অরিন্দম দেবনাথ-এর সমস্ত লেখা
এ পথ আপনারই প্রতীক্ষায়
ঝাউবন আর সমুদ্রের নির্জনতায় দাঁড়িয়ে নিতে পারেন অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ। এ-পথ আপনারই প্রতীক্ষায়। জানাচ্ছেন – অরিন্দম দেবনাথ।
দুটো রুটি চাপিয়ে রাখার পরও যে কাগজের থালাটা সরসর করে টেবিলের কোনা পর্যন্ত এগিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। না না, ভূতুড়ে ব্যাপার-স্যাপার কিছু নয়। এ হল হাওয়ার খেল।
অমাবস্যার রাত। সামনে ভেজা বালি ছাপিয়ে আসছে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন। অন্ধকার এত ঘন যে ঢেউয়ের মাথার ফসফরাসের আভাসটুকু পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাটারি-চালিত কম শক্তির এল.ই.ডি বাতির নরম আলোয় পায়ের নিচে পিলপিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। খানিক দূরে দুটো মোটাসোটা অলস কুকুর বালির ওপর শুয়ে কাঁকড়াদের দৌরাত্ম্য দেখছে চোখ পিটপিটিয়ে। আরও খানিক দূরে, দুপুরে সমুদ্র দাপিয়ে স্নান করে অক্লান্ত চারটে শিশু মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে বালি দিয়ে দুর্গ বানাচ্ছে।
খুঁটির ওপর হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া পরপর বেশ কয়েকটা ধাবা। ছাউনির নিচে বালির ওপর প্লাস্টিকের চেয়ার টেবিল পাতা। বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলছে দোলনা। সারাদিন এই চেয়ারে বসে থাকলে কিম্বা দোলনায় ঝুলে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেও ধাবার মালিক কিছু বলবে না। তবে রাত সাড়ে দশটার সময় নিভে যাবে সব আলো, খালি করে দিতে হবে চেয়ার, দোলনা সবকিছু। প্রশাসনের কড়া নির্দেশ এবং এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে ধাবার মালিকরা।
এই ধাবাগুলোয় সকাল থেকে রাতের খাবার সব পাওয়া যায়। এই সমুদ্র সৈকতের রিসর্টগুলো থেকে ধাবায় খাবারের খরচ তুলনামূলক কম।
এখনও কংক্রিটের আস্তরণ পড়েনি এই বেলাভূমিতে। বালি, সমুদ্র আর ঝাউয়ের বনের মাঝে থাবা দেয়নি সভ্যতার দাপাদাপি। তাই লাল কাঁকড়ার দল নিশ্চিন্তে গর্ত খুঁড়ে বালি দিয়ে আলপনা এঁকে চলেছে বালুবেলায়।
তবে এ-সৈকতের নির্জনতাও আর কতদিন থাকবে বলা কঠিন। সামনেই সমুদ্রের ছোটো খাঁড়ি। আর ওই খাঁড়ির ধারেই তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের ঢাল, পর্যটকদের জন্য বসার আসন। খাঁড়ি পারাপারের জন্য আছে নৌকা। ধাবার প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে দেখতে পারছি দূরে ঝকঝক করছে আলোর রোশনাই। জ্বলজ্বল করছে মোবাইল টাওয়ারের চূড়ায় লাল বাতি। ওটা মন্দারমণি। কতই বা দূর হবে, মেরেকেটে দেড় কিলোমিটার। মাঝে শুধু একটি খাঁড়ির ফাঁক।
“দাদা, এবার আপনি খেয়ে নিন, আপনাদের দলের সবার খাওয়া হয়ে গেছে।”
মেদিনীপুর জেলার তাজপুর সি-বিচের বোধরা গ্রাম সংলগ্ন সুভাষ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের (ধাবা) মালিক গণেশের কথায় ঘুমের রেশ কেটে গেল। দেশি মুরগির মাংসের ঝোল আর রুটি, সঙ্গে পেঁয়াজ আর শসা কুচি। বেড়ে রেঁধেছে গণেশ।
“আচ্ছা গণেশ, তাজপুর থেকে সমুদ্রের ধার ধরে দিঘা হেঁটে যাওয়া যায় না?” বললাম আমি। আমার মাথায় চেপে বসেছে অ্যাডভেঞ্চারের নেশা।
“যাবে না কেন? কিন্তু হেঁটে যাবেন? বলেন তো কাল সকালে কোনও অটোরিক্সাকে বলে দিই?”
“না হে, হেঁটেই যাব। কতটা পথ হবে বলো তো?”
“কী জানি দাদা, কোনোদিন তো হেঁটে যাইনি, আন্দাজ নেই। হবে দশ-বারো কিলোমিটার।” গণেশ বলল।
তাজপুর আসার আগেই মাথায় ঘুরছিল সমুদ্রতট ধরে হেঁটে দিঘায় যাবার কথা। গুগল খুলে আগেই দেখে নিয়েছিলাম সমুদ্রের ধার বরাবর একটা পাকা রাস্তা গেছে শঙ্করপুর পর্যন্ত। তারপর একটা ছোটো নদী চম্পা। নদীর ওপারেই দিঘা মোহনা। সেখান থেকে সমুদ্রের ধার বরাবর ওল্ড দিঘা দেড় কিলোমিটার মতো।
কিছুদিন আগেই দিঘা মোহনা থেকে সমুদ্রর ধার ধরে তালসারি পর্যন্ত হেঁটে এসেছি লাল কাঁকড়া দেখার আশায়। তালসারিতে অল্প কিছু লাল কাঁকড়ার দেখা পেলেও মন ভরেনি।
আজ খেতে খেতে পায়ের চারপাশে লাল কাঁকড়ার ঘোরাঘুরি দেখে কাঁকড়ার ডেরায় হাঁটার ইচ্ছেটা আবার পেয়ে বসল।
ভোর পাঁচটা নাগাদ হোটেল ছেড়ে যখন সমুদ্রতটে এলাম, তখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে। আমার সঙ্গী হয়েছে বন্ধু পিনাকী দাস। তিনটে কাক ঢেউয়ে ভেসে আসা মাছ ধরতে, সমুদ্রের জল সরে যেতে লাফিয়ে লাফিয়ে জলের ফেনায় মুখ দিচ্ছে আবার ঢেউ এগিয়ে এলে ছোটো ছোটো লাফ মেরে ফিরে আসছে। দূরে, বহুদূরে একটা লোক কাঁধে একটা জাল নিয়ে হেঁটে চলেছে।
আকাশে যথেষ্ট মেঘ। সূর্য মেঘের আড়ালে থাকলেও আকাশে লাল আভা। হোগলা ছাওয়া ধাবাগুলোর মাথায় বৃষ্টির জল আটকাতে চাপানো কালো প্লাস্টিকের আস্তরণ বাতাসের দাপটে ভয়ংকররকম ফরফর শব্দ করে কেঁপে চলেছে। প্লাস্টিকের ওপর মাছ ধরার ছেঁড়া জাল চাপানো। সে জালের সাধ্য নেই পাতলা প্লাস্টিকের আস্তরণকে হোগলার গায়ে চেপে রাখার। প্রবল হাওয়া, একখণ্ড প্লাস্টিককে জালমুক্ত করে উড়িয়ে নিয়ে ফেলল পেছনের ঝাউগাছের মাথায়।
লাল কাঁকড়ার ঝাঁক বালুবেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ক্যামেরা ব্যাগ থেকে নিকনের ২০০-৫০০ জুম লেন্স লাগান ক্যামেরা বের করে থেবড়ে বসলাম বালিতে। মেমোরি কার্ড দ্রুত ভরে উঠতে লাগল। ভোরের লালচে আভায় কাঁকড়ার রঙ আরও লালচে লাগছে। খানিক পর রোদ চড়লে এদের আর পাওয়া যাবে না। এরা দেখা দেবে আবার সেই সন্ধে নামার আগে।
ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। ডানদিকে ঝাউয়ের বন। বাঁদিকে সমুদ্র। একটা কুকুর ঝাউবন থেকে বেরিয়ে এসে আমার পিছু নিল।
মে মাসের শেষ। এখন সমুদ্রে মাছ ধরা বারণ। তাই জেলেদের আনাগোনা নেই সমুদ্র তটে। এ-তট এখন একান্তই আমার। বন্ধু পিনাকী তাজপুর বিচেই রয়ে গেছে।
ঝাউয়ের বনে কাঁটাগাছ প্রচুর। রঙবেরঙের ফুল ফুটে আছে অজস্র। গাছের তলায় এখানে ওখানে বেশ কিছু নৌকা রাখা। আলকাতরার সদ্য পোঁচ পড়েছে তাতে। আর কিছুদিন পরে মাছের সন্ধানে এরা ভাসবে সমুদ্রে।
একটা মরা ডলফিন সৈকতের বালিতে অর্ধেক ঢেকে আছে। তার শরীর ফুটো করে কাঁকড়ার দল ঢুকছে আর বেরোচ্ছে। একটা দাঁড়কাক কর্কশ স্বরে ডলফিনের কাছের এক পাতাহীন ঝাউয়ের ডালে বসে সঙ্গীদের ডেকে চলেছে। আর সমুদ্রের ঢেউয়ে পা ভিজিয়ে নির্জন তটে পদচিহ্ন এঁকে একাকী আমি হেঁটে চলেছি।
প্রায় ঘণ্টা খানেক হাঁটার পর সামনে খানিক কাদামাটি এল। কাদা পথে হাঁটা কষ্টকর। ইতিউতি পাথরের বোল্ডার ফেলা হয়েছে। সৈকত ছেড়ে ঝাউবনের ভেতর দিয়ে বালিয়াড়ি পার হয়ে পাকা রাস্তায় এসে উঠলাম। এই জায়গাটাও তাজপুর বিচেরই অংশ। বেশ কিছু দোকান রয়েছে এখানে। গাড়ি থেকে কিছু পর্যটককেও নামতে দেখলাম।
পিচ-ঢালা একটা রাস্তা সমুদ্রের ধার ধরে সোজা চলে গেছে শঙ্করপুরের দিকে।
সমুদ্রের জল ওপরে উঠে আসছে। বিচ বরাবর সারি সারি কাঠের গুঁড়ি পোঁতা। সমুদ্রের জল ছুঁয়ে এখানে হাঁটা বিপদজনক। তাই হাঁটতে থাকলাম রাস্তা ধরে। বাঁপাশে খোলা সমুদ্র, ডানদিকে চাষের ক্ষেত আর দুয়েকটা বাড়ি। লোকজনের প্রায় দেখাই নেই। রাস্তার ডানদিকে একটা চায়ের দোকান পড়ল। সদ্য খোলা দোকানের সামনে দাঁড়তে এগিয়ে এলেন এক মহিলা।
“আসেন আসেন, বসেন।” এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলেন।
তেষ্টায় গলা শুকিয়ে এসেছিল। পিঠের ব্যাগে জল থাকলেও আলসেমি করে এতক্ষণ বের করিনি।
গোবর দিয়ে সদ্য নিকানো দোকানে আমার কাদামাখা রাবারের বেল্ট দেওয়া জুতো পরে ঢুকতে ইচ্ছে করল না। জুতোটা খুলতে যেতে বাধা দিলেন ভদ্রমহিলা। “জুতো খুলতে হবে না।”
প্রতিবাদ না শুনে জুতো খুলে গিয়ে বসলাম দোকানের ভেতরের প্লাস্টিকের চেয়ারে। খোলা দরজা আর বাঁশের জানালার ফাঁক দিয়ে টুকরো টুকরো সমুদ্র একেকটা আলাদা আলাদা ফ্রেমের মতো লাগছে। সমুদ্র বেয়ে ধেয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাস এতক্ষণ পথচলার ক্লান্তি দূর করে দিল।
দোকানেই আলাপ হল চন্দন লাটুয়ার সঙ্গে। আমার মতো উনিও দোকানে চা খেতে ঢুকেছেন। ওঁর বাইকটা দোকানের সামনে রাখা। দোকানের ভেতরে বসে সমুদ্রের ছবি তুলছি দেখে উনি বললেন, “বাইকটা সরিয়ে দেব?”
“না না, ঠিক আছে।”
“যাবেন কোথায়, আপনার সঙ্গে তো কোনও গাড়ি দেখছি না?”
“এই শঙ্করপুর পর্যন্ত যাব।”
“সে তো অনেক পথ। এখান থেকে তো এখন কোনও অটো পাবেন না, রোদ চড়ে গেছে। আমার বাইকে করে আপনাকে পৌঁছে দিই?”
“না না হেঁটে যাব, হাঁটতে বেরিয়েছি।”
ভদ্রলোক খানিক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে।
কথা বলতে বলতে সমুদ্রের দিকে তাকাতে দেখি বাঁধ দেবার জন্য সৈকতে পোঁতা কাঠের গুঁড়ির ফাঁক দিয়ে একজন লোক সমুদ্র থেকে বালতি ভরে জল আনছে। কী করবে কে জানে।
দূরে, বহুদূরে সমুদ্রের মাঝে কালো রঙের কিছু একটা নজরে এল। টেলিলেন্সে ছবি তুলে মনিটরে এনলার্জ করে দেখি ছোটো নৌকায় চেপে কয়েকজন সমুদ্রে মাছ ধরছে।
চন্দনবাবু বললেন, “ওরা বেআইনিভাবে মাছ ধরছে। কোস্ট গার্ড ধরতে পারলে জেলে পুরে দেবে। কী করবে বলুন, খেতে তো হবে!”
চা এসে গেছিল। চা খেতে খেতে শুনলাম ভদ্রলোক সমুদ্রে মাছ ধরেন। এখন মাছ ধরা বারণ তাই বাড়িতে চাষের কাজ দেখছেন খানিক। ওঁর কন্যা এবার ৮২% নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করছে। নার্সিং পড়তে চাইছে। উনি ভরসা পাচ্ছেন না কলকাতায় পড়তে পাঠাতে।
“কী করে কলকাতা পাঠাই বলুন, মাছ ধরতে ভেসে পড়লে তো কুড়ি-পঁচিশ দিনের আগে ফেরার কোনও সম্ভবনা থাকে না। কলকাতায় গিয়ে কোনও বিপদ হলে… তার চেয়ে বরং এখানেই কলেজে পড়ুক, কী বলেন?”
চায়ের দোকানের পাশেই জলধা হরিজন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র। এই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের অবস্থান নিয়ে দোকানদার ও চন্দনবাবুর দেখলাম আক্ষেপ আছে।
“কোটাল বা ষাঁড়াষাঁড়ির বান এলে জল রাস্তা টপকে এপারে চলে আসে। ওই ফণীর মতো ঝড় হলে এই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে কী হবে! এই কেন্দ্র হওয়া উচিত ছিল সমুদ্র থেকে খানিক ভেতরের দিকে।”
চা খেয়ে টাকা মিটিয়ে আবার রাস্তায় নামলাম।
কেউ নেই, কেউ নেই। জনশূন্য সমুদ্রপার্শ্ব পথও যেন আমারই একাকী সঙ্গের প্রতীক্ষায় ছিল।
একটি টোটো চলে গেল পাশ দিয়ে। একটি কিশোরী দু’হাতে দুটো বড়ো প্লাস্টিকের বালতিতে কিছু জলের বোতল নিয়ে আচমকাই যেন মাটি ফুঁড়ে হাজির হল সামনে। আমার ডানদিকের রাস্তার ঢাল বেয়ে উঠে রাস্তা পার করে চলে গেল রাস্তার অন্য পাশে। সমুদ্রের ধারে। রাস্তাটা আসলে একটা বাঁধের ওপর পিচ ঢেলে তৈরি। সমুদ্রের জল যাতে সহজে চাষের জমিতে ঢুকতে না পারে তাই এই বাঁধ।
মেয়েটিকে জল নিতে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না যে ওখানে একটা নলকূপ আছে। নলকূপটা যেন মাটি ফুঁড়ে ওঠা একটা পাইপের টুকরো। মাথায় সাইকেলে হাওয়া দেওয়ার পাম্পের মতো এক টুকরো লোহা বসানো। যদিও জল পড়ার একটি মুখ আছে। ঠিক সাইকেলে পাম্প করার মতোই পাম্প করে জলের বালতি ভর্তি করছিল মেয়েটি।
সাড়ে সাতটা বাজে। রাস্তার ডানদিকে নজরে এল পরিপাটি করে সাজানো কয়েকটি ছোটো ছোটো সুন্দর ঘর। কাছে যেতে বুঝলাম ওগুলো আসলে হোটেল। জায়গাটার নাম চাঁদপুর। হোটেল আর অতি নির্জন সমুদ্রের মাঝে মাত্র একটি রাস্তার ফাঁক। হোটেলে কোনও পর্যটক নেই এখন।
রাস্তায় লোক চলাচল শুরু হয়েছে। সাইকেল, মোটর বাইক, টোটো আর অটো থেকে ক্যামেরা কাঁধে হাঁটু পর্যন্ত কাদা মাখা একাকি হাঁটিয়ে আমাকে ঝেঁকে দেখছে সবাই। আমার মতো হেঁটে বেড়ানোর পর্যটক এখানে বোধহয় খুব একটা আসে না।
সামনেই শুরু হয়েছে পাড় বাঁধানো সমুদ্রতট, শঙ্করপুরের শুরু। ডানদিকে বেশ কিছু হোটেল। সমুদ্রের জল প্রবল আক্রোশে কংক্রিটে আছড়ে পড়ে ফোয়ারার মতো ছিটকে উঠছে আকাশে। বাঁধানো তট ছেড়ে আমি আরও খানিক এগিয়ে গিয়ে আবার পৌঁছলাম বালুবেলায়। রাস্তা সরে গেছে দূরে। রাস্তার জায়গা নিয়েছে জঙ্গল। এই জঙ্গল বনবিভাগের অধীনে। কাঁকড়া নজরে এল না। হয়তো রোদ চড়ে গেছে বলে।
মিনিট কুড়ি হাঁটতে পৌঁছে গেলাম চম্পা নদীর কিনারায়। সাড়ে আটটা বাজে। সার সার ট্রলার মোহনায় দাঁড়িয়ে আছে দরিয়ায় ভেসে পড়ার অপেক্ষায়। নদী পার হলেই দিঘা।
কীভাবে যাবেনঃ কলকাতা থেকে দিঘাগামী যেকোনও বাসে কাঁথি পার হয়ে নেমে পড়ুন বালিসাই। সেখান থেকে অটো বা টোটো চেপে তাজপুর। দূরত্ব চার কিলোমিটার। ভাড়াঃ অটো বা টোটো প্রতি একশো টাকা।
থাকার জন্য অনেক রিসর্ট বা হোটেল আছে। আগে থেকে অনলাইন বুক করে যেতে পারেন। দ্বি-শয্যার ঘর বারোশো থেকে তিন হাজার টাকা।
খাবার জন্য সমুদ্রের ধারে বেশ কয়েকটি ধাবা আছে। এছাড়া প্রতিটি হোটেল বা রিসর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে।
সমুদ্রের ধার বরাবর হাঁটতে হলে রাবারের চটি পরে হাঁটাই ভালো। সঙ্গে রাখুন ছাতা, জলের বোতল ও হালকা খাবার। রোদ চশমা ও টুপি পরে নিতে পারেন।
তাজপুর থেকে দিঘা পর্যন্ত হাঁটতে সঙ্গে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন চৈতন্য দাসের সঙ্গে। ফোনঃ ৯৭৪৮৬৫৩৩০৪
ছবিঃ অরিন্দম দেবনাথ
মন্দারমণি আর তাজপুরের মাঝে লাল কাঁকড়া বোঝাই এমন এক সৈকতে হেঁটে বেড়িয়েছিলাম বছর কয়েক আগের এক বিকেলে। সে কথা মনে পড়ে গেল। আর এই বিচ ট্রেকটা এতটাই মন টানল, যে এখন সুযোগ থাকলে বুঝি এখুনি চলে যেতাম!
LikeLike