ডানাওয়ালা মা
মহীরুহ দাশ। বয়সঃ ৪ বছর ২ মাস। ক্লাশঃ কেজি ২
মহীরুহর মায়ের কথাঃ মহীরুহ ঠিক কী ভেবে গল্পটা বলেছে আমার জানা নেই। তবুও জয়ঢাকের সৎ প্রয়াসে সামিল হতে আমি আমার চার বছরের ছোট্ট শিশুর মনগড়া এই গপ্পোকে যতটা সম্ভব ওর মতোই সরল রেখে পাঠালাম। আগেপিছে এলোমেলো কথাগুলোকে সাজিয়ে দিলাম বাংলায়। আসলে বাংলা বা ইংরেজি কোনও ভাষাতেই লেখার যোগ্যতা ওর এখনও তৈরি হয়নি। তাই মা হিসেবে এটুকু সাহায্য আমাকে করতেই হল। তবে ওর দেওয়া গল্পের নাম ‘Mother wings’ পরিবর্তন করতে হয়েছে বাংলা ভাষায় গল্পের স্বার্থেই। আশা রাখি মহীরুহর প্রয়াসে জয়ঢাক টিম অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
আমরা তখন সবে এসেছি ওই ভাড়া বাড়িটায়। আমাদের নিজের বাড়ি থেকে বেশ অনেকটাই দূরে। আমার ভালো লাগে না। লোকজন কেউই আমার চেনা নয়। আর মাও সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত। ঘরগুলো অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে। বাবা অফিস চলে গেলে আমি মায়ের পায়ে পায়ে রান্নাঘরে এসে দাঁড়াই। ঘরে একলা থাকতে আমার ভয় করে যে।
বেশ কিছুদিন এমন করেই চলছিল। কিন্তু তারপরেই একটা মজার কাণ্ড হল। মায়ের রান্নাঘরের জানালাটা খুলতেই পাঁচিলের আমগাছটা থেকে একটা কাক ওর জ্বলজ্বলে চোখে একবার মায়ের দিকে, একবার রান্না করে রাখা বাসনগুলোর দিকে তাকিয়ে তারস্বরে ডাকতে শুরু করল। মা তো সমানে ওকে জল ছুঁড়ে তাড়াবার চেষ্টা করে যাচ্ছিল; মুখ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিল। কিন্তু কাকটা কিছুতেই যাচ্ছিল না। আমি বিস্কুট দিতে যাচ্ছিলাম। মা রেগেমেগে আমার হাত থেকে বিস্কুট নিয়ে ছুড়ে ফেলতে যাবে কি পাখিটা ঝটপট করে জানালার গ্রিল গলে ভেতরে ঢুকে আসতে গেছিল। বাপ রে বাপ! মা চিলচিৎকার করে দিল ওর মুখের ওপর জানলাটা বন্ধ করে। তারপর থেকে মা খুব কম জানালাটা খোলে। খুললেও খানিকক্ষণ পরেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মায়ের পায়ে পায়ে আমি যখনই রান্নাঘরের মেঝেতে এসে দাঁড়াই, মা রান্না শুরু করে হাতা খুন্তির আওয়াজ হয়। তখনই ওপাশ থেকে পাখিটাও যে উশখুশ করে সেটা ভালোরকমই টের পাই। ওর হয়তো খুব খিদে পায়। আমিও খেতে দিতে চাই। কিন্তু মায়ের ভয়ে কিছু বলি না।
অনেকদিন কেটে যায়। আমরা পুরনো বাড়িতে কিছুদিনের জন্য গেছিলাম। ফিরে এসে দেখি গাছটা নেই। মা খুব খুশি। মা গল্প করছিল ভাড়া বাড়ির ঠাকুমার সঙ্গে। ঠাকুমা বলল, “গাছে পাখিটার দুটো ডিম ছিল। বাসাটাও ভেঙে গেছে। পাখিটা কিছুদিন খুব চেঁচিয়ে আর আসে না। বাঁচা গেছে।” ঠাকুমাও খুশি। পাখিটা খুব জ্বালাত যে! পাখিটা আর আসে না।
একদিন খুব ভোরে উঠে মা রান্না করছিল। আমি ঘুম থেকে উঠে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার হাতে একটা বল ছিল। সবেমাত্র রান্না চাপিয়ে মা জানালাটা খুলতে গেছে, একটা বিরাট বড়ো কালো পাখি ডানা ঝাপটে জানালা দিয়ে মাথা গলাতে চাইছিল। মা চিৎকার করে উঠেছিল। আমিও জড়িয়ে ধরেছিলাম মাকে। আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম, বিরাট বড়ো পাখিটার চোখটা জ্বলছিল। আর পাখিটাকে দেখতে হুবহু ওই কালো কাকটার মতো। পাখিটা কিন্তু খাবারের দিকে দেখছিল না।ও তাকিয়ে ছিল আমার হাতের বলের দিকে। আমার বলটার রং সাদা। ঠিক যেন ডিমের মতো।
দুর্দান্ত গল্প,
LikeLike
থ্যাঙ্কস
LikeLike