নিউগেট ক্যালেন্ডার আগের পর্বগুলো
সনে কানিংহ্যাম
ফাঁসি ১২ এপ্রিল ১৬৩৫
সনে ক্যনিংহ্যাম এক সৎ ভদ্র পরিবারের ছেলে ছিল। স্কটল্যাণ্ডের গ্লাসগো এলাকায় তাদের বাড়ি। তার মা-বাবার এলাকায় ভদ্র মানুষ বলে সুনাম ছিল যথেষ্ট। ছেলেকে তাঁরা পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন যথাসাধ্য।
কিন্তু খানিক বড়ো হয়ে ওঠবার পরেই দেখা গেল সনে সিধে রাস্তায় চলবার মানুষই নয়। বাবার সব চেষ্টা ব্যর্থ করে হাজারো বদ দোষে আর আর বদসঙ্গে সে যখন একেবারে তলিয়ে যেতে বসেছে তখন তার মা-বাবা, এক পড়শির মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে দিলেন। মেয়েটি ভালো। বিয়েতে শ্বশুর জামাইকে বছরে একশো চল্লিশ পাউন্ড আয়ের একটা সম্পত্তিও যৌতুক দিলেন। যদি ওতে ছেলেটা ভালোভাবে খেয়েপরে থাকতে পারে পরিবার নিয়ে সেই আশায়।
কিন্তু সে আশায় ছাই দিয়ে সনে তার উদ্দাম জীবনযাত্রা চালিয়ে গেলের পরেও। মেয়েটার কষ্টের অন্ত নেই।তার দুঃখ দেখে তার বাবা আর শ্বশুর মিলে তাকে বলেওছিল একবার, সনে-কে ছেড়ে যেন সে নতুন করে জীবনটা শুরু করে। কিন্তু তবু, সে তার স্বামীকে ছেড়ে থাকতে রাজি নয়।
শেষমেষ তিতিবিরক্ত হয়ে সবাই তাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
দুজন মিলে তখন তাদের ভারী কষ্টের জীবন। সম্পত্তি যা পেয়েছিল বিয়েতে সে-সবই সনে উড়িয়ে পুড়িয়ে খেয়েছে। এখন তাদের দুবেলার খাবার জোটে কেমন করে?
সনেদের পাশের বাড়িতে থাকত হ্যামিলটন নামে এক উকিল। হ্যামিলটন লোক ভালো। সনের বউটার কষ্ট দেখে তার ওপরে খুব সহানুভূতিও হয়েছিল তার। মাঝে মাঝে সে-কথা সে বলতও তাকে এসে। এই দেখে হঠাৎ একদিন সনে-র মাথায় একটা ফন্দি খেলে গেল। বউকে সে ডেকে বলল, “আমি লোকটা খুবই খারাপ, বুঝলে? নইলে তোমার মত মেয়েকে এত কষ্ট দিই?”
শুনে তার বউ বলল, “তাহলে অমন বদ কাজকর্মগুলো না করলেই তো পারো।”
শুনে সনে বলল, “রামঃ! কুসঙ্গে পড়ে আজ আমার এই হাল। আর আমি ওসব কাজ কখনো করি? শোনো, একটা কাজ করবে? হ্যামিলটন তো তোমায় বেশ খাতিরটাতির করে। ওকে একদিন ডেকে বলো না, যদি কিছু টাকা পয়সা দেয়, তাহলে সেই দিয়ে সৎভাবে একটা নতুন জীবন শুরু করতে পারি আমরা।”
কথাটা তার বউয়ের মনে ধরল। এর পরদিন সনে তাকে ডেকে বলল, “আমি কদিনের জন্যে একটু বেরোচ্ছি, বুঝলে? ব্যাবসার একটা সুযোগ এসেছে। কথাবার্তা বলে আসি গিয়ে। তুমি এর মধ্যে হ্যামিলটনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে রেখো, যদি ব্যাবসার জন্য টাকাপয়সার কিছু ব্যবস্থা হয়ে যায়।”
এই বলে সনে বাইরে যাবার নাম করে খানিক ঘুরে এসে বউয়ের অজান্তে বাড়ির মধ্যেই আরেক জায়গায় লুকিয়ে রইল। সেদিন সন্ধেবেলা হ্যামিলটন আসতে, সনের বউ তাকে সব কথা বলল। শুনে হ্যামিলটনের দয়া হল খুব। সঙ্গের টাকার থলেটা বের করে বলে, “ঠিক আছে। আমি তোমায় তবে কিছু টাকা দিচ্ছি। দেখো যদি…”
কিন্তু তার কথাটা শেষ হল না। তার আগেই অন্ধকার থেকে সনে তার পেছনে বের হয়ে এসেছে। হাতে তার একটা হাতুড়ি। হাতুড়ি দিয়ে হ্যামিলটনের মাথায় দমাদ্দম কয়েকটা ঘা মেরে তাকে ফেলে দিয়ে সে হ্যামিলটনের টাকার থলেটা নিয়ে নিল। তার মধ্যে ঝনঝন করছিল একগাদা মোহর।
হ্যামিলটনকে রক্তমাখা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে সনে-র বউ তো ভয়ে চিৎকার করে উঠতে গিয়েছিল। হ্যামিলটন তাড়াতাড়ি তার মুখটা চেপে ধরে স্বমূর্তি ধরল ফের। বলে, “একটাও শব্দ যেন না বের হয়। চুপ করে থাকবি একদম। আমি ততক্ষণে লাশটার একটা গতি করে আসি।”
এই বলে সে হ্যামিলটনের শরীরটা কাঁধে নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে বের হয়ে গেল।
হ্যামিলটনের বাড়িতে লোকজন ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। সনের বাড়িতে আসবার সময় ঘরের দোরটা খুলেই রেখে এসেছিল হ্যামিলটন। কাজেই চুপচাপ সেখানে গিয়ে ঢুকে পড়তে সনে-র কোনো অসুবিধে হল না। তারপর তার ওকালতির ঘরের চেয়ারে মড়াটাকে বসিয়ে দিয়ে যখন সে পা টিপে টিপে বের হয়ে এল, তখন চেয়ারে বসা হ্যামিলটনের শরীরটা দেখলে মনে হবে সে যেন মন দিয়ে কাগজপত্র দেখছে।
এদিকে সেই সন্ধেয় হ্যামিলটনের এক মক্কেলের আসবার কথা তার কাছে। পাড়ারই লোক। সবাইকে চেনে। সে নির্দিষ্ট সময়ে এসে দেখে হ্যামিলটন চেয়ারে বসে ঘুমোচ্ছে। ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে কাছে গিয়ে তার গায়ে ধাক্কা দিতেই হ্যামিলটনের শরীরটা গড়িয়ে পড়ল চেয়ার থেকে।
দেখে তো মক্কেলের গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে। এইবার যদি তাকে খুনি বলে রাজার সেপাইরা ধরে নিয়ে যায়?
তক্ষুনি তার মনে পড়ল বিকেলে সে হ্যামিলটনকে সনে-দের বাড়ির দিকে যেতে দেখেছিল। এলাকায় সনে-র বদমাশ বলে ভারী দুর্নাম। তার মানে ও-ই নিশ্চয় একে খুন করে এইখানে রেখে দিয়ে গেছে।
কথাটা মাথায় আসতে মক্কেল ঠিক করল, শরীরটাকে এখানে রেখে লোক ডাকাডাকি করা ঠিক হবে না। সন্দেহ তো তার ওপরেও আসতে পারে। তার বদলে যে পাপ করেছে সে-ই পাপের শাস্তি পাক। এই ভেবে শরীরটাকে কাঁধে তুলে নিয়ে সে চুপচাপ এসে সনে-র বাড়ির দরজায় শুইয়ে দিয়ে চলে গেল।
তখন মাঝরাত। সনের বউ বাইরে খুটখাট শব্দ পেয়ে উঠে এসে দোর খুলে দেখে সেখানে হ্যামিলটনের মড়া শরীরটা শুয়ে আছে। চারপাশে কেউ কোত্থাও নেই।
দেখেই তো ভয় পেয়ে সে ওপরে গিয়ে সনে-কে ডেকে এনেছে। বলে, “ওগো, মড়া যে ফিরে এল!”
আচমকা ঘুম ভেঙে সেই কথা শুনে সনে বলে, “দাঁড়াও এবার এ-মড়ার অন্য গতি করতে হবে। সটান নদীতে ফেলে দিয়ে আসব একে। দেখি তার পরেও আর ফিরে আসতে পারে কি না!”
এই বলে মড়া ঘাড়ে করে সে ফের চলল। এইবার নদীর দিকে।
কিন্তু মাঝপথে এসেই থমকে দাঁড়াতে হল সনে-কে। উলটোদিক থেকে কয়েকটা লোকের একটা দল আসছিল। এরা তাকে এ-অবস্থায় দেখে ফেললে মহা বিপদ হবে বুঝতে পেরে সনে তাড়াতাড়ি মড়া নিয়ে রাস্তার ধারের একটা ঝোপের মধ্যে গিয়ে লুকোলো।
লোকগুলো কাছে আসতে তাদের কথাবার্তা শুনে সনে বুঝতে পারল, এরা একটা চোরের দল। কোনোখান থেকে চুরি সেরে ফিরছে। চুরির মাল হল বস্তায় ভরা বেশ খানিকটা বেকন। কথাবার্তা বলতে বলতেই তারা আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে একটা ঘরের ভেতর বস্তাটা রেখে দিয়ে চলল কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা একটা শূঁড়িখানার উদ্দেশ্যে। অনেক কাজ করেছে কি না! তাই এবারে একটু আনন্দ-ফূর্তি করে নেয়া।
শূঁড়িখানার ভেতর তারা গিয়ে ঢুকতেই অন্ধকারের ভেতর মড়া ঘাড়ে বের হয় এল সনে। তারপ গুটি গুটি সেই ঘরটার ভেতর গিয়ে ঢুকে বস্তা থেকে বেকনের টুকরোগুলো বের করে সেখানটায় মড়াটাকে দুমড়ে ঢুকিয়ে তার মুখ বেঁধে দিল ফের। তারপর বেকন নিয়ে মহানন্দে বাড়ি ফিরে গেল। কেউ কিছু টেরও পেল না।
ওদিকে খাওয়াদাওয়া ফূর্তিটুর্তি সেরে যখন শূঁড়ির মালিককে পয়সা দেবার পালা এল, তখন চোররা মাথা নেড়ে বলে, “আমাদের সঙ্গে টাকাকড়ি কিস্যু নেই। তবে আপনি চাইলে দাম হিসেবে একবস্তা বেকন আপনাকে দিতে পারি। যা খাইয়েছেন তার থেকে ওর দাম বেশি বই কম হবে না।
শুনে শূঁড়িওয়ালা বলে, “ঠিক আছে। তবে আগে জিনিসটা দেখাবে তো!”
“সে আর বলতে!” এই বলে একজন চোর ছুটে গেল, যে ঘরটায় তারা বস্তা রেখেছে সেই ঘরটার দিকে।
খানিক বাদে বস্তা ঘাড়ে করে হাঁফাতে হাঁফাতে সে এসে হাজির। হাঁফায় আর বলে, “বেকন কি বেড়ে গেল এর মধ্যে? উফ! কী জগদ্দল ভার হয়েছে রে!”
এই বলে বস্তাটা শূঁড়িওয়ালার সামনে উপুড় করতেই তার থেকে বের হয়ে এসেছে একটা মৃতদেহ। দেখে শূঁড়িওয়ালা আর দেরি করল না। তৎক্ষণাৎ সেপাই ডেকে ধরিয়ে দিল চোরদের। যতই তারা বলে, “আমরা খুন করিনি। বেকন কেমন করে মানুষের মড়া হয়ে গেল তা-ও আমর জানি না,” ততই সেপাইরা তাদের ধরে মারধোর দেয়। এতে তাদের দোষ নেই অবশ্য। একে তো চোররা কিছুতেই বলতে পারছে না তাদের বস্তায় বেকনের বদলি মড়া এল কোথা থেকে, তার ওপরে এমন জলজ্যন্ত হাতেনাতে প্রমাণ।
তা চোরেরা তো খুনের দায়ে চালান হয়ে গেল। মধ্যে থেকে মোটা টাকা পেয়ে সনে-র ফূর্তির অন্ত নেই।
টাকা হাতে পেয়েই সনে ফের স্বমূর্তি ধরল। বউয়ের হাজার অনুরোধ উপরোধেও ফল হল না কোনো। ফলে সে-টাকা তার মাসকয়েকের মধ্যেই ফুরিয়ে ফের হাত ফাঁকা।
রোজগারের আর কোনো রাস্তা না পেয়ে সনে এইবার হাইওয়েতে ডাকাতি শুরু করল। দেখা গেল এ-ব্যাপারেও সে অদ্বিতীয়। ডাকাতির সময় সামান্য বেচাল করলে বেচারা শিকারের কপালে একটাই জিনিস জুটত। মৃত্যু।
তা কিছুদিন এই কাজ চালাবার পর দেখা গেল স্কটল্যান্ডের নানান দিকে সনে-র প্রবল দুর্নাম ছড়িয়েছে। নিরুপায় হয়ে সে এবার তার কাজের এলাকা বদলে চলে গেল আয়ারল্যান্ডের এডিনবরা-র দিকে।
সেখানে গিয়ে সনে দেখে আয়ারল্যাণ্ডেও তার খ্যাতির খবর পৌঁছে গেছে এর মধ্যে। সেখানকার একদল ডাকাতের সঙ্গে দেখা হতে তারা সাদরে তাকে দলে নিয়ে নিজেদের সর্দারের পদে বসিয়ে দিল। এই দলটার ডাকাতদের শহরের মধ্যে যার যার থাকবার আস্তানা ছিল। কিন্তু সনে তেমন কাজ করেনি। কোনো বাঁধা চেনা জায়গায় থাকত না সে। প্রতিবার দলবল নিয়ে কোনো ডাকাতির পর ফিরে এসে সে আস্তানা গাড়ত নতুন নতুন সব খানিক অচেনা জায়গায়, যেখানে কেউ তাকে চিনে ফেলতে পারবে না।
ওই ছিল তার ডাকাতির কায়দা। এই জায়গাগুলোতে আস্তানা নিয়ে তার প্রথম কাজ হত ভারী মিষ্টি ব্যবহার করে সে-বাড়িতে নিজের জায়গাটা পাকা করে ফেলা। ঘরের মালিকের কাছে সে নিজের পরিচয় দিত ট্যুরিস্ট হিসেবে। যেন এডিনবরা শহরটা দেখতে আসাই তার আসল উদ্দেশ্য।এই অভিনয়ের ব্যাপারেও সে সিদ্ধহস্ত হওয়ায় কাজটা করতে বিশেষ মুশকিলে পড়তে হত না তাকে কখনো।
এভাবে ভাব জমিয়ে নেবার পর সে আসল খেলাটা শুরু করত। কখনো কখনো সেটা ঘটত বাড়িওয়ালাকে সপরিবারে শহরের বাইরে কোনো রেস্তোরাঁয় খাওয়াতে নিয়ে গিয়ে। ভোজের সবটা খরচই সে করত নিজের পকেট থেকে। বাড়িওয়ালাকে এক পয়সা খরচ করতে দিত না। সে বেচারা নিশ্চিন্তে সনে-র সঙ্গে ভোজে যাবার সময় টেরও পেত না, রাস্তার দু’পাশে আগে থেকেই সনে-র লোকজন নানান ঘাঁটিতে অপেক্ষায় আছে। খেয়েদেয়ে ফেরবার পথে ঘটত আক্রমণ। নিশ্চিন্তে আনন্দ করতে করতে ফেরা মানুষগুলো যখন একেবারে অন্যমনস্ক তখন সেই সুযোগে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত সনে-র দল। আর তারপর বিনাবাধায় খুব সহজেই শেষ হত লুটপাটের পালা।
আর এই লুটপাট করবার সময় দলটা প্রথমেই ধরত সনে-কে। খানিক মারধর করে তার সর্বস্ব লুট করা হত প্রথমে। ফলে নিরীহ শিকার ডাকাতি হয়ে যাবার পরেও সন্দেহ করত না যে ডাকাতের হাতে লুট হওয়া তাদের বাড়ির বাসিন্দা এই ট্যুরিস্টই আসলে নাটের গুরু। ডাকাতির পরদিন সকালে গোপনে দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে সনে ফের নিজের হারানো জিনিসপত্র তো ফিরে পেতই, তার সঙ্গে পেত আগের রাতের ডাকাতির একটা বড়ো হিস্যা।
আরো একটা কায়দায় লোকজনের ওপর লুটপাট চালাত সনে। সেটা আরো আকর্ষণীয় আর দুঃসাহসী। এক্ষেত্রে সনে আর তার দলের কয়েকজন ষণ্ডা মিলে রাস্তায় চলতে থাকা কোনো নিরীহ ভদ্রলোকের দলের সামনে গিয়ে দাঁড়াত। তারপর তলোয়ার উঁচিয়ে যাচ্ছেতাই ভাষায় তাদের গাল দিতে দিতে বলত, ওঁদের ঘোড়াগুলো আসলে তাদের চুরি যাওয়া সম্পত্তি। আর সেইসঙ্গে চলত হুঙ্কার, “আমাদের চুরি যাওয়া ঘোড়ায় চড়ে বড়োলোকি দেখানো বের করে দেব তোমাদের। ভালো চাস তো ঘোড়া ফেরৎ দে। নইলে…”
বেচারা ভদ্রলোকেরা হঠাৎ করে এমন অভিযোগ আর চ্যাঁচামেচি শুনে বলা বাহুল্য ঘাবড়ে যেত। যতই তারা বোঝাবার চেষ্টা করত, ঘোড়াগুলো তাদের পকেটের পয়সা দিয়ে কেনা, ততই বেড়ে উঠত সনে-র দলের গর্জন। বক্তব্য পরিষ্কার, তাদের চুরি যাওয়া ঘোড়া তারা চেনে। চোরাই মাল কেনাটা ভদ্রলোকের পক্ষে বেজায় অনুচিত কর্ম।
নিরীহ মানুষগুলো খানিক এহেন তর্জন গর্জন শুনে আর চারপাশে উঁচিয়ে ওঠা তলোয়ার দেখে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি হয়ে ঘোড়াগুলো তুলে দিতে বাধ্য হত সনে-র দলের হাতে। সেইসঙ্গে, তারা যাতে কারো কাছে এ নিয়ে কিছু অভিযোগটোগ না জানায় সেইজন্য সনে-দের খুশি রাখতে সঙ্গে আনা টাকাপয়সা যা থাকত তা-ও গুঁজে দিত ডাকাতগুলোর হাতে।
তা এইভাবে বেশ কিছুদিন চলবার পর সনের কাছে বেশ মোটা টাকাপয়সা জমল। ওদিকে এডিনবরা এলাকাতেও তদ্দিনে তার ভারী বদনাম হয়েছে। টাকাপয়সা গুছিয়ে নিয়ে সনে অতএব ফিরে চলল গ্লাসগো-র পথে। সেখানে পৌঁছে সে ঘোষণা করল, আর খারাপ কাজ নয়। এইবার সে ভালো হয়ে যাবে। শুনে সেখানকার লোকজন আকাশ থেকেই পড়েছিল। কারণ কয়লাকে ধুলে তার ময়লা যায় বলে তারা কেউ ভাবতেই পারত না।
গ্লাসগোয় ফেরার পর একদিন রাত্রে সনে বউকে তার হৃদয়ের পরিবর্তনের কথা ভেঙে বলতে বউ তো খুশিতে অস্থির। এতদিনে বুঝি ভগবান মুখ তুলে চাইলেন! কিন্তু তবু, বুকের কাঁপুনি যায় না তার। এত খারাপ একটা মানুষ কি এক কথায় এমন বদলে যেতে পারে? নাকি অন্য কোনো মতলব আছে এর!
পরে দেখা গেল সনে-র বউ ভুল কিছু ভয় পায়নি। আসলে ভালো হয়ে যাবার গপ্পো ফাঁদাটা ছিল সনে-র একটা নতুন চাল ছাড়া কিছু নয়।
তবে প্রথম প্রথম এর সুফল পেয়েছিল বইকি সনে। ওর পর কিছুদিন যাবৎ এলাকায় কোনো ডাকাতি বা ঠগবাজি ঘটোলে,কেউ যদি সনে-র দিকে আঙুল তুলত তাহলে দশটা লোক তাতে সন্দেহ প্রকাশ করে বলত, “আহা সে কী করে হবে? মিস্টার কানিংহ্যাম এখন কতো ভদ্রলোক হয়ে গিয়েছেন দেখছ না?”
জীবনের এই পর্যায়েই সনে-র সঙ্গে এক জ্যোতিষীর সাক্ষাৎ হয়, আর সেইখানেই তার জীবনের সবচেয়ে রহস্যময় ঘটনাটা ঘটে যায়। তবে সে-কথা বলবার আগে সনে-র ছোটোবেলার বিষয়ে কিছু জেনে নেয়া দরকার।
সনে যখন খুব ছোটো তখন তার এক ধাইমা ছিল। ধাইমা গ্লাসগো শহর থেকে মাইলদয়েক দূরের একটা গ্রাম থেকে আসতেন। তাঁর কোলে হেসেখেলে সনে যখন বড়ো হল তখন এই ধাইমার তার প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে উঠেছিল।লোকজনকে সে ডেক ডেকে বলত, “দেখে নিও একদিন আমার সনে কেমন একজন কেউকেটা হয়!”
শুনে সনে-র বাবা-মা সেই নিয়ে খানিক হাসিঠাট্টা করত। কিন্তু ধাই-এর কথাগুলোকে তত গুরুত্ব দিত না। তবে সনে-র মাথায় ধারণাটা কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই একেবারে গেঁথে গিয়েছিল। তাই এডিনবরার কাজকর্মের পর যখন তার হাতে বেশ খানিক টাকা এসেছে তখন তার মনে হল ধাইমা-র কথাগুলো ফলে গেছে অবশেষে। তখন ভারী খুশি হয়ে সে তার ধাইমাকে ডেকে পাঠাল কিছু পুরস্কার দেবে বলে।
সনে ততদিনে বিরাট জোয়ান হয়ে উঠেছে। বুড়ি এসে তাকে তাই চিনতে পারল না। আর তাই দেখে সনে-র মাথায় একটা দুষ্টুবুদ্ধি জেগে উঠল। সে-এলাকায় এক নামকরা জ্যোতিষী থাকতেন। ভদ্রলোকের নাম পিটারসন। সনে কখনো তাঁকে মুখোমুখি দেখেনি। সে ভাবল, আজ পিটারসনকে নিয়ে খানিক রঙ্গ করলে কেমন হয়।
যা ভাবা তাই কাজ। বুড়িকে সে বলল, সে সনে-র বন্ধু। সনে তাকে দিয়ে বলে পাঠিয়েছে ধাইমা এলে তাকে যেন সে সঙ্গে করে নিয়ে জ্যোতিষী মিস্টার পিটারসনের কাছে আসে। সেইখানে সনে তার ধাইমা-র জন্য অপেক্ষা করবে। শুনে ধাইমা তো তার সঙ্গে জ্যোতিষীর বাড়ি গিয়ে হাজির।
তাদের দেখে পিটারসন ভাবলেন, বৃদ্ধা আর তার সঙ্গের লোকটা বুঝি তাঁর কাছে ভাগ্য গোণাতে এসেছে। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল বিষয়টা অন্য।
লোকটা গম্ভীর মুখে বলে, “আমি আর এই বৃদ্ধা হলাম স্কটল্যান্ডের দুই সেরা জ্যোতিষী। আসলে একটা ছোটো অনুরোধ নিয়ে আপনার কাছে আসা। জ্যোতিষশাস্ত্রে আপনার যা নামডাক কানে এসেছে তাতে মনে হল ব্যাপারটা নিয়ে আপনার মতামত নিলে ভালো হবে।
“বিষয়টা এই। একেবারে ছোটোবেলা থেকেই আমি মহা দুশ্চরিত্র, লম্পট একটা বদমায়েশ। হেন কোনো বদগুণ পাবেন না, যা আমার চরিত্রে নেই। চুরি, রাহাজানি, ডাকাতি সবকিছুতেই আমি যাকে বলে সিদ্ধহস্ত। তবে জ্যোতিষে গভীর জ্ঞানের জন্য আমি যেকোনো অন্যায় করেও পার পেয়ে যাই। আপনি আমার নিজের পেশার লোক। তা নইলে, এইমুহূর্তে আপনার চতুর্থ ঘরে বুধের যে অবস্থান দেখছি, সেইটেকে কাজে লাগিয়ে আপনার সব টাকাপয়সা চেঁছেপুছে নিয়ে যেতে পারতাম আমি। কেউ কিচ্ছু করতে পারত না।
“আসলে এ-শাস্ত্র নিয়ে গভীর পড়াশোনার কল্যাণে আমি যেকোনো মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ সমস্ত দেখতে পাই। যেমন ধরুন, নিতান্ত আপনি ভয় পাবেন তাই বলছি না, কিন্তু আপনার ভাগ্যে শনি আর রাহুর অবস্থান এইমুহূর্তে যেমনটা রয়েছে তা থেকে এটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার যে এই পেশার জন্যই আপনাকে ফাঁসিতে লটকাতে হবে। তবে হ্যাঁ। এক্ষুনি ভয় পাবার কিছু নেই। ব্যাপারটা ঘটতে, যা দেখছি, খানিক দেরি আছে এখনও। ধরুন এই দু-তিন বছর।”
সনে-র মুখে এহেন ভয়াবহ একটা বক্তৃতা শুনে তখন পিটারসন আর বৃদ্ধা দুজনেরই হাত পা কাঁপছে। বৃদ্ধা বারবার সশঙ্ক চিত্তে দরজাটার দিকে তাকাচ্ছিলেন। কখন তাঁর সনে এসে তাঁকে উদ্ধার করবে সেই আশায়। সনে যে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে এহেন জ্ঞানবাণী দিয়ে চলেছে সেটা আর তিনি জানবেন কী করে?
ওদিকে সনের বক্তৃতা তখনো থামেনি। উদাত্ত গলায় সে বলে চলেছে, “জীবনে একটাই সমস্যা আমার, বুঝলেন? দুনিয়াশুদ্ধু লোকের ভাগ্য আমি চোখের সামনে দেখতে পাই, কিন্তু ভগবানে কী লীলা, কেবল নিজের ভবিষ্যতটাই আমি কিছুতেই গুণে দেখতে পারি না। অথচ আমার পেশায় সেইটা জেনে রাখা ভারী জরুরি। মানুষের ভাগ্যে গ্রহনক্ষত্ররা যা লিখে রেখেছে তাকে খণ্ডাবে কে, বলুন। ধরুন কোনো ভদ্রসন্তান। সচ্চরিত্র। সজ্জন। লেখাপড়া জানা। দেখা গেল তার ভাগ্যে আছে বত্তিরিশ বছরে রাজার আদেশে ফাঁসিতে লটকানো। সে লোক বেজায় ভালো, থাকে খায়, কাজকর্ম করে। তা হল কি, তিরিশ বছর বয়েসে সে একটা জাহাজে বড়ো চাকরি নিয়ে সমুদ্রে গেল। আর তারপর সমুদ্রে গিয়ে জলদস্যুদের হাতে পড়ে প্রাণের দায়ে জলদস্যু হয়ে গেল। তারপর ধরা পড়ে বত্তিরিশ বছরে ফাঁসি গেল। এমনটা হওয়া তো অসম্ভব নয়, কী বলেন?”
পিটারসন মাথা নাড়লেন। এমনটা হতেই পারে।
“তবেই বুঝুন। তাই আপনার কাছে আমার আসা।এই বৃদ্ধা জ্যোতিষী আমার ভাগ্য গুণে দেখেছেন। এবারে আপনিও তাই করবেন। আপনাদের দুজনের গোণায় কোনো তফাৎ ঘটলে সেটা নিয়ে এইখানে বসেই আলোচনা হবে।
“না না, কোনো আপত্তি চলবে না। আপত্তি করলে, জানেনই তো আমার পেশাটা কী’রকম? এই ঘরে যা কিছু দামি জিনিসপত্তর আছে সেই সবকিছু লুটেপুটে নিয়ে আপনাকে সোজা শয়তানের দরবারে পাঠিয়ে দেব।”
বৃদ্ধা ততক্ষণে এমন সব ভয়াবহ কথাবার্তা শুনে ভয়ে থরথর করে কাঁপছেন। সেদিকে একনজর দেখে নিয়ে পিটারসন হঠাৎ সনে-র দিকে চোখ ঘোরালেন। এই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা তীক্ষ্ণবুদ্ধি এই মানুষটা এতক্ষণে আন্দাজ করে নিয়েছেন এই আগন্তুক কে হতে পারে।
কয়েক মুহূর্ত বাদে শান্ত গলায় তিনি বললেন, “তুমি নিজের ভাগ্য জানতে চাও সনে কানিংহ্যাম?”
কথাগুলো বলতেই বুড়ি হঠাৎ সনের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে দেখল একবার। তারপর হঠাৎ হাউমাউ করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এইবারে চিনেছি। তুইই আমার সনে। এতক্ষণ তবে আমায় মিথ্যেকথা বলছিলিস তুই! আমি তো শুনেছিলাম তুই মস্ত বড়োলোক হয়েছিস বাবা! কিন্তু তুই তো দেখছি…”
“একটা ঠগ জোচ্চোর ডাকাত,” পিটারসনের গলাটা তাঁর বাক্যটাকে পূর্ণ করে দিল হঠাৎ। তাঁর তীক্ষ্ণ চোখদুটো তখন সনের সারা শরীরের ওপর ঘুরছে। কয়েক মুহূর্ত বাদে তিনি ফের বললেন, “বড়োলোক। হ্যাঁ তা হয়েছ বটে। কিন্তু সৎ পথে নয়। তোমার কপালে যে রেখা দেখছি তাতে তা সম্ভবও নয়। পাপের পয়সায় বড়োলোক হয়েছ তুমি সনে কানিংহ্যাম।
“নিজের ভাগ্য জানতে আমার কাছে এসেছিলে না? সে আমি তোমার কপালে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।কোনো প্রতিবেশীর রক্ত তোমার হাতে লেগেছে এর আগে। ধরা পড়োনি তোমার গ্রনক্ষত্রের অবস্থানের জন্য। হ্যামিলটনকে তুমিই মেরেছিলে, তাই না? শোনো কানিংহ্যাম, যদি আমার জ্ঞান মিথ্যে না হয়, তাহলে বলে দিচ্ছি, তুমি চাও বা না চাও, আজ থেকে একমাসের মধ্যে তুমি তোমার কোনো আত্মীয়কে খুন করবে, আর তারপর সেই অপরাধে ফাঁসিতে লটকাবে তুমি সনে কানিংহ্যাম।”
কিছু একটা ছিল পিটারসনের গলায়। সনে-র মজা করবার ইচ্ছেটা হঠাৎ বেমালুম উড়ে গেল। তাড়াতাড়ি বৃদ্ধা ধাইমার হাতে পাঁচটা শিলিং গুঁজে দিয়ে সে পালিয়ে এল জ্যোতিষীর বাড়ি থেকে।
তবে কয়েক ঘন্টা বাদে .দেখা গেল সনে ব্যাপারটা বেবাক ভুলে গেছে। আসলে সে ভেবে নিয়েছিল, বুড়ো জ্যোতিষীকে মরবার ভয় দেখাবার বদলা নিতেই সে-ও এমন একখানা গল্প শুনিয়ে দিয়েছে তাকে।
তবে পিটারসন তার ভাগ্যরেখা সঠিকই দেখেছিলেন। শুধু কোন পথে তা আসবে তার হদিশ দেননি তিনি। ঘটনাটা ঘটবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত সনেও তা টের পায়নি।
গ্লাসগো শহরে বীন নামে সনে-র এক কাকা থাকতেন। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। সন্তানাদি নেই। অনেক সম্পত্তি। তা, পিটারসনের সঙ্গে দেখা হবার মাসখানেক বাদে একদিন সনে ভাবল, কাকার সঙ্গে গিয়ে একটু দেখা করে আসা যাক।কবে মারা যান ঠিক নেই। যদি তাঁর সম্পত্তিটা কোনোভাবে বাগাবার কোনো বন্দোবস্ত হয়।
যে ভাবা সেই কাজ। সন্ধেবেলা কাকার বাড়িতে গিয়ে হাজির হল সনে। তাকে দেখে কাকার চোখে জল এল। বললেন, “তিনকূলে তুমি ছাড়া তো আর কেউ ওয়ারিশান নেই আমার! কিন্তু তুমি যে এত নীচে নেমে গেছ সে খবর পেয়ে বুকটা ভেঙে গিয়েছিল আমার বাবা। ঠিক করেছিলাম সব সম্পত্তি মরবার আগে চার্চে…”
“দান… করে দিয়েছেন?”
কাকা মৃদু হাসলেন, “এখনো করিনি বাবা। শুনেছি আজকাল নাকি তোমার চরিত্রে ফের কিছু উন্নতি এসেছে।তাই লোকের মুখে খবর টবর রাখছি। যদি দেখি সত্যিই তুমি আমার ভাইপো নামের যোগ্য হয়ে উঠেছ তাহলে আর দান করতে যাব কোন দুঃখে? তবে হ্যাঁ, ফের কোনো বেচালের খবর পেলে অবশ্য…”
কথাটা আর শেষ করতে পারলেন না বীন। তখনো বীনের সম্পত্তি খপ্পরের মধ্যে রয়েছে জানতে পেরে হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠেছে তখন সনে। তারপর ভালো করে কিছু ভাববার আগেই হাতে উঠে আসা ছুরিটা সে গুঁজে দিয়েছে কাকার পাঁজরে।
সনে ভেবেছিল, একটা মৃতদেহ লুকোতে কোনো সমস্যা হবে না তার। এ-কাজ সে আগেও অনেক করেছে। কেউ কোনো প্রমাণ পায়নি তার বিরদ্ধে।তারপর কদিন গায়েব থেকে ফিরে এসে ভালোমানুষের মত সপত্তির ওয়ারিশান দাবি করলেই কিন্তু সেদিন তার কপাল খারাপ। লাশ সরিয়ে ফেলবার তাল করছে সে যখন, ঠিক তক্ষুনি বাড়ির এক কাজের মেয়ে সে ঘরে এসে হাজির। অতএব বাধ্য হয়েই তার গলাটাও কেটে ফেলতে হল সনে-কে। দু-দুটো লাশ লুকোনো একজনের পক্ষে মুশকিল। তাই সনেবেরিয়ে আসবার আগে ঘরের যা কিছু দামি ছিল সে-সব লুটেপুটে নিয়ে আগুন লাগিয়ে দিল বাড়িটায়।তখন মাঝরাত। কেউ টের পাবে না। পুড়েঝুরে সব শেষ হয়ে গেলে আর কে কী সন্দেহ করবে?
কিন্তু সনে-র ভাগ্যের দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছিল যে তা সে জানত না। সেদিন মাঝরাতে বীনের এক পড়শি ঘুম থেকে উঠে পড়েছিল হঠাৎ। বীন-এর বাড়ি থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখে সন্দেহ হতে সে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করে ফেলল। তারপর আগুন নিভিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে এসে পেল দুটো লাশ।
শুরু হল খুনের তদন্ত। অনেক লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল সেদিন সন্ধেবেলা সনে ছিল একমাত্র লোক যে ও-বাড়িতে পা দিয়েছিল দুর্ঘটনার খানিক আগে।
অতএব ধরা পড়ল সনে।অজস্র মানুষ এসে তার নানান অপরাধের সাক্ষি দিল তার বিচারের সময়। তারপর, পিটারসনের ভবিষ্যৎবাণীকে সত্যি প্রয়াণ করে তার ফাঁসি হয়ে গেল লেইথ-এর বধ্যভূমিতে। তার ফাঁসি দেখতে যারা এসেছিল, তাদের সামনে মরবার মুহূর্তেও একটুও বিচলিত ভাব দেখায়নি সনে কানিংহ্যাম। যেমন নির্ভীকভাবে অপরাধের জীবনটা বেঁচেছে সে, তেমনই নির্ভীকভাবে তার সাজা হিসেবে মৃত্যুকেও সে বরণ করে নিয়েছিল।