সময়ের ঘড়ি
প্রসেনজিত চক্রবর্তী
একদা ঘরেতে ছিল সুখী গৃহকোণ
তাহাতে পাইত শোভা এক গ্রামাফোন
রেডিও বাজিত সদা সকাল বা সাঁঝ
আকাশবানী দিত সময়ের আঁচ।
সকাল সন্ধে রাতে খবরের ঘড়ি
চলত সে টিকটিক, থোড়, খাড়া, বড়ি
মায়েরা বসত শুনতে যাত্রা-নাটক
ছোট্ট সে বিনোদন, সনধ্যা’র চটক।
রবিবার দিন ছিল সত্যি বিশেষ
রেডিও’র প্রোগ্রামের নেই কোনো শেষ
এছাড়াও বিকেলে ফুটবল ক্রিকেট
কে দিল গোল আর কে পেল উইকেট।
মহালয়া’র দিন সে এক উৎসব
শুনতে চণ্ডী পাঠ, জড়ো হত সব ।
হেনকালে উদয় হইলেন এক দাদা
টিভি নামধারী সে বাক্স বোকা গাধা
প্রথমেতে যায়নি বোঝা সে কত জ্বালা
ক্রমেতে প্রকাশ পেল তার ছলাকলা
বাক্স সে বোকা গাধা কিন্তু পিছে তার
চালাক ছিল যে বহু, গুনে ওঠা ভার
সাদাকালো যুগে ছিল নিরামিষ অতি
রং-এর গুণেতে তার বদলাল মতি
তারপর কী যে হল বোঝা অতি ভার
রামায়ণ মহাভারতে কাজ ছারখার
সিরিয়ালে সিরিয়ালে বিড়ম্বনা ভারী
শাশুড়ী, বৌমা, শ্বশুর রোজই করে আড়ি
প্যাঁচ-পয়জা্রে লড়ে সবাকার তরে
জেতে নাকো ম্যাচ কেউ, টি-আর-পি বাড়ে।
নতুন শতকে এলেন কল্কি অবতার
পুরানো সকলকে দিল গোল দুই চার
মোবাইল নাম তার, আকারেতে ছোটো
প্রথমেতে সেও ছিল কাজে ছোটোমোটো
দামে ছিল অতিভারী, কল করা দামি
দু-এক জনের পকেটে, মডেল নামি
তারপরেতে ক্রমে ক্রমে হল সে স্মার্ট
মুঠোফোন ডিজাইনে রোজ-ই বাড়ে আর্ট
টুজি, থিজি, ফোরজি পার করে ফাইভজি
ফোন আজ ফোন ছাড়া সব কাজে কাজি
শুধু সেলফি উঠছে সারাদিন ধরে
নিজের ছবি দেখাটা সবার ওপরে
সেলফি তুলতে গিয়ে মরছে মানুষ
ট্রেনে চাপা, জলে পড়া, তাও নেই হুঁশ
এরপরে কিবা হবে জানা নেই আর
কালের যাত্রার ধ্বনি শুনবো আবার ।।