অনেক কাল আগে একটা বুড়ো লোক ছিল যে রোজ রোজ খোলা আকাশের তলায়, বরফের ওপর গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকত। কেন? সিল মাছ ধরবে বলে, আবার কেন। সে কান পেতে রইত কখন বরফের চাদরের ওপর গর্তগুলোর কাছে নিঃশ্বাস নিতে আসবে সিল। আর এলেই খপাত করে ধরে ফেলবে সে সেটাকে। কিন্তু সমুদ্রের অন্য পাড়ে একটা খাদ ছিল। তাতে সারাদিন খেলে বেড়াত একপাল ছেলে মেয়ে। আর বারবার তাদের তীক্ষ্ণ চিৎকারে বুড়োর শিকারে বাধা পড়ত। যেই হারপুন ফোটাতে যেত, ওমনি সিলটা কোন একটা আওয়াজে সতর্ক হয়ে গিয়ে চম্পট লাগাত। আর বুড়োর শিকার হত না। মনে মনে ফুঁসত সে।
এরকম করতে করতে ব্যাপারটা বুড়োর সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেল একদিন। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত ছড়িয়ে চিৎকার করে উঠল, “হে খাদ! বুজে যাও। যারা আমার শিকার দিনের পর দিন পণ্ড করছে, তাদের নিয়ে তুমি বুজে যাও!”
আর সঙ্গে সঙ্গেই উল্টোদিকের সমুদ্রতটের বরফের পাহাড়গুলো আস্তে আস্তে নড়তে চড়তে লাগল আর কিছুক্ষণের মধ্যেই খাদ বুজে আসতে লাগল। বাচ্চারা শুরুতে কী হচ্ছে বুঝতে পারেনি, কিন্তু ক্রমেই তারা চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগল। তারপর শুরু করল পালাতে। কিন্তু তাদের মাথার ওপরেই বুজে গেল খাদ। তারা সেখানেই আটকে পড়ল, আর বেরোতে পারল না।
তাই দেখে এবার বসতির লোকেরা বুড়োর ওপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। জাদু করে সে তাদের ছেলেমেয়েদের সে খাদে আটকে দিয়েছে কিনা!
বুড়ো প্রাণপণে পালাতে লাগল। কিন্তু লোকজনও তার পেছন ছাড়ল না। কিন্তু এক জায়গায় এসে যখন তার পা আর চলে না, তখন সে মোটমাট হাল ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কিন্তু ও মা এ কী! তার সারা গা দিয়ে একটা অদ্ভুত জ্যোতি বেরোতে লাগল, আর সে আস্তে আস্তে আকাশে ভেসে উঠতে লাগল। এরকম করতে করতে সে একটা জলজ্যান্ত তারাই হয়ে আকাশে টিমটিম করে জ্বলতে লাগল। আমরা এখনও তাকে পশ্চিম আকাশে দেখতে পাই, যখন রাত্রের পরে সকাল আসার তোড়জোড় করে। কিন্তু সব সময় দিগন্তের কাছাকাছিই থাকে, আকাশের গা বেয়ে উঁচুতে ওঠে না কখনই। আমরা তাকে ডাকি ‘নালোসার্তক’- যে দাঁড়িয়ে থেকে কান পেতে শোনে।
সে-ই আমাদের শুকতারা।
ইন্যুইট লোককথা