অতিথি
শান্তা চক্রবর্তী
সবার বাড়িতেই একটা ঘর বা একফালি জায়গা থাকে, যেখানে টুকটাক জিনিস জমানো হয়। সব সময় ঐ জায়গাটা প্রয়োজনে আসে না ফলে খেয়ালও থাকে না। এই রকম একটা জায়গা আমার বাড়িতেও আছে। কোনো একটা দরকারে একদিন সেখানে গিয়ে আমার মনে হল আমার মাথার উপরে, ঘরের সিলিং-এর কাছাকাছি কী যেন একটা আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আমার পক্ষে উঠে দেখা সম্ভব নয়। তাই একজনকে ডেকে পাঠালাম। মই নিয়ে উপরে উঠে বলল, “বৌদি পাখির বাসা।”
বলতে যাচ্ছিলাম,ফেলে দাও নোংরা করবে। ঠিক তখনই আমার পিছনের জানলায় দেখলাম একটা চড়াইপাখি বসে। কিচিরমিচির করছে। আমার মনে হলো ও যেন আমার কাছে মিনতি করছে। আমার কাজের লোকটাকে বললাম, “দেখতো ভিতরে ডিম আছে নাকি?”
“হ্যাঁ বৌদি আছে।”
“থাক। ফেলো না।”
পরের দিন থেকেই আমার আরম্ভ হল ওদের তত্ত্বাবধান করা। সকালে উঠে দেখতাম দুটো চড়ুই ঘনঘন যাতায়াত করছে। বুঝলাম ওরা জুটি। ঐদিন বিকেলে পাখিদুটো উড়ে চলে গেল। পরের দিন সকালে একটা পাখি ঢুকল। আর একটা গেল কই? বাসায় উঁকি দিয়ে দেখলাম অন্য পাখিটার মাথা দেখা যাচ্ছে। বুঝলাম মা পাখি তা দিতে বসেছে। পুরুষ পাখিটা মুখে করে খাবার নিয়ে আসছে, মা পাখিটাকে খাওয়াচ্ছে আবার উড়ে চলে যাচ্ছে। আমার ওই জানালাটাই ওদের যাওয়া আসার পথ । এতদিনে ওরা বুঝে গেছে আমি ওদের কিছু ক্ষতি করব না। কদিন পরে ওই ঘরে অনেকগুলো কচি গলার আওয়াজ পেলাম। যদিও খুব ক্ষীণ। পরের দিন থেকে মা পাখিটা বেরিয়ে যেতে লাগল। এবার দু’জনেই মুখে করে খাবার নিয়ে আসতে লাগল। একই সময় দু’জনে আসে না। একবার বাবা পাখি খাবার নিয়ে আসে একবার মা পাখি খাবার নিয়ে আসে। এইভাবে বেশ কিছুদিন চলল। এবার বাচ্চাগুলোর মাথা দেখা যেতে লাগল। চারটে বাচ্চা ছিল। ওদের যাতায়াতের পথে আমিও কিছু খাবার রাখতে লাগলাম।
একদিন ভোরবেলা তখনো ভালো করে আলো ফোটেনি,আমার বসার ঘরে অনেকগুলো গলার স্বর। কিচির মিচির কিচির মিচির। উঠে দেখলাম, দশ বারোটা পাখি এসেছে। মনে মনে ভাবলাম ওদের বাচ্চাদের আজ অন্নপ্রাশন। তাই সামনে থেকে সরে গেলাম।
প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে ওরা সবাই উড়ে চলে গেল। এদের পোষা যায় না। এরা বনের পাখি। আকাশেই এরা সুন্দর। এরা ছিল আমার অতিথি ।