জলসাঘরের ভূত
মহাশ্বেতা
ইনুইটদের প্রতিটি গ্রামে একটা করে গান-বাজনা করার জলসাঘর থাকে। এই ঘরটাতেই উৎসব, আনন্দের সময় গ্রামের লোক গান-বাজনা করে, ভালমন্দ খাওয়া-দাওয়া করে একসাথে।
লোকে বলে যে এরকম প্রতিটি ঘরেরই নাকি নিজস্ব একটা করে ভূত থাকে। ভূতটা সর্বক্ষণ ঘরের মধ্যেই থাকে, ভুলেও কখনও বেরোয় না। এক গ্রামে থাকত একজন খুব কৌতুহলি মহিলা। লোকের মুখে সে এই জলসাঘরের ভূতের ব্যাপারে অনেক কিছু শুনেছিল আর তাই বহুদিন ধরে তার ভূতটাকে নিজের চোখে দেখবার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সে যতবারই তার এই ইচ্ছে প্রকাশ করে ততবারই গ্রামের লোক তাকে সাবধান করে দিত এই বলে যে সেই ভুত যদি কোনক্রমেও কাউকে দেখা দেয়, তাহলে তার দুর্ভাগ্যের আর শেষ থাকবে না। অতএব দেখবার চেষ্টা করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এক রাতে তার আর তর সইল না। গ্রামের সব লোক বাড়িতে শুয়ে টুয়ে পড়লে সে চুপিচুপি অন্ধকার একটা জলসাঘরে ঢুকল। ঢুকে সে জোর গলায় বলল,
“এই ঘরে যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সে আমাকে দেখা দিক!”
কিছুই হল না।
তাই দেখে সে আরও জোরে চেঁচিয়ে বলল, “তাহলে কোন ভূত নেই এখানে। কেউ যখন দেখা দিচ্ছে না।”
“এই যে আমি এখানে; ওই যে আমি ওখানে।” একটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় ফিসফিস করে কে যেন বলে গেল।
“তবে তোমার পায়ের আঙুল দেখাও দেখি।” মহিলাটি বলে উঠল কারণ সে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।
“এই তো এখানে; ওই তো ওখানে।” আবার সেই গলাটা বলে গেল।
“তাহলে তোমার হাঁটু কোথায়?” আবার প্রশ্ন করল মহিলা।
“এই তো এখানে; ওই তো ওখানে।” উত্তর দিল গলাটা।
মহিলা কিছুই দেখতে পারছিল না তাই সে তার দুই হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করল। হাত লাগাতে লাগাতে সে টের পেল যে তার সামনে সত্যিই একজন কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছে, একটা লিকলিকে লোক, বেঁকে দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাঁটুদুটোতে হাত পড়তে মহিলা দেখল যে সে দুটো বাইরের দিকে বাঁকানো।
সে একইসঙ্গে প্রশ্ন করতে লাগল একের পর এক, “তোমার কোমর কোথায়?”, “তোমার ঘাড় কোথায়?”, “তোমার গলা কোথায়?” আর প্রতিবার সেই ফ্যাসফ্যাসে গলাতেই কেউ উত্তর দিল, “এই তো এখানে; ওই তো ওখানে।”
সবশেষে মহিলা জিজ্ঞাসা করল, “তোমার মাথা কোথায়?”
“এই তো এখানে; ওই তো ওখানে।” ভূতটা ফিসফিস করে উত্তর দিল।
কিন্তু মহিলা হাত দিয়ে তার মাথাটা ছোঁয়া মাত্রই দড়াম করে পড়ে গিয়ে তৎক্ষণাৎ পটল তুলল। তাতে না ছিল হাড়, না ছিল চুল!
ছবিঃমৌসুমী