এলিয়টের আগের ছড়াগুলো বিল্লিনামা, গাম্বিড়াল, হালুমবা, রামটাম টাগ্গার, জেলকলিদের গান, মঙ্গনজেরি আর রামপালটাইগার, দাঁতেরেনমি, রামপাস মার্জার কথা, মিস্টোফিলি, বাদশাহ ম্যাকাভিটি , গাস নামে থিয়েটারি বিল্লি, বাস্টোফার জোনস
রেলবিড়াল স্কিম্বল
টি এস এলিয়ট. ভাবানুবাদ আবু হোসেন
ঘড়িতে সময় হল ন’টা চল্লিশ
রাত্রের মেলগাড়ি ধোঁয়া ছাড়ে হিস
“কোথা গেল স্কিম্বল
কোনখানে আছে বল,”
স্টেশনে ও গাড়ি জুড়ে ওঠে ফিসফিস
সে না এলে তাড়াতাড়ি
ছাড়া তো যাবে না গাড়ি
ওরে ভাই কে আছিস তাকে ডেকে দিস
খুঁজে ফেরে গাডবাবু, খোঁজে ড্রাইভার
ইশটিশানের বাবু, মেয়েটিও তাঁর
আঁতিপাতি চোখে রোজ
ওদিকে-এদিকে খোঁজ
ভাবে তারা দেখা দেবে ঠিক এইবার
আরো দু’মিনিট গেল, “হয়েছে সময়
এবার,” হাঁকার ওঠে গোটা ট্রেনময়
যেই নড়ে ওঠে গাড়ি
ওই দেখ তাড়াতাড়ি
ও কে আসে? স্কিম্বল। আর কেউ নয়
তক্ষুণি দোলা লাগে সবুজ নিশানে
ইঞ্জিন জেগে ওঠে ঝিকঝিক গানে
এইবারে ঘুম ছাড়ি নড়ে ওঠে লোহাগাড়ি
রাতভর ছুট হবে উত্তর পানে।
রাতভোর মেলট্রেন বন বন ছোটে
যাত্রীরা খাওয়া সেরে বিছানায় ওঠে
আরামে ঘুমিয়ে থাকে।
স্কিম্বল? দেখো তাকে
একা ঘোরে পাহারায় ঘুম নেই মোটে
উঁকি মারে ব্রেকভ্যানে হাঁটে করিডরে
সাবধানে চোখ রাখে কোচের ভেতরে
এদিকে ওদিকে যায় ভারী কড়া চোখে চায়
কেউ যদি রাত জেগে হুল্লোড় করে
ট্রেনে উঠে খুশি হবে সিট খুঁজে পেয়ে
ওপরে তোমার নাম লেখা দেখো চেয়ে
কী নরম গদি আঁটা ঠিক যেন তুলো
কোনদিকে পড়ে নেই একদানা ধুলো
চাও তো নিভিয়ে দিও লাল নীল বাতি
চাও যদি জ্বেলে বই পড়ো সারারাতই
এরই মাঝে দরজায় দিয়ে মৃদু টোকা
শুধোবে তোমায় এসে কিচেনের খোকা
সকালের চায়ে খান ক’চামচ চিনি?
কেক দেব? কুং ফ্যান? নাকি মনজিনি?
শরবত দেব নাকি খাবে এক ঢোঁক?
চেয়ে দেখো তার পিছে দুটি কটা চোখ
লেজখানা খাড়া আর মাথাখানি নীচু
স্কিম্বল তদারক করে সবকিছু
আরশোলা ইঁদুরেরা ওঠে না এ ট্রেনে
এ-গাড়ির কে মালিক গেছে তারা জেনে
মহাসুখে ঘুম দিও সিটে যার যার
পাহারায় স্কিম্বল রেল-মার্জার
মাঝরাতে দেখো তাকে খাসা তরতাজা
মাঝে মাঝে চা কফি বা দুটি মাছভাজা
তাই খেয়ে ঘুম নেই থাকে পাহারায়
ইঞ্জিনে ব্রেকভ্যানে কোচ-এ হেঁটে যায়
অচেনা স্টেশনে কোনো ট্রেন যদি থামে
তুমি ঘুমে, স্কিম্বল ট্রেন থেকে নামে
পায়চারি করে ফেরে প্ল্যাটফর্ম জুড়ে
কঠিন নজর রাখে ইতিউতি ঘুরে
সকালে যখন ট্রেন পৌঁছোবে এসে
স্কিম্বল নামবে সে সব্বার শেষে
খুলে ধরা দরজায় খাড়া হয়ে ঠায়
ফের এসো এই বলে জানাবে বিদায়
কাজ শেষে ফেরো যদি পরশু কি কাল
দেখবে হাজির ফের রেলের বিড়াল
অলঙ্করণঃ ইন্দ্রশেখর