অন্য অ্যাডভেঞ্চার
জয়তী অধিকারী
(১)
স্কুলে যেতে না পারলে অর্কর মনমেজাজ খুব খারাপ থাকে। বারবার ঘড়ির দিকে চোখ চলে যায় আর মনে হয় এখন হয়তো ঋপণরা লাইব্রেরিতে বসে আর্থার স্যারের কেমিস্ট্রির নোটস রেডি করছে, এখন হয়তো ব্রেক-টাইম, ওরা খেলছে। কিন্তু গত দশদিনের জ্বর অর্ককে একেবারে কাবু করে দিয়েছে। কী যে এক অজানা জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে শহরে! কত পড়া এগিয়ে গেছে! সব নোটস কালেক্ট করতে হবে। ক্লাস এইটে ওঠার পর থেকেই পড়ার চাপটা এত বেড়ে গেছে যে অর্ক এখন আর সাধের ভায়োলিনটাও বাজানোর সময় পায় না।
“দাদুভাই, জেগে আছ?”
দাদানের গলা শুনেই চাদরটা সরিয়ে উঠে বসল অর্ক। “হ্যাঁ, দাদান। তোমার ইভনিং ওয়াক হয়ে গেল?”
“ওই আর কি! একটু সামনের পার্কটা পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসি, বাচ্চাগুলো খেলা করে, দেখতে বেশ ভালো লাগে। এখন তো আর খেলার মাঠও দেখা যায় না বেশি।”
“আচ্ছা দাদান, তোমরা ছোটোবেলায় খুব খেলতে? না?”
মহীতোষবাবু একটু হেসে উঠলেন বটে, কিন্তু মনের কোথাও যেন একটা খারাপ লাগাও অনুভব করতে পারেন। সত্যিই তো, ওঁরা যা পেয়েছেন অর্করা তা পেল কই?
“হ্যাঁ, দাদুভাই। আমাদের ছোটোবেলায় তো এত পড়াশোনার চাপও ছিল না, আর সময়ের এত অভাবও ছিল না। বাপন, দিলু, ঝন্টে, প্যানা সব বন্ধুরা মিলে বিকেলে ঘোষপাড়ার মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে বেশিরভাগ দিনই তো বাড়ি ফিরতে সন্ধে হয়ে যেত।”
“তোমার মা তোমাকে বকত না?” অর্ক খুব অবাক হয়ে জানতে চায়।
“সে তো বকতই। সন্ধের আগে বাড়ি ফেরার নিয়ম ছিল তো। তারপর জামাকাপড় ছেড়ে হাতমুখ ধুয়ে আমরা জ্যাঠতুতো খুড়তুতো ভাইবোনেরা মিলে প্রার্থনা-সঙ্গীত গাইতাম।”
“জানি, মা বলেছে আমাকে। শ্রীরামকৃষ্ণস্তোত্র। আমিও জানি। ‘খণ্ডন-ভব-বন্ধন-জগ-বন্ধন-বন্দি তোমায়’… ঠাম্মা যখন ছিল সন্ধে-আরতি করার সময় গাইত।”
মহীতোষবাবুও যেন কিছুক্ষণের জন্য ফিরে গেলেন তাঁর কৈশোরে। বেশ কয়েকবার শোনা গল্পগুলো অর্ক বারবার শুনতে চায় তাঁর কাছে। তিনি নিজেও সেসব কথা বলতে বলতে পৌঁছে যান তাঁদের বাংলাদেশের সেই বিরাট বাড়িতে। তারপর দু’জনেই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। তিনি স্মৃতি রোমন্থন করেন, আর তাঁর নাতি গল্প শুনে শুনে কল্পনায় একটা ছবি আঁকতে থাকে।
(২)
বারো দিন পরে আজ অর্ক স্কুলে গিয়েছিল। একগাদা নোটস কপি করতে হবে। কিন্তু বন্ধুদের খাতাগুলোও সময়মত ফেরত দিতে হবে বলে বাবা বলেছে জেরক্স করে আনবে। কিন্তু আজ খুব মজা হয়েছে জিওগ্রাফি ক্লাসে। রজার স্যার তাদের সাথে এত মজা করেন যে পড়াটা একটুও গুরুগম্ভীর ব্যাপার বলে মনেই হয় না। আজ উনি শিখিয়েছেন কীভাবে গুগল-আর্থ দিয়ে কোনও জায়গা খুঁজে বের করা যায়। এই ব্যাপারটা বাবার সাথে বসে আজই না যাচাই করলে শান্তি হচ্ছে না অর্কর।
বাবা অফিস থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে চায়ের কাপ নিয়ে বসতেই অর্ক এসে হাত ধরে টানতে লাগল। “বাবা, প্লিজ তাড়াতাড়ি চলো। একটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে তোমার সাথে।”
ধ্রুবজ্যোতি একটু অবাকই হল। অর্ক সাধারণত কোনও বিষয় নিয়ে এত উতলা হয় না। খুবই শান্ত আর ঠাণ্ডা মাথার ছেলে। খুব চাপা স্বভাবের। সেটা নিয়েই মাঝে মাঝে চিন্তা হয়।
“আচ্ছা চল, কিন্তু কথাটা কি সিক্রেট কিছু?” একটু মজা করেই বলল ধ্রুবজ্যোতি।
“তোমার ল্যাপটপটা একটু চাই। আজ স্কুলে গুগল-আর্থ কীভাবে দেখতে হয় শিখিয়েছে। আমি একটু এক্সপ্লোর করতে চাই। প্লিজ বাবা…”
“আচ্ছা আচ্ছা, চল। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
বাপ-ব্যাটায় ল্যাপটপে মগ্ন হয়ে আছে দেখে অর্কর মা ওদের আর বিরক্ত করল না।
নিয়মমতো রাত ঠিক দশটা বাজতেই দু’জনে ডিনার টেবিলে হাজির। অর্কর মুখচোখে এখনও ক্লান্তির ছাপটা রয়ে গেছে। সেদিকে তাকিয়ে মহীতোষবাবু বলে উঠলেন, “ধ্রুব, ছেলেটাকে বেশি চাপ দিস না এখনই। ক’টা দিন যাক, এত ভুগে উঠল…”
“না বাবা, আমরা একটু বিশ্বভ্রমণ করছিলাম।”
“হুঁ, পাড়া-ভ্রমণের সময় হয় না তোমার, বিশ্বভ্রমণ!”
দাদু বকলে বাবার মুখটা দেখতে খুব মজা লাগে অর্কর।
“তোমায় কাল দেখাব দাদান, কেমন?”
এবার মা পাশ থেকে বলে উঠল, “সেই তো। দাদানের সাথে শেয়ার না করতে পারলে অর্কবাবুর কি খাবার হজম হবে?”
সকলেই হেসে উঠল। কারণ, কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি।
(৩)
“এই দেখো দাদান, এখান থেকে গুগল-আর্থ খুলতে হয়। তুমি যেখানে যেতে চাইবে, আমি তোমায় নিয়ে যেতে পারি। পুরো থ্রি-ডি, এরিয়াল ফটোগ্রাফি। বলো দাদান, কোথায় যেতে চাও।” কাল রাত্রেই বাবার কাছ থেকে শেখা জ্ঞান উজাড় করে দিল অর্ক।
মহীতোষবাবু একটু অবাকই হলেন। বিজ্ঞান আজ কত এগিয়ে গেছে! ঘরে বসেই পৃথিবীর যেকোনও জায়গা দেখা যায়! একটু চুপ করে থেকে বললেন, “একটু আমাদের বাপ-ঠাকুর্দার ভিটেটা দেখতে পেলে বেশ হত।”
অর্ক সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, “ঠিকানা বলো, ঠিকানা।”
মহীতোষবাবু একটু চুপ করে রইলেন। “সবটা মনে নেই, দাদুভাই। তবে ময়মনসিংহ জেলায়, মুক্তাগাছা—এটুকু মনে আছে। বয়স হচ্ছে তো, সবটা মনে পড়ে না।”
অর্ক দাদানের হাতের উপর হাত রেখে একটু চাপ দিয়ে বলল, “ওতেই হবে। আচ্ছা, এই আমি লোকেশন সার্চ করলাম ‘মুক্তাগাছা, বাংলাদেশ’ দিয়ে। এই দেখো জুম-ইন করলেই জায়গাটা বড়ো করে দেখাচ্ছে।”
মহীতোষবাবুও এবার ঝুঁকে পড়লেন ল্যাপটপের উপর।
“আর এই স্ক্রিনের ডানদিকের নিচে পেগম্যান ক্লিক করলাম। আর এই যে জায়গাটা হাইলাইটেড হয়ে আছে এটা দেখো স্ট্রিট ভিউ দেখাবে। মানে তোমার বাড়ি যেখানে ছিল, সেই রাস্তাটা। কিন্তু তুমি কি এখন চিনতে পারবে দাদান?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে।
মুক্তাগাছা থেকে প্রায় পনেরো-ষোলো কিমি দূরে তাঁদের জমিদারি ছিল। মহারানি বিমলাদেবীর স্মৃতিবিজড়িত জোড়মন্দির তো তাঁর পূর্বপুরুষেরাই দেখভাল করতেন! কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধের সময় যেভাবে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল, তাঁরা তো কোনওরকমে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিলেন শুধু। মূল্যবান পাথরের তৈরি বিগ্রহ আর রত্নখচিত গয়নাগাটির কী হয়েছে তার খোঁজ রাখার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
অর্ক প্রায় দিন পনেরো ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে পড়াশোনার গ্যাপটুকু মেক-আপ দিয়ে নিতে পেরেছে। আজ যখন ক্লাসে রজার স্যার বলছিলেন, “আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ মাই বয়!” অর্কর চোখদুটো চকচক করে উঠল। সে অর্কজ্যোতি রায়চৌধুরী, জমিদারি রক্ত বইছে তার শিরা-উপশিরায়। হারতে সে শেখেনি।
(৪)
পরদিন ঋপণ আর শতদ্রু ওদের বাড়িতে এলে অর্ক আবার গুগল-আর্থ খুলে বসল। ‘মুক্তাগাছা, বাংলাদেশ” সার্চ করতেই লাল বাউন্ডারি দেওয়া অঞ্চলটা গোল গোল ঘুরতে লাগল তার চোখের সামনে। জুম-ইন করতেই ‘জোড়া-মন্দির’ লেখাটা ভেসে উঠল। দুটো উলটনো ছাতার মতো পাশাপাশি দাঁড়ানো মন্দির দুটোরই ভগ্নদশা। অর্ক জুম-ইন করতে করতে মন্দিরের গায়ে যে একসময়ে অসাধারণ কারুকার্য করা ছিল সেটা উপলব্ধি করতে পারছে। অর্কর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে দাদানের বলা গল্পগুলো। হঠাৎই অর্ক মাথার মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করতে লাগল। হয়তো অতিরিক্ত মনঃসংযোগ করার ফল। এই জ্বরটা হওয়ার পর থেকেই তার এরকম হয়। অর্ক অবশ্য কাউকে কিছু বলেনি। বললেই আবার সবাই অনর্থক টেনশন করতে শুরু করবে। আবার ডাক্তারবাবু কিছু তেতো ওষুধ দেবেন। তার থেকে চুপচাপ থাকাই ভালো। ক’দিন পরে নিশ্চয়ই সেরে যাবে।
ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অর্ক ঋপণ আর শতদ্রুকে বলল, “আমাকে ছুঁয়ে থাক।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে যেন সেই মন্দিরের সামনেই পৌঁছে গেল। নিজেকে দেখতে পাচ্ছে অর্ক। বন্ধুদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে। “এই দেখ, এটা হল বাবা বিশ্বনাথের মন্দির, আর ওই পাশেরটা মা কালীর।”
ঋপণ আর শতদ্রু, দু’জনেরই মুখ হাঁ হয়ে গেছে। অর্ক কয়েকবার বলেছিল বটে যে ওদের পূর্বপুরুষ জমিদার ছিল। কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। এখন তো আর অবিশ্বাসের কোনও জায়গাই নেই। কিন্তু অর্ক এভাবে কী করে নিয়ে গেল ওদের?
“হ্যাঁ রে অর্ক, মন্দিরগুলো কত উঁচু রে! দেখতে গেলে তো ঘাড় ব্যথা হয়ে যাচ্ছে।” শতদ্রুর গলায় সম্ভ্রমের ছোঁয়া।
অর্ক বলল, “দুটো মন্দিরই একশো ফুট করে উঁচু। এদিকেরটা শিবমন্দির, আর ওপাশে কালীমন্দির।”
“তুই কী করে বুঝলি?” ঋপণের গলায় একটু যেন অবিশ্বাসের ছোঁয়া।
হা হা করে হেসে উঠল অর্ক। “এই দেখ, দুটো মন্দিরেরই মাথায় কারুকাজ করা সোনার কলস। কিন্তু এদিকের মন্দিরের মাথায় কলসের মধ্যে থেকে একখানা রুপোর ত্রিশূল উঁচু হয়ে আছে। এটার প্রতিটি ফলায় হিরে বসানো। সূর্যের আলো যখন এই ত্রিশূলের ফলায় পড়ে, প্রতিফলিত হয় জমিদারবাড়ির নাটমন্দিরে।”
“ওখানেও শিব আছেন?”
“না রে, ওখানে আছে আমাদের প্রতিষ্ঠিত কুলদেবতা শ্যামরাই, মানে রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি।”
“চল অর্ক, আজ বাড়ি যাই। কাল আবার আসব।”
“তোরা যা। আমি একটু দিঘির ঘাটে বসি।”
“দাদুভাই, কী করছ?”
দাদানের গলাটা যেন অনেকদূর থেকে ভেসে আসছে। কয়েক মিনিট সময় লাগল অর্কর ধাতস্থ হতে।
“দাদান, আমি মুক্তাগাছা গিয়েছিলাম।” ফিসফিস করে বলল অর্ক।
মহীতোষবাবু হেসে উঠতে গিয়েও অর্কর মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলেন। “তোমাদের এই কম্পিউটারের মধ্যে দিয়ে কি যেকোনও জায়গায় চলেও যাওয়া যায় দাদুভাই?” দাদানের গলায় এক অদ্ভুত আকুতি।
“তুমি আমাকে ছুঁয়ে বসে থাকো দাদান, আর আমার সাথে মুক্তাগাছার কথা ভাবো। ঠিক যেমনটা তুমি গল্প করেছিলে, সেইরকম।”
কিছুক্ষণ পরে দাদু আর নাতি দিঘির পাড়ে সান বাঁধানো ঘাটে বসে জোড়া মন্দিরের দিকে তাকিয়ে রইল। একজন ধুতি পরা পুরোহিত ডানহাতের বুড়ো আঙুলে পৈতে জড়িয়ে ইষ্টনাম জপ করতে করতে মন্দির প্রদক্ষিণ করার সময় মহীতোষবাবু অস্ফুটে বলে উঠলেন, “অমর ঠাকুর!”
চমকে পেছনে ফিরে তাকালেন পুরোহিত। “কে?”
“আমি মহীতোষ।”
“ছোটোবাবু! আপনি এসেছেন! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না! এবারে আপনাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে আমার মুক্তি।”
(৫)
“একাত্তরের যুদ্ধে সবকিছু ছারখার হয়ে গিয়েছে, ছোটোবাবু। বড়বাবু বড়-বৌরানিকে নিয়ে পালাতে গিয়ে মারা যান। বড়খোকাকে নায়েবমশাই মানুষ করেছেন। শুনেছিলাম আপনি আর ছোটো-বৌরানি ধ্রুববাবুকে নিয়ে প্রাণ বাঁচিয়ে পালাতে পেরেছিলেন। তারপর আর কারুর কোনও খবর পাইনি।”
অর্কর কাঁধে হাত রেখে মহীতোষবাবু বললেন, “এটি ধ্রুবর ছেলে।”
অর্ক এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করতে যেতেই ঠাকুরমশাই দু’হাত পিছিয়ে গেলেন, “না না খোকাবাবু, আমি আপনাদের প্রণাম নিতে পারি না। তা তোমার নাম কী?”
“অর্কজ্যোতি রায়চৌধুরী।”
“বেঁচে থাকো বাবা, দীর্ঘায়ু হও।” পৈতে জড়ানো বুড়ো আঙুল মধ্যমার গোড়ায় ছুঁইয়ে আশীর্বাদ করলেন অমর ঠাকুর।
“অর্ক, অর্ক!”
মায়ের গলা পেয়েই চমকে উঠল অর্ক। চমকে উঠলেন মহীতোষবাবুও। তাড়াতাড়ি সব বন্ধ করে দু’জনেই ফিরে এলেন কলকাতার ঘরে। দাদানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল অর্ক। অর্পিতা ঘরে ঢুকে ল্যাপটপ বন্ধ করে বেরিয়ে গেল।
“দাদান…”
অর্কর গলা শুনে মহীতোষবাবু কাঁপা কাঁপা হাত তার মাথায় রেখে বললেন, “এখন ঘুমিয়ে পড়ো দাদুভাই। আমরা কাল কথা বলব।”
“আচ্ছা। কিন্তু তুমি যেন বাবা বা মাকে এসব বোলো না দাদান। তাহলে…”
“আমি বুঝেছি দাদুভাই। এসো ঘুমোই।”
পরদিন রাত্রে সবাই শুয়ে পড়লে অর্ক একাই আবার গুগল-আর্থ খুলে বসল। মাথায় চিনচিনে ব্যথাটা আবার হচ্ছে। অর্ক মনে মনে ভাবল, কাল বাবাকে বলে ডাক্তারবাবুকে একবার চোখটা দেখাতে হবে। হয়তো পাওয়ার বেড়েছে।
অর্ক হাঁটতে হাঁটতে রাজবাড়ির ঠিক মাঝখানে এসে পৌঁছল। সাতমহলা বাড়ির কথা সে গল্পে পড়েছে আর দাদানের মুখে শুনেছে। কিন্তু এই প্রথম চাক্ষুষ করছে। প্রায় খেলার মাঠের সমান প্রাঙ্গণের ঠিক মাঝখানেই শ্বেতপাথরের রঙ্গমঞ্চ। দাদানের কাছে শুনেছে সে এটা একসময়ে ঘূর্ণায়মান ছিল। অত বছর আগেও প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করে এই রঙ্গমঞ্চকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ঘোরানো হত! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। তার পাশেই অত্যন্ত নান্দনিক কারুকার্যময় রাজরাজেশ্বরীর মন্দির। দাদানের মুখে শুনেছে, এই মন্দিরের পেছনেই ছিল রাজ-কোষাগার। হঠাৎ একটা শব্দ কানে আসতেই অর্ক ভয় পেয়ে রঙ্গমঞ্চের থামের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। দু’দিন আগেই পূর্ণিমা ছিল বলে চাঁদের আলোয় চারপাশটা আবছা দেখা যাচ্ছে। দুটো লোক মন্দিরের দিকে যাচ্ছে। তাদের গতিবিধি কেমন যেন সন্দেহজনক। মালকোঁচা দিয়ে পরা ধুতি আর মাথায় বাঁধা গামছার অন্য প্রান্ত মুখের উপর দিয়ে জড়ানো দু’জনেরই। তাদের একজনের হাতে একটা বস্তা আর অন্যজনের হাতে বল্লমের মতো কোনও অস্ত্র। অর্কও পা টিপে টিপে কিছুটা দূরত্ব রেখে তাদের পেছন পেছন যেতে লাগল।
লোকদুটো এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে মন্দিরের মধ্যে ঢুকে যেতেই অর্কও মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল। নাটমন্দির পেরিয়ে লোকদুটো ততক্ষণে গর্ভগৃহের ভারী লোহার দরজাটা খোলার চেষ্টা করছে। অর্ক মোটা মোটা থামের আড়ালে থেকে থেকে যতটা সম্ভব কাছাকাছি এসে একটা জাফরির আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। তার আফসোস হল কেন সে বাবার মোবাইলটা সাথে আনেনি। তাহলে পুরো ব্যাপারটাই তো রেকর্ডিং করে নিতে পারত।
“দরজাটা তো খোলা যাচ্ছে না। তালা দেওয়া আছে মনে হচ্ছে।”
“ভেঙে ফেল, হাতে সময় কম।” ভারী গলায় বস্তা-হাতে লোকটা বলল।
“শব্দ হবে তো।” অন্য লোকটা চারপাশে তাকিয়ে নিল একবার।
“সরে যা।”
বস্তাটা তালার উপর রেখে বল্লম দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করতেই তালাটা ভেঙে গেল। ভারী লোহার কারুকাজ করা দরজাটা দু’হাতে ঠেলে খুলে দিয়ে দু’জনে ঢুকে গেল ভেতরে।
এরা কী করছে এখানে! অর্ক এবারে নিশ্চিত হয়ে গেল যে এরা ভালো লোক নয়। না হলে রাতের অন্ধকারে মন্দিরের দরজার তালা ভেঙে এভাবে লুকিয়ে ঢুকত না। কিন্তু অর্ক যে একা, নিরস্ত্র! কী করবে সে এখন?
ঠং ঠং করে আওয়াজ আসতেই অর্ক আবার পা টিপে টিপে দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়াল। ভেতরে একটা মশাল হয়তো আগে থেকেই জ্বলছিল। সেটা অনেকটা পুড়ে গিয়ে এখন কিছুটা ম্লান আলো দিচ্ছে শুধু। কিন্তু মন্দিরের গর্ভগৃহ আলোকিত করার জন্য যথেষ্ট।
দু’জনেই দরজার দিকে পেছন ফিরে আছে বলে অর্ককে দেখতে পেল না। অর্ক আস্তে করে গর্ভগৃহে ঢুকে একপাশে রাখা স্তূপাকার বেল কাঠের আড়ালে গিয়ে বসে দেখতে লাগল। লোকদুটো বল্লমের চাড় দিয়ে রাধাকৃষ্ণর যুগল মূর্তিটা বেদী থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
অর্কর বুক কেঁপে উঠল। এই অমূল্য মূর্তি এরা চুরি করতে এসেছে মানে কেউ এদের পাঠিয়েছে। এই মূর্তির তো বিদেশের বাজারে প্রচুর দাম। আর এভাবেই তাদের দেশের সম্পদ সব বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে! কিন্তু অর্ক এদের আটকাবে কী করে?
লোকগুলো মূর্তিটা তুলে নিয়ে বস্তায় ভরে ফেলল। লম্বা লোকটা বস্তাটা পিঠের উপর ফেলে নিয়ে অন্য লোকটাকে একটা খোঁচা দিয়ে গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে গেল। অন্য লোকটাও বল্লমটা তুলে নিয়ে তার পেছন পেছন বেরিয়ে গেল। অর্ক ওদের পিছু নিল।
লোকদুটো এবার মন্দিরের পেছনে রাজ-কোষাগারের দিকে যাচ্ছে। অর্কর নিজেকে এত অসহায় লাগছে! না তার হাতে কোনও অস্ত্র আছে, না কাউকে জানানোর কোনও উপায় আছে। চোখের সামনে নিজেদের কুলদেবতার মূর্তি চুরি হতে দেখেও সে কিছুই করতে পারছে না। লোকদুটো যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারে, অর্ককে ওখানেই মেরে পুঁতে দেবে হয়তো।
(৬)
অর্ক মন্দিরের পাশেই লুকিয়ে বসে রইল। প্রায় মিনিট পনেরো বাদে কিছু একটা ঘষে নিয়ে আসার শব্দে অর্ক তাকিয়ে দেখল, লোকদুটো কোষাগারের দিক থেকেই আসছে। ওরা কিছু একটা টেনে নিয়ে আসছে। আরও কিছুটা এগিয়ে আসার পরে অর্ক বুঝতে পারল কোনও একটা মানুষকে ওরা হাতে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে দিঘির দিকে। অর্কর গলা শুকিয়ে উঠল। হঠাৎ কেউ একটা তার কাঁধে হাত রাখতেই অর্ক ভয়ে চিৎকার করে উঠল।
লোকদুটো সঙ্গে সঙ্গে থেমে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল। অর্কর কাঁধে যে হাত রেখেছিল সে ততক্ষণে অর্কর মুখে একটা কাপড় দিয়ে বেঁধে তাকে এক ঝটকায় কাঁধের উপর ফেলে রাজবাড়ির দিকে দৌড়তে শুরু করেছে। লোকদুটো কিছুটা দৌড়ে এসেও কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে গেল আগের জায়গায়।
রাজবাড়ির দালানে পৌঁছে অর্ককে নিচে নামিয়ে তার মুখের বাঁধন খুলে দিতেই অর্ক দেখল, তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক পেটানো চেহারার যুবক। তার চোখমুখ রাগে লাল হয়ে আছে।
“কে তুই? তোকে তো আগে দেখিনি।” অসম্ভব গম্ভীর গলায় ছেলেটি বলে উঠল।
“আমি অর্কজ্যোতি রায়চৌধুরী, এটা আমারই পূর্বপুরুষের বাড়ি।”
হা হা করে হেসে উঠল ছেলেটা। “তোদের বাড়ি? শোন, এসব চালাকি আমার সাথে করতে আসিস না, বুঝলি? এটা আমাদের বাড়ি। আমি হলাম সৌরজ্যোতি রায়চৌধুরী, দেবতোষ রায়চৌধুরীর নাতি।”
অর্ক এবার একটু হাঁ হয়ে গেল। এর কথা তো দাদান তাকে কখনও বলেনি! তাছাড়া জামাকাপড় দেখেও মনে হচ্ছে না যে এ রাজপরিবারের কেউ হয়। নিশ্চয়ই ওই চোরগুলোর দলের কেউ। এখন এ-বাড়ির ছেলে সেজে তাকে বোকা বানাচ্ছে।
“আমার দাদু মহীতোষ রায়চৌধুরী, বাবা ধ্রুবজ্যোতি রায়চৌধুরী। তোমার বাবার নাম কী?” অর্ক এবার একটু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞাসা করল। আরে বাবা, তার শরীরেও তো জমিদার-রক্ত বইছে!
“ধ্রুবজ্যোতি রায়চৌধুরী!” এবারে ছেলেটার গলায় বিস্ময়ের ছোঁয়া অর্কর কান এড়ালো না।
“তুমি আমাদের কুলদেবতার মূর্তি চুরি করাচ্ছ কেন?” অর্ক সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলে ধরল সৌরজ্যোতির দিকে।
“ওসব কথা পরে হবে। আগে আসল চোরদের ধরি চলো।” অর্কর হাতে একটা টান দিয়ে দিঘির দিকে দৌড় লাগাল সৌরজ্যোতি।
লোকদুটো ততক্ষণে দিঘির পাড়ে গিয়ে বসেছে। মাথার গামছা খুলে দিঘির জলে ভিজিয়ে এনে গা-মুখ মুছতে মুছতে লম্বা লোকটা বলছে, “দেখ তারক, মূর্তিটা ঠিক জায়গায় পৌঁছে দিয়েই ক’দিনের জন্য গা ঢাকা দিতে হবে।”
“সে আর বলতে! তবে তুই টাকাগুলো কোথায় রাখবি ঠিক করেছিস?”
“ওই শিবমন্দিরের মাথায় সোনার ঘটেই রেখে দেব। কেউ বুঝতেই পারবে না। আর ওখানে তুই বা আমি ছাড়া আর কেউ ওঠার সাহসও করবে না।”
“কিন্তু পুরুতের বডিটা কী করবি? তুই বড্ড মাথা গরম করিস। কী দরকার ছিল একেবারে মেরে ফেলার!”
“আরে আমি কি ইচ্ছে করে মেরেছি নাকি! রদ্দাটা মেরেছিলাম ঠিকই, কিন্তু বেকায়দায় গলার পাশে লেগে যাবে বুঝব কী করে!”
“এক কাজ করি চল। এই দিঘিতেই ফেলে দিই বরং।”
“না। দু’দিনে বডি পচে ভেসে উঠবে। মন্দিরের পেছনে পুঁতে দে গিয়ে। আমি এখানেই আছি।”
ওরা জানতেও পারল না, জমিদার বংশের দুই উত্তরপুরুষ ঘাটের পাশে ঝাঁকড়া গাছটার আড়ালে দাঁড়িয়ে সবটাই শুনে নিল।
অর্কর কাছ থেকে সমস্তটা শুনেও সৌরজ্যোতি কিছুতেই তাকে বিশ্বাস করতে পারল না। তবে ভোর হয়ে আসছে দেখে অর্ক তার জেঠুর ছেলের কাছ থেকে সেদিনের মতো বিদায় নিল।
“আর হয়তো তোর সাথে দেখাও হবে না।”
“নিশ্চয়ই হবে। আমি দাদানকে নিয়ে আসব। কথা দিলাম।”
অর্ক ল্যাপটপ বন্ধ করে দাদানকে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুম আর এল না তার।
(৭)
পরদিন রবিবার। সকালে লুচি-আলুর দম খেতে খেতে বাবা, মা আর দাদানকে অর্ক সমস্ত কথা বলল। কিন্তু বাবা আর মা পুরো হেসে উড়িয়ে দিল তার সব কথা।
“আজকাল কি অ্যাডভেঞ্চার একটু বেশি পড়া হচ্ছে অর্কবাবু?” বাবার গলায় প্রশ্রয় ছিল বটে, কিন্তু মজাটা যেন অনেক বেশি মাত্রায় ছিল।
আর মা শুধু মুচকি হেসে বলে উঠল, “গল্পের গরু গাছে ওঠে, আর অর্কর গরু গুগল-আর্থে চরে বেড়ায়।”
শুধু দাদান তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইল।
দুপুরে মহীতোষবাবু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অর্কর কাছ থেকে দ্বিতীয়বার সবটা শুনে ধ্রুবজ্যোতিকে ডেকে পাঠালেন।
“তোমার ছোটোবেলায় আমরা মুক্তাগাছা থেকে চলে এসেছিলাম। তোমারও হয়তো ওখানকার কিছুই মনে নেই। কিন্তু অর্কর কাছে আমি সবটা শুনে বুঝেছি, ও যা বিবরণ দিয়েছে তা নিখুঁত। আমার মনে হয় তুমি আমাদের মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা করো।”
“বাবা, আপনিও ওর কথায় বিশ্বাস করছেন? এরকম কখনও হয় নাকি! কেউ শুনলে ওকে পাগল বলবে, সাথে আমাদেরও।”
“আমি যা বলার বলে দিয়েছি, এবার তোমার বিবেচনা।” মহীতোষবাবু উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন।
দিন দশেক কেটে যাওয়ার পরেও ধ্রুবজ্যোতি বাংলাদেশ যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করছেন না দেখে মহীতোষবাবু নিজেই লোকাল থানায় গিয়ে হাজির হলেন। থানার বড়বাবু মিস্টার সান্যাল যদিও তাঁর একটা কথাও বিশ্বাস করেননি, কিন্তু এত বয়স্ক একজন মানুষকে আশাহত করতেও তাঁর বিবেকে আটকেছে।
“আচ্ছা, আপনি এখন আসুন। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে দেখব, কথা দিলাম আপনাকে।”
মহীতোষবাবু চলে যেতেই মিস্টার সান্যাল খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। বাংলাদেশে তাঁর কিছু বন্ধুবান্ধবও আছে। তাদের কাছে কোনওরকম মূর্তি চুরির কেস ফাইল হয়েছে কি না খবর নিলেন।
“আচ্ছা, যদি এই ধরনের কোনও খবর পাস আমাকে জানাস কিন্তু।”
“হঠাৎ মূর্তিচুরির কেস নিয়ে এত আগ্রহ দেখাচ্ছিস? এরকম কিছু হলে তো ইন্টারন্যাশনাল কেস হয়ে যাবে রে!” মজা করেই বললেন তাঁর বাংলাদেশী বন্ধু।
দু’দিন পরেই মিস্টার সান্যালের কাছে ফোন এল তাঁর বন্ধু শকিল আহমেদের। “একটা রাধাকৃষ্ণ মূর্তি চুরি গেছে। মুক্তাগাছার পুরনো জমিদারবাড়ির কুলদেবতা শ্যামরাই-এর মূর্তি। কিন্তু তুই জানলি কী করে দোস্ত?”
সান্যালও এবার একটু অবাকই হলেন। তাহলে কি মহীতোষবাবু সত্যি কথাই বলেছিলেন? কিন্তু উনি জানলেন কী করে?
বাড়িতে পুলিশ দেখেই অর্পিতা ছুটে গিয়ে ধ্রুবজ্যোতিকে ফোন করল। “শুনছ? বাড়িতে পুলিশ এসেছে।”
“সে কি! পুলিশ কেন?”
“তুমি তাড়াতাড়ি এসো, ওঁরা বলছেন মুক্তাগাছায় নাকি সত্যিই রায়চৌধুরী বাড়ির কুলদেবতার মূর্তি চুরি হয়ে গেছে।”
“আমি এখুনি আসছি। ওঁদের বসিয়ে কথা বলো ততক্ষণ।”
(৮)
দু’দিনের মধ্যে ব্যবস্থা করে ধ্রুবজ্যোতি বাবা আর স্ত্রী-পুত্রসহ পৌঁছে গেল মুক্তাগাছায়। সেখানে অফিসার শাকিল আহমেদ ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর ছিল সৌরজ্যোতি। তাকে দেখেই মহীতোষবাবু চমকে উঠলেন। এ যে অবিকল তাঁর দাদার মতো দেখতে! দু’হাতে বুকে টেনে নিলেন তাকে।
সৌরজ্যোতি আর অর্কজ্যোতির মুখে সবকিছু শুনে শাকিল আহমেদ তাদের নিয়ে চললেন থানায়। সেখানে কয়েকজনকে আটক করে রেখেছিলেন। তাদের সামনে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, “দেখো তো, এদের মধ্যে সেই দু’জন আছে কি না।”
সৌরজ্যোতি একটু বিরক্ত হয়েই বলে উঠল, “আমি কিন্তু আপনাকে আগেই জানিয়েছি যে তারক আর শিবুকে এলাকায় বেশ কয়েকদিন দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া আমরা দু’জনেই ওদের দেখেছিলাম অমর ঠাকুরের বডি মন্দিরের পেছনে পুঁতে দিতে। কিন্তু আপনি তো আমার কোনও কথাই শুনতে চাইলেন না।”
“সৌরজ্যোতি, এই এলাকায় তোমার এত বদনাম আছে যে তোমার কোনও কথাই আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। আমার তো তোমাকেই সন্দেহ হচ্ছিল। যাক, আমি এখনই মন্দিরের পেছনে খুঁড়ে দেখছি।”
মন্দিরের পেছন থেকে অমর ঠাকুরের পচাগলা লাশ পাওয়া গেল, আর শিবমন্দিরের মাথায় সোনার কলসের মধ্যে থেকে কুড়ি হাজার টাকা। মূর্তির হদিশ পাওয়া না গেলেও শাকিল আহমেদ দায়িত্ব নিলেন সেই মূর্তি খুঁজে এনে রায়চৌধুরীদের হাতে তুলে দেওয়ার। রায়চৌধুরীদের বংশপরম্পরা মেনে সৌরজ্যোতি আর অর্কজ্যোতির নিবেদিত অর্ঘ্যে আবার পূজিত হবেন শ্যামরাই।
অলঙ্করণঃ স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস