মুকুটের আরেকটা লেখা-আঁকা মমি ফিরে আসবেই
সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত
মুকুট (দশম শ্রেণী)
পুজো শেষ হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে আমাদের যৌথ পরিবারের সবাই মিলে গেলাম ‘তাজপুর’ ভ্রমণে। তাজপুর কলকাতা থেকে চার/পাঁচ ঘন্টা দূরত্বে মেদিনীপুর জেলায় সমুদ্রের পাশে একটি ভ্রমণস্থল।
একটা ভাড়া করা বাস নিয়ে আমরা প্রায় পনেরোজন মিলে বেরিয়ে পড়লাম তাজপুরের পথে। সারা রাস্তা আমরা গান শুনতে শুনতে ও মজা করতে করতে চললাম যতক্ষণ না দিগন্তে মাঠ ও বাড়ি মিলিয়ে গিয়ে দেখা দিল সেই সুবিশাল জলের নীল রেখা।
গাড়ি থেকে ব্যাগপত্র নামিয়ে নিজেদের ঘরে গিয়ে গুছিয়ে বসতে লাগল প্রায় এক ঘন্টা। তারপর আসে দুপুরের খাওয়া, কমলা-হলুদ ঘন এক ঝোলে ডোবানো বড়ো চিংড়ি মাছের টুকরোর সঙ্গে ঝরঝরে সাদা ভাত, এই অসাধারন খাদ্য গ্রহণ করতে বেশিক্ষণ সময়ে লাগল না।
খেয়ে উঠে জামা পালটে দৌড় দিলাম সমুদ্রের দিকে। পুরো পরিবার মিলে সেই সমুদ্রের খেলানো ঢেউয়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করা, পড়ে যাওয়া ও হাসাহাসি করার মজাই অন্যরকম। বেশ ঘন্টা তিনেক চান করার পর ফেরত আসা হল হোটেলের ঘরে।
খানিক পরে সূর্যাস্তের সময় হয়। পায়ে হাওয়াই চটি পড়ে বেরিয়ে যাই সমুদ্রের ধারে। আকাশটা দেখে মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গীয় শিশুদের হাতে আঁকা। যেন কেউ নীল মহাজাগতিক পটভূমির উপরে ঢেলে দিয়েছে হলুদ ও লাল রঙ, যেভাবে সেই নীল রঙের মধ্যে লাল-কমলা রঙ মিশে সূর্যের মুখের আশেপাশে আকাশ জুড়ে এক নাচ নাচছিল, তা শব্দের মাধ্যমে বোঝাতে আমি অক্ষম।
আস্তে আস্তে সেই অসাধারণ রঙের খেলা মিশে যেতে থাকে রাত্তিরের গম্ভীর নীল-কালো ছায়ার সঙ্গে। এক ঠাণ্ডা ফুরফুরে হাওয়া বয়ে চলে সেই আলো-আঁধারির মধ্যে দিয়ে। প্রায় রাত হয়ে এসেছে, আকাশে ফুটে উঠেছে অসংখ্য তারা ও নক্ষত্রপুঞ্জ। তার মাঝখান দিয়ে নরম এক আলো ফেলেছে চাঁদ।
সমুদ্রের ঢেউ এসে পায়ে লাগে। জোয়ার উঠেছে।
এবার আমি ফেরত যাই।