ধারাবাহিক উপন্যাস এক দুই তিন (চতুর্থ পর্ব) অদিতি ভট্টাচার্য শরৎ ২০২০

এপিসোড ১, এপিসোড ২, এপিসোড ৩

এক দুই তিন

অদিতি ভট্টাচার্য

“কী আর বলব, এরকম যে একটা ঘটনা ঘটবে তা কল্পনার অতীত ছিল!” বললেন সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিসিমণি এসেছেন সিদ্ধার্থর বাড়িতে, মানসই বাড়ি চিনিয়ে নিয়ে এসেছে। ধীমানও আছেন, সিদ্ধার্থর আরও দুজন প্রতিবেশী ভদ্রলোকও আছেন, অজিত মিশ্র আর নারায়ণ তলাপাত্র। সমর এরকমভাবে মারা যাওয়ায় সবাই যে অত্যন্ত বিচলিত তা বলাই বাহুল্য।

“এত বছরের আলাপ, অথচ সমরদা কোনোদিন বলেননি যে এরকম একখানা জিনিস বাড়িতে রেখে দিয়েছেন আর সে নিয়ে এত কাণ্ড!” ধীমান বললেন।

“জিনিসটা যে এত দামি সে বোধহয় সমরবাবু নিজেও বেশিদিন জানতেন না ভাই। আচ্ছা এ পাড়ায় দেবব্রত সেনগুপ্ত বলে এক ভদ্রলোক থাকেন, কী যেন বেশ বলে প্রত্নতত্ত্ববিদ, তাই না নীলু? তাঁকে চেনেন আপনারা কেউ?” পিসিমণি জিজ্ঞেস করলেন।

“নাম শুনেছি, আলাপ নেই। বসুন্ধরা আবাসন বলে যে বড়ো ফ্ল্যাট বাড়িটা আছে, ওখানে থাকেন। এখনাওকার লোক নয় মনে হয়, বাইরে থেকে এসেছেন,” অজিত বললেন, “কিন্তু হঠাৎ ওঁর কথা জিজ্ঞেস করছেন যে?”

“সমরবাবুর কাছে ওঁর যাতায়াত ছিল, আমাকেও যেতে হবে একবার ওঁর কাছে।”

“আপনি কী বুঝছেন বড়দি? কে করতে পারে এসব?” সিদ্ধার্থ বললেন।

“দামি মূর্তি, যেই করুক তার লোভেই এ কাজ করেছে – এটুকু ছাড়া আর বিশেষ কিছুই বুঝছি না ভাই, সেইজন্যেই তো আপনাদের কাছেও এলাম। যদি কেউ কিছু জানেন, কিছু বলতে পারেন।”

“একটা কথা বলতে পারি,” নারায়ণ একটু ইতস্তত করলেন, “জানি না অবশ্য আপনি গুরুত্ব দেবেন কীনা।”

“কী কথা ভাই?”

“সমরবাবুর ছেলেটি কিন্তু খুব বদরাগী, সব সময় যেন রেগেই আছে। তবে কারুর নামে এরকম বলা…… মানে তার ওপর আবার এই পরিস্থিতিতে, তাই আর কী…” নারায়ণ থেমে গেলেন।

“এতে আপনার এত ইতস্তত করার কী আছে? এ তো সবাই জানে। একবার দুর্গা পুজোর চাঁদা নিয়ে হাতাহাতি অবধি করেছিল,” ধীমান বললেন।

“আপনাদের সঙ্গে তো সমরবাবুর অনেক দিনের আলাপ, আপনারা কেউ ওঁর বাবাকে চিনতেন?”

“আমাদের সঙ্গে অনেক দিনের আলাপ ঠিকই, কিন্তু ওঁর বাবাকে দেখিনি। আমরাদের কারুরই আদি বাড়ি তো আর এখানে নয়। তাও আমি আর ধীমানবাবু বলতে গেলে চব্বিশ বছর আছি এখানে, এঁরা আরও পরে। তবে একজন মনে হয় সমরবাবুর বাবাকে চিনতেন, মুরারিবাবু, এ পাড়ায় অবশ্য থাকেন না, এনটিপিসির টাউনসিপের ওদিকে ওঁর বাড়ি, ওঁরা এখানকার আদি বাসিন্দা,” বললেন সিদ্ধার্থ।

“ওঁর সঙ্গে একবার কথা বলতে পারলে ভালো হত, বাড়িটা একটু চিনিয়ে দেবেন ভাই?”

“সে আর এমন কী কথা? আমি ফোনও করে দিচ্ছি, ওঁর মোবাইল ফোন নম্বর আছে আমার কাছে। এক মিনিট,” সিদ্ধার্থ সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করলেন।

দু’মিনিটে কথা শেষ করে বললেন, “মুরারিবাবু বাড়ি নেই, ফিরবেন পরশু। এদিককার ঘটনা তো কিছুই জানতেন না, বললাম, আপনার কথাও বললাম। উনি আপনাকে ফোন করতে বলেছেন, তাছাড়া পরশু যদি দেখা করতে চান তাতেও ওঁর আপত্তি নেই। দাঁড়ান নম্বরটা আপনাকে লিখে দিই।”

“আপনাদের সঙ্গে তো সমরবাবুর অনেকদিনের আলাপ, ইদানীং কিছু বুঝতেন? সমরবাবু আমাকে বলেছিলেন আজকাল মূর্তি নিয়ে নাকি বাড়িতে প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকত, আপনারা কেউ কিছু জানতেন ভাই?”

“না, এসব কথা কিছু জানতাম না, তবে বেশ কিছু দিন হল সমরবাবু আর আসতেন না। আমরা কয়েকজন একসঙ্গে গল্পগুজব করি রোজ বিকেলবেলা, কখনও সমরবাবুর বাড়ি থেকে একটু এগিয়ে একটা বটগাছের তলার বেদিতে বসি, কখনও স্টেশনের রাস্তার একটা চায়ের দোকানে। সমরবাবু আজকাল আর আসেন না দেখে আমি আর ধীমানবাবু একদিন গেছিলাম ওঁর বাড়িতে, কী হয়েছে জানতে,” বললেন সিদ্ধার্থ।

“কিছু বলেছিলেন উনি?”

“না, কিছু তো বলেননি, নিজে হাতে চা করে খাওয়ালেন, এটা সেটা নানান কথাবার্তা হল, তবে…” ধীমান যেন কিছু মনে করার চেষ্টা করছেন, “তবে কী জানেন, আপনি এখন বলছেন বা এই ঘটনা ঘটল বলে এখন মনে হচ্ছে সেদিন যেন একটু অন্যমনস্ক মনে হয়েছিল ওঁকে। আমরা তেমন গা করিনি, উনিও বললেন আবার আসবেন, তাই বোধহয়…”

“এসেছিলেনও তো তারপর দু একদিন,” সিদ্ধার্থ বললেন।

“মোট কথা আপনারা কিছুই বোঝেননি, অবশ্য খুলে না বললে বুঝবেনই বা কী করে? এমনিতে তো মানুষ ভালো ছিলেন বলেই মনে হয়। হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি করতেন, শুনলাম তো অনেকে যেতেনও নাকি দেখাতে।”

“পসার মন্দ ছিল না ওঁর,” অজিত বললেন, “তবে ওষুধের দামটুকু ছাড়া কিচ্ছু নিতেন না। তেমন তেমন পেশেন্ট হলে তাও নিতেন না। জোরাজুরি করলে বলতেন, ‘আরে মশাই এ আমার নেশা, পেশা তো নয়। যদি মানুষের একটু উপকার হয়, সারা জীবন তো সংসার, চাকরি করেই কেটে গেল, ভালো কাজ তো কিছুই করলাম না, এখন নাহয় করি, পরকালে কাজে লাগবে, আপনারা তাতে আর বাদ সাধেন কেন?’ এ তল্লাটে একবারও ওঁর ওষুধ খাননি এরকম লোক বোধহয় কমই আছে। আমাদের আড্ডার মধ্যে দিলীপবাবু আর জয়ন্তবাবু তো এখনও যেতেন দেখাতে। মানুষ সত্যিই খুব ভালো ছিলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন, কিন্তু দেখুন তার কপালেই এই ছিল!”

“দিলীপবাবু আর জয়ন্তবাবুর সঙ্গে কথা বলতে পারলেও ভালো হত,” পিসিমণি বললেন।

“তার কোনও অসুবিধে নেই, আমরাই নিয়ে যেতে পারব,” সিদ্ধার্থ বললেন, “আমাদের দ্বারা যেটুকু হয় আমরা করব বড়দি, আপনিও কিছু জিজ্ঞেস করতে দ্বিধা করবেন না, কিন্তু এভাবে বাড়ির মধ্যে ঢুকে একজন নির্বিবাদী মানুষকে মেরে দিয়ে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের ফোন নম্বরগুলো আমি আমি দিয়ে দিচ্ছি, দরকার হলে ফোন করবেন।”

“অনেক ধন্যবাদ ভাই,” পিসিমণি উঠে পড়লেন।

ধীমান তখনও বলছেন, “কী দিনকাল পড়ল সত্যি ভাবা যায় না! এরকমভাবে বাড়ির ভেতর ঢুকে……ঈশ! আমিই যাব যাব ভাবছিলাম, পায়ে আজকাল একটা ক্র্যাম্প মতো ধরছে, সেটার জন্যে। বিশ্বাসবাবুর আঙুলের গাঁটের ব্যথাটা তো উনিই সারালেন, তাই ভাবছিলাম অ্যালাপ্যাথি করার আগে সমরদার কাছেই যাব। কত দিনের ব্যথা বিশ্বাসবাবুর, সারিয়ে তো দিলেন। বিশ্বাসবাবু একটা কী যেন বেশ বলে ডোকরা না কী তার জিনিস উপহার দিলেন, লাঠি হাতে একখানা সেপাই, মনে আছে? সমরদা খুব খুশি হয়েছিলেন জিনিসটা পেয়ে, বললেন ‘সাজিয়ে রাখব এটা।’ আমরা সবাই তো একসঙ্গে গেছিলাম সেদিন, তেলেভাজা কিনে নিয়ে, সমরদা চা করলেন!”

দিলীপ আর জয়ন্তর বাড়িও গেলেন পিসিমণি, কিন্তু নতুন কিছুই জানতে পারলেন না। সবারই ওই এক কথা, ‘বড়ো ভালো মানুষ ছিলেন আর শেষটায় তারই কপালে এই ছিল!” মূর্তির ব্যাপার বা তা নিয়ে সীতাংশু, শান্তনু, অতনুর মধ্যে অশান্তির কথা কেউই কিছুই জানত না বা সমরকে দেখে কিছু বোঝেওনি। এর মধ্যে জয়ন্ত দেখা গেল কী রকম যেন অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ, অতিরিক্ত সতর্কও যেন, অনেক ভেবেচিন্তে কথা বলেন। একে তো সমর খুন হয়েছেন আর পিসিমণি তার তদন্ত করছেন শুনে পিসিমণি আর নীলুর আপাদমস্তক ভালো করে দেখলেন, বাড়ির ভেতর বসতেও বললেন না, বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই যা বলার বললেন।  বললেন, “দেখুন এ খুনের ব্যাপার, এসব নিয়ে এরকমভাবে কথা বলা যায় না। দিনকাল ভালো নয়, কে যে কী উদ্দেশ্যে আসছে বোঝা দায়। আমি তো আপনাদের চিনিও না। তাছাড়া আমার বাড়ি থেকে সমরবাবুর বাড়ি বেশ দূরে সে তো বুঝতেই পারছেন। বিকেলে গল্পগুজব হত আর জ্বর হয়েছিল বলে দেখাতে গেছিলাম, তাও প্রায় দেড় মাস আগে। কী হুয়েছে, কেন হয়েছে, কী মূর্তি – এসব কিছুই আমি জানি না। নেহাত সিদ্ধার্থবাবু বললেন আপনি আসবেন, তাই এটুকু কথা বললাম, নাহলে ……”

কথা অসম্পূর্ণ থাকলেও তার অর্থ বুঝতে অসুবিধে হল না। পিসিমণিরা চলে আসার উপক্রম করতেই সশব্দে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

দিলীপের কাছেও তেমন কিছুই জানা গেল না, বললেন, “আমি পেটরোগা মানুষ, আদ্ধেক জিনিস হজমই হয় না, পেটের গোলমাল লেগেই থাকে, তাই গেছিলাম সমরবাবুর কাছে। খুব শুনেছি ওঁর ওষুধের কথা। অ্যালাপ্যাথি তো কম করলাম না, যে ক’দিন ওষুধ খাই একটু ভালো থাকি, তার পর আবার যে কে সেই, তাই ভাবলাম ওঁকেই দেখাই। বলেছিলেন, ‘কিছুটা সময় লাগবে, তবে আশা করি সেরে যাবে,’ তা ওঁকেই এভাবে চলে যেতে হল! কী আর বলি, খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। ভালোমানুষদের কপালেই যেন যত কিছু থাকে!”

“খুব সত্যি কথা বলেছেন ভাই,” পিসিমণি উঠে পড়লেন।

নীলু এগিয়ে গেছিল, পিসিমণিকে দেখতে না পেয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখল, পিসিমণি নীচু হয়ে কী করছেন।

“কী হল পিসিমণি?” নীলু জিজ্ঞেস করল।

“কী পিঁপড়ে বাছা! একেবারে বড়ো বড়ো কাঠপিঁপড়ে, কামড়ে একেবারে পা ফুলিয়ে দিল!” বললেন পিসিমণি।

আটটা বাজে, এবার পিসিমণিদের ফিরতেই হয়, “দেবব্রতবাবুর সঙ্গে কথা বলা দরকার ছিল, আজ আর হল না, আরও কিছু কাজ ছিল, সেসবও বাকি রয়ে গেল,” গাড়ির কাছে এসে বললেন পিসিমণি, “ও নীলু, মানস কোথায় যেন বলল অপেক্ষা করবে, সেখানে চল বাবা, ওর সঙ্গে দেখা করে যাই একবার।”

মানস সমরের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছিল, নীলু পিসিমণিকে নিয়ে সেখানেই গেল। মানস রাস্তায় পায়চারি করছিল, নীলুদের গাড়ি দেখে এগিয়ে এল।

পিসিমণি গাড়ি থেকে নামলেন, বললেন, “শোনো বাছা, এখন আমাদের যেতে হচ্ছে, সেই কোন সকালে বেরিয়েছি, তাছাড়া এখন আর কিছু হবেও না এখানে থেকে, যাদের সঙ্গে কথা বলা দরকার কাল বলব, কাল আবার আসতেই হবে। তোমাকে শুধু বলে রাখি চোখ কানটা খোলা রেখো আর তেমন কিছু দেখলে বা মনে পড়লে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ো, সে দিন রাত যখন হোক, আমাদের ফোন নম্বর তো নীলু তোমাকে দিয়েই দিয়েছে।”

“হ্যাঁ পিসিমণি, দাদা আমাকে নম্বর দিয়েছে, আমি দরকার বুঝলেই ফোন করব। জেঠুর খুনী ধরা পড়বে তো পিসিমণি?” মানস বলল।

“নিভারানি বামনী পিছু হটার পাত্রী নয় বাছা, তারপর মার যা ইচ্ছে। আরেকটা কথা বলি শোনো, তোমার সঙ্গে এই যে আমাদের এত কথা হল এসব কাউকে কিচ্ছু যেন বলতে যেও না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বোলো, ‘আমিই তো জেঠুকে নিয়ে গেছিলাম ওঁর বাড়িতে, দেখেছেন তখন, কবে থেকে গাড়ি চালাই, কত দিন চিনি – এইসব জিজ্ঞেস করছিলেন,’ মনে থাকবে?”

মানস ঘাড় হেলাল, “মনে থাকবে পিসিমণি, খুনের মামলা বলে কথা, কাউকে কিছু বলি কখনও!”

“এই তো বেশ বুঝেছ দেখছি! বুদ্ধিমান ছেলে!” পিসিমণি গাড়িতে উঠে পড়লেন।

বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে পিসিমণি বললেন, “ও নীলু, তুই তো মোবাইলে সমরবাবুর বাড়ির ছবি তুলছিলি দেখলাম, সব ছবিগুলো আমার ফোনে দিয়ে দে না বাবা।”

নীলু ফটোগুলো পিসিমণির মোবাইলে দিয়ে দিলে উনি মন দিয়ে সেগুলো দেখতে লাগলেন। নীলুও দেখল, অবশ্য পিসিমণির মতো অত করে দেখার কী আছে তা বুঝল না।

একবার জিজ্ঞেসও করল সে কথা, “ছবিগুলো অত কী দেখছ বলো তো পিসিমণি?”

পিসিমণি কোনও উত্তর দিলেন না, গম্ভীর মুখে খেতে বসলেন।

“এই গত কালই ভদ্রলোক এলেন আর আজই এই কাণ্ড! আশ্চর্য ব্যাপার বাবা!” নীলুর মা বললেন।

“সে আর বলতে ভাই! উনি যে মূর্তিটা লকারে রেখে দেবেন ঠিক করেছেন এটা মনে হয় কেউ জানতে পেরেছিল, তাই আর দেরি করেনি, রাতেই কাজ শেষ করেছে,” বললেন পিসিমণি।

“কেউটা কে বড়দি? কাকে সন্দেহ করছ তুমি?” নীলুর বাবা জিজ্ঞেস করলেন।

“কেউ মানে যার মূর্তিটার খুব দরকার ছিল, এতই দরকার যে সমরবাবুকে মেরে ফেলতেও অসুবিধে হল না। আর সন্দেহের কথা বলছিস? সে তো সীতাংশুর  ওপরেই সবথেকে বেশী হচ্ছে, হাজরা মানে ওখানকার দারোগাবাবুও তাই বললেন আমাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে,” পিসিমণি বললেন।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে উঠতে উঠতে সাড়ে এগারোটা বাজল, পিসিমণি সবে নীলুকে বলছেন, “তুই শুয়ে পড় বাবা, কাল তো আবার অফিস আছে,” ঠিক এমন সময় মোবাইল ফোন বেজে উঠল। পিসিমণির।

“হাজরা! এখন! কী মনে করে?” ফোনটা দেখে বললেন পিসিমণি।

…“বলুন ভাই।”

…“পালিয়েছে! কোথায় পালাল?”

…“তাও বটে। পালানোর কারণ তার মানে…………”

…“আপনি তার মানে নিশ্চিত বলছেন?”

…“যা দিয়ে খুন করল সমরবাবুকে সেটা পেলেন নাকি?”

…“সেও ঠিক। একটা কথা বলুন না ভাই, সমরবাবুর তো মোবাইল ফোন ছিল, সেটা কোথায়? ও বাড়িতেই আছে?”

…“নিয়ে এসেছেন? কাজের কাজ করেছেন। ভালো করে ফোনটা দেখে আমায় বলুন না গত দু তিনদিনে সমরবাবু কাকে কাকে ফোন করেছেন বা কোথা থেকে ফোন এসেছে, নম্বরগুলো পাওয়া গেলে খুব উপকার হত।”

…“শনিবার সকালে কারুর ফোন আসেনি বা উনি কাউকে করেননি! রবিবার সকালেও নয়! আমিই তো করেছিলাম শনিবার বিকেলবেলায় একবার, তারপর রবিবার সকালে, সাতটা বাজারও আগে! আশ্চর্য!”

…“ঠিক আছে ভাই, এখন ছাড়ছি।”

নীলু, নীলুর বাবা, মা সবাই উদগ্রীব হয়ে বসেছিলেন। পিসিমণি ফোনটা ছাড়া মাত্র নীলু জিজ্ঞেস করল, “হাজরা কী বলল পিসিমণি? কে পালিয়েছে?”

“সীতাংশু। সন্ধ্যেবেলায় নাকি বেরিয়েছিল দোকানে যাবে বলে আর ফেরেনি। তাড়াহুড়োয় নাকি মোবাইল ফোন অবধি নিয়ে যায়নি,” পিসিমণি বললেন, “সীতাংশুর স্ত্রী অনেকক্ষণ দেখে দেখে, কোথাও কোনও খোঁজখবর না পেয়ে হাজরাকে জানিয়েছে।”

“তার মানে তো হাজরার সন্দেহই ঠিক! নাহলে পালাল কেন?” নীলুর বাবা বললেন।

“হাজরা তো এখন হাত পা কামড়াচ্ছে! আমাকে বলল, ‘যা আফশোস হচ্ছে না বড়দি! সকালে বাড়ি সার্চ করলেই ঠিক মূর্তিটা পেয়ে যেতাম, ও সীতাংশুর কাছেই ছিল। খুন ওই করেছে। রাতে একাই ছিল, দুই ড্রয়িংরুমের মধ্যের দরজা দিয়ে ঢুকে কাজ সেরে এসেছে, নাহলে সদর দরজা ভেতর থেকে বন্ধ হবে কী করে? এখন ফাঁক বুঝে মূর্তি নিয়ে কেটে পড়ল। ঈশ! একবার ধরতে পারি ব্যাটাকে বড়দি, তারপর বুঝিয়ে ছাড়ব পল্লব হাজরা কী জিনিস!’ যা লাফালাফি করছে এখন!”

“এইভাবে পালাল! এখন কী করে ওকে ধরবে পিসিমণি? কখনই বা পালাল? আমরাই তো আটটা অবধি ওখানে ছিলাম, অবশ্য সমরবাবুর বাড়িতে নয়,” সীতাংশুর পালানোর খবরে নীলুও মুষড়ে পড়েছে।

“এই পালিয়ে গিয়ে কিন্তু সীতাংশু প্রমাণ করে দিল যে সেই অপরাধী, নাহলে পালানোর দরকার কী ছিল?” নীলুর মা বললেন।

পিসিমণি এসব কোনও কথারই কোনও উত্তর না দিয়ে নীলুর দিকে তাকিয়ে এক অন্য প্রশ্ন করলেন, “মোবাইল ফোনের কল লিস্ট কেউ উড়িয়ে দেয় কেন বল তো নীলু?”

হঠাৎ এ প্রশ্নর জন্যে নীলু প্রস্তুত ছিল না, হকচকিয়ে গেল, তাও বলল, “অন্য কেউ যাতে দেখতে না পায়? কেন পিসিমণি, কে ওড়াল?”

পিসিমণি ঘরের ভেতর পায়চারি করতে করতে বললেন, “কেউ যাতে দেখতে না পায়? কেউ মানে কে? পুলিশ? কেন দেখলে কী অসুবিধে?”

নীলু অধৈর্য হয়ে উঠল, “ও পিসিমণি বলো না কার ফোনের কথা বলছ? সমরবাবুর?”

পিসিমণি আর একটা কথাও বললেন না, চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন, ঘরের দরজাও বন্ধ হয়ে গেল। যদিও নীলু জানে পিসিমণি এখন মোটেও ঘুমোবেন না। তবে কিছু জিজ্ঞেস করেও কোনও লাভ নেই, একেক সময় পিসিমণি এমন স্পিকটি নট হয়ে যান!

নীলুও হতাশ হয়ে নিজের ঘরে চলে গেল, দেখা যাক কাল সকালে যদি কিছু বলেন পিসিমণি।

সকালে দেখা গেল পিসিমণি একেবারে প্রস্তুত, যেন কোথাও বেরোবেন।

“আদি সপ্তগ্রাম যাচ্ছ? তা আমাকে বললে না কেন? আমিও তোমার সঙ্গে যেতাম, অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলেই হত,” নীলুর অভিমানই হল।

আগে একবার পিসিমণি বলেছিলেন বটে যে আবার আদি সপ্তগ্রামে আসতে হবে, কাজ আছে, কিন্তু রাতে তো আর একটা কথাও না বলে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন, একবার নীলুকে বলতে কী দোষ ছিল?

“তোমার অফিস কাছারি আছে, সেখানেও দরকারি কাজকর্ম আছে, ওরকম হুটহাট করে ছুটি নেওয়ার অভ্যেস ভালো নয় বাছা। তুমি তোমার কাজ করো মন দিয়ে, আমি আমার কাজ করি। আমার জন্যে চিন্তা কোরো না, আমি গাড়িতেই যাব, দীপক নিয়ে যাবে, আমি কাল রাতেই বলে রেখেছি,” বললেন পিসিমণি, মুখ চোখ বেশ গম্ভীর, রাতে তেমন ঘুমিয়েছেন বলেও মনে হচ্ছে না।

“রাতে আবার কখন দীপককে বললে?” নীলুর বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, বেশ বোঝা গেল আজকের এই বেরোনোর কথা ওঁরাও কেউ কিছুই জানেন না।

“সে অনেক রাতে বলেছি। ছেলের ঘুম তো একেবারে কুম্ভকর্ণের মতো! এদিকে বলে ‘আমার ফোন সব সময় অন থাকে পিসিমণি, একবার শুধু বাজাবেন, এসে যাব,’ তা তিনবার বাজানোর আগে তো ঘুম ভাঙল না!”

“কিন্তু যাবেটা কোথায়? সেটাই তো বলছ না? আদি সপ্তগ্রামই তো?” নীলু জিজ্ঞেস করল।

“সেখানে তো যেতেই হবে, তাছাড়া অন্য জায়গাতেও যেতে হবে, কাজ আছে,” খেতে খেতে বললেন পিসিমণি।

“অন্য জায়গা? কোথায়? তুমি এমন সাসপেন্স তৈরি করো না পিসিমণি!”

পিসিমণি এক মনে খাচ্ছিলেন, নীলুর কথায় কীরকম যেন অন্যমনস্ক হয় বললেন, “সাসপেন্স তো তৈরি হয়েই আছে বাছা, নিভারানি বামনী আর নতুন করে কী তৈরি করবে!”

“কী যে সব বলছ! এদিকে কোথায় যাবে তা কিন্তু বললে না!” নীলু আবার বলল।

“ছেলের তাড়া দেখো! যেন ঘোড়ায় একেবারে জিন দিয়ে রেখেছে,” বললেন পিসিমণি, “যাব কলকাতায়।”

“কলকাতায়?” নীলু হাঁ।

“প্রদীপ রাহার সঙ্গে একবার দেখা করতে হবে।”

“প্রদীপ রাহা! সেটা আবার কে? তার সঙ্গে সমরবাবুর খুনের কী সম্পর্ক?” নীলুর বাবা আকাশ থেকে পড়লেন।

“এর মধ্যেই ভুলে গেলি! প্রদীপ রাহা মূর্তি কিনতে চেয়েছিল, সমরবাবুর কাছে এসেছিল,” পিসিমণি উত্তর দিলেন।

“ওহ হো হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে, একজন মূর্তি কিনতে চেয়েছিল বটে। কিন্তু বড়দি, এরা খুব বিপজ্জনক লোক হয় আমি শুনেছি, তোমার এরকম একা যাওয়াটা বোধহয় ঠিক হবে না,” নীলুর বাবা বললেন।

“আর এইসব কাজ তুমি আমাকে বাদ দিয়ে করছ! কেন আমাকে নিয়ে গেলে কী অসুবিধে হত তোমার?” নীলুর গলায় অভিমান ফুটে বেরোল।

“তুই বড়ো অবুঝ নীলু। এক তো অফিস থেকে এরকম যখন তখন ছুটি নেওয়া ঠিক নয়, তাছাড়া এ পর্ব কত দিনে মিটবে তার ঠিক আছে? তুই কত দিন ছুটি নিবি? তার অপর আমি একা গেলে প্রদীপ রাহা হয়তো বেশী কিছু নাও করতে পারে, বুড়ি মানুষ দেখে ভয় টয় দেখিয়ে ছেড়ে দেবে, লোক যে এরা সুবিধের নয় তা তো সত্যিই।”

“সব কিছু জেনে বুঝেও তুমি এরকম একা যাচ্ছ?” নীলুর মা বললেন।

“দীপক তো সঙ্গে রইলই, একা আর কোথায় হলাম ভাই?” পিসিমণির সাফ উত্তর।

“প্রদীপ রাহার সঙ্গে দেখা করবে কী করে? ওর ঠিকানা জানো না তো,” নীলু বলল।

“সে সব জোগাড় করা হয়ে গেছে। মিহিরবাবুকে মনে আছে? মিহির রায়, চন্দননগরে থাকেন? তোর অফিসের তৃণার বড়োমাসির বাড়ির চুরির ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছিলেন না? ওঁকে ফোন করেছিলাম, রাত দুপুরেই, ওঁর সঙ্গে পুলিশের ওপর মহলেও অনেক চেনাশোনা আছে, তাই। ভারি ভালো ভদ্রলোক, অত রাতে ফোন করেছি বলে একটুও বিরক্ত হলেন না, বরং বললেন, ‘অকারণে কাউকে বিরক্ত করার মানুষ আপনি যে নন দিদি তা আমি ভালোই জানি, নিশ্চয়ই তেমন কোনও প্রয়োজন পড়েছে তাই করেছেন।’ মূর্তির কথাটা বলতে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলেন, খবরের কাগজের লেখাটা উনিও পড়েছেন তো। প্রদীপ রাহার ঠিকানা আজ ভোরে উনিই দিলেন। এই ধরণের জিনিসপত্রর ওপর আগরওয়ালের যে খুব লোভ তাও বললেন, ভালো কথায় না দিলে জোর করে নিয়ে নিতেও দু বার ভাববে না। প্রদীপ রাহা ওর হয়েই কাজ করে। রহস্যের সমাধান হলে ওঁকে যেন ডাকি সেও বললেন, বললেন, ‘আপনি পারবেন না এ হতেই পারেন না দিদি। তখন সব আপনার আর নীলাদ্রির মুখ থেকেই শুনব, তাছাড়া আপনার হাতের রান্না খাওয়ার লোভেও যাব।’ বোঝো!”

“এই আগরওয়াল কি আর্ট কালেক্টার?” নীলুর বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “বড়োলোকেদের এসব জিনিস সংগ্রহের শখ হয় শুনেছি।” 

“নিজে কি আর সব রাখে? আমার তো মনে হয় বেশি দামে বিক্রি করে বিদেশীদের কাছে, এসবের তো খুব কদর শুনি।”

“কিন্তু প্রদীপ রাহার কাছে হঠাৎ যাচ্ছ কেন আমি সেটাই বুঝতে পারছি না। সীতাংশুবাবু পালিয়েছে।, ওঁর খোঁজ করো, মূর্তি নিশ্চয়ই ওঁর কাছে আছে,” বলল নীলু।

“হায় রে আমার পোড়া কপাল! এটুকুও বুঝতে পারলে না? মূর্তি তো আর সীতাংশু সঙ্গে সঙ্গে রাখবে না, নিশ্চয়ই বিক্রি করবে? তা করবেটা কার কাছে? পাড়ার মুদিখানার দোকানে নিশ্চয়ই নয় বাছা। প্রদীপ রাহা মূর্তি কিনতে চেয়েছিল, সে খবর সীতাংশু জানতেও পারে, করলে তার কাছে করতে পারে, আর কেউ ও মূর্তি কিনতে চেয়েছিল বলে তো জানি না। সীতাংশু অবশ্য শুনেছি মূর্তি গলার হারের হীরের দরদাম করছিল, সে কার কাছে তা জানি না, তবে অনেক কিছুই যখন জানি না তখন এক এক করে দেখতে হবে।”

“কিন্তু প্রদীপ রাহা মূর্তি পেয়ে গেলেও কী আর তোমাকে বলবে পিসিমণি?”

“তুই বড়ো বকাস নীলু, বলবে না সে আমিও জানি, কিন্তু কিছু তো বলবে, কী বলে সেটাই শুনতে যাচ্ছি। তারপর সে সত্যি কথা না মিথ্যে কথা সে ঠিক বার করা যাবে।”

“সমরবাবু ঠিকই বলেছিলেন, বল্টু আসেনি ওঁদের বাড়িতে, বল্টু তো নেইই, তার মানে…”

“শান্তনু মিথ্যে কথা বলেছিল। আরও খটকা আছে, ঠিক বুঝতে পারছি না…” পিসিমণি চুপ করে গেলেন।

খাওয়া হয়ে গেছিল, নীলু উঠে পড়ল, আর দেরি করা যাবে না, ট্রেন মিস করবে, কিন্তু মুখটা সেই গোমড়া করেই রইল। তাই দেখে পিসিমণি বললেন, “রাগ দেখো ছেলের! ওরকম হাঁড়ি মুখ করে রাস্তায় বেরিয়ো না বাছা, লোকে কী ভাববে? আচ্ছা শোনো, আজ ঘুরে আসি, দেখি কী হয়, তারপর সেরকম বুঝলে তোমাকেও সঙ্গে নেব, তখন নাহয় ছুটি নিও।”

মিহিরবাবু যে ঠিকানাটা দিয়েছিলেন সেটা প্রদীপ রাহার অফিসের। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কাছে একটা বড়ো বাড়ির তিনতলায় একটা ঘুপচি ঘর। আগরওয়ালের মতো পয়সাওলা লোকের খাস কর্মচারীর অফিস যে এরকম হবে পিসিমণি ঠিক আশা করেননি, অবশ্য হতেও পারে এ ছাড়া আরও কোথাও অফিস আছে। বেলার দিকে কিছুটা সময় প্রদীপ রাহা এখানে থাকে বলে মিহিরবাবু এই ঠিকানাই দিয়েছেন।

প্রদীপ রাহা বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় পিসিমণি গিয়ে উপস্থিত।

“কী দরকার আপনার আমার সঙ্গে? আপনার নাম?” জিজ্ঞেস করলেন প্রদীপ রাহা, বছর পঞ্চান্ন ছাপান্ন বয়স হবে, মাথায় ঘন চুল কাঁচা পাকা মেশানো, চোখে রিমলেস শৌখিন চশমা, পরণের শার্ট প্যান্টও বেশ কেতা দুরস্ত এবং দামি।

“আমার নাম নিভারানি মৈত্র, তবে সবাই আমাকে বড়দি বা পিসিমণি বলেই ডাকে,” বললেন পিসিমণি।

“আপনাকে লোকে কী বলে ডাকে তা জানার আমার কোনও ইন্টারেস্ট নেই। নিভারানি! এরকম নাম বাপের জন্মে শুনেছি বলে মনে পড়ে না! এসেছেন কেন?” পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বার করে একটা সিগারেট ধরিয়ে পিসিমণির মুখের ওপর ধোঁয়া ছেড়ে বললেন প্রদীপ রাহা।

“সব বলব, তবে দু মিনিট কোথাও বসে শান্তিতে কথা বললে হয় না ভাই?”

“একেবারে ভাই পাতিয়ে ফেলছেন যে! মতলব কী বলুন তো? বয়স তো কম বলে মনে হচ্ছে না, কী চান পষ্টাপষ্টি বলুন, প্রদীপ রাহা ওসব ভাই টাইয়ে ভেজে না, বুঝলেন?”

“আপনি তো সমরবাবুর কাছ থেকে মূর্তিটা কিনতে চেয়েছিলেন? গেল সপ্তাহের মঙ্গলবার গেছিলেন তো ওঁর বাড়িতে, তারপর ফোনও করেছেন, তাই না?” এবার পিসিমণিও বিনা ভূমিকায় আসল কথা বললেন।

প্রদীপ রাহা সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, চোখ সরু করে পিসিমণিকে দেখতে দেখতে বললেন, “আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন?”

“আমি কে তা তো বললামই ভাই, শোনেননি? বেশ আবার বলছি, আমার নাম……”

“আপনার নাম আমি জানতে চাইনি, আপনাকে সবাই কী বলে ডাকে তাও নয়, এসব কথা কোথা থেকে জানলেন?”

“এসব তো সমরবাবুই আমাকে বলেছেন, আমার বাড়ি গেছিলেন শনিবার।”

“আপনি সমরবাবুর রিলেটিভ?”

“না তো, আমি তো সমরবাবুকে আগে চিনতামই না ভাই।”

“তাহলে সমরবাবু আপনার বাড়ি গেলেন কেন? আসল কথাটা বলুন তো,” রীতিমতো ধমকে উঠলেন প্রদীপ রাহা, “একদম বাজে বকবেন না, সত্যি কথা বলুন।”

“বাজে কেন বকব ভাই? বাজে বকার মানুষ নিভারানি বামনী নয়। এলাম তার কারণ আমি আবার এসব কাজকর্ম করি কীনা, মানে কোথাও কিছু গোলমাল হলে, এই ধরুন কিছু চুরি হল বা কেউ খুন হলেন বা কোনও সন্দেহজনক ঘটনা ঘটল, আমি তার কী যেন বেশ বলে, হ্যাঁ, রহস্য উদ্ঘাটন করি। সেই যেবার বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে রুপোর বাটি চুরি গেল, পুলিশে খবর না দিয়ে আমিই বার করে ফেললাম না? সেই থেকে শুরু। তারপর কোথাও কিছু হলেই আমার নীলু বলে, ‘লেগে পড়ো পিসিমণি, চুপ করে থেকো না,’ লেগে না পড়লে মানে এই চোর বা খুনী টুনী না ধরলে বাছার আমার মন খারাপ হয়, তাই বাধ্য হয়েই এই বুড়ো বয়সে আমাকে এইসব খাটাখাটনির কাজ করতে হয়। একবার জঙ্গীদের মতলবেও জল ঢেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি ওরকম বাক্যিহারা হয়ে গেলেন কেন ভাই? বিশ্বাস করছেন না আমার কথা?”

“আমার কাছে কেন এসেছেন?” দাঁতে দাঁত চিপে বলল প্রদীপ রাহা।

“আপনাকে একটা খবর দিতে এলাম, না, একটা নয়, দুটো। সমরবাবু খুন হয়েছেন আর ও মূর্তিও চুরি হয়ে গেছে।”

“আপনি খবর দেবেন তবে আমি জানব? প্রদীপ রাহাকে এত বোকা পেয়েছেন?” প্রদীপ রাহা খেঁকিয়ে উঠলেন, “মিস্টার রায়ের ছেলেই বাপকে খুন করে মূর্তি নিয়ে ভেগেছে সেও আমি জানি।”

“তাহলে তো অনেক কিছুই জানেন আপনি ভাই,” পিসিমণি নির্বিকার, প্রদীপ রাহার দুর্ব্যবহারেও কোনও তাপ উত্তাপ নেই।

“আরও জেনে রাখুন ও মূর্তি এই প্রদীপ রাহার কাছেই আসবে তা সে এখন যেখানেই থাকুক না কেন, বুঝলেন? এবার আপনি আসুন, বাজে বকে আমার অনেক সময় নষ্ট করেছেন।”

পিসিমণি বিনা বাক্য ব্যয়ে চলে এলেন, প্রদীপ রাহা খেয়ালও করল না পিসিমণির ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।

“ও দীপক এবার আদি সপ্তগ্রাম যাব বাবা, সমরবাবুর বাড়িতে, তবে তার আগে কিছু খেয়ে নিতে হবে, বুঝলি?” গাড়িতে উঠে পিসিমণি বললেন।

গতকাল শুধু সীতাংশুর সঙ্গে কথা বলে চলে এসেছিলেন পিসিমণি, তার সীতাংশুর স্ত্রী অরুণিমার সঙ্গে আলাপ হল। আজ বাড়িতে শান্তনু, অতনু কেউই নেই, সমররের দেহ নিয়ে তারা শ্মশানে গেছে অন্তিম সৎকারের জন্যে, সীতাংশুর জন্যে আর অপেক্ষা করা হয়নি।

অরুণিমার অবস্থা দেখলে সত্যিই কষ্ট হয়। ইন্সপেকটর হাজরা যে সমরবাবুর খুনী এবং মূর্তি চোর হিসেবে সীতাংশুকেই সন্দেহ করছেন তা তো প্রকারন্তারে জানিয়েই দিয়েছেন, তার ওপর সীতাংশু পলাতক। ফলে শুধু হাজরা নয়, আশেপাশের অনেকেরও এই বিশ্বাস জন্মেছে যে সীতাংশুই খুনী, নাহলে তার পালানোর দরকার পড়ল কেন?

“ও খুব বদমেজাজি ঠিকই, কিন্তু নিজের বাবাকে খুন করবে না। বাবাকে কেন, কাউকেই খুন করবে না, কিছুতেই না, এ আমি জোর গলায় বলতে পারি,” পিসিমণিকে দেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল অরুণিমা।

“রাগের মাথায় অনেক সময় অঘটন ঘটেও যায় কিন্তু ভাই,” বললেন পিসিমণি।

“না বড়দি ও খুন করেনি, কিছুতেই না, এ বিশ্বাস আমার আছে। বাবার তো আপনার ওপর খুব ভরসা ছিল, আপনার কাছে গেছিলেন শুনলাম, আপনিই সব বার করুন বড়দি, ওকেও খুঁজে এনে দিন। আমাদের একটা সাত বছরের ছেলে আছে বড়দি, সেও যে কিছু বুঝছে না তা নয়, তার মুখ চেয়েই করুন,” পিসিমণির দুটো হাত ধরে বলল অরুণিমা।

“আগে সুস্থির হয়ে বোসো, বিপদের সময় মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। আর কিচ্ছু লুকিয়ো না আমার কাছে, তাতে বিপদ বাড়বে বই কমবে না। একটা কথা বলো তো, সমরবাবুকে এক ভদ্রলোক খুশী হয়ে কোনও পুতুল দিয়েছিলেন? লাঠি হাতে পুতুল? ডোকরার? সেই ভদ্রলোকের আঙুলের গাঁটের ব্যথা সারিয়ে দিয়েছিলেন সমরবাবু?”

“দিয়েছিলেন তো। ডোকরার মূর্তি, বেশ বড়োই,” অরুণিমা হাত দিয়ে দেখাল মূর্তির উচ্চতা, তাতে মনে হল ইঞ্চি দশেক হবে, “বাবা খুব খুশী হয়েছিলেন ওটা পেয়ে, খুব পছন্দের জিনিস ছিল।”

“কোথায় থাকত সেটা?”

“বাবার ড্রয়িংরুমে একটা ছোটো শোকেস আছে, তার মাথাতে থাকে।”

“থাকে নয় ভাই, থাকত, শোকেসের মাথাতে কাল ওটা ছিল না। অন্য কোথাও সরিয়ে রেখেছেন কিনা জানো?”

“শনিবার সকালেও তো ছিল, আমি ভোরবেলা দেখা করতে গেছিলাম, আমি বাপের বাড়ি গেলাম, উনিও বেরোবেন বলেছিলেন। তারপর কাজ করে যে মেয়েটি সে এল, আমিও তার সঙ্গে বাবার ওদিকে গেছিলাম, সে ঘর ঝাঁট মোছা করে চলে গেল, আমিও বেরিয়ে গেলাম। ওটা তো তখনও ছিল। সন্ধ্যেবেলাতেও………” অরুণিমা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।

“সন্ধ্যেবেলাতেও কী ভাই? পিসিমণির তীক্ষ্ণ নজর অরুণিমার ওপরে, “তুমি কিছু চেপে যাচ্ছ মনে হচ্ছে। কেন বুঝছ না কিছু লুকোলে বিপদ বাড়তেই থাকবে?”

অরুণিমা এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল, কাঁদতে কাঁদতেই বলল, “এসব জানাজানি হলে ওকে বাঁচানো আরও মুশকিল হবে বড়দি।”

“সীতাংশু যদি সত্যিই নিরপরাধ হয় তাহলে তার কিছু হবে না, কিন্তু তুমি এখন আমাকে সব খুলে বলো তো।

অতি কষ্টে নিজেকে সামলে অরুণিমা যা বলল তার মর্মোদ্ধার করলে যা দাঁড়ায় তা হল শনিবার সন্ধ্যেবেলা সমরবাবুর সঙ্গে শান্তনু, অতনু আর সীতাংশুর নাকি খুব ঝগড়া হয়। শান্তনুর ওই এক কথা, তার বাবা অল্প বয়সে মারা গেছিলেন বলেই ও মূর্তি সমরবাবু পেয়েছিলেন, নাহলে নাকি তাঁর পাওয়ারই কথা নয়। তাই এখন সমরবাবুর উচিত আর দেরি না করে মূর্তিটা ওকে দিয়ে দেওয়া। অতনুও শান্তনুকে সমর্থন করে। শুনে নাকি সীতাংশু শোকেসের ওপরে রাখা ডোকরার ওই লাঠি হাতে পাইকের মূর্তিটা তুলে শান্তনুকে মারতে গেছিল। সমরবাবু সামলাতে যান, তাতে সে নিজের বাপকেও শাসায় যে ভালোয় ভালোয় মূর্তিটা যেন উনি ওকে দিয়ে দেন। নাহলে যে করে হোক ও মূর্তি ও নিয়েই ছাড়বে! সমরবাবুর এরপর নাকি শরীর খারাপ হয়ে গেছিল।

“তারপর আর সমরবাবুর সঙ্গে কোনও কথা হয়নি সীতাংশুর? বা রাতে কিছু বুঝেছিল বা শুনেছিল? তোমাকে বলেছে কিছু? আমাকে যদিও বলেছে যে কিছুই বুঝতে পারেনি তাও তোমাকে জিজ্ঞেস করছি।”

“না আর কথা হয়নি। বলল ওসব গোলমালের পর আর ভালো লাগছে না বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়েছিল। রাত পৌনে তিনটে নাগাদ একবার বাথরুমে গেছিল, তখনও কিছু বুঝতে পারেনি। তারপর সাড়ে চারটেয় ঘুম ভেঙে গেলে উঠে পড়েছিল। ভেবেছিল বাবার কাছ যাবে, আসলে আগের দিনের কথা ভেবে পরে নিজেরই খারাপ লাগছিল। বাবা তো খুব ভোর ভোর উঠতেন, পুজোর ব্যাপার থাকত। নিয়ম করে সকাল সন্ধ্যে পুজো করতেন। একা কৃষ্ণর জন্যেই তো কত কাজ! রোজ শোয়ানো, তোলা – কত কিছু! পাঁচটার সময় একবার ওদিকে গিয়ে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে চলে আসে, ভেবেছিল বাবা পুজো করছেন, তারপর সাড়ে পাঁচটার সময় ঘরে ঢুকে দেখে এই কাণ্ড!”

“হুঁ, এসব তো কিছু কিছু আমিও শুনেছি। তুমি যা দেখালে তাতে তো মনে হয় দশ এগারো ইঞ্চির মূর্তি, ডোকারা, সে তো ভারি জিনিস,” পিসিমণি বললেন, “দেখতে হবে মূর্তি কোথাও আছে কীনা, মানে সমরবাবু কোথাও সরিয়ে রেখেছিলেন কীনা, নাহলে দারোগাবাবুকে খবর দিতে হবে। আগেই দিই বরং, সমরবাবুর ঘর আমাদের খোঁজা তো ঠিক নয়।”

“ওনাকে কেন খবর দিচ্ছেন বড়দি? উনি তো…” অরুণিমা কথা শেষ করতে পারল না, তার গলা শুকিয়ে গেছে, মুখ ফ্যাকাশে।

পিসিমণি কোনও উত্তর না দিয়ে পল্লব হাজরাকে ফোন করলেন।

হাজরা আসতে মোটে সময় নিলেন না।

“ডোকরার মূর্তি পাওয়া যাচ্ছে না বলছেন? আপনি ওই মূর্তির কথা জানলেন কী করে? এঁরা তো কিছু মিসিং বলে রিপোর্ট করেননি, এক ওই মূর্তিটা ছাড়া,” এসেই হাজরার প্রশ্ন।

“সমরবাবুর বন্ধুদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে জানতে পেরেছি ভাই। ও মূর্তি বাইরের ঘরের শোকেসের অপর রাখা থাকত। আমার নীলুর খুব বুদ্ধি, সব ঘরের সব দিকের ফটো তুলে নিয়ে গেছিল, কাল রাতে সে সব দেখতে দেখতে দেখি কই ওরকম কোনও মূর্তি তো নেই। এবার আর সময় নষ্ট না করে খুঁজলে হয় না?”

সমরের কোনও ঘরে ডোকরার মূর্তি পাওয়া গেল না। অরুণিমা নিজেদের আলমারি, ডিভান সব খুলে দেখাল – কোথাও নেই।

“এ তো আরেক বিপদ! এ মূর্তিটা আবার কোথায় হাপিস হল? কেই বা করল! এ তো তেমন দামি কিছুও নয় মনে হয়। নাকি তার মধ্যেও আবার কিছু রহস্য আছে? আপনার আন্দাজ আছে মূর্তিটার কীরকম দাম?” ইন্সপেক্টর হাজরা প্রশ্ন করলেন অরুণিমাকে।

কিন্তু অরুণিমা কিছু বলার আগেই উত্তর দিলেন পিসিমণি, “কোনও রহস্য নেই ভাই। ও মূর্তি সমরবাবু উপহার পেয়েছিলেন, এক ভদ্রলোক রোগমুক্ত হয়ে খুশী হয়ে ওঁকে দিয়েছিলাম। আর দাম হাজার টাকার আশেপাশে হবে। আমার নীলু ওরকম সাইজের একখানা গণেশের মূর্তি কিনে এনেছিল একবার, এগারোশো টাকা নিয়েছিল সেটা।”

হাজরা হাল ছেড়ে সোফায় বসে পড়লেন, “উফ যা গরম পড়েছে! এবার কিন্তু একদম ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে না, ঝড় বৃষ্টি হলে গরম কিছুটা কমে। সব কিছুরই প্রয়োজন আছে, কী বলেন বড়দি?”

পিসিমণি কিন্তু তখনও ঘরের এটা ওটা দেখেই যাচ্ছেন।

“এসব কিন্তু মানুষের জন্যেই। প্রকৃতির ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এরকম বেশিদিন চললে কী হবে বলা মুশকিল। আমার কী মনে হয় জানেন বড়দি? এই প্রকৃতির সঙ্গে মানুষেরও তো যোগ আছে, তাই জন্যে মানুষেরও ব্যালান্স নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাহলে ভাবুন একটা মূর্তির জন্যে বাবাকে খুন! ঠিক বলছি কীনা আপনিই ভেবে বলুন বড়দি? ব্যালান্স নষ্ট না হলে কেউ করে এ কাজ!”

ততক্ষণে পিসিমণি ড্রয়িং রুম থেকে বেরিয়ে ল্যাণ্ডিং এ এসেছেন। ড্রয়িং রুমের দরজার পাশে একটা জুতোর র‍্যাক। তাতে চটি, জুতো, চপ্পল ইত্যাদি যেমন খোলা রাখা আছে তেমনি দুটো জুতোর বাক্সও আছে।

“এদিকে আসুন ভাই, মূর্তি পাওয়া গেছে,” পিসিমণির গলা পাওয়া গেল।

মূর্তির নাম শুনেই হাজরা লাফিয়ে উঠলেন, পড়ি কী মরি করে ল্যাণ্ডিং এর দিকে যেতে যেতে বললেন, “কোন মূর্তি? কোন মূর্তি? ডোকরারটা না যেটা চুরি গেছে?”

র‍্যাকে একটা জুতোর বাক্সর ঢাকা খোলা, তাতে লাঠি হাতে পাইকের মূর্তি, মূর্তিটা একটা গোল বেসের অপর বসানো, তাতে রক্ত লাগা। রক্ত শুকিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু তাও বুঝতে অসুবিধে হয় না।

“আচ্ছা এই তার মানে মার্ডার ওয়েপন!” ইন্সপেক্টর পল্লব হাজরার মুখ খুশীতে জ্বলজ্বল করছে, “মেরে এখানে লুকিয়ে রেখেছে! মার্ডার ওয়েপন মানে বোঝেন তো বড়দি?”

“বুঝি ভাই। যা দিয়ে খুন করা হয়েছে, তাই তো?” পিসিমণি এখনও মূর্তিটার দিকেই এক দৃষ্টে তাকিয়ে।

“একজ্যাক্টলি! এবার তো খালি কিছু ফরম্যালিটিজ বাকি রইল। এর ওপরের ফিঙ্গার প্রিন্ট পরীক্ষা করলেই সব একেবারে ক্লিয়ার হয়ে যাবে। তবে ক্লিয়ার এখনও। ভেবে দেখুন, খুন করার সবচেয়ে সুবিধে কার, লুকিয়ে রেখেছে কোথায় না নিজের জুতোর র‍্যাকে, পালিয়েছে কে? আর এসব কার দিকে ইঙ্গিত করছে? আমি তো গত কাল একবার দেখেই বুঝে গেছিলাম, আপনাকে কিন্তু বলেওছিলাম বড়দি, মনে পড়ছে আপনার? তবে একটা কথা মানতে হবে, এত জায়গা থাকতে এখানে লুকিয়ে রেখেছে, চট করে কেউ এখানটার কথা ভাববে না। ওয়েল ডান বড়দি, গুড জব। এটা যে আপনি বার করে আমাকে হেল্প করেছেন এটা আমি বলব, নিশ্চিন্ত থাকুন, পল্লব হাজরা সব ক্রেডিট নিজে নিয়ে নেবে না,” রুমাল দিয়ে সাবধানে মূর্তিটা তুলে এভিডেন্স ব্যাগে ভরতে ভরতে বললেন হাজরা।

“আমি একবার সমরবাবুর ঘরে যাব?” পিসিমণি হাজরাকে জিজ্ঞেস করলেন।

“যান না যান, কোনও অসুবিধে নেই।”

“একবার একটু শুনুন না ভাই,” পিসিমণি ডাকলেন হাজরাকে।

“বলুন,” হাজরা এলেন।

সমরের ড্রয়িং রুমে সোফার ওপরে একটা পুরোনো খবরের কাগজ পড়ে ছিল, সেটা দেখিয়ে পিসিমণি বললেন, “আমি এটা নিয়ে যাব ভাই?”

প্রশ্নটা বুঝতে পল্লব হাজরার বেশ কয়েক সেকেণ্ড সময় লাগল, তারপর বললেন, “নিয়ে যাবেন? কী? ওই খবরের কাগজটা?”

“হ্যাঁ।”

“খবরের কাগজ নিয়ে যাবেন? যান। তবে ও তো আমার জিনিস নয়, এনাদের যদি আপত্তি না থাকে নিয়ে যান,” হাজরা তখনও বেশ আশ্চর্য।

তারপর হাতে ধরা জিনিসটার কথা খেয়াল হতেই আবার বেশ খুশী হয়ে উঠলেন। শিস দিতে দিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমেই যাচ্ছিলেন, হঠাৎ কী মনে হতে পেছন ফিরে পিসিমণির দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই দেখুন, আপনাকে তো বলতেই ভুলে যাচ্ছিলাম। খুনটা হয়েছে রাত একটা থেকে তিনটের মধ্যে, আমাদের ডাক্তার বলেছেন।”

হাজরা আবার শিস দিতে দিতে চলে গেলেন।

“ও বড়দি এবার কী হবে? ওতে তো ওরই আঙুলের ছাপ পাওয়া যাবে!” কম্পিত কন্ঠে বলল অরুণিমা।

“জানি,” গম্ভীর মুখে বললেন পিসিমণি।

ক্রমশ

 অদিতি ভট্টাচার্যের আরো লেখা               জয়ঢাকের সমস্ত ধারাবাহিক একত্রে

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s