পর্ব ৩
ফেরার পথে ভোরকে বললাম, সব দেবস্থানের মাহাত্ম্যের ভিত্তি তৈরি হয় সেই অঞ্চলের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি, ভূগোল, খাদ্যাভ্যাস, এবং প্রকৃতির উপর। এখানে সমুদ্রের জল নোনতা, খাবার জল বাইরে থেকে আনতে হয়। তীর্থযাত্রীদের থেকে জলের জন্য দান নিয়ে যদি কিছুজনের জলের সংস্থান করা যায়,তবে কিছু মানুষ পরিশোধিত জল পেতে পারেন। এমনি এমনি টাকা চাইলে কেউ কী দেবে! সেইজন্য পুরাণ মহাভারত সব জুড়ে গল্প তৈরি করে পূণ্য সঞ্চয়ের কথা বলা হয়।
“ওঃ,” বলে ভোর চুপ করে কানে হেডফোন দিয়ে গান শোনায় মগ্ন হয়ে গেল।
আমি নিজের মনে সমুদ্রর নোনতা জলের কারণ ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল, ফ্রেদারিক গার্সিয়া লোরকার একটা কবিতার লাইন-
সমুদ্র
দূরে হাসছে
তার সাদা দাঁত ফেনার
ঠোঁট আকাশের
—-
আমি বেচি সাগরের জল
—-
এই লবণাক্ত অশ্রু ! মাগো কোথা থেকে আসছে?
আমার চোখ বেয়ে আসে সাগরের জল
……
সমুদ্র দূরে হাসছে
তার সাদা দাঁত ফেনার
ঠোঁট আকাশের।
***
সকালে যথারীতি ঘুম ভাঙল গায়ত্রী মন্ত্র শুনেই। টোরন ট্যুরিস্ট হাউজের রিসেপশনিস্ট ছেলেটি ভাঙা হিন্দি আর বোধগম্য গুজরাতিতে বলল, পাশেই গীতা টেম্পলে নামগান চলছে। আরও দুদিন চলবে। বুঝলাম, সেই জন্যই ভোর থেকে মন্ত্র ও স্তব গান চলছে।
ছেলেটি বলল, “ম্যাডাম আপনি রিসার্চ করছেন?”
আমি ঘাবড়ে গেলাম। আমি আবার কবে রিসার্চার হলাম! মুখ গম্ভীর করে জানতে চাইলাম, কে বলল! মনে মনে ভাবলাম, নির্ঘাত তনয়। সে সব জায়গায় আমাকে নয় রাইটার, জার্নালিস্ট কিংবা রিসার্চার বলে পরিচয় দেয়। বললে বলে, যেখানেই যাও ইতিহাস, ভূগোল, কালচার, অলি গলি সব নিয়ে লিখতে বসে যাও। তাই তোমার সুবিধার জন্যই বলি।
জানতে চাই, আমার কিসের সুবিধা এতে?
বলে, “বা: রে ! গবেষক বললে, কত তথ্য পেয়ে যাবে হোটেলে বসেই। বাঙালি সাংবাদিক বা সম্পাদক বললে তত পাবে না বুঝলে!”
আমার আর বুঝে কাজ নেই বলে আমি চুপ করে যাই।
কিন্তু এদের কখন বলল! ভাবতে ভাবতেই ছেলেটি জানাল, “আপনার ড্রাইভার বলছিল, আপনি সারা গাড়ি খালি নোট করছেন। ”
“ও:!” বলে কিছু মামুলি কথা বলে চলে এলাম রুমে। স্নান সেরে রেডি হয়ে গুজরাতি পোহা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এবার আমাদের গন্তব্য পোরবন্দর। কিছুক্ষণ আগে রিসেপশনের ছেলেটি বলেছিল, পোরবন্দরে দেখার কিছু নেই। খালি গান্ধীজির আর সুদামার বাড়ি। এছাড়া দু-একটা মামুলি মন্দির। বেরবার মুখে সেই বলল, অনেক কিছু আছে দেখার। আমি হাসলাম।
গাড়ি লোকালয় ছেড়ে হাইরোডে। এখন সময় সাড়ে এগারোটা। দুপাশে রূক্ষ শুষ্ক জমি পরে অনাদরে। মাঝে মাঝে দে়খতে পাচ্ছি সনাতনী গুজরাতি পোশাকে মেয়েরা কাঁখে স্টিলের কলসি নিয়ে জল আনতে যাচ্ছে। খুব কষ্ট লাগছিল তাদের দেখে। ভাবছিলাম, আমাদের কলকাতার কত রাস্তায় কল খোলা থাকে। জল ক্রমাগত পড়ে যায়। কত জল নষ্ট হয় সারাদিনে। তার কিছুটা জলও যদি এরা পেত কত উপকৃত হত। আজই সকালে শুনছিলাম, গরমে নদী নালা শুকিয়ে গেছে। গুজরাত সরকার বৃষ্টি হবার জন্য বরুণদেব আর ইন্দ্র দেবতার পুজো করবে বলে ঘোষণা করেছে। মেয়েগুলোর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে এসবই ভাবছিলাম।
রাস্তা এদিকে চওড়া হচ্ছে বলে প্রচুর ধুলো উড়ছে। তারমধ্যেই এই তীব্র রোদে হলুদ টুপি পরে ছেলেমেয়ে কাজ করছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা ‘ওরা কাজ করে’ কবিতাটা মনে এল। রাস্তার দুপাশ রঙ বদলে ফেলেছে। এতক্ষণের শুষ্ক গেরুয়া চৌচির মাটির বদলে এখন লাল মাটি। রাঢ় অঞ্চলের মত লাগছে। মাঝে মাঝে সবুজের ছোঁয়া। মনটা প্রশান্ত হয়ে আসছে। এতক্ষণের বিষাদ দূর হয়ে যাচ্ছে দু’ধারের কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে।
একবারও না দাঁড়িয়ে ৮০-৯০ স্পিডে গাড়ি চালিয়ে ১০০ কিমি দূরে পোর বন্দরে পৌঁছলাম দুপুর তখন ১টা। এখানেও গুজরাত ট্যুরিজমের হোটেল টোরেন। একবারে সমুদ্রের গায়ে। দুপুরে ভাত, অরহর ডাল আর আলু বেগুন ভুজ্জি দিয়ে লাঞ্চ সেরে শুতে না শুতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।
হঠাৎ মনে হল, কেউ যেন বলছে, “পোরবন্দর শুধু গান্ধীজির জন্মস্থান ভাবলে ভুল ভাবছিস। হরপ্পা সভ্যতায় পোরবন্দরের অস্তিত্ব প্রমাণিত। এখান দিয়েই তখন প্রাচ্যের অন্য শহর ও মধ্য পূর্বর দেশগুলোর ব্যাবসা চলত। প্রাচীন বন্দর আবিষ্কার হয়েছে এখানে, যার থেকে বোঝা যাচ্ছে যে একসময় এখানে উন্নতমানের নৌ-বাণিজ্য চলত। সময়টা আনুমানিক ধরতে পারিস, ১৬০০-১৪০০ বি. সি। অর্থাৎ যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও আগে এই পোরবন্দর ছিল। তখন অবশ্য এর নাম পোরবন্দর ছিল না। এটা তখন সুদামাপুরী নামেই প্রসিদ্ধ ছিল। অবশ্য এখানে আরো অনেক মন্দির আছে। শ্রীনাথ, গোপীনাথ, কেদারনাথ,…। সমুদ্রে অশ্ববতী ঘাট আছে। জানিস স্বামী বিবেকানন্দ এখানেই ন’মাস থেকে বেদ অধ্যায়ন করেছিলেন।”
ঘুম ভেঙে গেল। কে আমাকে এত কথা বলে গেল বোঝার চেষ্টা করলাম। সামনে রাখা বাবার ছবির দিকে তাকালাম। মনে হল, বাবা হাসছে। আজকাল প্রায়ই এমন হয়, যে বিষয় জানি না, কোনোদিন শুনিনি, পড়িনি, সেগুলো হঠাৎ ঘুমের মধ্যে পরপর দেখতে পাই। মনে হয় আমার অবচেতন মনে কেউ একটার পর একটা দৃশ্য সাজিয়ে রেখেছে , আমি কেবল সেগুলো একসুতোয় বাঁধার চেষ্টা করি ঘুম থেকে উঠে।
সে যাই হোক, স্বামীজী কন্যাকুমারীতে বসে শিকাগো যাবার নির্দেশ পেয়েছিলেন। আর এখানে বেদ অধ্যায়ন! ভেবেই মন ভাল হয়ে গেল।
চা খেতে নিচে ড্রয়িং রুমে নামলাম। সামনেই আদিগন্ত সমুদ্র। চা নিয়ে চেয়ার টেনে সেখানেই বসলাম। টোরেন হোটেলের কুক ব্রেকফাস্ট কী খাব জেনে নিয়ে টুকিটাকি কথা বলার পর আমি জানতে চাইলাম এখানে দেখার কী আছে? গান্ধীর বাড়ি আর সুদামা মন্দির ছাড়া?
কানাইলাল নামের সেই কুক বললেন, “বিশেষ কিছু তো নেই। তবে রাজবাড়ি আছে। যদিও তা বন্ধ থাকে। আসলে দ্বারকা থেকে সোমনাথ যাবার পথে লোকে এখানে গান্ধির বাড়ি আর কীর্তি মন্দির দেখে নেয়। রাস্তাতেই পড়ে তো!”
“কীর্তি মন্দির?”
“হ্যাঁ। গান্ধীজির বাড়ির লাগোয়া মন্দির। নির্মাণ করে দিয়েছেন নানজি কালিদাস।”
খানিক বাদে উপরে উঠে এসে রেডি হয়ে ভোর, আর তনয়কে ডাকলাম। গান্ধীজি আর কৃষ্ণসখা সুদিমার বাড়ি দেখতে যাব। দুপুরে রিসেপশনের অল্পবয়সি ছেলেটি বলেছিল, ৬ টার মধ্যে সব বন্ধ হয়ে যায়। অতএব সাড়ে পাঁচটার মধ্যেই বেরিয়ে পরলাম।
আর পাঁচটা মাঝারি মাপের জেলা শহর বা বলা যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গের বড় মফঃস্বল শহরের মতই পোরবন্দর। লোকসংখ্যা খুব বেশি কিছু নয়। আরব সাগরের তীরে পুরো জেলাটাই। সমুদ্রের ধার বরাবর বাঁধানো। পুরী বা অন্য কোনো সমুদ্রে নেমে স্নান করার যে দৃশ্য আমরা দেখতে অভ্যস্ত, এখানে কোথাও তেমন দৃশ্য চোখে পড়ল না।
চৌপাট্টি মোড় পার করে গিয়ে পৌঁছলাম কীর্তি মন্দির। মহাত্মা গান্ধীর জন্মস্থান। এই তিনতলা বাড়িটার সামনেটা নতুন করে ১৯৫০-এ বানানো হয়েছে। পিছনের অংশে পুরোনো বাড়ি পুরোটাই আছে। ওপরের দিকে কিছু মেরামতি হয়েছে প্রয়োজন অনুযায়ী।
মূল বাড়ির প্রবেশের মুখেই বোর্ডে লেখা, এই বাড়িতেই জন্মেছিলেন মহাত্মা গান্ধী (মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী -১৮৬৯ সাল ২ অক্টোবর। )
গান্ধীর ঠাকুরদার পিতা হরিজীবনী রাহীদাসজি ১৭৭৭ সালে, স্থানীয় মহিলা মানবাই গান্ধীর থেকে এই বাড়ি কেনেন। তখন এটা একতলা ছিল। ঠাকুরদা উত্তমচাঁদ বাড়িটার সংস্করণ করে দোতলা করেন। বর্তমানে বাইশটা ঘর সমেত তিনতলা বাড়ি। একতলায় ঢুকেই যে ঘর তাতে দেওয়ালের গা ঘেঁষে খানিকটা অংশে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা। উপরে গান্ধীজির বিশাল ছবি। সেখানে লেখা ঠিক এই জায়গাতেই জন্মছিলেন মহাত্মাজী।
আমি মাটিতে বসে সেই জায়গাটা প্রণাম করতেই, তনয় মেয়েকে বলল, “তোমার মায়ের ভক্তি উথলে উঠছে। এই শরীর নিয়ে মাটিতে বসে পড়ল। এরপর টান ধরবে, তখন আরেক জ্বালা।”
আমি তখন অন্য কথা ভাবছিলাম। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হিন্দু মোধ পরিবারে বৈশ্য গোত্রে — যা ছিল ব্যবসায়ী গোত্র — জন্মগ্রহণ করেন। বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান। মা পুতলিবা করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। পুতলিবা প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন। করমচাঁদের প্রথম দুই স্ত্রীর প্রত্যেকেই একটি করে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। শোনা যায় যে সন্তান জন্ম দেবার সময়ে তাঁরা মারা যান। ধার্মিক মায়ের সঙ্গে এবং গুজরাটের জৈন প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন।
১৮৮৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র। হরিলাল গান্ধী, মনিলাল গান্ধী, রামদাস গান্ধী এবং দেবদাস গান্ধী। গান্ধীজি তাঁর ছোটবেলায় পোরবন্দর ও রাজকোটের ছাত্রজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। কোন রকমে গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান। রাজকীয় রাজধানী লন্ডনে তাঁর জীবনযাপন ছিল ভারতে থাকতে তাঁর মায়ের কাছে করা শপথ প্রভাবিত। জৈন সন্ন্যাসি বেচার্জীর সামনে তিনি তার মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন যে তিনি মাংস, মদ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ত্যাগ করার নৈতিক উপদেশ পালন করবেন। যদিও তিনি ইংরেজ আদবকায়দা পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন; যেমন নাচের শিক্ষা, কিন্তু তিনি তার বাড়িওয়ালীর দেওয়া ভেড়ার মাংস এবং বাঁধাকপি খেতেন না। তিনি লন্ডনের গুটিকয়েক নিরামিষভোজি খাবারের দোকানের একটিতে নিয়মিত যেতেন। শুধু মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষভোজী জীবন যাপন না করে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষভোজন গ্রহণ করেন। নিরামিষভোজী সংঘে যোগ দেন এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, এ সংস্থার একটি স্থানীয় শাখাও প্রচলন করেন।
তাঁর এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেকভাবে কাজে লাগে। নিরামিষভোজী অনেক সদস্যই আবার থিওসোফিক্যাল সোসাইটি (Theosophical Society)-এর সদস্য ছিলেন, যা সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল এবং এতে ধর্ম শিক্ষায় বৌদ্ধ এবং হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য পড়ানো হত। তারা গান্ধীকে ভগবত গীতা পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। আগে ধর্ম বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও, গান্ধী হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে এবং বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।
মহাত্মা গান্ধীর আমি যে বিশাল অনুগত একথা কখনো বলতে পারব না। বরং ইতিহাসের ছাত্রী হবার সৌজন্যে যখন স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পড়েছি, ততবার গান্ধীর উপর রাগ হয়েছে। অহিংসা আর সত্যর নাম করে উনি জনগণ যখন সম্পূর্ণভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তখন সেই আন্দোলন বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকেও নানা ভাবে হেনস্থা করেছেন। তবু উনি যে আদর্শ বা পন্থা নিয়েছিলেন সেটাকে ভুল বলতে পারি না। সেই সময় সবার প্রথম দরকার ছিল ভারতীয়দের সর্ব ধর্ম সর্ব দল নির্বিশেষে এক হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। অত্যাচারে মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া জাতির হাতে ছিল না আধুনিক অস্ত্র যা দিয়ে সে গোরাদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করতে পারে। সেদিক থেকে বিচার করলে তাঁর পথ হয়তো সঠিক ছিল।
এইসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল, আরে এভাবে দেখলে তাঁকে কৃষ্ণ বা রণছোড়জির মত ভাবা যেতে পারে। তখনি মনে হল, সারা বিশ্বের মানুষ যাঁকে এমন শ্রদ্ধা করে, তাঁর সামনে নতজানু হওয়ারও একটা সুখ আর ভারতীয় হিসেবে প্রচ্ছন্ন গর্ববোধ আছে।
কাঠের পাকানো ছোটো ছোটো পাদানির সিঁড়ি। সিঁড়ির শেষপ্রান্ত থেকে দড়ি ঝুলছে, যাতে ওঠানামার সময় ব্যালেন্স ঠিক থাকে পর্যটকদের। ছোটো ছোটো কাঠের জানলা, কড়িবর্গার তিনতলার কিছু ঘরের দেওয়ালে পেন্টিং করা। কয়েকটি দরজা নতুন করে বানানো। কয়েকটা ঘর তালা বন্ধ। ভিতরে কোনটা কার ঘর ছিল বা কোন ঘর কী কাজে ব্যবহার হত এমন তথ্য জানার মত কোনো বোর্ড নেই।
এই বাড়ির গা ঘেঁষেই নবনির্মিত বাড়ি কাম মিউজিয়াম। গান্ধীজির ব্যবহৃত জিনিস আর দেওয়াল জুড়ে ছবি, তাঁর বলা নানা উপদেশ বা নির্দেশ দেওয়ালে লেখা।
সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম গান্ধীর বাড়ির কাছেই সুদামার বাড়ি দেখতে। কৃষ্ণসখা সুদামা নাকি এখানেই জন্মেছিলেন। যদিও বাড়ি বলে মনে হল না, মন্দির বলাই ঠিক। মন্দিরের পিছনে একটা পোড়ো ভগ্নপ্রায় বাড়ি, একজন গুজরাতিতে বললেন, এটাই সুদামার বাড়ি।
এই ক’দিনে গুজরাতি একটু একটু বুঝতে পারছি। কিছু লেখা দেখে অক্ষরগুলোও কিছুটা চিনেছি, পড়তে পারছি। একটা জিনিস অনুভব করি, ভাষা একটা মাধ্যম, কিন্তু তাতে পারস্পরিক কথার বা ভাব বিনিময়ের অভাব ঘটে না।
বাড়িটা ভাল করে দেখলাম। পোরবন্দরও সমুদ্রে তলিয়ে গেছিল। বহু পরে সমুদ্রের বুকে গজিয়ে ওঠা অংশে তৈরি হয় পোরবন্দর। এর পাশেই ১৭ শতকের তৈরি সারতান জিনো চোরো প্রাচীর সৌধ।
কল্পনায় কত কিছুই আমরা ভাবি, হয়তো এই বাড়িটার বয়স তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ৫০০ বছর। কিংবা কিছু বেশি। কিন্তু ৫০০০ হাজার বছর নয় নিশ্চিত। তবু কৃষ্ণ সুদামার টানে এত মানুষের বিশ্বাস নিয়ে এখানে আসা।
সুদামাকে ছেড়ে এবার সমুদ্রের ধারে। পেছনেই বিশাল রাজপ্রাসাদ। ভিতরে যাওয়া মানা। বন্ধ ফটক আর বিরাট রাজবাড়ির দরজা জানালা যেন ঢাকছে আমায়। সমুদ্রের ধার ঘেঁষে পাঁচিল টপকে ঢুকলাম ভিতরে। কত না জানি ইতিহাস লুকিয়ে এখানে, ভাবতে ভাবতে, মনে মনে খুল যা সিম সিম বলছিলাম।
কতক্ষণ এভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ঘোর ভাঙল, সৌম দর্শন লম্বা মোটা তাগড়াই চেহারার এক পুরুষের ডাকে। ইংরেজিতে বললেন, “ম্যাডাম অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে দেখছি ওই দূর বারান্দা থেকে। আপনি তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দেখে নেমে এলাম। কোনো সাহায্য করতে পারলে ভালো লাগবে।”
আমি মেঘ না চাইতেই জল পেলাম, ভেবে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। উনি খুব খুশি হয়ে এবার হিন্দিতে গল্প শুরু করলেন।
এদিকে ভোর আমায় খুঁজে না পেয়ে ফোন করছিল। ওকে বললাম, পাঁচিল টপকে চলে আসতে। মেয়ের আর তার বাবার ধারণা আমি হিন্দি ইংরেজি কোনোটাই ঠিক পারি না, বিদেশে অনুপযুক্ত। আমাকে ভদ্রলোকের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করতে দেখে ভোর একটু অবাক হল।
জানলাম, তিনি পেশায় আইনজীবী, নাম অনিরুদ্ধ জেওঠা, জাতিতে রাজপুত। এই রাজবংশের খাস আদমী ছিলেন এঁদের পরিবার। বংশ পরম্পরায় এখানেই বাস। বললেন, মেরিন ড্রাইভের শেষপ্রান্তে বিশালাকার এই প্রাসাদের নাম “হুজুর প্যালেস’। এই রাজপ্রাসাদ বানিয়েছিলেন, মহারাজ নটবর সিং জেওঠা। তিনিই স্বাধীন ভারতের পোরবন্দরের শেষ রাজা।
১৯৪০ সালে তিনি তাঁর টিম নিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে লন্ডনে যান। মহারাজের প্রথম স্ত্রী মারা যান অল্প ব়য়সে। কোনো সন্তান না রেখেই। তিনি নিজেও পূর্ববর্তী মহারাজের দত্তক সন্তান। যাহোক স্ত্রী মারা যাবার পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন নরওয়ের মেয়েকে পুত্র কন্যা সমেত। সেই কন্যাও মারা গেছেন কিডনি অকেজো হয়ে। আর বর্তমান রাজা দত্তক পুত্র থাকেন লন্ডনে। বয়স তাঁর এখন প্রায় তারও দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতি তিন চার মাস অন্তর এখানে এসে সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
অনিরুদ্ধবাবু পুরো প্যালেস ঘুরে দেখালেন। শোবার ঘর, বসার ঘর, খাবার ঘর, ভিজিটর রুম, গেস্ট রুম, লাইব্রেরি, অফিসার রুম, চিফ অফিসারের রুম, রেস্ট রুম, বিলিয়ার্ড রুম আর দুটো বিশাল লাইব্রেরি। সারভেন্ট কোয়াটার, লেডিস রুম, কিচেন, জেন্স রুম, রানীমহল, গাড়ি বারান্দা, খাস লোকের বাড়ি, বড় বড় বারান্দা, অন্দরমহল। দেখতে দেখতে ভাবছিলাম বিদেশি আসবাব পত্রে ঠাসা এই রাজবাড়ির ভবিষ্যত কী? কালের স্রোতে যেমন সব ভেসে যায় তেমনি এই বাড়িও ক্রমশ পোড়ো হবে, তারপর একদিন হারিয়ে যাবে ঝোপজঙ্গলের আড়ালে। তারপর বহু বছর পর, একদিন আমার-ই মতন কেউ এসে দাঁড়াবে, ভাঙা ইঁটের কঙ্কাল থেকে পরতে পরতে খুঁজে বের করবে ইতিহাস।
আমি গভীরভাবে কিছু ভাবছি বুঝে তিনি বললেন, “সাইক্লোনে একদিকের অংশ ভেঙে গেছে, কিছু মেরামত হলেও পুরোটা করা যায়নি।” আরো বললেন, “এটাও বিক্রি হয়ে যেত এতদিনে। কিন্তু এতবড় প্যালেস, তার উপর হেরিটেজ বিল্ডিং, তাই সরকার পারমিশন দিচ্ছে না। আর এর পিছনে রয়েছে সারতান জি ছোরো। এই তিনতলা প্রাসাদ ও উদ্যানটি রানা সারতানজি নির্মাণ করেন, তিনি এখানে বসেই ব্রজ ভাষায় কাব্য রচনা করতেন।”
ভোর বলল, “মা রাজস্থানের মত এই বাড়িটার এক অংশ হোটেল, আর এক অংশ মিউজিয়ম হলে ভাল হত বলো। সরকারও এর থেকে টাকা পেত, আর মালিককেও খরিদ্দার খুঁজতে হত না।”
আমি বললাম, “১০০ বছরের বেশি হয়ে গেলে সেটা হেরিটেজ বিল্ডিং হয়ে যায়। তখন তা কিনতে নানা অসুবিধা।”
“মা এটা বোলো না। তাহলে কলকাতার মেট্রো, এলিট, গ্লোব এই সব প্রাচীণ সিনেমা হলগুলো ভেঙে কী করে মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং বা শপিং মল হচ্ছে?”
আমি আর কথা বাড়ালাম না। মনে মনে ভাবলাম, যেকোনো শহরের মানসিকতা তৈরি হয় তার স্থাপত্য দিয়ে, প্রাচীনত্ব দিয়ে। সেগুলো হল ইতিহাস। একটা একটা করে সব ভেঙে ফেলা মানে আমরা ইতিহাস থেকে সরে আসছি। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কিছু রেখে যাচ্ছি না, যা দিয়ে তারা শহরের ঐতিহ্য অনুভব করতে পারবে। আসলে আধুনিক অর্থনীতিতে বিশেষ করে এদেশে হেরিটেজের কোনো মূল্য নেই।
অনিরুদ্ধ বলছিলেন, তাঁর বাবা এই রাজপ্রাসাদের আর্মি হেড ছিলেন। সম্পর্কে তারা রাজাদেরই আত্মীয়। রাজস্থান থেকে রাজপরিবারের সঙ্গেই এসেছিলেন ২০০ বছর আগে। তারপর এখানেই বংশানুক্রমিক ভাবে থেকে গেছেন।
উনি আরো বললেন, “এখনকার কেউ এসব জানতে চায় না। আপনি আসায় বহুদিন বাদে অনেক গল্প করলাম।” কলকাতা নিয়েও অনেক কথা বললেন। প্রাক্তন বর্তমান দুই মুখ্যমন্ত্রী, তাঁদের দল সব নিয়েই দেখলাম তাঁর পরম আগ্রহ। এমনকি সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোট নিয়েও মতামত পোষণ করলেন। আমি সে-সবে উৎসাহ না দেখিয়ে মনের ক্যামেরায় সব কিছু ধরে রাখলাম। তারপর তাঁকে নমস্কার করে কলকাতা আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে সদর গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম।
গেটের মুখ অবধি অনিরুদ্ধবাবু এগিয়ে দিয়ে, রাজা এলে তার পুরো রাজপাট দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। সমুদ্রের উপর সেই মুহূর্তে দিনের সূর্য শেষ আলো ছড়িয়ে অস্ত গেল।
হোটেলে ফেরার পথে শেখভাই বললেন, এখানকার স্ট্রিট ফুড দারুণ। ভোরের খিদেও পেয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গেই আমরা সেখানে গেলাম। সারি সারি দোকান সবই ভ্যানের উপর। মহারাষ্ট্রিয়ান পাওভাজির পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতের ধোসা, উত্তাপম, ইডলি, পুচকা, তারপাশেই চাইনিজ। অনেক গাড়ি এসে দাঁড়াচ্ছে, পছন্দমত খাবার অর্ডার দিয়ে কেউ খাচ্ছে সেখানেই বসে, কেউ প্যাক করে নিয়ে যাচ্ছে। সবই নিরামিষ। ভোর চাইনিজ খেতে দীপস চাইনিজ নামে একটা স্টলের সামনে গিয়ে বসল। সুস্বাদু চাউমিন খেতে খেতে বলল, “মা, এখানে এত পাউভাজি কেন বিক্রি হচ্ছে? পাউভাজি তো মহারাষ্ট্রের খাবার।” আমি কিছু বলার আগেই পাশে বসেই খাচ্ছিলেন এক প্রৌঢ় বললেন, “গুজরাত আগে মহারাষ্ট্রের অধীনেই ছিল। পরে আলাদা হয়। আর পোরবন্দর আগে পাউ বন্দর নামে পরিচিত ছিল।”
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “পাও বন্দর থেকে পোর বন্দর কী করে হল?”
উত্তর পেলাম, “পাও মানে পাউরুটি। অতীতে এখানে প্রচুর পরিমাণে পাউরুটি তৈরি হত যা জাহাজে করে আরব সাগরের মধ্যে দিয়ে আরবের দেশগুলোতে যেত। তারপর, পাউ কথাটি অপভ্রংশ হতে হতে বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে আজকের পোরবন্দর।”
ওঃ বললাম বটে, কিন্তু একটা খটকা মনের মধ্যে লাগল। গুগলে পোরবন্দর সার্চ করলাম। দেখলাম, এমন কিছু লেখা পেলাম না। পাও শব্দ কখনোই গুজারাতি হতে পারে না। এটা যতদূর জানি পর্তুগিজ শব্দ। আর পাউরুটি আমাদের দেশের খাবার নয়, এটা বাইরের দেশ থেকেই বহু আগে এদেশে এসেছে। গুগলে আরেকটা জিনিস দেখলাম, মহারাজা নটবর তাঁর টিম নিয়ে লন্ডন যাননি, প্রথম অফিশিয়াল টিমের ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েও, কারণ তিনি মনে করেছিলেন তিনি এর যোগ্য নন। তিনি জানিয়েছিলেন, “আমি টেস্ট ক্রিকেট খেলার ও ক্যাপ্টেন হবার যোগ্য নই।” ফলে প্রথম ভারতীয় ক্যাপ্টেন হলেন সি কে নাইডু।
***
আমাদের পরের গন্তব্য সোমনাথ বা প্রভাস। পোরবন্দর থেকে সোমনাথের উদ্দেশ্যে রওনা হবার সময় একটা কথাই কেবল জানতাম। গজনীর সুলতান মহম্মদ মামুদ ৭ বার সোমনাথ আক্রমণ করে অষ্টমবারে সফল হয়েছিল এবং মন্দির লুঠ করেছিল। এইটুকু জানা সম্বল করেই সোমনাথ দর্শন করতে চলেছি।
রাস্তার দু’পাশে এখন কৃষ্ণচূড়া আর বোহগেনভিলা, চলতি কথায় কাগজের ফুল বলি যাকে। এই ক’দিনের রূক্ষ মাটির রূপ এখানে লাল। সবুজ পাতার উপর লাল মাটি হাওয়ায় উড়ে গাছগুলো আপাততঃ সবুজত্ব হারিয়ে ধুলোয় মুড়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় নদী জলাভূমির উপর ভাল মত চড়া। দেখতে দেখতে ছোটোবেলায় গরমের ছুটিতে রামপুরহাট যাওয়ার দিনগুলো মনে পরছে। এমনি লাল মাটি। অজয় নদীতেও এমনি চড়া পরত। শরৎকালে সেই চড়ার উপর কাশ ফুটত। এখানে কী কাশ ফোটে! কে জানে! তবে বেশ কিছু জায়গায় মনসা বা বাবলা গাছের ঝাড় চোখে পরল। আর একটা জিনিস আমাকে নস্টালজিক করে তুলছিল বারে বারে। গাছের থেকে নেমে আসা ঝুড়ি। এমনি ঝুড়ি ধরে কত সময় দোল দোল খেলেছ।
ভোর বলল, “মা আমার একটু এগুলো ধরে ঝোলার ইচ্ছে আছে।” কিন্তু ধুলো উড়ছে আর রোদের প্রকোপও সাংঘাতিক। ড্রাইভার গাড়ি থামাতে রাজি নন এমন রাস্তায়। আসলে রাস্তা চওড়া হচ্ছে, তাই অনেক জায়গায় ভাঙাভাঙি, খোঁড়াখুঁড়ি চলছে।
পোরবন্দর থেকে সোমনাথ মন্দিরের বাই রোড দূরত্ব কোথাও লেখা ১৫০ কিমি, কোথাও ১৪৮ কিমি কোথাও ১৩৮ কিমি। এমনকি রাস্তায় দূরত্ব লেখা বোর্ডগুলোও দেখলাম, একেক জায়গায় একেকরকম। সে যাই হোক, আমাদের আসতে সময় লাগল প্রায় চারঘন্টা।
পথে একবার সমুদ্রের ধারে নেমেছিলাম। উটের পিঠে চড়লাম। মরুভূমির জাহাজ সুসজ্জিত হলেও, দেখতে ভাল লাগলেও চড়তে মজা লাগে না। অন্তত আমার তো লাগেনি। মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে মুম্বাই গেছিলাম। তখন আমি আর ছোটোবোন রম্যানি জুহু ব্রিজে উটের পিঠে চেপেছিলাম। তখন বয়স কম ছিল। কিন্তু তখনো ভাল লাগেনি। আজও লাগল না। আসলে কিছু কিছু পছন্দ অপছন্দ একই থেকে যায় বোধহয়। উটে পরিভ্রমণ পছন্দ না হলেও মালিক ছেলেটিকে ভাল লাগল। ২১ বছরের সমীর নামে ছেলেটি এর মধ্যেই ৩টে উট আর ২টো ঘোড়ার মালিক। সিজনে সবগুলো মিলিয়ে দিনে প্রায় হাজার পাঁচেক রোজগার। শুনে বললাম, “বা! দারুণ। তুমি তো ধনী ব্যক্তি।” বলল, “আম্মা প্রতি মাসে এগুলোর একটার পিছনে প্রায় ৯-১০ হাজার টাকা খরচ।”
আমি হিসেব করার চেষ্টা করলাম। যথারীতি পারলাম না। সমীর বলল, সে সমুদ্রের ধারে ঝুপড়িতে থাকে। নভেম্বর মাসে তার ভালো রোজগার হয়। আরো জানালো শীতের আগেই সে আরো দুটো ঘোড়া কিনবে। উট নয় কেন জানতে চাইলাম। পাকা ব্যবসায়ীর মত বলল, উটের খরচ বেশি। ঘোড়ার কম। আমাকে তো লাভ করতে হবে।
ঠিক, লাভ ক্ষতির হিসেব জীবনই এদের শিখিয়ে দিয়েছে সংগ্রাম করার মধ্যে দিয়ে। আর কে না জানে শোষিত অবহেলিত সংগ্রামী মানুষের হাত ধরেই বিপ্লব আসে। অন্তত মার্কস লেনিন তো তাই বলেছেন।
আচ্ছে দিন আসবেই, সমীরের মুখে এই কথা শুনে মনে হল, পরিবর্তন আসলে এদের থেকেই আসে। আমরা সত্যিই পাতি বুর্জোয়া।
সমীরকে ভাল থেকো বলে আবার গাড়িতে। চারঘন্টা বাদে পৌঁছলাম সোমনাথ। এখানে আমাদের থাকার ব্যবস্থা সোমনাথ মন্দিরের ট্রাস্টের নিজস্ব গেস্ট হাউস সাগর দর্শন। সমুদ্রের উপরেই। দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে মন্দিরে।
চলবে
এরপর আগামী সংখ্যায়