সন্ধ্যা ভট্টাচার্য সাহিত্য প্রতিযোগিতা ২০২০ নবম স্থান-ইতিহাসের অলিন্দে অনিন্দ্যবুকু চ্যাটার্জি বসন্ত ২০২০

সন্ধ্যা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য প্রতিযোগিতা’২০১৯। নবম স্থান

ইতিহাসের অলিন্দে

অনিন্দ্যবুকু চট্টোপাধ্যায়

আমার বন্ধু ইতিহাস গবেষক দৃপ্তনারায়ণ বণিক সেবারে ফের একবার আমাকে জোরজবরদস্তি তার ভ্রমণসঙ্গী বানালে। এমনিতে আমি ভ্রমণপিপাসু, কিন্তু দৃপ্তর সঙ্গে যেতে হবে জেনে খানিক ইতস্তত করতে লাগলাম। কাজের বাহানা দিতে লাগলাম নানারকমের। কিছুই ধোপে টিকল না। আমার কোনও কথায় তিলমাত্র আমল না দিয়ে দৃপ্ত বলপূর্বক আমার টিকিটটা কেটে ফেললে। যাওয়ার দিন সকালবেলা প্রায় আমার ঘাড় ধরে নিয়ে গেলে হাওড়া স্টেশনে। সেখান থেকে এলাহাবাদগামী ট্রেনে চেপে বসলাম আমরা। হুইসল বাজিয়ে ট্রেন ছেড়ে দিল যথাসময়ে।

দৃপ্তর সঙ্গে বেড়াতে যাবার আমার প্রবল আপত্তির প্রধান কারণ হল, বেড়াতে গিয়ে সে আমায় তার ইতিহাসের ছাত্র বানিয়ে ফেলে। ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখতে দেখতে সে জায়গার বিস্তারিত ইতিহাস সে আমায় বলে শোনায়। ইচ্ছা না থাকলেও অম্লানবদনে আমাকে শুনে যেতে হয় দৃপ্তর লেকচার। এক্কেবারেই ভালো লাগে না আমার ইতিহাস নিয়ে ওসব অসহ্য ঘ্যানঘ্যান শুনতে। আসলে ছাত্রবস্থায় ইতিহাস বিষয়টিকে মোটেই ভালোবাসতুম না। মাধ্যমিক শেষ হতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলুম—এই বুঝি ইতিহাস পিছু ছাড়ল আমার! কিন্তু তা যে হবার নয় সে জন্যই হয়তো আমার বাল্যবন্ধু দৃপ্তনারায়ণ বনে গেল ইতিহাসবিদ। আর বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে গিয়ে সে আমায় বানিয়ে ফেলে তার মনোযোগী ছাত্র। লেকচার দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রশ্নও করে সে আমায়। সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে জোটে তিরস্কার। যেমন গতবছর শীতে আগ্রা ফোর্ট বেড়াতে গিয়ে শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম বলতে না পারায় ভীষণ ক্ষেপে গিয়েছিল দৃপ্ত। এক দঙ্গল লোকের সামনেই এমনভাবে ঝাঁঝিয়ে উঠেছিলে আমার ওপরে যে সে আর বলবার কথা নয়। সেই থেকে ঠিক করে নিয়েছিলাম যে দৃপ্তর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া আর নয়। কিন্তু এবারেও ইচ্ছার বিরুদ্ধে দৃপ্তর সঙ্গে যেতে একরকম বাধ্য হলাম আমি।

চলন্ত ট্রেনেই দৃপ্ত শুরু করে দিল তার বক্তৃতা। আমরা যে জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি সেই রৌনাকাবাদের ইতিহাস নিয়ে বক্তব্য শুনতে থাকলাম। বহু প্রাচীন জনপদ এই রৌনাকাবাদ। সুলতানি আমলের একটা কেল্লা রয়েছে সেখানে। সেই কেল্লার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনা নদী। কালের প্রভাবে রৌনাকাবাদ কেল্লাটি প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়ে গেলে কী হবে, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসের বহু রাজারাজড়াদের পদধূলি পড়েছে এই কেল্লায়। বলে চলেছে দৃপ্ত, “ইতিহাসের বিভিন্ন নথি ঘেঁটে জানা গেছে যে শেরশাহ, শাহজাহান, আলাউদ্দিন খলজিরা নানাসময়ে পা রেখেছেন এই রৌনাকাবাদ কেল্লায়।”

দৃপ্তর বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে ঘুমে আমার চোখ প্রায় ঢুলে আসছিল। শেষে দৃপ্তই অব্যাহতি দিলে আমার এই করুণ অবস্থা দেখে।

পরদিন সকাল দশটা নাগাদ এসে পৌঁছলাম রৌনাকাবাদে। জায়গাটি বেশ গাছগাছালিতে মোড়া মনোরম পরিবেশ। কেমন যেন একটা আধা মফস্বল ভাব। গাড়িঘোড়ার বড়ো একটা বাড়বাড়ন্ত নেই, ঘোড়ায় টানা টাঙ্গাগাড়ি চলে এলাকায়। তারই একটা ধরে আমরা এসে উঠলাম স্থানীয় সার্কিট হাউসে। পর্যটকের ভিড় একেবারেই হয় না এখানে। তাই হোটেল-মোটেলের রমরমা নেই। শুধু দৃপ্তর মতন এমন ইতিহাস কৌতূহলী মানুষ, যারা কালেভদ্রে আসে এখানে, তাদের থাকার বন্দোবস্ত বলতে এই সার্কিট হাউসটাই ভরসা। কেয়ারটেকার কৃপাল সিং আমাদের খাতির-যত্নের ত্রুটি রাখলে না। দুপুরবেলা গরমাগরম ভাত আর সুস্বাদু মুরগির ঝোলও জুটে গেল আমাদের ক্ষুধার্ত পেটে। খাবার পর দৃপ্ত একবার হিড়িক তুলেছিল কেল্লায় যাবার জন্য, কিন্তু ওর আবদার খারিজ করে দিলাম আমি। আমার অবসন্ন দেহ তখন বড়োই তৎপর একটা ভাতঘুমের জন্য। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে একপশলা বৃষ্টি হল। তাই সেদিনের জন্য কেল্লায় যাবার পরিকল্পনাটা স্থগিতই রাখতে হল আমাদের।

পরদিন ভোরবেলা থেকেই ছটফটানি শুরু করে দিয়েছে দৃপ্ত কেল্লা দর্শনের জন্য। যার জেরে জলখাবারের পাট চুকিয়েই আমরা গিয়ে হাজির হলুম কেল্লার প্রবেশদ্বারে। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভগ্নপ্রায় কেল্লাটি। চারপাশের পরিখায় এসে ঢুকেছে যমুনা নদীর জল। কেল্লার মূল অংশটি এক্কেবারে ভেতরে, নদীর গায়ে। পাথুরে রাস্তা বেয়ে আমরা হেঁটে চললুম সেই দিকে। বেবাক ফাঁকা চারদিক, বিশেষ একটা কেউ আসে না এখানে। তবুও দৃপ্ত চেষ্টাচরিত্র করে স্থানীয় একজন গাইড জোগাড় করে ফেলেছে। অল্পবয়সী ছেলে, নাম ব্রিজেশ মিশ্রা। ব্রিজেশ আমাদের হাত-পা নেড়ে নানান জায়গার ঐতিহাসিক বিবরণ দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে।

খানিকটা পথ চলার পর একটা স্তম্ভের সামনে এসে দাঁড়ালাম আমরা। স্তম্ভটায় অচেনা ভাষায় কী যেন সব লেখা রয়েছে। ব্রিজেশ জানাল যে ভাষাটা মৈথিলী। তর্জমাটা সে বলে দিলে আমাদের যার মানে দাঁড়ায়, আত্মারা জীবিত হয়ে এখানে ফিরে আসে বারে বারে প্রতিশোধ নিতে। শুনে দাঁত বার করল দৃপ্ত। “জানিস তো, রাজস্থানের ভানগড় কেল্লার মতো এই কেল্লাটাও ভৌতিক। তোকে আগে বলিনি, জানতাম বললে তুই আসবি না।”

সত্যিই আর একবিন্দুও এগোনোর ইচ্ছা নেই আমার। মধ্যবিত্ত বাঙালি আমি। ভূতপ্রেত, তন্ত্রমন্ত্র সবকিছু মানি। কিন্তু দৃপ্ত কিছুতেই ফিরতে দেবে না আমায়। ‘কিচ্ছু হবে না, কিচ্ছু হবে না।’ করতে করতে ঠেলে আমায় এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকল। কী আর করা! যার পাল্লায় পড়েছি, তার খপ্পর থেকে এত সহজে নিস্তার নেই।

কেল্লার মধ্যে ঢুকলাম আমরা। নানা স্থান দেখিয়ে ব্রিজেশ শোনাতে লাগল ইতিহাস বিবরণী, এখানে ইলতুৎমিস জল খেয়েছিলেন, এখানে হুমায়ুন স্নান করেছিলেন, এখানে সিকন্দর শাহ বসে পাশা খেলতেন, এমনসব নানান অসহ্যকর বৃত্তান্ত। দৃপ্ত হাঁ করে গিলছে সেসব কথা, আর আমার ভয়ে বুক কাঁপছে দুরুদুরু এই বুঝি প্রেতদর্শন হয়ে যাবে অচিরেই। ফের একটা লেখা দেখা গেল মৈথিলী ভাষায়। আরেকবার লেখাটার অনুবাদ পড়ে শোনাল ব্রিজেশ—গজে প্রবেশ, বজরায় প্রস্থান। এমন লেখার মানেটা কী তা মাথায় ঢুকল না।

কেল্লার একটা ঘরে এসে চোখে পড়ল কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো একটা সুবিশাল চিত্রকলা, শুঁড় তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা বিশাল হাতি। ব্রিজেশ জানাল যে সুলতানি আমলের এক অখ্যাত চিত্রকর ইকবাল ফিরদৌসির হাতে আঁকা ছবি এটি। দৃপ্ত তো অবাক। “সে কী, অ্যাতো দুর্মূল্য ছবি টাঙানো রয়েছে এখানে! চুরি হয়ে যায় না!”

শুনে মিচকে হাসল ব্রিজেশ। “এখানে আরও মূল্যবান জিনিস রয়েছে, সাহেব। আসল গুপ্তধন দেখেছেন কখনও?” বলেই দু’হাত বাড়িয়ে ছবিটা সরিয়ে ফেললে ব্রিজেশ। দেওয়ালের গায়ে একটা গর্ত কাটা রয়েছে। তা যেন কোন এক গোপন কুঠরির প্রবেশপথ! লোভে চকচক করে ওঠে দৃপ্তর দুই চোখ। এরকম একটা কিছুর অনুমান সে বই পড়ে করেছিল বটে। আমার মনে কিন্তু একটা কু ডাকছিল। গভীর একটা বিপদের গন্ধ ভেসে আসছিল নাকে। দৃপ্তকে ছোটোবেলায় পড়া একটা প্রবাদবাক্য মনে করানোর চেষ্টা করলাম, অতি লোভ ভালো নয়! কিন্তু নিষ্ফল চেষ্টা। দৃপ্ত ততক্ষণে সুড়ঙ্গে প্রবেশ করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছে।

দৃপ্তর দেখাদেখি আমিও প্রবেশ করতে বাধ্য হলুম সুড়ঙ্গে। আর যাই হোক, বন্ধুকে তো আর একা ছেড়ে দেওয়া যায় না! একটা সিঁড়ি নেমে গেছে নিচের দিকে। ব্রিজেশ কিছুতেই আসতে রাজি হলে না। বললে, “আপনারা যান সাহেব, আমি এখানে অপেক্ষা করছি আপনাদের জন্য।”

ব্রিজেশের না আসার কারণটা স্পষ্ট হল খানিক বাদেই। সিঁড়ির অধিকাংশ ধাপই ভাঙা এবং তা অসম্ভব পিচ্ছিল। প্রায় পিছলেই আমরা পড়ে গেলাম নিচের গোপন কুঠরিতে। কুটকুটে অন্ধকারে কিছু ঠাহর করা যায় না। ভাগ্যিস পকেটে করে ছোট্ট একটা ব্যাটারি টর্চ এনেছিলাম, সেটাই জ্বালালাম। টর্চের মৃদু আলোয় কুঠুরির দৃশ্য দেখে মাথা প্রায় ঘুরে গেল। কোথায় গুপ্তধন! এ তো দেখছি সারি সারি নরকঙ্কাল পড়ে রয়েছে মেঝেতে! যেন কোন এক মৃত্যুপুরীতে এসে প্রবেশ করেছি আমরা। আতঙ্কে প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলাম, আর ঠিক তখনই স্বয়ং ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত হয়ে ভেসে বেড়াতে লাগল আমাদের চোখের সামনে।

এ যেন চলমান ইতিহাসের সামনে এসে হাজির হয়েছি আমারা। চোখের সামনে ঘটে চলেছে একের পর এক দৃশ্যপট, আর পাশ থেকে ফিসফিসে স্বরে ধারাবিবরণী দিয়ে চলেছে দৃপ্ত। প্রথমে দেখলাম দাড়িওয়ালা একটা লোক নির্দেশ দিচ্ছে সেনাদের, আর তারা হইহই করে ছুটে চলেছে শত্রুপক্ষের দিকে। দৃপ্ত বললে, “প্রথম পানিপথের যুদ্ধে মুঘল সেনারা আক্রমণ করছে ইব্রাহিম লোদীর সৈন্যদলকে।”

এরপর দেখা গেল, কমবয়সী একটা মেয়েকে মুকুট পরিয়ে বসানো হচ্ছে সিংহাসনে। ফের শোনা গেল দৃপ্তর ফিসফিসে গলা। “রাজিয়া সুলতানার রাজ্যাভিষেক।”

অসহ্য লাগছিল! সত্যিই অসহ্য লাগছিল দৃপ্তর এই বিবরণীগুলো শুনতে। ব্যাটা এখনও মজে রয়েছে ইতিহাস নিয়ে, আর আমি খুঁজে চলেছি এখন থেকে পরিত্রাণ পাবার রাস্তা।

তৃতীয় ভয়ংকর দৃশ্যটা দেখে চমকে উঠেছিলাম। একটা লোক তলোয়ারের এক কোপে নামিয়ে দিল আরেকজনের মুণ্ডু। ফের দৃপ্তর গলা শুনলাম, “ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে ভ্রাতা মুরাদের মস্তকছেদন।”

তরবারির ঝঙ্কারে ভয় পেয়ে লাফিয়ে ছিটকে গিয়ে আমি সরে এসেছিলাম একপাশে। দেখি সেই দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে আরেকটি তৈলচিত্র। একটা বিশাল পাল তোলা জাহাজের ছবি আঁকা রয়েছে সেখানে। হঠাৎ কেল্লার দেওয়ালে লেখা সেই কথাটা খেলে গেল মাথায়—গজে প্রবেশ, বজরায় প্রস্থান।

জানতাম যে ছবিটা সরালেই খুঁজে পাব উদ্ধারপথ এবং হলও তাই। ছবিটা সরাতেই আরেকটা সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া গেল। আর কালবিলম্ব না করে দৃপ্তকে নিয়ে নামতে থাকলাম সেই সুড়ঙ্গ বেয়ে। সোজা এসে পরলাম যমুনার ঠাণ্ডা জলে। কোনওমতে সাঁতরে ফিরতে হল নদীপারে।

ভেজা জামাপ্যান্ট পরেই চেপে বসলাম একটা টাঙ্গায়। রাগে মাথাটা তখনও দপদপ করে জ্বলছে। দৃপ্ত এখনও হয়তো ইতিহাসের ঘোরেই নিমগ্ন। টাঙ্গা ছুটল স্টেশন সংলগ্ন প্রতাপপুর এলাকায়। ব্রিজেশের মুখ থেকে শুনেছিলাম যে এই প্রতাপপুরেই তার বাড়ি।

প্রতাপপুর পোঁছে খানিক খোঁজাখুঁজি করতেই সন্ধান পাওয়া গেল ব্রিজেশের বাড়ির। সেখানে গিয়ে যা শুনলাম তাতে আমাদের আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। মাস ছয়েক আগে একদিন হঠাৎ কেল্লার ভেতর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় ব্রিজেশ। এখনও পর্যন্ত কোনও সন্ধান মেলেনি তার। আমার মন কিন্তু বলছে যে ঐ গোপন কুঠরিটায় পড়েই মৃত্যু হয় ব্রিজেশের এবং তার আত্মা জীবিত হয়ে ফিরে এসেছিল প্রতিশোধ নিতে।

রাতে ফেরার ট্রেনে উঠে প্রতিবারের মতো এবারেও সাফ জানিয়ে দিলাম দৃপ্তকে, “তোর সাথে এই আমার শেষ আসা।”

চোখ বুজিয়ে সিটে হেলান দিয়ে রয়েছে দৃপ্ত। বোধহয় সে ইতিহাসের অলিন্দের স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত এখন।

অলঙ্করণঃ স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s