বাগান ভর্তি পুষ্যি বন্ধুর দল
অদিতি ভট্টাচার্য
কাকে ছেড়ে যে কার কথা বলি! ছোট্ট বাগানে পুষ্যি বন্ধুদের সংখ্যা তো নেহাত কম নয়। রকমারি জবা, টগর, গোলাপ, কুন্দ, করবী, ইয়েস্টার-ডে-টুডে-টুমরো, গন্ধরাজ, কামিনী, বেলি, লিলি, জারবেরা, বোগনভেলিয়া, রোজ ক্যাকটাস, পমেলিয়া, অর্কিড, ক্যাকটাস, নাইট কুইন – কত্ত কিছু! একেক জনের যত্ন আত্তিও এক এক রকমের। কারুর জল বেশি লাগে তো কারুর আবার জল টল তেমন পছন্দ নয়। কমলা রঙের রোজ ক্যাকটাসটা এইটুকু একটা টবে এসেছিল। নিজেও এইটুকুই ছিল। এই দেখি ঠিক আছে তো, এই দেখি ঝিমিয়ে পড়েছে। একটুতেই কাতর। তাই তার নাম হল আহ্লাদি। সেই নামই এখনও আছে। বক্স জানলার গ্রিলে ঝোলে দুখানা অর্কিড। একটাতে মাঝে মাঝেই ফুল ফোটে আর একটা বসন্ত এলেই ফুলে ভরে যায়। তাদের আবার পাতায় জল আর খাবার স্প্রে করতে হয়। ইয়েস্টার-ডে-টুডে-টুমরো, গন্ধরাজ, কামিনী, বেলি গাছ যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় তখন চারদিক গন্ধে ম ম করে। নাইট কুইন আবার ফোটে রাতে মাত্র ক”ঘণ্টা রজন্যে। তারজন্যে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়! বললিলিগুলোর সারা বছর দুটোর বেশি পাতা দেখা যায় না। শীতে তাও থাকে না, গরমে মাটি ফুঁড়ে কুঁড়ি বেরোয় আর ফুলতোন য়, এই এত্তবড়ো একখানা বল!
দু’বছর আগে বাগানে নতুন সংযোজন হল দুটো ছোট্ট ছোট্ট শালুক পুকুর। একটাতে গোলাপি শালুক ফোটে, অন্যটাতে হলুদ। শালুক পুকুরের জলে খেলে বেড়ায় লাল, হলুদ, কালো, সাদা মলি আর গাপ্পি মাছ। দেখতে দেখতে শালুক পুকুর ছেয়ে গেল পাতায় পাতায়, মাছ আর দেখা যায় না। তাই আর একখানা ওরকমই পুকুর করা হল। এটাতে আর কোনও গাছ লাগানো হল না। মাছ দেখতে হবে না? দু’খানা ক্রোকোডাইল মাছ (দোকানে নাম শুনে চমকে গেছিলাম) পুকুরের একেবারে নীচে থাকে, দেখাই যায় না। খাবার দিলে উঠে আসে। বৃষ্টি হলে শালুক পুকুরে ঝুড়ি চাপা দিতে হয়, নাহলে জল উপছে মাছ বেরিয়ে যায়। গত বছর এক রাতে খুব বৃষ্টি হল, আগে বুঝিনি, ঝুড়ি চাপা দেওয়া হয়নি। সকালে উঠে দেখি বাগানে জল জমেছে আর সেই জমা জলে মাছরা দিব্যি খেলে বেড়াচ্ছে। দেখে আমিও ঝটপট বাগানে নেমে জমা জল থেকে তুলে আবার তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনলাম। বন্ধুদের জন্যে এইটুকু তো করতেই হয়।
শীতকালে পুষ্যি বন্ধুর সংখ্যা আরও বাড়ে। তখন মরশুমী ফুল লাগানো হয়। এই এতটুকু টুকু চারা কিনে এনে তাদের কত যত্ন করে যে বড়ো করা হয়! তারপর যখন বাগান আলো করে ফুল ফোটে দেখে দেখে আশ মেটে না। সে আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না। মনে হয় পরিশ্রম সার্থক। আরও আছে। এত গাছ আছে বলে বাগানে পাখি, কাঠবিড়ালিও অনেক আসে। পেছনের বাগানে দুটো ভাঙা টাইলস পাতা আছে। তাতে খেতে দিই। ঝগড়ুটে বটে শালিখগুলো! অন্য কাউকে খেতেই দেয় না! যতক্ষণ তারা থাকবে, তারাই শুধু খাবে! ছাতার পাখিগুলো আবার জানে আমার ঘর কোনটা। কোনও দিন খেতে দিতে দেরি হলে, জানলার কাঁচে ঠোকরাবে! খেয়ে দেয়ে তারা শালুক পুকুরে ঠোঁট ডুবিয়ে জল খেয়ে উড়ে যায়।
দারুণ মায়াবী লেখা, খুব সুন্দর।
LikeLike