ঝড়ের টিয়া
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
আমি তাকে অমলা, হরিদাস, পণ্ডিত এরকম কোনো মানুষ-জাতীয় নাম দিইনি। কারণ, আমি নিশ্চিত তার নিজের সমাজে তার নিজস্ব নাম ও পরিচয় আছে।
তার খুব গভীর আত্মসম্মানবোধ ছিল। একজন নির্ভীক, সুভদ্র কৃতজ্ঞ এবং বন্ধুবৎসল প্রাণী হিসেবে আমি তাকে নিজের একজন সমকক্ষ বন্ধু মনে করি। এবং সে-ও তাই করে। আর তাই সে শেষবার যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে এল, তখন আমার সঙ্গে প্রাতরাশ করেছিল। খবরের কাগজও পড়েছিল হয়তো।
আমাদের বাড়ির পাশের পার্কে অনেক গাছ। বসন্তের শেষে যখন কালবৈশাখী আসে তখন সেখানে কিছু কিছু পাখি বাসা ভেঙে, গাছের ডালে ঘা খেয়ে, আরো নানাভাবে আহত হয়। আমরা তখন অনেকেই পার্কের দিকে কড়া নজর রাখি ও তেমন কাউকে দেখতে পেলে এনে বাড়িতে ক’দিনের জন্য জায়গা দিই।
এই বন্ধুর ডানা ভেঙে গিয়েছিল কোনোভাবে। তাকে সঙ্গে করে এনে বাড়িতে রেখেছিলাম কয়েকদিন। ভাঙা ডানায় চুণ হলুদ, পছন্দের খাবার ইত্যাদি দিয়ে অতিথি সৎকার পেয়ে খানিক সেরে ওঠবার পর আমি পাহাড়ে রওনা দিতে বাড়ির গ্যারেজের বাসিন্দারাও কিছুদিন তার যত্ন-আত্তি করেছিল। ফিরে এসে দেখি সে চলে গেছে। ওরা বলল , একেবারে সুস্থ হয়েই বিদায় নিয়েছে সে। ফিরে গেছে বাড়ির পাশের পার্কে তার বাড়িতেই।
আর তার দিনসাতেক বাদে ঘটল ঘটনাটা। সকালবেলা ঘুম ভাঙতে আমাকে চা বিস্কুট আর খবরের কাগজ দিয়েছিল। সবে চায়ের কাপ হাতে নিয়েছি তখন গ্রিলের মুখে ডানা ঝটপট করে সে এসে ঘরে ঢুকল। কোনো সঙ্কোচ নেই। চেনা ভঙ্গী করে এসে বসল আমার খবরের কাগজের ওপরে। মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু গম্ভীর কথা বলল। একটা বিস্কুট আমি এগিয়ে দিতে তবে সেটা হাতে নিল। তারপর মন দিয়ে খবরের কাগজটা দেখতে দেখতে বিস্কুটটা খেয়ে ফের আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলে উড়াল দিল গ্যারেজঘরের দিকে। সেখান থেকে হাসি আর আনন্দের শব্দ শুনে বুঝলাম সে তাদেরও সম্ভাষণ করছে। তারপর সে উড়ে তার পার্কের বাড়িতে ফিরে গেল।