সন্ধ্যা ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০১৯ চতুর্থ স্থান- ওম সহেলী রায় শীত ২০১৯

এক

পদ্মাসনে বসল রিকি। বাঁহাতের ওপর ডানহাত রেখে একটা বড়ো শ্বাস নিল; তারপর ওম বলতে বলতে শ্বাস ছাড়ল। চোখদুটো বন্ধ। বন্ধ চোখের অন্ধকারে যেন একটা লাল গোলাকৃতি বিন্দু ঘুরছে। স্যর বলেছিলেন, একমনে আরাধ্য দেবতা বা গুরুজনকে স্মরণ করতে এইসময়। তিনি এসে বসবেন কোলের ওপর রাখা ঐ হাতে। রিকি এই অবস্থায় দেখে, ঐ গোলাকৃতি পথ ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঘুরছে। ওর হাতে যেন আলগা চাপ পড়ে। হালকা একটা স্পর্শ অনুভূত হয়। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে আসে ঠাণ্ডা স্রোত। সি.বি.এস.সি সিলেবাসে এখন মেডিটেশন অন্তর্ভুক্ত। তাই প্রতিদিন সুমন্ত স্যর রিকিদের মেডিটেশন করান ও তার গুণাগুণ বোঝাতে থাকেন। প্রথম ক’দিন এসব কিছুই হয়নি, তবে এখন প্রায় প্রতিদিনই সেই বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়ামে দেখা তারামণ্ডল ঘুরতে থাকে রিকির আশেপাশে। মনে হয় সমস্ত মাঠ জুড়ে রিকি একা, কেউ নেই কোত্থাও। বিশ্বায়ন, আরাত্রিক ওদেরকেও একদিন বলেছিল রিকি এই অদ্ভুত মুহূর্তের কথা। ওরা হেসেই কুটোপাটি। আরাত্রিক তো বলেই বসল, “হিমালয় থেকে স্বয়ং নটরাজ তাঁর নাচনকোঁদন ছেড়ে তোর কোলে চাপে, কাল এই উপলক্ষে বাড়ি থেকে টাকা এনে সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াবি।”

প্রকাণ্ড অট্টহাস্যে ভেঙে পড়ে ক্লাস টেন-বি। রিকি তখনকার মতো ব্যাপারটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেও চিন্তাটা যখন তখন বড্ড পেয়ে বসে তাকে।

বাড়িতেও খুব চুপচাপ হয়ে থাকে যেটা রিকির একেবারে স্বভাব-বিরুদ্ধ।

“প্রথমে সি.বি.এস.ই-র ঐ স্যরকে একটা থ্যাঙ্ক ইউ লেটার দেব, তারপর সুমন্ত স্যরকে। বাব্বাঃ! বকবকানিটা একটু কমেছে।” রিকির দিদি রিনির গলায় খুশির ধুম।

রিকির মা সৌমি হেসে খুন। “দ্যাখ, এটা শুনেও ভাই মিটিমিটি হাসছে শুধু। আগে হলে এক্ষুনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হত।”

“মা, এখন বাঁদরটাকে আমি যা খুশি বলব আর ও শুধু ধ্যান করবে।” রিনি খানিকটা মুখ ভ্যাঙচাল রিকির দিকে তাকিয়ে।

“রিনি, এবার কিন্তু বকব আমি। ভাইয়ের সামনে বোর্ড, এইসময় একটু শান্ত হওয়াই ভালো। ওকে একদম ডিস্টার্ব করবি না কিন্তু।”

সৌমির চোখ রাঙানিতে থামল রিনি। তবে চিন্তা সৌমির মাথাতেও ঘুরপাক খাচ্ছে। রিকির মতো দুরন্ত ছেলে এভাবে চুপ মেরে গেলে মায়ের মনে ঝড় তো বইবেই। কোনও সমস্যা হয়নি তো? হয়তো বলতে পারছে না। এটা বয়ঃসন্ধির সময়। ছোটোরা অনেকসময় গুটিয়ে যায় বৈকি। তবে রিকির পরিবর্তনটা চোখে পড়ার মতো। কর্মসূত্রে রিকির বাবা নীলাঞ্জন দার্জিলিংয়ের ঘুম শহরে থাকেন। নীলাঞ্জনকে জানাবেন কি একবার? জানালে আবার দুশ্চিন্তায় পড়বেন নীলাঞ্জন, এখন ছুটি নিয়ে আসাও সম্ভব নয়। শুধু শুধু চিন্তা বাড়িয়ে কাজ নেই। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সৌমি হাতের কাজ সারতে লাগলেন। আচ্ছা, ছোড়দাকে জানালে কেমন হয়? ছোড়দা হলেন রিকির ছোটোমামা, বিরাট বড়ো নিউরো-সার্জন অর্থাৎ নার্ভের ডাক্তার। ইউ.এস.এ-তে থাকেন। সৌমি জানেন ছেলের তেমন কিছু হয়নি, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই পরিবর্তনটাও হয়তো স্বাভাবিক, তাও রিকির ছোটোমামাও যদি একই কথা বলেন তাহলে একটু নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। মোবাইল তুলে টকটক করে মেসেজ লিখতে বসলেন সৌমি।

দুই

ওওওওওমমমম!

সমস্বরে অ্যাসেম্বলি গ্রাউন্ডে যখন তিনশো ছত্রিশ জন ক্লাস টেনের ছেলেমেয়ের দ্বারা শব্দটা উচ্চারিত হয় তখন চারপাশের বাতাস কেমন ভারী হয়ে ওঠে। আজ রিকির চোখের তারাগুলো বড়ো ধাক্কাধাক্কি করছে। একে অপরকে হালকা ছুঁয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে। শব্দহীন বিস্ফোরণ ঘটছে চোখ জুড়ে। আলোর ফুলকি ছড়িয়ে পড়ছে যত্রতত্র। কিছু কিছু আলো জমাট বেঁধে নতুন তারা হবার চেষ্টা করছে। ঠিক দিওয়ালির রোশনাই যেন। তুবড়ির মতো ঝরে পড়ছে সোনালি তারারা সব। মাটি স্পর্শ করেই মিলিয়ে যাচ্ছে। ওদের চেহারায় আর্তনাদের ছবি স্পষ্ট। সেই আর্তনাদের কোনও শব্দ নেই। এ কোন বোবা রাজ্য কে জানে? ওম শব্দের এত শক্তি রিকি জানত না। তার সারা শরীর পালকের মতো ভাসছে। হাতের তালুতে কেউ যেন স্পর্শ করছে। সে স্পর্শে যেন কোন শান্তির বার্তা আছে। মনের অস্থিরতা প্রশমিত করার মতো স্পর্শ। রিকির অন্তর শীতল হতে শুরু করে। তবে ও কী? একটি তারা তিরবেগে ছুটে আসছে। দিকশূন্যহীন হয়ে ছুটোছুটি করছে। রিকি দেখতে পাচ্ছে, প্রতিটি তারারই চোখমুখ আছে। ছুটে আসা তারাটি রিকির কপালের মাঝখান দিয়ে প্রবেশ করে ডানে বাঁয়ে ঘুরতে শুরু করেছে। কেউ যেন প্রবল তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাকে। রিকির চোখের এক্কেবারে কাছাকাছি এসে গেছে তারাটি। এ কী? এ তো হুবহু আরাত্রিকের মুখ! আরাত্রিক যেন কিছু বলতে চায়। ঠিক তখনই বাঁদিক থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অনেক তারা এগিয়ে আসছে। আরাত্রিক ডানদিকে ঘুরে গেল। না, পারল না। প্রবল ধাক্কা খেল। ছিন্নভিন্ন হয়ে খসে পড়ছে আরাত্রিক। রিকি শুনেছে, খসে পড়া তারা দেখা নাকি ভালো। কিন্তু রিকির ভালো লাগছে না। আরাত্রিক খসে পড়ছে, রিকির বুকে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। ‘বাঁচাআআআআআ!’ রিকির কানের পাশ থেকে আরাত্রিক পড়ে যেতে যেতে চিৎকার করছে। এই প্রথম ওই বোবা রাজ্যে এত হাহাকার শোনা গেল। রিকি ধড়মড় করে তাকাল।

“সুস্নাত! হোয়াট হ্যাপেনড, ডিয়ার? চোখ খুলছিলে না কেন? মেডিটেশন অনেকক্ষণ শেষ হয়ে গেছে।”

সুমন্ত স্যরের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সুস্নাত, ওরফে রিকি। “শেষ হয়ে গেছে?”

“ইয়েস মাই চাইল্ড, তুমি একাই ওঁম মন্ত্র বলছিলে চিৎকার করে। তোমায় আমি ডাকছিলাম, তুমি শুনছিলে না। তখন আরাত্রিক তোমার কানের কাছে গিয়ে জোরে ডাকল আর তাতেই তুমি তাকালে।”

রিকি দেখল, আরাত্রিক হাসছে ফিক ফিক করে। বাকিরাও হাঁ করে তাকিয়ে আছে রিকির দিকে।

“সরি স্যর।”

“না সুস্নাত, আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ। আমি এতদিন এটাই বোঝাতে চাইছিলাম, মেডিটেশন এমনই একটা কাজ যা তোমাকে বাস্তব জগত থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে। তুমি শুধু নিজের সঙ্গে থাকবে।”

রিকি এবার একটু লজ্জা পেল। বাকি বন্ধুরা হাততালি দিল। সুমন্ত স্যর ঘোষণা করলেন, রিকিকে নেক্সট অ্যাসেম্বলিতে অ্যাওয়ার্ড দেবেন। আর রিকি বাকি স্টুডেন্টদের গাইডও করবে।

***

“কী কেস বল তো? আমি তো মুখে ওম বলি আর চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই সোমনাথ স্যর আমায় বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ড্রইং কপি আনিনি বলে। বাই দ্য ওয়ে গাইস, আমি সত্যি আজ ড্রইং কপি আনিনি।”

সবাই হেসে উঠল বিশ্বায়নের কথায়।

“আজ ম্যাথস ম্যাম টেস্ট নেবেন। আমি তো চোখ বন্ধ করে ট্রিগনোমেট্রি প্র্যাকটিস করছিলাম।”

আরেক পর্ব হাসির রোল উঠল ঋদ্ধির বক্তব্যে।

“আরাত্রিক, আর ইউ ওকে?” রিকি লক্ষ করছিল, আরাত্রিক আজ একটু চুপ করে আছে।

“ওর আবার কী হবে? ও তো ম্যাথসে হায়েস্ট। কোনও ট্রিগোনোমেট্রি ওকে কাবু করতে পারে না, আর ড্রইংয়েও মাস্টার-পিস। তোর কান ঠিক আছে কি না দ্যাখ। পর্দা ফেটে যায়নি তো? আরাত্রিক যা হাঁ হাঁ করল, পুরো ওভার সিক্সটি ফাইভ ডেসিবেল।” বিশ্বায়ন চোখ নাচিয়ে কথা বলে যখন, ওকে বেশ লাগে দেখতে।

“ইয়েস। আমার কী হবে, আমি ওকে। তোর কেসটা বল তো। স্যর কীসব বলছিলেন, জগত ছাড়া-টারা হয়ে যাস…” আরাত্রিকের প্রশ্নে অস্বস্তি অনুভব করতে লাগল রিকি।

“দূর, আমি খুব কন্সেন্ট্রেট করার চেষ্টা করি। নাথিং এলস। আজ স্যরের ‘স্টপ’ ইন্সট্রাকশন শুনতে পাইনি।” রিকি একটু লজ্জা লজ্জা করে বলল।

“বলিস কী? আমি তো স্টার্ট বলার পর থেকেই স্যর কখন স্টপ বলবেন তার অপেক্ষা করতে থাকি।”

আবার একচোট হাসি। বিশ্বায়ন দুই হাত জোড় করে রিকির দিকে তাকিয়ে আছে।

থার্ড পিরিয়ডে ম্যাথস টেস্ট। রিকি এমনিতেই অঙ্ক ভালোবাসে না। আজ মনটাও ভালো নেই। যাওবা গতকাল প্র্যাকটিস করেছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে কিছুই পারবে না। বারবার চোখ চলে যাচ্ছে আরাত্রিকের দিকে। ওর কিছু হবে না তো? কেন এসব দেখল রিকি? মনের ভুল কি না জানেনা রিকি, তবে আরাত্রিককেও একটু চিন্তিত দেখাচ্ছে। ও কি কিছু লুকোচ্ছে?

তিন

“ডোন্ট বি ওরিড সৌমি, রিকি ইজ অ্যাবসোলিউটলি ওকে। এইসময় হরমোনাল চেঞ্জ হয়। ওদের মন, শরীর এগুলো অ্যাক্সেপ্ট করতে সময় নেয়। ওরা নিজেদের জগতে থাকতে ভালোবাসে। এটাকে বেশি পাত্তা না দিয়ে ওর সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ কর। সবসময় ওর বদলে যাওয়াটা নিয়ে কথা বললে ওর মনের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। সো চিয়ার আপ!”

রিকির ছোটোমামার সুদূর আমেরিকা থেকে ফোন আসার পর থেকে সৌমি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। তবে ম্যাথসের রেজাল্ট একদম ভালো করেনি রিকি। টিচার ডেকে পাঠিয়েছিলেন সৌমিকে। সেই নিয়ে একটা খচখচানি রয়েই গেছে। অঙ্কে খুব ভালো না হলেও এত খারাপও করে না রিকি। সেদিন মেডিটেশনে ঠিক কী ঘটেছিল তাও জানানো হয়েছে সৌমিকে। এতে স্পোর্টস স্যর খুশি হলেও সৌমির খুব অদ্ভুত ঠেকেছে। রিকি সাধারণত বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। মেডিটেশন তাকে এইভাবে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে, সে বহির্জগত অনুভব করতে পারছে না, এ তো বহু সাধনা করলে মুনিঋষিদের প্রাপ্ত হয় বলে শুনেছে সৌমি। ক’দিন মাত্র মেডিটেশন করে রিকি কীভাবে এই ক্ষমতা লাভ করল তা খুব আশ্চর্যের। যদিও সুমন্ত স্যর এটাকে খুব পজিটিভ সাইন হিসেবে প্রশংসাই করলেন।

“তোর অঙ্ক করতে ভালো লাগে না, তাই নিয়ে ভাবিস না। অঙ্ক ছাড়াও পড়াশোনা করার অনেক বিষয় আছে। তবে দুর্বল জায়গাগুলো বারবার প্র্যাকটিস করলে সেটাও স্ট্রং হয়ে যায়।”

রিকি যেন মায়ের কথাগুলো শুনেও শুনছে না। তারার কখনও চোখ-নাক-মুখ হয় নাকি? আরাত্রিক ছাড়া বাকি তারাগুলোর মুখগুলো ভাবার চেষ্টা করছে রিকি। নাহ্‌, তেমন চেনা কাউকে তো মনে হচ্ছে না। ওই অচেনা তারাগুলো ঐভাবে আরাত্রিককে ধাওয়া করছে কেন?

“হুম।” রিকি ছোট্ট উত্তর দিল।

“হুম কী রে? বল কিছু! কী করতে ইচ্ছে করে বল না আমায়।”

“মেডিটেশন।”

সৌমি অবাক হয়ে গেল। এ আবার কী ধরনের ইচ্ছে? একটা ভয়ও ঢুকে গেল। নাহ্‌, নীলাঞ্জনকে এবার না জানালেই নয়।

***

“আমার রিকির সঙ্গে কথা বলে ওকে একটু স্ট্রেসড লাগল। মেডিটেশন করার সময় ও কিছু জিনিস দেখতে পায় বলছিল। এসময় ছোটোদের মন খুব কল্পনাপ্রবণ হয়। এগুলো তারই ফসল। মেডিটেশনে কনসেন্ট্রেশন করলে বন্ধ চোখেও একটা আলো অনুভূত হয়। আর শিরদাঁড়ার লকগুলো খুলতে থাকে বলে শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নামে বলে মনে হয়। গোটা বডির ব্লাড সার্কুলেশন সেসময় খুব ভালোভাবে চলে কারণ, আমরা ব্রিদিংয়ে ওপর কনসেন্ট্রেট করি।”

নীলাঞ্জন আর সৌমি রিকিকে ‘মনন’-এ নিয়ে এসেছে। ডক্টর অহর্নিশি মিত্রের ক্লিনিক স্কুল। যেখানে আট থেকে আশি যাদের মন শারিরীকভাবে অসুস্থ তাদের সুস্থ করে তোলেন ডক্টর মিত্র। রিকির ছোটোমামার কাছে বারবার রিকিকে নিয়ে অস্থিরতা প্রকাশ করলে তখন উনিই এ ঠিকানা বাতলে দেন।

“এখন উপায়?” নীলাঞ্জন জানতে চান।

“কোথাও ক’দিন ঘুরে আসুন। এদের এখন এত চাপ—একটু চেঞ্জ, ফ্রেশ এয়ার জরুরি।”

দার্জিলিংয়ের ঘুমে থাকার সুবাদে নীলাঞ্জন ওদিকেই ব্যবস্থা সারলেন। আরাত্রিকের বাবা সন্দীপও নীলাঞ্জনের কলেজ-মেট। রিকিই আসলে অনুরোধ করেছিল আরাত্রিকও সঙ্গে গেলে ওর ভালো লাগবে, একজন সমবয়সী থাকবে। আরাত্রিকের বাবা-মাকে জানাতেই ওরাও রাজি গরমের ছুটিতে দিন পাঁচেকের ভ্রমণে। গন্তব্য কালিম্পংয়ের ছোট্ট গ্রাম কোলাখাম।

আরাত্রিকের দিকে বিপদ ঘনিয়ে আসছে একথা রিকির মাথায় চেপে বসেছে। ও কিছুতেই আরাত্রিককে ফেলে যেতে চাইছে না। আরাত্রিকরা যাবে শুনে অনেকটা নিশ্চিন্ত হল।

সন্ধেবেলা পড়তে বসার আগে সোজা হয়ে বসে হাতের ওপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ওঁম উচ্চারণ করল রিকি। তারাগুলো জুড়ে জুড়ে একটা সাদা পথ তৈরি হয়েছে। ঐ পথ বেয়ে আরাত্রিক আসছে প্রথমে ধীরগতিতে, তারপর দৌড়চ্ছে। পেছনে গুচ্ছ তারার দল, তবে সেসব তারারা অত উজ্জ্বল সাদা নয়। বাঁদিকের রাস্তাটা ফাঁকা, কিন্তু আরাত্রিক ডানদিকেই ঘোরে, তারপর ধাক্কা লেগে খসে পড়ে। আজ খসে পড়ার সময় বলে গেল, ‘সুস্নাত, তুই আরাত্রিক হয়ে যা।’

রিকি তাড়াতাড়ি চোখ খোলে। আমি আরাত্রিক হব? এ কেমন ধাঁধা? এ ধাঁধার সমাধানই বা কী? সত্যি কি কোলাখামে গেলে এসব ধাঁধা রিকির মনে থেকে পাখা মেলে উড়ে যাবে? রিকি চোখেমুখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে পড়ায় মন দেওয়ার চেষ্টা করল।

চার

রাত ন’টা নাগাদ শিয়ালদা থেকে দার্জিলিং মেলে উঠে রিকির খেয়াল হল, এর আগে ট্যাক্সিতে শিয়ালদা স্টেশন আসার সময় আরাত্রিক অসম্ভব চুপ ছিল, আর মাঝেমাঝেই জানালা দিয়ে মাথা বের করে পেছনদিকে দেখার চেষ্টাও করছিল। আরাত্রিকের মা স্বপ্না-আন্টি দু’বার ধমক দিলেন এই আচরণের জন্য। তাও আরাত্রিক ট্যাক্সির পেছনের বড়ো গ্লাস দিয়ে বারবার কিছু একটা দেখার চেষ্টা করছিল।

ট্রেনে সামনাসামনি মিডল বার্থে শুয়েছে ওরা। আরাত্রিক টুকটাক কিছু কথা বলে শুয়ে পড়ল। রিকির অনেক রাত অবধি ঘুম এল না। বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন যখন এল তখন প্রায় রাত বারোটার কাছাকাছি। কিছু লোকজন উঠল কামরায়। আবার ট্রেন চলতে শুরু করল। বর্ধমানের পর ট্রেন বেশ স্পিড নিয়েছে। কামরাগুলো অন্ধকার, মাঝেমাঝে টর্চ নিয়ে পুলিশ টহল মারছে। সবাই প্রায় ঘুমে আচ্ছন্ন। আরাত্রিকও গভীর ঘুমে ডুবে আছে। হঠাৎ একটা একটু কম জোরালো টর্চের আলো আরাত্রিকের মুখের ওপর পড়ল। রিকি চমকে উঠল। আলোর পেছনে যতদূর দেখা গেল মনে হল মাথায় চাদর জড়িয়ে কোনও লোক দেখছে আরাত্রিককে। টর্চের আলো রিকির দিকেও ঘুরল; রিকি তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করল। লোকটা টর্চ বন্ধ করে ডানদিকে এগিয়ে গেল। রিকি উঠে বসল। নেমে এল বার্থ থেকে। ডানদিকে হাঁটা শুরু করল। ওয়াশ-রুমের কাছাকাছি গিয়ে দেখল, দুটো লোক পেপার পেতে বসে আছে মাথায় চাদর জড়িয়ে। রিকি না দেখার ভান করে ওয়াশ-রুমে গেল।

পরদিন প্রায় ন’টা নাগাদ ওরা এন.জে.পি পৌঁছাল। কিষাণগঞ্জে অনেকক্ষণ ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। আরাত্রিক সকালে একবার ওয়াশ-রুম যাওয়ার সময় রিকিকে ইশারা করল ওর সঙ্গে যাবার জন্য। ওয়াশ-রুমের কাছাকাছি নানারকম লোক দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কালকের লোকদুটো কারা বুঝতে পারল না রিকি।

এন.জে.পি স্টেশনে রিকির বাবা নীলাঞ্জনের অফিসের বোলেরো অপেক্ষা করছিল। সেই গাড়িতেই রওনা দিল ওরা কোলাখামের উদ্দেশ্যে। আরাত্রিক এবারেও বারবার পিছন ফিরে দেখতে লাগল। চা-বাগানের শুরুতেই মিলিটারি এরিয়ায় ওরা গাড়ি দাঁড় করাল ব্রেকফাস্টের জন্য।

“বারবার পিছন ফিরে কী দেখছিস?” রিকি আর কৌতূহল চাপতে পারল না।
“কেউ ফলো করছে।”
দু’জনেই বেশ চিন্তিত।
“আরাত্রিক, যদি কেউ তাড়া করে বাঁদিকে যাস না প্লিজ।”
“মানে?”
“আমার মনে হয় তোর খুব বিপদ।”
আরাত্রিক মুখ নিচু করে ম্যাগির প্লেট ঘাঁটতে লাগল। “তুই জানলি কী করে?”
“মেডিটেশন। কাল তুই যখন ঘুমোচ্ছিলি কেউ তোর মুখে টর্চ ফেলছিল।”
দু’জনের মুখই কেমন সাদাটে হয়ে গেল।
“এখন কাউকে কিছু বলিস না, ওখানে গিয়ে সব ডিটেল বলব। তুই কবে থেকে জানিস আমার বিপদ হবে?”
“মাস খানেক ধরে মেডিটেশনে তোকে দেখতে পাই, তুই বাঁচতে চাস। কেউ আমায় বিশ্বাস করছে না। ডক্টর মিত্র আন্টি সব জানেন। উনি চেঞ্জে পাঠিয়ে দিলেন।”
“স্ট্রেঞ্জ! কিন্তু ঘটনাটা তো জাস্ট দু’দিন আগে ঘটেছে। তুই এত আগে…”

দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইল অসহায়ভাবে।

কোলাখামে চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা ছোটো ছোটো হোমস্টে। মেঘ উড়ে যাচ্ছে হোমস্টেগুলোর মাথা দিয়ে। নৈসর্গিক দৃশ্য। দুপুরে করণ থাপার হোমস্টেতে গরম গরম ভাত, চিকেনের ঝাল খেয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল গাড়ির জন্য। আজ ওরা ছাঙ্গে ফলস দেখতে যাবে করণ আঙ্কেলের গাড়িতেই। আরাত্রিক আর রিকির বেশ ভালো লাগছে জায়গাটা। মনে যাই থাকুক, দু’জনেই বেশ স্বাভাবিক আচরণ করছে। সৌমিও খুব খুশি। রিকির চনমনে ভাবটা যেন ফিরে আসছে।

“কী রে, ভালো লাগছে তো এখানে এসে?”

“মা, আমি আরাত্রিক হতে চাই।”

হঠাৎ রিকির অদ্ভুত চাহিদায় সৌমি আবার অবাক হন। “এ আবার কী কথা, রিকি?”

“আরে কিছু না, চলো ফলস দেখে আসি।” রিকি তাড়াতাড়ি সামলে নিল নিজেকে। কেন এমন কথা মাথায় এল, সে নিজেও জানে না। আদৌ ও বলল, নাকি কেউ বলাল, তাও বুঝতে পারছে না।

উঁচুনিচু পাহাড়ি পাকদণ্ডী পেরিয়ে গাড়ি চলেছে ছাঙ্গে ফলসে৷ সবাই খুব খুশি। আরাত্রিকও টুকটাক কথা বলছে। রিকিও চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকার। তবে মনে একটা ঝড় চলছে, ঠিক মেডিটেশনের জন্য চোখ বন্ধ করলে যেমনটা চলে।

গাড়ি থামল গন্তব্যে। এখান থেকে ফলস দেখতে প্রায় একশো পঞ্চাশ থেকে একশো ষাট ফিট নিচে নামতে হবে। ঘোরানো রাস্তা। আরাত্রিক তরতর করে নামতে লাগল। রিকিও পিছু নিল। বাকিরা ধীরে ধীরে আসছে। ওরা যত এগোচ্ছে, ঝরনার আওয়াজ তত স্পষ্ট হচ্ছে। বেশ গুরুগম্ভীর কলকলানি। আরাত্রিক ঘুরে দাঁড়াল। রিকি দেখল, আরাত্রিক কিছু একটা দেখছে, তারপরেই দৌড়তে লাগল। রিকির পাশ দিয়ে ঝড়ের বেগে একজন নেমে গেল। সে আরাত্রিককে ধাওয়া করেছে।

“আরাত্রিক বাঁদিক চেপে যা, ডানদিকে খাদ!” রিকির গলা দিয়ে চিঁচিঁ আওয়াজ বেরোল, কেউ শুনতেও পেল না।

বুকে অসম্ভব ব্যথা। চোখ বন্ধ করে নুইয়ে পড়ল রিকি। তারাগুলো দৌড়চ্ছে; রিকির কানের পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আরাত্রিকের পেছনে। আরাত্রিক কোনও দিকে লক্ষ করছে না। আতসবাজির ফুলকির মতো চারদিকে তারা খসে পড়ছে। আরাত্রিক ডানদিকে চলে যাচ্ছে। প্রবল ধাক্কা খেল কারও সঙ্গে, তারপর টুকরো টুকরো হয়ে বিলীন হয়ে গেল সব আলো। এখন নিকষ অন্ধকার। রিকি আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না।

পাঁচ

রিকির ছোটোমামা আমেরিকা থেকে এসে গেছেন, ডক্টর অহর্নিশি মিত্রও আছেন। মেডিকেল বোর্ড বসেছে। কলকাতায় ফিরে এসেছেন সকলে। সৌমি ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। আরাত্রিকের বাবা-মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

“স্ট্রেঞ্জ! আরাত্রিকের একটা বিপদ আছে একথা সুস্নাত আমায় বলেছিল, কিন্তু কীভাবে এই বিপদ হল জানা যাচ্ছে না।” অহর্নিশিকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে।

“আরাত্রিকের ব্রেইন ডেড, কিন্তু হার্ট এখনও ওয়ার্কিং। রিকি কোমায়। ওর ব্রেইন কাজ করছে কিন্তু হার্ট জাস্ট ভেন্টিলেশনের সাপোর্টে আছে। খুলে দিলেই… ওহ্‌ গড, আমি আর ভাবতে পারছি না।” রিকির ছোটোমামা চোখদুটো ঢেকে বসলেন।

“ছোড়দা, রিকির সঙ্গে আমার যখন শেষ কথা হয়েছিল, ও আমায় বলেছিল, ‘মা, আমি আরাত্রিক হতে চাই।’ এ কেমন ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল জানি না।”

সৌমির ফোন কেটে রিকির ছোটোমামা ল্যাপটপ খুলে কিছু দেখলেন, কয়েকজনকে ফোনও করলেন। আরাত্রিকের বাবা-মাকে ডেকে পাঠালেন।

“সন্দীপদা, আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। তাও আপনাদের যদি কনসেন্ট থাকে, আমরা একজনের মাধ্যমে দু’জনকে বাঁচিয়ে রাখতে পারি। আরাত্রিকের হার্ট যদি রিকিকে দেওয়া হয়, রিকির হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট…”

আরাত্রিকের মা খুব কাঁদলেন। ছোটোমামার হাত ধরে বললেন, “তাই হোক, ওরা একসঙ্গে থাকুক।”

প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে অপারেশন চলল কলকাতার অনেক নামিদামি ডক্টরদের টিম নিয়ে। নেতৃত্ব দিলেন রিকির ছোটোমামা। অপারেশন সাকসেসফুল, তবে বাহাত্তর ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাবে না জানালেন ডক্টররা।

প্রায় মাস দেড়েক হসপিটালে কাটানোর পর বাড়ি ফিরল রিকি। খুব দুর্বল। আরাত্রিকের বাবা-মা রোজ আসেন বাড়িতে রিকিকে দেখতে। ওঁরা এলে রিকির খুব ভালো লাগে।

“প্রিকগনিশন।”

এটুকু বলে কিছুটা থামলেন অহর্নিশি। আজ উনি রিকিকে দেখতে এসেছেন। কথা বলছেন রিকির ছোটোমামা, আরাত্রিক ও রিকির বাবা-মায়ের সঙ্গে। “আমাদের সাইকোলজিতে এরকম একটা টার্ম আছে, যেখানে মানুষ ভবিষ্যৎ দেখতে পায়। তবে বিজ্ঞানসম্মতভাবে রিসার্চ চললেও এর সঠিক ব্যাখ্যা এখনও মেলেনি। আমি বেশ কিছু মেডিকেল জার্নাল পড়ে জানতে পেরেছি, হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের পর রিসিভার ডোনারের অনেক বিহেভিয়ার গ্রহণ করে এমনকি ডোনারের সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনার কথাও বলতে থাকে। আমি রিকির সঙ্গে আবার সেশন করতে চাই। পুলিশ স্পটে কিছুই পায়নি। কিন্তু আরাত্রিকের কেন এমন হল আমাদের জানা দরকার অবশ্যই। শুধুমাত্র অলৌকিক ঘটনা বলে চুপ করে বসে থাকলে আরাত্রিকের প্রতি অন্যায় হয়।”

“অ্যাবসোলিউটলি ডক্টর মিত্র, আমিও আপনার সঙ্গে একমত।” রিকির ছোটোমামা ও বাকিরাও সমর্থন করলেন অহর্নিশিকে।

ছয়

একমাস যাবত রিকি রোজই আসছে মননে। অহর্নিশি আন্টিকেও তার বেশ লাগে। রিকি আজ একটা ছবি এঁকে নিয়ে এসেছে। আগে কোনওদিন ছবি এঁকেছে বলে ওর মনে পড়ে না। কিন্তু এখন ওর ম্যাথস করতে আর ছবি আঁকতে খুব ভালো লাগে। এবছর আর এগজাম দেওয়া হল না। পরের বছরের জন্য ও তৈরি করেছে নিজেকে।

“এটা তো দেখছি পাহাড়ের ছবি। আর এরা কারা?” অহর্নিশি জানতে চাইলেন।

“প্রথমের জন আমি। দৌড়চ্ছি, পেছনে ওরা আমায় তাড়া করছে।”

“কেন তাড়া করছে?”

“সেদিন স্কুলে ঢোকার আগে শুনলাম আমাদের ড্রাইভাররা যে কলোনিতে থাকে সেখান থেকে দুটো বাচ্চা উধাও হয়ে গেছে। বাচ্চাদুটোকে আমি চিনতাম, মাঠে খেলতে আসত। কয়েকদিন পর, ঠিক মনে পড়ছে না, আমি ট্রেনে কোথাও যাচ্ছিলাম। ওদের দেখতে পেলাম, একই ট্রেনে ছিল। আমি এগিয়ে গেলাম কথা বলতে, দুটো লোক হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেল বাচ্চাগুলোকে। একটা স্টেশনে ট্রেন হালকা স্লো হতেই ওরা নেমে গেল।”

“তারপর?”

“তারপর আমি দেখতাম সবসময় কেউ না কেউ আমায় ফলো করছে। এমনকি পাহাড়েও গেল ওরা। আমায় তাড়া করল। আমি দৌড়চ্ছিলাম, কেউ বলল ডানদিকে খাদ। ওদের একজনের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম…”

“ব্যস, রিল্যাক্স রিকি।”

অহর্নিশি মিস্টার শশাঙ্ক সেন, কলকাতা পুলিশের বড়কর্তাকে খবর দিলেন। কেসটা দার্জিলিং পুলিশ হয়ে ওঁর কাছেই এসেছে। রিকি সেই লোকগুলোর একজনের ফ্রন্ট-ফেসের আর বাচ্চাগুলোর ছবি এঁকে দিল।

শশাঙ্ক সেন অবাক। “আরে, এ তো কুখ্যাত কিডন্যাপার বাচ্চু! ওকে ধরার জন্য কবে থেকে ফাঁদ পেতে রয়েছি! থ্যাঙ্ক ইউ রিকি, তোমার বয়ান আমাদের কাজে লাগবে খুব। যে স্টেশনে ট্রেন স্লো হয়েছিল নাম বলতে পারবে?”

রিকি খুব অস্বস্তিতে পড়ল। সত্যিই ওর কোনও নাম মনে পড়ছে না। অহর্নিশিও স্ট্রেস দিতে চাইলেন না।

***

আজ খুব ভোরে ঘুম ভাঙল রিকির। জানালার পর্দা সরিয়ে দেখল আকাশে হালকা সিঁদুরে রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। রিকির মনে হল কেউ যেন আকাশে ওম লিখে রেখেছে। রিকির দিদি রিনি সারারাত পড়ে ভোরের দিকে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। রিকি আস্তে আস্তে ছাদে উঠে আসে। পদ্মাসনে বসে বাঁহাতের তালুর ওপর ডানহাত রেখে চোখ বন্ধ করে শিরদাঁড়া সোজা করে জোরে শ্বাস নিয়ে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওম উচ্চারণ করতে থাকে। কানের পাশ দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে ট্রেন পেরচ্ছে। কেউ খুব জোরে টর্চ ফেলছে রিকির চোখে, জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে ‘হালিশহর’।

শশাঙ্ক সেন ও তাঁর টিম হালিশহরেই অপারেশন চালিয়ে পেয়ে গেলেন বাচ্চু আর একঝাঁক বাচ্চাকে যারা সবাই কিডন্যাপ হয়েছিল। অহর্নিশি আরেকবার বললেন, “প্রিকগনিশন।”

রিকি রোজ চিঠি লেখে আরাত্রিককে। মনের সব জট পেরিয়ে এখন অঙ্ক ভালোবাসে রিকি।

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

1 thought on “সন্ধ্যা ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০১৯ চতুর্থ স্থান- ওম সহেলী রায় শীত ২০১৯

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s