখানে কোনো খুন হয়েছে কখনও?” আমি মনে মনে হাসলাম,এখানে আসার আগে তাকে স্লিপিং মার্ডারটা পড়তে দিয়েছিলাম, সেটার রেশ বোধ হয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। হলধর একগাল হেসে বলল, “না না খুন টুন এখানে কিচ্ছু হয়নি, তবে ববসাহেব যে কোথায় হারিয়ে গেলেন তার আর কোনো খবর পাওয়া গেল না। সেটাকে যদি খুন বলেন–”
“হুম!আচ্ছা সাহেবকে তুমি দেখেছিলে?”
“না,আমি জন্ম থেকেই দেখছি বাড়ি ফাঁকা,খানিকটা লেখাপড়া শিখেছি বলে মাসমাইনেতে এখানে কেয়ার টেকার থাকি। তা না হলে বাড়িটা তো মদোমাতালের আড্ডা হয়ে যাবে।”
আমি হ্যারিকেনের কাঁপা কাঁপা আলোর দিকে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “বব সাহেব কী নিয়ে গবেষণা করছিল সে বিষয়ে কিছু জান?”
“না,দাদাভাই,গ্রামের লোকজনের কি পেটে অত বিদ্যে থাকে যে অত কথা জানবে? তবে শুনেছি তার কিছু বন্ধু ছিল ওই সাহেব কলোনি থেকেই, তাদের সাথেই সেসব নিয়ে আলোচনা হত। সে যাই হক্, খুনখারাপি হত না, গ্রামের লোকেদেরও অনিষ্ট হয়নি কোনোদিন।”
রাত্রি বেলা চিঁড়েগুড় খেয়ে নিলাম। মেঝেতে বিছানা। এ বাড়িতে খাটের ব্যবস্থা নেই। মশার উৎপাত নেই বলে আমরা ওডমস্ মাখলাম না। আমি শুয়ে পড়লাম। সায়ন্তন জানালার কাছে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবতে লাগল। আমি বিশেষ গুরুত্ব দিলাম না। সারাদিনের ট্রেনজার্নিতে শরীর ক্লান্ত ছিল। পাশ ফিরে চোখ বুঁজলাম।
মেঝের উপর কান রাখতেই মনে হল কোথা থেকে যেন একটা ক্ষীণ চিৎকার আসছে। খুব খুব ক্ষীণ, তবু শোনা যায়। মনে হল একজন নয়, অনেক মানুষ যেন একসাথে গোঙাচ্ছে, খাটের উপর আছড়ানোর শব্দ, সেই কাগজের একটা নোটপেপার, রাতের ঝলমলে আকাশে ফুটে উঠছে কয়েকটা বিন্দু, একটু একটু করে বেড়ে উঠছে সেগুলো, সেই শীর্ণ শুকিয়ে যাওয়া হাতটা আঙুল তুলছে আমার দিকে, যেন কী একটা মারাত্মক কাজ করেছি আমি—
আমি চিৎকার করে উঠতে গেলাম কিন্তু শব্দ গলাতেই আটকে গেল। সেই হাতটা ধীরে ধীরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে, না আমি এগিয়ে যাচ্ছি তার দিকে–একটু একটু করে কাছে…আরও কাছে…
সকালে আমরা গ্রাম দেখতে বেরোলাম। সাথে কবরস্থানটাও। গ্রামটা বেশি বড়ো নয়।তার একটা কারণ এখানে আসাযাওয়ার একটু অসুবিধা আছে। জল পেরিয়ে নৌকা করে আসতে হয়। চারিদিকে অগোছালো গাছপালার জঙ্গল।
আসাযাওয়ার পথে দু-একজন গ্রামবাসীকে দেখা গেল। আমাদের এখানে উঠতে দেখে তাদের চোখেমুখে কৌতূহল। দু-একজনের সাথে কথাও বলল হলধর। আমরা ঠিক কী কারণে এখানে এসেছি তা অবশ্য সে বলতে পারল না।
গোটা গ্রামটায় গাছপালা আর হালকা জঙ্গল ছাড়া দেখার মত কিছু নেই। এমনকি পাশেই যে সাহেব কলোনি এক সময় ছিল, সেটারও বিশেষ কিছু চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।
আমার যে এখানে এসে নতুন কিছুই মনে পড়েনি তাতে বেশ নিরাশ হয়েছে সায়ন্তন। আমার ছোটবেলায় তেমন বড় কোন মানসিক চোট গেছে কিনা সেটা জানতে সে আমার দেশের বাড়ি পর্যন্ত খবর নিয়েছে। কিন্তু শেওড়াগাছের উপর থেকে ঝাঁপিয়ে ভূতের ভয় দেখিয়ে এক বন্ধুকে অজ্ঞান করে দেওয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। বলতে গেলে নির্বিঘ্নেই কেটেছে আমার শৈশব। অতএব ফ্রয়েড সাহেব কিছু সাহায্য করতে পারেননি।
ঘুরতে ঘুরতে আমরা কবরস্থানটার সামনে এসে পড়লাম। ঢোকবার মুখটায় ভাঙা ভাঙা পাথরের একটা স্তূপ। তার উপর আগাছার জঙ্গল ঝুঁকে এসেছে, তারই ফাঁক দিয়ে সরু একফালি পায়ে চলার রাস্তা। বাইরে থেকে ভিতরের বেশ খানিকটা দেখা যায়। রাস্তার দু’পাশ জুড়ে উঁচু পাথরের বেদি। বাইরের ভাঙা দেয়ালের উপর একটা এলিজি লেখা আছে।
আমরা তিনজনে ভিতরে ঢুকে এলাম। পাথরের দেওয়ালটা পেরোতেই কিন্তু আমি ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলাম। তীব্র যন্ত্রণাটা হঠাৎ করে মাথার প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। যেন একটা আস্ত মৌমাছির চাকে ঢিল ছুঁড়েছে কেউ। আমি সায়ন্তন এর কাঁধ চেপে ধরলাম। সে আমার দিকে ফিরে কিছু একটা জিজ্ঞেস করল। আমি ঠিক শুনতে পেলাম না। কেমন যেন একটা স্থির বিশ্বাস জন্মাচ্ছিল আমার—এই কবরখানার ভেতরেই কিছু একটা আছে। হয়ত আমার প্রশ্নের উত্তর। যেভাবেই হোক আমায় ভেতরে যেতেই হবে। মুখে বললাম, “ কিছু হয়নি, চল।”
চারপাশে কবর ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্বভাবতই সেগুলো বেশ পুরনো। পাথরের ফলকের উপরে শ্যাওলা আর আগাছা জন্মেছে। সবকটা পড়াও যায় না। কয়েকটার ওপর সিমেন্টর বেশ বড়ো স্তম্ভ। গাছের ওপর দিকে কয়েকটা বাদুড় উল্টো হয়ে ঝুলে আছে। মাটিতে শুকনো পাতার উপর পা পড়ে খসখস আওয়াজ হছে। হলধর মাঝে মধ্যে এটা সেটা দেখিয়ে পুরনো দু’একটা গল্প বলছে। সেগুলো কতটা সত্যি আর কতটা জল মেশানো তা আমি বলতে পারি না। বোধ হয় বেশি বকশিশ পাওয়ার লোভে তার কল্পনাশক্তির ঝাঁপি উজাড় করে দিচ্ছে।
আমার মন কিন্তু তখন সেদিকে নেই। কিছু একটা আছে, হ্যাঁ আমি নিশ্চিত এই কবরগুলোর মধ্যেই নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। আমার স্বপ্নের অবচেতন থেকে কে যেন বলে চলেছে, আমি ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি। খানিকটা দূর গিয়ে রাস্তাটা বাঁক নিয়েছে। সেখান থেকে আবার কবরের সারি। হলধর হঠাৎ একদিকে দেখিয়ে বলল, “ওই কবরটা দেখছেন?”
আমরা সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম সেটা কবরের ভাঙা পাথরের একটা অংশ। যেন কিছু একটা এসে পড়ায় পাথরটা ভেঙে ছিটকে গেছে। সায়ন্তন বলল “কী ওটা?”
“ওটার উপর একটা উল্কা এসে পড়েছিল।”
“উল্কা!” আমি অবাক হয়ে জিগ্যেস করলাম, “এত বড় উল্কা পড়েছে! কবে?”
“তা প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে। এ গ্রামে তার আগে কেউ উল্কা পড়তে দেখেনি। ববসাহেবের মুখেই সবাই জানল ওটাকে উল্কা বলে।”
আমার বেশ মজা লাগল। বললাম, “তোমাদের এই ববসাহেব লোকটা লালমোহনবাবুর ভাষায় যাকে বলে হাইলি সাসপিশাস। উল্কা থেকে এলিয়েন টেলিয়েন খুঁজে মহাকাশে পাড়ি দেননি তো?” হলধর কিছুই না বুঝে হাসি হাসি মুখে মাথা নাড়ল।
গ্রাম দেখা শেষ হতে বিকেল গড়িয়ে গেল। এখানকার মানুষজন বেশ ভালো। তবে একটু মুখচোরা গোছের। হলধর বলল মোটামুটি শ পাঁচেক টাকা খরচ করতে পারলে পরের দুটো দিন আমাদের রান্নাবান্নার চিন্তা আর করতে হবে না। তারাই এসে খাবার দিয়ে যাবে।
সেইমতই ব্যবস্থা হল। আমরা এবারে ম্যানটান হাউসে ফেরার পথ ধরলাম। হলধর বলল সে একটু পরে আসতে চায়। হ্যারিকেনের তেল নিতে হবে। তাছাড়া তারও গ্রামে সংসারধর্ম আছে। আপত্তি করলাম না। রাস্তা তো সোজাই। আমাদের চিনতে অসুবিধে হবে না।
রাস্তা সোজা হলেও ম্যানটন হাউস অন্তত আধঘণ্টার হাঁটা পথ। আমরা কাঁচা রাস্তার ওপর দিয়ে ধীরেসুস্থে চলতে লাগলাম। অন্ধকার হয়ে এসেছে তখন।
হঠাৎ সায়ন্তন আমার হাত চেপে ধরে ওপর দিকে তাকিয়ে বলল “ওপরে দেখ-”
তাকিয়ে দেখলাম রাতের কালো আকাশের গায়ে প্রচুর জ্বলন্ত বিন্দু যেন একটু একটু করে বড়ো হচ্ছে। ঠিক তারার মতই। কিন্তু তারা তো অত বড়ো হয় না। তাহলে কি আজও উল্কাপাত হবে এখানে? আমি অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম। মাথার ঠিক ওপরেই কালপুরুষ হাতে তিরধনুক নিয়ে আকাশের গায়ে শুয়ে আছে। তার চারপাশ ঘিরে ঝলমল করছে অগুণতি তারার ঝাঁক। হঠাৎ আমার মনে হল আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ওই আকাশের গায়েই আছে। ওই খসে পড়া উল্কাগুলোর মধ্যে। জিজ্ঞেস করলাম “উল্কা কেন পড়ে বলতে পারবি?”
সায়ন্তন আকাশ থেকে চোখ না ফিরিয়ে বলল, “নাহ, এ ব্যাপারে আমার পেটে বিদ্যা নেই।”
আমি বললাম, “বিস্ফোরণে ছিটকে আসা গ্রহ বা নক্ষত্রের টুকরোগুলো মহাকাশে বিক্ষিপ্ত ভাসতে থাকে। তারপর ঘুরতে ঘুরতে কোন সময় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পড়লে পৃথিবীর টানে মাটির উপর এসে নামে। বায়ুমণ্ডলে এসেই ওরা জ্বলে যায়। কী আশ্চর্য! ভেবে দেখ যদি ওদের প্রাণ থাকত? মৃত্যুর পরেও ওদের শান্তি নেই। ধ্বস হবার কি অমোঘ বাসনা। জ্বলন্ত শরীর নিয়ে যতক্ষণ না পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে শেষ হছে ওদের ভৌতিক জীবন থেকে নিষ্কৃতি নেই।”
সায়ন্তন মুখ নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “সেই উল্কা পড়ে ভেঙে যাওয়া কবরটা দেখে তোর কী কিছু মনে পড়েছে?”
আমি ঘাড় নাড়লাম, “না, তবে এই রাতের আকাশটা আমি আগেও দেখেছি, বহু বছর আগে।”
“রাতের আকাশ আগে সবাই দেখেছে, এতে নতুন কি আছে?”
“এ আকাশ আজকের পৃথিবীর মানুষ দেখেনি, নর্থ পোল ফনিস ১২ ডিগ্রি সরে আছে। সাজিটরিয়াস এর পোলার মুভমেন্ট ছিয়াশি ডিগ্রি, ৮৬-র হ্যালির ধুমকেতু আমরা এখনও দেখিনি। সেটা হতে আরও ছাব্বিশ বছর দেরি আছে। আকাশের তারারা মিথ্যে বলেনা। এটা আজকের না, আজ থেকে ৫০ বছর আগের আকাশ।”
“কী পাগলের মত বকছিস! কী করে বলছিস তুই এসব?” প্রায় চিৎকার করে উঠল সায়ন্তন।
আমি মাথা নামিয়ে নিলাম, তার একটা হাত রেখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“বলছি, কারণ আমিই ডঃ রবার্ট হিল।”
বাকি রাস্তা দুজনে কথা বললাম না, আমাদের কারোই কথা বলার অবস্থা নেই, যত ম্যানটান হাউসের দিকে এগোচ্ছি তত আমার ভিতরে একটা একটা করে সব প্রশ্নের উত্তর ফুটে উঠছে। প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগছিল আমার। বাড়িতে ঢুকে দেখলাম হলধর আমাদের আগেই পৌঁছেছে। সায়ন্তন তাকে দু’কাপ চা পাঠাতে বলল। আমরা ওপরের ঘরে চলে এলাম। টেবিলের একপাশে চেয়ারে বসলাম আমি আর একপাশে সায়ন্তন। সে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। খানিক বাদে আমি অল্প হেসে বললাম “একটা কথা বললে বিশ্বাস করবি?”
“কী?” সে যতটা সম্ভব নিরুত্তাপ গলায় প্রশ্ন করল। আমি মাথা নামিয়ে নিচু গলায় বললাম, “যদি বলি এ শতাব্দির সব থেকে বড় শয়তানি, সব থেকে বড়ো পাপটা করেছিল রবার্ট হিল,আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে, এই গ্রামের এই ছোট্ট বাড়িতে বসে?”
“করব,কিন্তু আগে বল তুই সেসব জানলি কী করে?”
“সেটা জানিনা, এমন কি রবার্ট হিলের শেষ পরিণতিও আমি জানিনা, হয়ত আর জানা সম্ভবও না।”
“তুই বলছিস রবার্ট হিল তোর পূর্বজন্ম?”
“তাও বলছি না।”
আমি চেয়ার থেকে উঠে একটা সিগারেট ধরালাম। পেছনের জানলাটা খোলা ছিল। সেদিকে হাঁটতে হাঁটতে বললাম, “আচ্ছা, এ শতাব্দির সব থেকে বড় পাপটা কী? খুন, অন্তর্ঘাত, গণহত্যা, নাকি ৪৫ এ জাপানে আণবিক বোমা ফাটানো,কিংবা ৯/১১?”
“এগুলো সবই-”
“না। আরো একটা আছে। যদিও এটার কথা পৃথিবীতে আর কেউ জানেনা। জানতে পারবেও না।”
সায়ন্তন আর কিছু বলল না। আমি জানলার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বলে চললাম, “জার্নালগুলো পড়লে জানতে পারবি হিল সাহেবের গবেষণার বিষয় ছিল ৪২ প্লেপিডিয়াম বলে একটা যৌগ আবিষ্কার করা। এই যৌগের কাজ হল জীবদেহে হৃৎপিন্ড ও অন্য সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা স্বাভাবিকের থেকে বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়া। কাজে বেশ কিছুদূর এগিয়েছিলেন তিনি, হঠাৎ মাথায় অন্য এক ভূত চাপে তাঁর। কৃত্রিম উপায়ে মানুষের জীবনকাল বাড়িয়ে তোলার গবেষণা।
দীর্ঘদিন চেষ্টাতেও লাভ হল না তাতে। উপরওয়ালা মানুষের হাতে এই ম্যাজিকটা দিতে কিছুতেই রাজি নন। সাহেব প্রায় হাল ছাড়ার মুখে, এমনসময় একটা ঘটনা ঘটল। একটা উল্কা এসে পড়ল এই গ্রামেই। বেশ বড়োসড়ো। সেটা পরীক্ষা করে দেখতে গিয়েই প্রবীণ বিজ্ঞানীর চোখ কপালে উঠল। উল্কার গায়ে এমন কিছু মৌলের চিহ্ন আছে যা পৃথিবীতে মেলে না। এই সমস্ত মৌলের নমুনা আর লেপিডিয়াম নিয়ে ভদ্রলোক একটা ওষুধ তৈরি করলেন, ধরে নে একটা ভাইরাস, যেটা কৃত্রিম উপায়ে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি করতে পারে। আর সেটাই হল পাপ, সব থেকে বড়ো পাপ।”
সায়ন্তন এতক্ষণ হাঁ করে শুনছিল। এবার আমি থামতে মুখে একটু হাসি এনে বলল, “সে ওষুধ এখন কোথায়?”
আমি জানলার গ্রিলে একটা হ্যাঁচকা টান মেরে বললাম “এয়ারবোর্ন ড্রপলেট ভাইরাস। তার মধ্যে দিয়েই ছড়িয়ে দেয়া হয় এ ওষুধ। মাঝখানে কেটে গেছে ৫০ বছর, সে ভাইরাস এখন তোর আর আমার শরীরে!”
টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াল সায়ন্তন। আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, “থামা পাগলের প্রলাপ। কাল সকালেই কলকাতায় ফিরব আমরা। তোর চিকিৎসা দরকার।”
“গিনিপিগের উপর সে ভাইরাস কাজ করেনি দেখে খুব হতাশ হয়েছিলাম বুঝলি? কিছুদিন পরে সেটা এমনি মরে গেল। আমার চমক অপেক্ষা করছিল তার পরে। জীবিত অবস্থায় এ ভাইরাস কাজ করে না। মৃত্যুর কয়েকবছর পর থেকে ভাইরাস কাজ করা শুরু করে শরীরে। একটু একটু করে প্রাণ সঞ্চার করে, শুকিয়ে যাওয়া শরীরে মাংস ফিরে আসে। হৃৎস্পন্দন শূন্য থেকে বাড়তে শুরু করে, নার্ভগুলো সচল হয়, মৃত মানুষ আবার চোখ খোলে। কিন্তু ততদিনে তাকে কফিন বন্দি করে চাপা দেয়া হয়েছে মাটির নিচে। সে চোখ খোলে মাটির দেড় মিটার নিচে। তার চিৎকার কেউ শুনতে পায়না। সে কাঠের কফিন আছড়ায়। পাগলের মত ধাক্কা মারতে থাকে। কিন্তু কেউ খোলে না। গোটা পৃথিবীবাসীর কাছে সে মৃত। আর কোনদিন তার প্রাণ ফেরার আশা নেই—শুধু আমি-আমি নিজেকে কবরে যেতে দিইনি—আমি-” আমি আরেকবার টান মারলাম গ্রিল ধরে।
সায়ন্তন হিংস্র শ্বাপদের মত এগিয়ে এল আমার দিকে, “তুই পাগল হয়েছিস। সরে আয় ওখান থেকে…হলধর…হলধর…শিগগির একবার এদিকে–”
“এশিয়া, ইওরোপ, আফ্রিকা– কোথায় ছড়ায়নি আমার ভাইরাস? গোটা পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ মাটির তলায় শুয়ে ছটফট করছে। আহ্, আমার এই দুহাতে কত বড় শাস্তি গোটা পৃথিবীকে দিয়ে যাচ্ছি আমি। আচ্ছা এ ভাইরাসের কী নাম দেওয়া যায় বলতো?”
সায়ন্তন ঝাঁপিয়ে এসে আমার শার্ট খামচে ধরতে গেল। আমি আরেকবার টান মেরে জানলার গ্রিলটা খুলে ফেললাম। তার ছুঁচলো ভাঙা দিকটা সজোরে বসিয়ে দিলাম তার বুকের ভিতরে। দুবার কঁকিয়ে উঠে সে মাটিতে পড়ে গেল। যাক গে। আবার ফিরে আসবে। নতুন স্মৃতিতে, নতুন নামে—
–আমি তার মুখের ভিতর ঝুঁকে পড়ে ফিসফিস করে বললাম “ কী জানিস? একটা নাম আমি ভেবে রেখেছি। যুগযুগান্ত ধরে যে মানুষটা নিঃসঙ্গ হয়ে শুয়ে আছে আকাশের গায়, তার নামে ওর নাম দেব—ওরিয়ন—কালপুরুষ–”
চেয়ারের উপর আমি বসে থাকলাম যতক্ষণ না তার শরীরটা নিথর হয়ে যায়,তারপর নীচে নেমে এসে, হলধরের রেখে যাওয়া দু’কাপ চা এক নিঃশ্বাসে গলায় ঢেলে বেরিয়ে এলাম বাইরের খোলা মাঠে, চারপাশটা কুয়াশায় ঢেকে আছে। কালো আকাশের মাঝে ধনুর্ধারী কালপুরুষের প্রতিটা তারা ঝলমল করছে…
ছবিঃ শ্রীশাম্ব