রামায়ণ কিন্তু মহান রাবণ আর লজ্জিত রাম
শিঞ্জিনী লাহিড়ী
রামকে বনবাসে যেতে বলেছেন দশরথ। কিন্তু রাম পড়েছেন মহা বিপদে। একে জঙ্গল, তায় আবার একা। সীতা প্রায়ই রামকে যেরকম উঠতে বসতে বকা দেন, জঙ্গলে একা একা থাকতে হবে শুনে আহ্লাদে আটখানা হবেন! তো অনেক ভেবে লক্ষ্মণকে বললেন, “ভাই, প্লিজ তুই আমার সঙ্গে চল, আমি একা যাব।”
লক্ষণ চমকে উঠে বললেন, “আমাকে মাপ কর। তুই কী চাস? জঙ্গলে বৌদি আমার ঘাড় মটকে দিক?”
রাম ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, “সে কি রে! সীতাও যাবে নাকি?”
“তাহলে আর বলছি কী? ভেতরে শুনে এলাম বৌদিও যাবে!”
রাম কাঁদো কাঁদো স্বরে বললেন, “ভাই, এবার তো তোকে যেতেই হবে। আমাকে একা পেয়ে তো আমার ছাল ছাড়িয়ে দেবে! তুই আমার নিজের ভাই না! প্লিজ চল।”
“এ তোর অন্যায় জেদ। নিজে বিপদে পড়েছিস, আমাকেও ফেললি।”
এতখানি পড়ে মনে হতে পারে যে শুধুই মজা। কিন্তু আমার চোখে সীতাই শক্তি। অনেক অন্যায় তাঁর সঙ্গে হয়েছে, এবার উলটো রামায়ণের পালা।
এখানে রাবণ আর রাম ছোটবেলার বন্ধু।
যাবার আগের দিন রাম চুপিচুপি যান রাবণের বাড়ি। “কী রে রাবণভাই, কেমন আছিস?”
“আরে রাম! এতদিন পরে? কী খবর বল।”
“ভাই, আর বলিস না। কৈকেয়ী মায়ের চাপে কাল বনে যাচ্ছি, চোদ্দ বছরের জন্য।”
“সে কি রে!”
“আরে এর চেয়েও ভয়ানক হচ্ছে তোর বৌদি যাচ্ছে আমার সঙ্গে!”
রাবণ চুপ করে রইলেন।
রাম বললেন, “ভাই, জঙ্গলে এত বছর থাকব আর তোর বৌদি আমাকে প্রায় শেষ করে ফেলবে। লক্ষ্মী ভাই আমার, আমাকে বাঁচা।”
“আরে, আমি কী করব!”
“শোন, তুই জঙ্গল থেকে তোর বৌদিকে কিডন্যাপ করে নে ভাই, আমি ক’দিন শান্তিতে থাকব। তারপরে একটা মিছিমিছি যুদ্ধ করে আমি ঠিক ওকে নিয়ে রাজ্যে ফিরব।”
“এত মিথ্যে কি ঠিক? বৌদি জানতে পারলে কষ্ট পাবে।”
“আমাকে বাঁচা ভাই, প্লিজ!”
রাবণ ব্যাজার মুখে রাজি হলেন।
যাই হোক, বনবাসে গেলেন রাম, লক্ষ্মণ আর সীতা। প্ল্যান অনুযায়ী রাবণ এলেন। এসেই সীতাকে দেখে শ্রদ্ধায় তাঁর মাথা নিচু হয়ে গেল। “বৌদি, ও বৌদি, আমার সঙ্গে চলুন। এখানে একা একা কষ্টে আছেন…”
সীতা জানালেন, “মোটেই না। আমি কেন যাব? বেশ আছি এখানে।”
“আরে ওরকম করলে আমি খেলব না। যেতে তোমাকে হবেই।”
“দ্যাখ রাবণ, বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, মেরে মুখ ভেঙে দেব।”
“আহা, রাগছ কেন! দাঁড়াও, তোমাকে নতুন প্লেনে নিয়ে যাব।” বলেই রাবণ ইশারাতে তাঁর প্লেনকে ডাকেন।
প্লেন দেখে সীতার বেশ মজা লাগে। দারুণ দেখতে! এই সুযোগে রাবণ সীতাকে সোজা প্লেনে নিয়ে চেপে বসেন।
মাঝে অবশ্য একটু ঝামেলা করেছিল এক বুড়ো পাখি, কিন্তু সেসব এখন বলব না।
এদিকে রাম-লক্ষ্মণ ফিরে এসে দেখেন সীতা নেই। রাম বুঝে গেছেন, আর একটু খুশি খুশি ভাব। লক্ষ্মণ বেজায় ক্ষেপে গেলেন। “দাদা, কী ব্যাপার? বৌদি নেই, আর তুমি মিটিমিটি হাসছ? তুমি কি বৌদিকে একটুও সম্মান করো না?”
“ওই দেখ, চটছিস কেন? আমি দেখছি কী করা যায়। ক’দিন সময় লাগবে।”
যাই হোক, এদিকে অযোধ্যাতে খবর গেছে এইসব। রাজ্যে সবাই রামকে ছি ছি করছে রানি ছাড়া থাকার জন্য।
রামের প্রেস্টিজ ইস্যু। যাই হোক, রাম রাবণের বাড়িতে নিজে না গিয়ে প্রথমে হনুমানকে পাঠালেন পরিস্থিতি দেখার জন্য। হনুমান গিয়ে দেখেন সীতা বেশ আনন্দে আছেন। হনুমান নিজের পরিচয় দিতে সীতা বললেন, “শোনো। তোমার মালিককে গিয়ে বোলো, রাবণ এখানে আমাকে অনেক সম্মান দিচ্ছে, যত্নে রেখেছে। আমাকে যদি নিয়ে যেতে হয়, তাহলে রাবণকে লড়াইয়ে হারাতে হবে রামকে।”
হনুমান রামকে এসে বলেন এসব। রাম বেশ চিন্তায়—রাবণ তাঁর বন্ধু, কী করে লড়াই করবেন! কিন্তু লড়াই না করলে সীতা আসবেন না, আর রামও রাজ্যে ফিরতে পারবেন না।
উপায় নেই, যুদ্ধ করতেই হবে।
লড়াইয়ে গিয়ে কিছুতেই রাম রাবণকে মারতে পারছেন না, আর রাবণও রামকে। দু’জনে দু’জনকে জড়িয়ে ধরলেন। সীতা এই দেখে রেগে কাই। “তার মানে তোমরা প্ল্যান করে এসব করেছ? ঠিক আছে, যুদ্ধ যখন করোনি, আমিও ফিরব না।”
রাম বেগতিক দেখে বলেন, “সে কী করে হয়! তোমাকে ছাড়া আমাকে রাজ্যে ফিরতে দেবে না, আমার রাজা হওয়াও হবে না।”
“ও! তার মানে তুমি রাজ্যের লোভে আমাকে ফেরাতে এসেছ? এখন তো আরওই যাব না।”
“আরে আরে, করো কী! আচ্ছা, তুমি যা বলবে তাই হবে, প্লিজ চলো।”
সীতা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলেন, “রাবণ প্রকৃত বন্ধু। তোমার কথা শুনে আমাকে নিয়ে এসেছে, আবার আমার সম্মানও করেছে। তাই গেলে রাবণও সঙ্গে যাবে, নইলে নয়। আর ও অযোধ্যাতেই থাকবে।”
এহেন শর্ত শুনে রামের মুখ ব্যাজার। কিন্তু উপায় নেই। রাম বাধ্য হয়ে রাবণ আর সীতাকে নিয়ে অযোধ্যাতে ফিরলেন। সীতার সম্মান সারাজীবন রাবণ রক্ষা করেছিলেন।
ছবি: প্রেম বিশ্বাস
মজার রামায়ণ
LikeLike