আরো নদীর গল্প- ———————————————————-
পাহাড়ের কান্না-মেঘনা নদী ,পদ্মানদীর গল্প , দুরন্ত মেয়ে সুরমা , নদীর গল্প-ব্রহ্মপুত্রের পৃথিবী ভ্রমণ , কর্ণফুলির দিনরাত্রি, ধলেশ্বরীর দিনরাত্রি
বুড়িগঙ্গা
মীম নোশিন নাওয়াল খান
গঙ্গা নদীর সঙ্গে নিশ্চয়ই সবার পরিচয় আছে। অনেক অনেকদিন আগের কথা। গঙ্গা ছিল খুব চঞ্চল কিশোরী নদী। সে সারাক্ষণ ছুটোছুটি করে বেড়াত। এক মুহূর্তের জন্য স্থির থাকত না। নানা দিকে নানা গতিপথে চলত সে।
গঙ্গার অনেক বন্ধু ছিল। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ধলেশ্বরী নদী। ধলেশ্বরী আর গঙ্গা মিলে একসঙ্গে চলতে চলতে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়েছিল।
ধলেশ্বরীর সঙ্গে গঙ্গা নদীর এই প্রবাহটার সাথে মূল গঙ্গার একবার তুমুল ঝগড়া হল। তখন এই প্রবাহটা রাগ করে ধীরে ধীরে তার গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলল। ফলে মূল গঙ্গা থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এই বিচ্ছিন্ন প্রবাহটা মন খারাপ করে একা একা জীবনযাপন করতে শুরু করল। তার মেজাজ হয়ে উঠল খিটমিটে। কারো সঙ্গে সে ঠিক করে কথা বলত না।
এই খিটমিটে মেজাজের নদীপ্রবাহটাকেই মানুষ নাম দিল বুড়িগঙ্গা।
মানুষ যদিও গঙ্গার সাথে মিলিয়ে নদীটার নাম রেখেছিল, মূলত বুড়িগঙ্গার জন্ম হয়েছিল ধলেশ্বরী নদী থেকে। সাভারের দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী থেকে বুড়িগঙ্গার উৎপত্তি।
ঢাকার কামরাঙ্গীচরের কাছে এসে বুড়িগঙ্গার সাথে দেখা হয় তুরাগ নদের। একাকী বুড়িগঙ্গার মনের দুঃখ বুঝতে পারে তুরাগ নদ। সে বলে, বুড়িমা, তুমি কেন এমন একা একা থাকো বলো তো? এবার থেকে তুমি আর একা থাকবে না। আমি তোমার সঙ্গে যাব।
বুড়িগঙ্গার সবার উপর অভিমান ছিল। তাই সে প্রথমে না করল। কিন্তু তুরাগের চাপাচাপিতে পরে তাকে সঙ্গে নিতে বাধ্য হল।
মুন্সিগঞ্জে বুড়িগঙ্গার সঙ্গে ধলেশ্বরীর দেখা হয়। বুড়িগঙ্গার ভাটি অঞ্চল সারা বছরই নাব্য থাকে। ভাটি অঞ্চলে বুড়িগঙ্গা আর ধলেশ্বরীর কোথায় দেখা হবে সেটা নির্ভর করে ধলেশ্বরী নদীর গতিপথের উপর। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরীর মিলন্সথল ফতুল্লা থেকে ৩.২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে।
বুড়িগঙ্গার দৈরজ্ঞহ্য ২৯ কিলোমিটার। গড় প্রস্থ ৩০২ মিটার।
বুড়িগঙ্গা নদী কিন্তু বাংলাদেশের প্রাণ। এই বুড়িগঙ্গার তীরেই গড়ে উঠেছে ঢাকা শহর। বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত দেশের নৌযোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। এখান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন রুটে অনেক লঞ্চ ছেড়ে যায়।
বুড়িগঙ্গা ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সে তার জৌলুস আর ঐতিহ্য হারিয়েছে। পানিদূষণের নির্মম শিকার হয়ে বুড়িগঙ্গার টলটলে জল কুচকুচে কালো রঙ ধারণ করেছে।
মানুষের এত অত্যাচারের পরেও কিন্তু বুড়িগঙ্গা মানুষকে ভালোবাসে। তাই সে তার বুকে বয়ে বেড়ায় অসংখ্য নৌকা আর লঞ্চ। আজও সে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত। বুড়িগঙ্গা কখনোই বাংলার মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তাই আমাদেরও উচিত বুড়িগঙ্গাকে ভালোবাসা এবং পানিদূষণ রোধ করে নদীটাকে তার হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে দেয়া।
সুন্দর
LikeLike