অমিত দেবনাথ এর সমস্ত লেখা
এডমন্ড লেস্টার পিয়ারসন (Edmund Lester Pearson) (১৮৮০-১৯৩৭), আমেরিকা। পেশায় লাইব্রেরিয়ান পিয়ারসন ছিলেন লেখক, হিউমারিস্ট, পুস্তক সমালোচক, ‘রিয়েল লাইফ ক্রাইম’ লেখক এবং ১৯০৬—১৯২০ সাল পর্যন্ত ‘বস্টন ইভনিং ট্রান্সক্রিপ্ট’ (Boston Evening Transcript)-এ ‘দি লাইব্রেরিয়ান’ (The Librarian) নামে প্রকাশিত নিয়মিত কলাম লেখক। পিয়ারসনের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ ‘স্টাডিজ ইন মার্ডার’ (Studies in Murder) (১৯২৪) নামে প্রকাশিত বইটি, যাতে রয়েছে বিভিন্ন সত্য ঘটনা মূলক অপরাধের ওপরে লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ, যার একটিতে ছিল বিখ্যাত ‘লিজি বোরডেন’ খুনের কাহিনি (Lizzie Borden murders)।
বিশ্ববিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস জন হাফাম ডিকেন্স (Charles John Huffam Dickens) (১৮১২—১৮৭০) রচিত শেষ উপন্যাসটির নাম ‘দি মিস্ট্রি অব এডউইন ড্রুড’ (The Mystery of Edwin Drood)। এপ্রিল ১৮৭০ থেকে ফেব্রুয়ারি ১৮৭১ সালের মধ্যে এটি বারোটি পর্বে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছ’টি পর্ব প্রকাশিত হওয়ার পর ডিকেন্স মারা যান। ফলে এই উপন্যাসটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। তারপর বহু লেখক এই উপন্যাসটিকে শেষ করার চেষ্টা করেছেন।
পিয়ারসন রচিত ‘শার্লক হোমস অ্যান্ড দ্য ড্রুড মিস্ট্রি’ (Sherlock Holmes and the Drood Mystery) প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বস্টন ইভনিং ট্রান্সক্রিপ্ট’-এ, ১৯১৩ সালে।
শার্লক হোমস ও ড্রুড রহস্য
অনুবাদঃ অমিত দেবনাথ
“ওয়াটসন, হাতের লেখা দেখে চরিত্র বুঝতে পারো?”
ব্রেকফাস্ট টেবিলে প্রাতরাশ সারতে সারতে কথাটা বলল শার্লক হোমস আমার দিকে তাকিয়ে। কথা বলতে-বলতেই সে একখানা খাম এগিয়ে দিল আমার দিকে। আমি চোখ বোলালাম তার ওপর। চিঠিটা হোমসকেই লেখা, আমাদের বেকার স্ট্রিটের ঠিকানায়। হাতের লেখা দেখে মানুষ চেনার ব্যাপারে কোথায় যেন একটা প্রবন্ধ পড়েছিলাম, মনে পড়ে গেল সেটা।
“লেখা দেখে যা বুঝছি,” আমি বললাম, “লেখক বিনয়ী, নানা বিষয়ে খোঁজখবর রাখে আর রীতিমতো দক্ষ। ভদ্রলোক…”
“অসাধারণ ওয়াটসন, অসাধারণ! তোমার আজকের বিশ্লেষণ বাস্তবিক অতীতকে ছাপিয়ে গেছে। একেবারে তোমার ঘরানাতেই তুমি চিঠিটা পড়েছ। যদিও আমার ধারণা, তুমি লেখক সম্বন্ধে যা যা বলেছ, তার সবই ভুল। আসলে চিঠিটা এসেছে মিঃ থমাস সাপসির কাছ থেকে।”
“ক্লোইস্টারহ্যাম-এর বিখ্যাত মেয়র?”
“ঠিক। আর নিদারুণ আত্মম্ভরিতা, কুখ্যাত অহমিকা আর সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার দিক দিয়ে এঁর সমকক্ষ সারা ইংল্যান্ডে আর কেউ নেই। কাজেই তুমি লক্ষ্যভেদ করতে পারলে না, ভায়া।”
“কিন্তু তিনি তোমার কাছে কী চান?” আমি প্রসঙ্গটা পাল্টানোর চেষ্টা করলাম। “নিশ্চয়ই তিনি এডউইন ড্রুড-রহস্য ভেদ করার জন্য তোমাকে চাইছেন না?”
“তিনি তাই চাইছেন। বন্ধু হে, গভীর গাড্ডায় পড়েছেন তিনি এ ব্যাপারে। চলো, একটু ক্লোইস্টারহ্যামে ঘুরে আসা যাক। মেয়রকে এ ব্যাপারে বাধিত করাও হবে, আর শুনেছি ওখানকার ক্যাথিড্রালটা বেশ সুন্দর। দারুণ সব গারগয়েল আছে নাকি সেখানে।”
আমরা ক্লোইস্টারহ্যাম যাওয়ার ট্রেনে উঠে পড়লাম ঘন্টা খানেক বাদে। সকালের কাগজ পড়ছিল হোমস, এবার সেগুলো পাশে সরিয়ে রেখে আমার দিকে তাকাল।
“এই ড্রুড কেসটার ব্যাপারে কিছু জানো নাকি?”
“বেশ কিছু খবর পড়েছি।” আমি বললাম, “আর এ ব্যাপারে নানারকম জল্পনাকল্পনার ব্যাপারেও কিছু কিছু জানি।”
“আমি এ ব্যাপারটায় বিশেষ কিছু জানি না।” বলল হোমস, “আসলে গত কয়েকদিন ধরে কর্নেল রাসপোপফ আর জারিনার রুবির ছোট্ট ঘটনাটায় একটু ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল বলে এটায় সেরকম নজর দিতে পারিনি। তুমি যদি ঘটনাটা সংক্ষেপে বলো, তাহলে আমার একটু সুবিধে হয়।”
“বলছি।” আমি বললাম, “এডউইন ড্রুড হল ক্লোইস্টারহ্যামের একজন ইঞ্জিনিয়ার। ক’দিন পরেই ওর মিশরে যাওয়ার কথা ছিল। ক্লোইস্টারহ্যামে তার দু’জন আপনজন আছে—একজন হল তার বাগদত্তা স্ত্রী, নাম মিস রোসা বাড, মেয়েটি স্কুলের ছাত্রী। আরেকজন হলেন তার অভিভাবক ও কাকা মিঃ জন জেসপার। এই কাকাটি হলেন ক্যাথিড্রালের কয়ার-মাস্টার। ব্যাপার হল, ছেলেটির সুখশান্তির ওপর ছায়াপাত করেছে দুটো ঘটনা। তার মধ্যে একটা ওর বিয়ে নিয়ে। ওরা, মানে এডউইন আর রোসা যখন খুব ছোটো, তখনই ওদের বিয়ের কথা পাকা করে ফেলেছিল ওদের অভিভাবকরা। কিন্তু এটা কোনও এক প্রিন্সিপাল পুরোপুরি পছন্দ করেননি। ফলে এডউইন ড্রুডের নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন মাত্র আগে ওরা একটা বনিবনায় আসে যে এই বাগদান ভেঙে দেবে। ওদের মধ্যে সম্ভবত বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়, যদি না ভালোবাসার টান থেকে থাকে।
“আর এর মধ্যে আরেক উৎপাত উপস্থিত হয়েছে। তা হল সিংহলের এক তরুণ ছাত্র, নেভিল ল্যান্ডলেস। এই ল্যান্ডলেস ছোকরার শরীরে আবার প্রাচ্য রক্ত থাকায় এর মেজাজ খানিকটা উগ্র, আর গায়ের রঙও গাঢ়। আসল গণ্ডগোলটা বেধেছে এই দু’জনের মধ্যে। এর মধ্যে মূল ঝামেলা পাকিয়েছে ল্যান্ডলেসই। ওদের মধ্যে মিটমাট করিয়ে দেওয়ার জন্য এডউইনের কাকা মিঃ জেসপার একদিন ওদের ডিনারে ডাকেন। সেটা ছিল বড়দিনের আগের সন্ধ্যা, আর ওরা দু’জন ছাড়া আর কেউ অতিথি ছিল না। যাই হোক, ডিনার পর্ব ভালোভাবেই মিটে যায়। তারপর রাতের দিকে দু’জনে মিলে হাঁটতে হাঁটতে নদীর দিকে যায়। ঝোড়ো হাওয়া দিচ্ছিল বলে নদীতে তখন ঢেউ উঠছিল ভালোই। দু’জনে মিলে খানিকক্ষণ সেইসব দেখার পর ল্যান্ডলেসের কথা অনুযায়ী যে যার বাড়ি ফিরে যায়। তারপর থেকেই ড্রুডকে আর দেখা যায়নি। তার কাকা ব্যাপারটা জানতে পারেন পরদিন সকালে। ল্যান্ডলেসকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, আর ড্রুডের খোঁজেও তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু নদীতে মাছ ধরার খাঁচার মধ্যে ড্রুডের ঘড়ি আর পিন ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রমাণের অভাবে ল্যান্ডলেসকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু ক্লোইস্টারহ্যামে সবাই এমন খেপে গেছে ওর ওপর যে ওকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে বোধহয় এখন লন্ডনে আছে।”
“বেশ।” হোমস বলল, “ঘড়ি আর পিন কে পেয়েছে?”
“মিঃ ক্রিসপার্কল, ক্যাথিড্রালের এক ছোটো সাধু। ল্যান্ডলেস এঁর বাড়িতেই থাকত আর একসঙ্গে পড়াশোনা করত। আরেকটা ব্যাপার, ল্যান্ডলেসের এক বোন আছে, নাম মিস হেলেনা। এই বোনও লন্ডনে এসেছে।”
“হুম।” বলল হোমস, “আমরা ক্লোইস্টারহ্যামে এসে গেছি। এবার অনুসন্ধানের কাজ শুরু করতে হবে। প্রথমে মেয়র মিঃ সাপসির সঙ্গে দেখা করা দরকার।”
হোমস যা বলেছিল মিঃ সাপসি এক্কেবারে সেইরকম। শুধু তাই নয়, নিরেট মূর্খও বটে। জীবনে কোনওদিন ক্লোইস্টারহ্যামের বাইরে পা দেননি, আর ইংল্যান্ডের বাইরের জগত সম্পর্কে এঁর ধারণা এতই ‘উচ্চমানের’ যে আমার ঘোর সন্দেহ হল এঁর সঙ্গে ‘দি স্যাটারডে রিভিউ’ কাগজটার কোনও সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। এঁর বদ্ধমূল ধারণা যে নেভিল ল্যান্ডলেসই ড্রুডকে খুন করে লাশ নদীর জলে ভাসিয়ে দিয়েছে। আর তাঁর এরকম ধারণার মূল কারণ নেভিলের গায়ের রঙ।
“ও ব্যাটাই করেছে, বুঝলেন মিঃ হোমস,” বললেন তিনি, “ইংরেজ নয় তো। আর আমি ওদের মুখ দেখলেই সব বুঝতে পারি।”
“বটেই তো।” বলল হোমস, “বডি পাওয়ার জন্য যা যা করার, সবই করা হয়েছে তো?”
“স-অ-ব স-অ-ব, মিঃ হোমস। আমার জ্ঞানবুদ্ধিতে, মানে এর বাইরে আর কিছু করার নেই। মিঃ জেসপারও অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, কোনও ত্রুটিই রাখছেন না।”
“বিলক্ষণ। ভাইপো নিখোঁজ হওয়ার দুঃখেই উনি এত করছেন। খুবই স্বাভাবিক।”
“ঠিক তাই।”
“শুনলাম ল্যান্ডলেস নাকি লন্ডনে আছে?”
“আমি তো তাই জানি, স্যার। কিন্তু মিঃ ক্রিসপার্কল, যিনি ওর শিক্ষক ছিলেন, তিনি তো আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আশ্বাস দিচ্ছেন, যেকোনও মুহূর্তেই ওকে পাওয়া যাবে। ওঁকে এখন স্টেপল সরাইখানায় মিঃ গ্রিউজিয়াসের কাছে পাওয়া যাবে। মিঃ গ্রিউজিয়াস হলেন এডউইন ড্রুডের বাগদত্তার অভিভাবক।”
হোমস জামার হাতায় মিঃ গ্রিউজিয়াসের নামঠিকানা লিখে নিল। তারপর আমরা উঠলাম।
“মনে হচ্ছে,” বললেন মেয়র, “আপনি লন্ডনেই এই বিদেশি ছোকরার সঙ্গে দেখা করার কথা ভাবছেন। আমি স্যার নিশ্চিত যে আপনি ওখানেই রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবেন।”
“ঠিকই বলেছেন। আমি সম্ভবত আজ বিকেলেই লন্ডন ফিরে যাব।” বলল হোমস, “তার আগে আমি আর ডাক্তার ওয়াটসন ক্লোইস্টারহ্যামে হাঁটাহাঁটি করব ভাবছি। আপনাদের এই গারগোয়েলগুলো আমি একটু পরীক্ষা করতে চাই।”
বাইরে বেরিয়েই হোমস মন্তব্য করল, “মিঃ জন জেসপারের সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার।”
মিঃ জেসপারের ঘরটা সিংদরজার পাশেই। রাস্তায় একটা রামবিচ্ছু ছেলে লোকজনের গায়ে ঢিল ছুড়ছিল, সে-ই দেখিয়ে দিল ঘরটা।
“বাহ্! এই নে, এটা তোর।” হোমস ছোকরার হাতে একটা সিক্স পেন্স গুঁজে দিল। তারপর ছোকরার পিঠে একটা দারুণ জোরে চাপড় মেরে বলল, “আর তার সঙ্গে এটাও তোর দরকার।”
জানা গেল মিঃ জেসপার ঘরেই আছেন, তিনি আমাদের সাথে করবেন। তবে বাড়িওয়ালি এটাও জানাল যে ভদ্রলোকের কিন্তু শরীর ভালো নেই।
“তাই নাকি?” বলল হোমস, “কী হয়েছে?”
“তিনি একটা ঘোরের মধ্যে আছেন, স্যার।”
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। এই ভদ্রলোক হলেন ডাক্তার। তিনি কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারবেন।”
আমরা মিঃ জেসপারের ঘরে গেলাম। তিনি বোধহয় একটু চাঙ্গা হয়েছিলেন, কারণ দরজার বাইরে থেকেই আমরা শুনতে পেলাম তিনি গুনগুন করে গান গাইছেন। হোমস গানবাজনার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। সে বাইরে দাঁড়িয়ে গেল। ঘরের ভেতর থেকে তখন ভেসে আসছিল গানের আওয়াজ, কখনও নিচু স্বরে, কখনও উঁচু—সঙ্গে পিয়ানোর সঙ্গত। শেষ অবধি আমরা দরজায় টোকা মেরে অনুমতি পেয়ে ভেতরে ঢুকলাম।
মিঃ জেসপারের ঘরটা খুবই সাদামাটা, বিষাদময়। কালো গোঁফ আছে ভদ্রলোকের। তাঁকে দেখেও মনে হয় খুবই বিষাদগ্রস্ত আর আত্মকেন্দ্রিক। হোমস আমাদের দু’জনেরই পরিচয় দিয়ে জানাল যে আমরা মেয়রের অনুরোধেই এখানে এসেছি এডউইন ড্রুডের অন্তর্ধানের ব্যাপারে তদন্ত করতে।
“মানে তার খুনের ব্যাপারে?” জিজ্ঞেস করলেন মিঃ জেসপার।
“আমি কিন্তু খুন বলিনি,” বলল হোমস, “অন্তর্ধান বলেছি।”
“আমি কিন্তু খুনই বলছি।” বললেন ভদ্রলোক, “এ প্রসঙ্গ এখন থাক। যতক্ষণ না খুনি শাস্তি পায়, ততক্ষণ আমি এ ব্যাপারে কারোর সঙ্গেই কথা বলব না ঠিক করেছি।”
“আমার মনে হয়,” বলল হোমস, “খুন যদি হয়েই থাকে, তাহলে আমি তাকে…”
“দেখা যাক। আপনারা তাহলে এখন…” মিঃ জেসপার আমাদের দরজা দেখিয়ে দিলেন, যেন আমরা বিদেয় হই।
হোমস বড়দিনের আগের সন্ধ্যার ডিনারের ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিল। কিন্তু ভদ্রলোক বললেন, এ ব্যাপারে মেয়রকে তিনি যা বলার বলেছেন, নতুন করে আর বলার কিছু নেই।
“সে তো বটেই।” বলল হোমস, “আচ্ছা মিঃ জেসপার, আপনাকে কি আমি আগে দেখেছি?”
“আমাকে? কই, আমার তো মনে পড়ছে না।” বললেন মিঃ জেসপার।
“উঁহু, আমার যেন মনে হচ্ছে… মনে হচ্ছে কেন, আমি প্রায় নিশ্চিতই যে আমি আপনাকে লন্ডনেই দেখেছি। লন্ডনে মাঝেমধ্যে যাওয়া হয় নিশ্চয়ই?”
যাওয়া হয় কখনও-সখনও ঠিকই, তবে মিঃ হোমসের সঙ্গে আলাপ করার সৌভাগ্য তাঁর ঘটেনি। তিনি নিশ্চিত। একদম।
আমরা বেরিয়ে পড়লাম সেখান থেকে। বড়ো রাস্তায় উঠে হোমস বলল, সেদিন রাত্তিরটা ক্লোইস্টারহ্যামে থাকতে আমার আপত্তি আছে কি না।
“কাল সকালেই দেখা করে নেব।” বলল হোমস।
“কিন্তু তুমি যাচ্ছ কোথায়?”
“লন্ডন। মিঃ সাপসির পরামর্শটা মানতে হবে না?” হোমসের ঠোঁটে মুচকি হাসি দেখা গেল।
“কিন্ত আমি ভেবেছিলাম তুমি গারগোয়েলগুলো দেখতে যাবে।” আমি বললাম।
“দেখা হয়ে গেছে এবং তোমায় জানিয়ে রাখি, এগুলোর মধ্যে আমি একটা অন্যতম আশ্চর্য জিনিস দেখেছি।”
হোমসের কথার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে না বুঝতেই দেখলাম সে হাত নাড়তে নাড়তে স্টেশনের দিকে যাওয়া একটা ওমনিবাসে উঠে পড়ল। আমি আর কী করব, গেলাম হোটেল ক্রোজিয়ার-এ, সেখানে রাতের জন্য একটা ঘর নেওয়া ছিল।
সিংদরজা পেরোনোর সময় খেয়াল করলাম, একটা লোক টুপি হাতে অদ্ভুতভাবে মিঃ জেসপারের জানালার দিকে তাকাচ্ছে। দেখলাম, লোকটার মাথার সাদা চুল হাওয়ায় উড়ছে। সন্ধ্যার পর ক্যাথিড্রালে গিয়েও সেই লোকটাকেই আবার দেখলাম। দেখলাম, সে খুব মন দিয়ে কয়ার-মাস্টার মিঃ জেসপারকে দেখছে। আমার কেমন অস্বস্তি হল। কী করে বুঝব, ভাইপোর ক্ষেত্রে যা হয়েছে, সেরকম কিছু কাকার ক্ষেত্রেও হবে না? ডিনারের পর ক্রোজিয়ারের বারে গিয়েও দেখি সেই লোকটা সেখানে এসে জুটেছে। নিজেই এসে যেচে আলাপ করল আমার সঙ্গে। নাম বলল মিঃ ড্যাচেরি এবং তার মতে সে নাকি ‘একটা অপদার্থ লোক, নিজের মনেই ঘোরাঘুরি করে’। লোকটার দেখলাম এই ড্রুড কেসটাতেই খুব আগ্রহ, আর এই নিয়েই শুধু কথা বলতে চায়। তার থেকে যতটা সম্ভব জেনে নিয়ে আমি ঘরে চলে গেলাম। ভাবতে লাগলাম ব্যাপারটা নিয়ে।
লোকটা যে ছদ্মবেশে আছে, সেটা নিশ্চিত। চুল দেখেই মনে হচ্ছে পরচুলা। কিন্তু লোকটা কে? এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা যুক্ত থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে, তাদের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল মিস হেলেনা ল্যান্ডলেসের কথা। আর তখনই মনে হল এটা আসলে সেই মহিলা। কিন্তু এ যে অসম্ভব! আমি চমকিত হলাম। কেন নয়? একজন সিংহলি মহিলার পক্ষে বুড়ো ইংরেজ সেজে বারে বসে বয়স্ক ইংরেজের মতো পান করা অসম্ভব কি! আর কে না জানে অসম্ভবের মধ্যেই সম্ভব লুকিয়ে থাকে। তারপর আমার মনে পড়ল আমি শুনেছিলাম, শিশুকালে মিস ল্যান্ডলেস ছেলেদের মতো পোশাক পরে থাকত। ব্যস, তবে তো মিলেই যাচ্ছে পুরো ব্যাপারটা।
পরদিন ফিরল হোমস সঙ্গে দু’জন লোক নিয়ে। একজনের নাম মিঃ টার্টার, আরেক জন হলেন মিঃ নেভিল ল্যান্ডলেস। আমি তাকালাম দ্বিতীয় ব্যক্তিটির দিকে, তারপর কথা বলতে চাইলাম হোমসের সঙ্গে। কিন্তু সে আমায় থামিয়ে দিল।
“এই দুই ভদ্রলোক,” সে বলল, “এক্ষুনি মিঃ ক্রিসপার্কলের কাছে যাবেন এবং রাত্তির অবধি থাকবেন। আমার ওঁদের দরকার হতে পারে। আমি আর তুমি হোটেলে ফিরব।”
যাওয়ার পথে আমি তাকে মিঃ ড্যাচেরির ব্যাপারে বললাম এবং তার সম্বন্ধে কী ভেবেছি তাও বললাম। সে আগ্রহ নিয়েই শুনল, বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সঙ্গে কথা বলবে। যখন আমি বললাম যে আমার বিশ্বাস ল্যান্ডলেসের বোনই ড্যাচেরি সেজে রয়েছে, হোমস আমার পিঠ চাপড়ে হর্ষধ্বনি করে উঠল।
“অসাধারণ ওয়াটসন, অসাধারণ! তুমি ভেবেছ বটে!”
শুনে বুক দশ হাত ফুলে উঠল আমার। আমাকে হোটেলে রেখে হোমস ড্যাচেরির খোঁজে বেরোল এবং এও বলল যে তার নাকি মিঃ জেসপারের সঙ্গে কী দরকার আছে। আমার মনে হল সে বোধহয় মিঃ জেসপারের ওপর যে নজর রাখা হচ্ছে, সেই ব্যাপারে সাবধান করতে গেল।
যখন ফিরল সে, দেখলাম মেজাজ গম্ভীর।
“আজ রাতে কাজ আছে, ওয়াটসন।” বলল হোমস, “বোধহয় গারগয়েলগুলোতে আরেকবার নজর করতে হবে।”
ডিনারের সময় সে খালি মৌমাছি চাষের ব্যাপারেই কথা বলতে লাগল এবং আমরা যখন ধূমপান করার জন্য বারে গিয়ে বসেছি, তখনও সে সেই কথাই চালিয়ে গেল। রাত এগারোটা নাগাদ এক বুড়ো, নাম ডারডল্স, ঘরে ঢুকে হোমসের কাছে এল।
“মিঃ জেসপার সিঁড়ি দিয়ে নামছেন, স্যার।” বলল সেই লোকটা।
“চমৎকার!” বলে উঠল হোমস, “চটপট, ওয়াটসন। ব্যাপার গুরুতর মনে হচ্ছে, ডারডল্স!”
ডারডল্স নামের লোকটা আমাদের পেছন দিয়ে নিয়ে গেল গির্জার লাগোয়া গোরস্থানে, দেখিয়ে দিল কোথায় আমাদের দাঁড়াতে হবে। একটা দেয়ালের পেছনে আর কবরগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে। এত রাত্তিরে গোরস্থানে এসে যে কী হবে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। হোমস লোকটার হাতে কিছু পয়সা গুঁজে দিতে সে বিদায় নিল। যখন সেখানে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে চারদিক দেখছি, মনে হল যেন একটু দূরেই একটা ফলকের পেছনে দুটো মূর্তি নড়াচড়া করছে। ফিসফিস করে হোমসকে সেটা বলতে যেতেই সে আমাকে ইশারা করল চুপ করার।
“শ-শ-শ!” ফিসফিস করে বলল সে, “ওদিকে দেখো।”
যেদিকে বলল, সেদিকে তাকিয়ে দেখি আরেকটা মূর্তি ঢুকছে গোরস্থানে। তার হাতে কিছু একটা রয়েছে। দেখে মনে হল এটা একটা লন্ঠন, কালো ঢাকনা পরানো। ঢাকনার একদিকটা খুলতেই চিনতে পারলাম মূর্তিটাকে। মিঃ জেসপার। এত রাতে এখানে কী করছেন উনি? দেখলাম, পকেট হাতড়ে একটা চাবি বার করে তিনি একটা কবরের ঢাকনা খোলার চেষ্টা করছেন। ঢাকনা খুলতেই তিনি ভেতরে ঢোকার জন্য পা বাড়ালেন। কয়েক মুহূর্তের জন্যই অবশ্য, তারপর পিছিয়ে এলেন একটা গলা ফাটানো আর্তনাদ করে। গোরস্থানের নৈঃশব্দ্য ভেঙে গেল একবার, দু’বার সেই ভয়াবহ চিৎকারে। দ্বিতীয়বার চিৎকারের সময় কবরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল একটা লোক। জেসপার ঘুরে পাগলের মতো ছুট লাগাল গির্জার দিকে।
যে দুটো মূর্তিকে আমি আগে দেখেছিলাম, এবার দেখলাম তারা একটা ফলকের পেছন থেকে বেরিয়ে এসেই জেসপারের পেছনে ছুটল।
“তাড়াতাড়ি!” বলল হোমস, “ধরতে হবে!”
আমরাও একই দিকে দৌড়োচ্ছিলাম। কিন্তু একে তো রাতের অন্ধকার, তার ওপর অপরিচিত জায়গা, কাজেই আমরা কিছুই সুবিধে করতে পারলাম না। ততক্ষণে কয়ার-মাস্টার আর তাঁর পিছু নেওয়া দু’জন কোথায় হারিয়ে গেছে। শেষ অবধি আমরা যখন গির্জার চৌহদ্দিতে ঢুকলাম, একমাত্র তখনই শুনলাম অনেকটা দূরে আর উঁচুতে দ্রুত ধাবমান পায়ের শব্দ। আমরা যখন একটুক্ষণের জন্য দাঁড়িয়েছি কী করব ভেবে না পেয়ে, তখন আরেকটা ভয়াবহ আর্তনাদ শুনলাম। তারপর সব চুপচাপ।
ততক্ষণে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে আলো নিয়ে গির্জার মধ্যে অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারাই আমাদের সিঁড়ি দিয়ে গির্জার মিনারে নিয়ে গেল। ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠা, সেও এক কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আর হোমসের মুখ দেখেই বুঝতে পারছিলাম, সে ওপরে কী পাওয়ার আশঙ্কা করছে। উঠে দেখি কয়ার-মাস্টার মেঝেতে পড়ে, আর তাঁকে চেপে ধরে রয়েছেন মিঃ টার্টার। এই লোকটাকেই আমি গোরস্থানের ফলকের পেছনে দেখেছিলাম।
“নেভিল কোথায়?” তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করল হোমস।
টার্টার মাথা নেড়ে নিচের দিকে দেখালেন।
“এই লোকটা,” জেসপারকে দেখিয়ে বলল সে, “নেভিলের সঙ্গে মারামারি করছিল। আমার ভয় হচ্ছে, এ ব্যাটা এবার সত্যি-সত্যিই খুনের দায়ে পড়বে।”
যারা আমাদের ওপরে নিয়ে এসেছিল, তাদের মধ্যে থেকে একটা লোক সামনে এগিয়ে এসে সোজা তাকাল জেসপারের দিকে। এই লোকটাকেই আমি কবরের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিলাম। লোকটাকে দেখে আমি চমকে উঠলাম। এই তো সেই লোকটা, যে নিজেকে ‘ড্যাচেরি’ বলছিল। শুধু মাথার পরচুলাটা নেই, আর মুখটা সামান্য পালটেছে।
জেসপার তার দিকে তাকিয়েই ভয়ে কেঁপে উঠলেন। চিৎকার করে উঠলেন ‘নেড, নেড’ বলে, তারপর মেঝেতে মুখ গুঁজে ফেললেন।
“হ্যাঁ হ্যাঁ, মুখ লুকোও।” বলে উঠল ডারডল্স বুড়ো। রাগে কাঁপছিল সে। “তুমি ভেবেছ, তুমি ওকে খুন করেছ, ওকে, মিঃ এডউইন ড্রুডকে, তোমার নিজের ভাইপো। তুমি সেদিন পানীয়র সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলে, আমাকেও ধোঁকা দিতে চেয়েছিলে। ভেবেছিলে ওকে কবরের ভেতরের কলিচুনের ভাটিতে ফেলে পুড়িয়ে শেষ করে দেবে। কিন্তু আমি থাকতে তা সম্ভব নয়। আমার নাম ডারডল্স।”
সে এগিয়ে গিয়ে পা তুলে জেসপারের মুখে লাথি মারতে যাচ্ছিল। কয়েকজন এগিয়ে গিয়ে তাকে টেনে নিয়ে আসে।
“ব্যাপারটা কী জানো?” পরদিন সকালে ট্রেনে লন্ডন ফেরার সময় বলল হোমস, “ক্লোইস্টারহ্যামে কেউই সন্দেহ করেনি যে মিঃ জেসপারের মতো একজন সম্মানীয় ব্যক্তি এই কাজ করতে পারেন। কাজেই ওরা তাঁকে হিসেবের বাইরে রেখেছিল। আমার কিন্তু প্রথম থেকেই ওঁকে সন্দেহ হয়, কারণ যে দু’জন শেষ এডউইন ড্রুডকে দেখেছে, ইনি তাদের মধ্যে একজন। আমি যখন ওঁর সঙ্গে, মানে জেসপারের সঙ্গে, বুঝতেই পারছ, দেখা করি, আমি এক নজরেই ওঁকে চিনতে পেরেছিলাম। বন্দরের আফিমখানাগুলোর নিয়মিত খদ্দের। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে, আমাকে বিভিন্ন কেসের ব্যাপারে এসব জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হয়। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে ইনি দু’রকম জীবনযাপন করেন। কিন্তু আমি সেদিন রাতে লন্ডনে ফিরে যখন মিঃ গ্রিউজিয়াস, মিঃ ল্যান্ডলেস আর তার বোনের সঙ্গে দেখা করি, তখন যা জানতে পারি, সে তো সাংঘাতিক! জেসপার তাঁর আপন ভাইপোর বাগদত্তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন এবং ড্রুডের উধাও হওয়ার পরে এবং আগেও তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করেছেন। মিঃ গ্রিউজিয়াসের কথাবার্তা শুনে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে তিনি ওঁকে সন্দেহ করছেন। কিন্তু তিনি উকিল মানুষ এবং খুব সাবধানী, প্রমাণ ছাড়া কোনও কথা বলবেন না। আর তাঁর কাছে কোনও প্রমাণ নেই। আরেকটা ব্যাপার, ড্রুড যে মারা গেছে, এ ব্যাপারে তাঁর মধ্যে কোনও শোকের চিহ্নমাত্রও দেখলাম না।
“এ তো বড়ো অদ্ভুত ব্যাপার! পুরো রহস্যটা তাহলে তো এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে। সেই রাতটা জেগেই কাটিয়েছি ওয়াটসন, আউন্স চারেক তামাকের ধোঁয়া গেছে ভেতরে। ভাবছিলাম, জেসপারই যদি খুন করার মতলব ভেঁজে থাকেন, তাহলে সে কাজটা করতে পেরেছেন তো? আফিম, ওয়াটসন, তুমি তো জানো আফিমখোরেরা কোনও কাজ ঠিকঠাক করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়। তিনি চেষ্টা করেছিলেন নার্ভ ঠিক রেখে কাজটা করার, কিন্তু দশ ভাগে এক ভাগ সম্ভাবনা সে কাজটা সফলভাবে করতে পেরেছিলেন বলে। তিনি যে নিজেই বোকা বনে গেছেন, বুঝতেই পারেননি। পরদিন সকালে আমি মিঃ গ্রিউজিয়াসকে আবার ধরি, সরাসরি বলি ড্রুড যে বেঁচে আছে, আর সেটা যে তিনি গোপন করছেন, সেটা আমি ধরে ফেলেছি। তখন তিনি স্বীকার করেন ব্যাপারটা, আর বলেন ড্রুড এখন ড্যাচেরির ছদ্মবেশে ক্লোইস্টারহ্যামে আছে।”
“কিন্তু এর মানে কী?” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আর তিনি যে নেভিলের দিকে খুন করার সন্দেহটা ঝুলিয়ে দিলেন, তার মানেই বা কী?”
“কারণটা হল জেসপারের অপরাধের নির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ তিনি পাননি।” বলল হোমস, “আর তার জন্যই তিনি চেষ্টা করছিলেন প্রমাণ সংগ্রহ করার। উকিলবাবুটি আমাকে আরও বলেছিলেন সেই আংটিটার কথা, যেটা এডউইন ড্রুড সবসময় পরে থাকত, আর যেটা ঘড়ি আর পিন খুলে নেওয়ার সময় জেসপারের নজর এড়িয়ে যায়। কাজেই আংটিটার কথা জেসপারের কাছে তোলার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কাজ হয়েছিল এটাতেই। জেসপার ভেবেছিলেন কবরের ভেতর যেখানে কলিচুনের মধ্যে ড্রুডকে ফেলে দিয়েছেন, সেখানে গিয়ে আংটিটা খুলে নেবেন। আর সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন এডউইন ড্রুডের মড়া তো নেইই, বরং তার বদলে জীবন্ত কিছু রয়েছে। কিন্তু আমি বলব, ওঁর আফিমের নেশাটাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। উনি যেখানে নিয়মিত যেতেন, তার মালকিনের সঙ্গে আমি দেখা করেছিলাম আর সেখানেই শুনি তিনি নাকি নেশার ঘোরে সমানে খুনের কথা বলতেন। আর এই করতে করতে তিনি এমন একটা জায়গায় চলে এসেছিলেন যে বাস্তব আর নেশার ঘোরের মধ্যে তফাত করতে পারতেন না। ও কাজটাও করতে গেছিলেন সেই ঘোরের মধ্যেই, কাজেই ব্যর্থ হন।
“আর ড্যাচেরিকে মিস ল্যান্ডলেস হিসেবে তোমার সন্দেহের ব্যাপারে বলি, মিস ল্যান্ডলেস, মিঃ ক্রিসপার্কলের স্ত্রী, কখনওই ট্রাউজার পরে ক্লোইস্টারহ্যামের সরাইখানায় ঘোরাঘুরি করেননি। বেচারা ল্যান্ডলেস! ওর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি কোনওদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। উচিত শাস্তিই পাবে ওর খুনি, এতে কোনও সন্দেহই নেই।
“এখন এসো ওয়াটসন, মৌমাছিদের নিয়ে আলোচনা করা যাক। বাজরা ক্ষেতের পাশে মৌমাছিদের চাক হয়েছে, শুনেছ কখনও? আমি শুনলাম, ওরা নাকি বাজরা খুব পছন্দ করে।”
_____
গারগোয়েল (Gargoyle) বিভিন্ন বাড়ির ছাদ-সংলগ্ন জল পড়ার নালা, যেখান থেকে নর্দমার জল বাইরে পড়ে। এগুলো মানুষ বা বিভিন্ন জীবজন্তুর মুখ বা দেহের মতো আকৃতির হয়।