সুব্রত নাগ
পাখিটা আজ সকাল থেকে স্টেডিয়ামের উপর চক্কর কাটছে। মেঘ আর কুয়াশার চাদর বিছানো থাকায় ইডেনের আকাশে এখনও সূর্য উঁকি দেয়নি। শেষ নভেম্বরের গঙ্গার হাওয়ায় কনকনে কামড় না থাকলেও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া স্যুইং বোলিং – এর জন্য আদর্শ। ইস্ট জোনের ক্যাপ্টেন আশিস মোহান্তি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল টীমের দুই পেস বোলার ধীমান মিশ্র আর উপল সরকার ওয়েস্ট জোনের টপ অর্ডারকে শুইয়ে দেবে। টস জিতে মোহান্তি তাই বোলিং নিতে দুবার ভাবেনি। মাঠ থেকে ড্রেসিং রুমে স্বস্তির যে হাসিটা নিয়ে ফিরেছিল, সেটা প্রথম দশ ওভার পর্যন্ত বজায় ছিল। থার্ড ওভারেই ধীমানের নিখুঁত ইয়র্কার বরোদার ওপেনার পীযূস গোয়েঙ্কার অফ স্টাম্প শুইয়ে দেয়। চার ওভার পরেই অন্য ওপেনার নীহার প্যাটেলের স্টিয়ার থার্ড স্লিপের হাতে জমা পড়ে। টু ডাউনে নামা দাভলকর ওদের সেরা ব্যাটসম্যান- টিপিক্যাল মুম্বাই ‘খাড়–শ’। কিন্তু শুরুতে দাভলকরকেও নড়বড়ে লাগছিল। বেনিফিট অব্ ডাউট -এ এল.বি.ডব্লুর জোরালো অ্যাপীল থেকে বেঁচে গেল; ধীমানের পরের ওভারের প্রথম বলটাই গুডলেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠে দাভলকরের গ্লাভসে লেগে গালি ফিল্ডারের একটু আগে পড়ল।
কিন্তু ড্রিংক ব্রেকের পর থেকেই ছবিটা পাল্টাতে লাগল। প্রথম তেরো ওভারে রান উঠেছিল মোটে একুশ; ব্রেকের পরের পাঁচ ওভারেই উঠে গেল সাঁইত্রিশ। সৌজন্যে দাভলকর নয় – ওয়ান ডাউনে নামা সন্দীপ কুলকার্নি। অল্পবয়সী ছেলে – আগের সিজনে আণ্ডার নাইনটিন ওয়ার্ল্ড কাপের সেরা ব্যাটসম্যান। এ বছরও রঞ্জিতে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি আছে। দলীপ ট্রফিতে ওই প্রথম নেমেছে আর নেমেই একটা স্কোয়ার কাট আর দুটো কভার ড্রাইভে নিজের জাত চিনিয়েছে।
আশিস মোহান্তির মুখের হাসি মিলিয়ে যাওয়ার আর একটা কারণ উপলের বোলিং। ধীমানকে সাপোর্ট দেওয়া তো দূরের কথা – রানটাও আটকাতে পারছে না। প্রথম দুটো ওভার ছাড়া স্যুইং নেই, গুড লেন্থে বল প্রায় পড়ছেই না। অথচ উপল তো ভালোভাবেই জানে দলীপ ট্রফির কোয়ার্টার ফাইন্যালের এই ম্যাচটা আসলে লিটমাস টেস্ট। উতরে গেলে ইণ্ডিয়া ক্যাপ পাবার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে। মিড্ অন – এ ফিল্ডিং করছিল বাংলারই সুবিমল মিত্র। ব্যাপার স্যাপার দেখে ট্রাউজারে বল ঘষতে ঘষতে এগিয়ে এল, ‘‘কী বল করছিস তুই? না আছে পেস, না আছে স্যুইং! নেটেও তো অনেক ভালো বল করিস। আজ কী হল তোর?’’
কী যে হয়েছে সেটা তো উপল ছাড়া আর কেউ জানে না; আরও মুশকিল সেটা অন্য কাউকে বলাও যাবে না। কুলকার্নিকে ব্যাট হাতে ক্রীজে দাঁড়াতে দেখেই পুরানো সেই দুঃস্বপ্নটা মাথার মধ্যে হাতুড়ি পিটতে থাকে। সেই স্টান্স! বল ছাড়ার সেই একই ভঙ্গি! দশ মাস, প্রায় দশ মাসই তো হতে চলল। অথচ মনে হয় সেদিনের ঘটনা!
লাঞ্চের আগে লাস্ট ওভার চলছে। লেগ স্পিনার নিখিল যাদব প্যাভিলিয়ন এন্ড থেকে বল করছিল। সেকেণ্ড বলে দাভলকর ফ্লিক করে একটা সিঙ্গলস্ নেয়। উপল ফিল্ডিং করছিল ডীপ মিড্ উইকেটে। মেঘ কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে শীতের মিষ্টি রোদ এখন ইডেনের সবুজ ঘাসে লুটোপুটি খাচ্ছে। থার্ড বলটা কুলকার্নি স্ট্রেট ড্রাইভ করলেও রান পেল না – সোজা বোলারের হাতে। পাখিটা এখন মিড্ অফ্ থেকে একস্ট্রা কভার হয়ে পয়েন্টের দিকে উড়ে যাচ্ছে।
‘‘ক্যাচ, উপল ক্যাচ,’’ সুবিমল চিৎকার করে উঠল। যাদবের লংহফে পুল করেছিল কুলকার্নি। মিস টাইম হওয়ায় বলটা অনেকটা উপরে উঠে গিয়েছিল। চটকা যখন ভাঙল উপলের তখন বলটা প্রায় মাটিতে পড়ার মুখে। প্রাণপণে দশ গজের একটা ¯িপ্রন্ট টেনে মরীয়া চেষ্টা করল – বলটা ডানহাতের বুড়ো আঙুল ছুঁয়ে একটা ড্রপ খেয়ে বাউন্ডারি পেরিয়ে গেল।
নেহাত হোম গ্রাউন্ড; নইলে যে হাজার বারোশ লোক খেলা দেখছে, টিটকিরি দিতে ছাড়ত না। মাঠ থেকে ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় সুবিমল প্রায় গালাগালি দেয়, ‘‘বাউন্ডারি লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে কি ঘুমোচ্ছিলি? সামান্য পিক আপে থাকলেই তো ক্যাচটা আরাম সে পেতিস। ভাইট্যাল ক্যাচটা মিস করলি!’’
চিফ সিলেকটর স্নেহাংশু ব্যানার্র্জীও ড্রেসিং রুমে দু’কথা শুনিয়ে যান, ‘‘কী হল উপল? জঘন্য বল করলে, ক্যাচটাও ঠিকমতো জাজ করতে পারলে না! কী ব্যাপার? ইন্ডিয়া খেলার ইচ্ছে নেই?’’
উপল জানে আজ বহুবার এই কথাটা শুনতে হবে ওকে। লাঞ্চে প্রায় কিছুই খেল না। মুখ ধুয়ে ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। ছুটির দিন বলে ইডেনে আজ কিছু দর্শক এসেছে। কাল থেকে হয়তো স্টেডিয়াম একেবারেই ফাঁকা থাকবে। কিউরেটর অবিনাশদা মালিদের নিয়ে পিচটা রোল করাচ্ছেন – নতুন করে চুনের দাগ কাটা হচ্ছে। ওখানেই, ঠিক ওখানেই ঘটনাটা ঘটেছিল! পা দুটো একবার টলে উঠেছিল, হাত থেকে ছিটকে পড়েছিল ব্যাটটা। ডান হাতে হেলমেটটা খুলতে গিয়েও পারে নি। তার আগেই গোটা শরীরটা অদ্ভূতভাবে বেঁকেচূরে শুয়ে পড়েছিল পিচের পাশে। উইকেটকিপার আর ক্লোজ-ইন-ফিল্ডাররা ছুটে এসেছিল। প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে উপল যখন পৌঁছেছিল তখন কান থেকে রক্তের একটা ধারা বেরিয়ে সাদা শার্ট ভিজিয়ে ঘাসের চাদর ছুঁয়েছে।
আম্পায়াররা তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডাকলেন। চটজলদি চলেও এল অ্যাম্বুলেন্স। আধ ঘন্টার মধ্যে নামি হসপিটালের ভেন্টিলেশনে যখন নিয়ে যাওয়া হল, তখন মুম্বাই-এর বিখ্যাত ব্যাটসম্যান বিজয় নিহালকর কোমায় চলে গেছে।
দুদিন পরেই নিহালকরের নিথর দেহটা বের করে আনা হল। দেশ বিদেশের কাগজে স্পোর্টস নিউজে হেড লাইন হল, মাথায় বল লেগে বিজয় নিহালকরের মৃত্যু। ঘাতক বোলার — উপল সরকার।
পিঠে একটা হাত এসে পড়তেই চমকে ওঠে উপল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে ক্যাপটেন।
‘‘হোয়াট হ্যাপেনড্? হোয়্যার ইজ ইওর ফায়ারি বোলিং? আমি কালকেও নেটে তোমার বেলিং-এ বারবার বিট হয়েছি। আর আজকে… এনিথিং রং?’’
মুখ না তুলেই উপল বলে, ‘‘আমি পারছি না স্কিপার।’’
‘‘হোয়াই? হোয়াটস্ রং উইথ য়ু?’’
‘‘নিহালকর,’’ বিড়বিড় করে উপল।
‘‘হোয়াট? হাউ ইজ হি অ্যাফেক্টিং য়ু?’’
‘‘বল করতে গেলেই ওর মুখটা আমার চোখে ভাসছে। আমার মনে হচ্ছে ক্রিজে উল্টোদিকে নিহালকর ব্যাট করছে।’’
‘‘লিসন্ উপল,’’ মোহান্তির গলাটা এবার নরম লাগে, ‘‘তুমি জানো, আমি জানি, ইচ অ্যান্ড এভরি ওয়ান জানে এবং শুধু জানে নয়, হোল হার্টেডলি বিশ্বাস করে ওটা ছিল একটা অ্যাক্সিডেন্ট। জাস্ট একটা অ্যাক্সিডেন্ট। য়ু কান্ট বি ভিক্টিমাইজড।’’
‘‘কিন্তু আমার বলেই তো চোটটা পেয়েছিল…’’
‘‘সো হোয়াট! যে কোনো বোলারের বলেই ঘটনাটা ঘটতে পারত। নাউ উপল, ওসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ম্যাচে কনসেনটেট করো। দাভলকর আর কুলকার্নির উইকেট দুটো আমি লাঞ্চের পরেই চাই অ্যান্ড য়ু শ্যুড্ টেক্ দ্য রেসপনসিবিলিটি। বাচ্চা ছেলেটার জন্য আমি শর্ট স্কোয়ার লেগ আর ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগ রাখছি। তুমি আর ধীমান ওভারে দুটো করে বাউন্সার দাও।’’
‘‘বাউন্সার?” চমকে ওঠে উপল।
‘‘হোয়াই নট? চলো, আম্পায়াররা মাঠে নামছেন।’’
সেদিনও তো বাউন্সারই দিয়েছিল উপল। হুক করতে গিয়েছিল নিহালকর। বলের উপর থেকে চোখটা মুহূর্তের জন্য সরে যাওয়ায় কান আর ঘাড়ের মাঝে সজোরে আছড়ে পড়ে বলটা। খুব কি জোর ছিল ডেলিভারিটায়? সাধারণত একশো পঁয়তিরিশের বেশি স্পিড নেই উপলের। তবে আগের দুটো ডেলিভারিকে পরপর বাউন্ডারিতে পাঠিয়েছিল নিহালকর। সেজন্যই কি বাউন্সারে বাড়তি গতি মিশিয়েছিল উপল?
প্লেয়াররা সিঁড়ি দিয়ে নামছে। টুপি আর সান গ্লাসটা নিয়ে উপলও দৌড়লাগায়। পাখিটা এখন ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের কাছাকাছি অলসভাবে উড়ছে। মেলবোর্ন, সিডনিতে সী গালদের মাঠে এসে ভিড়তে দেখা যায় কিন্তু ইডেনে কোনো পাখিকে এতক্ষণ……
মোহান্তি আবার এগিয়ে আসে, ‘‘একটু পরেই অ্যাটাকে আনব তোমায়। বি রেডি অ্যান্ড ফর হেভেনস্ সেক, ফরগেট দ্য অ্যাক্সিডেন্ট।’’
অ্যাক্সিডেন্ট তো নিশ্চয়ই। মাঠের প্লেয়াররা, আম্পায়াররা, সিলেকটর, এক্সপার্ট, কমেন্টেটর, রিপোর্টার, সবাই একবাক্যে বলেছিল নিছক অ্যাক্সিডেন্ট। এমনকি নিহালকরের ফ্যামিলির পক্ষ থেকেও কেউ উপলের দিকে আঙুল তোলেনি। শুধু একটা ব্যাপারেই খটকা লাগে উপলের। নিহালকর তখন বাহাত্তর রানে খেলছিল, ক্রিজে ছিল সাড়ে তিন ঘন্টা, বল দেখছিল ফুটবলের মত। তারপরেও ওরকম একটা বিনাইন বাউন্সারে প্রাণঘাতী চোট পেল কী করে? সেদিন নিহালকরের কাছে যখন ছুটে গিয়েছিল উপল, তখন প্রায় সেন্সলেস অবস্থা। তবু কীভাবে যেন একবার, মাত্র একবারই চোখ খুলে তাকিয়েছিল নিহালকর। উপলের দিকেই তাকিয়েছিল কি?
মৃত্যুগন্ধী সেই দৃষ্টিটা উপলকে যে কতবার তাড়া করে বেরিয়েছে! ঘুমাতে পারত না রাতে। ভেবেছিল খেলাই ছেড়ে দেবে। নামি সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে টানা তিন মাস সিটিং নেয়। শেষ মেষ বন্ধুবান্ধব আর বেঙ্গল সিলেকটরদের চাপাচাপিতে প্রায় মাসছয়েক পরে নেটে ফেরে। রনজিতে দিল্লী আর কর্ণাটকের বিরুদ্ধে দুটো ভালো পারফরম্যান্সের পরেই দলীপ ট্রফির জন্য সরাসরি ইস্ট জোনের দলে ঢুকে পড়ে। এতদিন খুব একটা অসুবিধা হয়নি কিন্তু আজ কুলকার্নিকে ব্যাট হাতে ক্রিজে স্টান্স নিতে দেখেই ওর হাত-পা কাঁপতে থাকে। দুজন ব্যাটসম্যানের এত মিলও হয়! নিহালকরের মতোই কুলকার্নিও স্টেপ আউট করে সুবিমলকে পরপর গ্যালারিতে ফেলল। ওই তো হাফ সেঞ্চুরি করার পর একই ভঙ্গিতে কুলকার্নি ব্যাটটা দোলাচ্ছে।
“উপল, কাম অন্,” মোহান্তি ডাকছে ওকে। উপল এগিয়ে যায়, “কী হল স্কীপার?”
মোহান্তি বলটা ছুঁড়ে দেয় উপলের দিকে, ‘‘যাও।’’
‘‘আমি?’’
‘‘হ্যাঁ। সেকেন্ড স্পেলটা যেন ফাটাফাটি হয়। চটপট দুটো উইকেট তুলে নাও।’’
বোলার্স এন্ড-এ যেতে যেতেই উপল বুঝতে পারে হাঁটুর নীচ থেকে কেমন অবশ লাগছে। এই মুহূর্তে ঝকঝকে রোদ্দুরের নীচে দাঁড়িয়েও শীতের চোরা ছোবলে কুঁকড়ে যাচ্ছে। প্রথম বলটা অফ স্টাম্পের বাইরে খাটো লেন্থ – এর। কড়াক্ করে একটা শব্দ হল। কুলকার্নির নিখুঁত স্কোয়ার কাট গালি আর পয়েন্ট চিরে বাউন্ডারিতে আছড়ে পড়ল। ‘‘নো টেনশন্, পরের ডেলিভারিটা উইকেট টেকিং হবে,’’ মিড অফ -এ দাঁড়িয়ে মোহান্তি উৎসাহ দেয়। কুলকার্নি এখন চৌষট্টি। উপলদের স্কুলের হেডমাস্টার একটা কথা ক্লাসে খুব বলতেন। এই মুহূর্তে সেটা পেটে আসছে তো মুখে আসছে না।
পরের বলটা পরিষ্কার হাফভলি। একস্ট্রা কভার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলটাকে মাটি কামড়ে ছুটে যেতে দেখল। এবার অধৈর্য লাগে মোহান্তিকে, ‘‘কী হচ্ছে উপল? হাফভলি দেওয়ার জন্য এই ফিল্ড প্লেস করেছি আমি? বাউন্সার দাও।’’
কী করে দেবে বাউন্সার? আবার যদি… হেড-স্যারের কথাটা এখনও হাতড়ে বেড়াচ্ছে উপল।
পরের ডেলিভারিটা লোপ্পা ফুলটস! স্ট্রেট ড্রাইভ, আবার চার।
ক্ষেপে গেছে মোহান্তি, ‘‘ইয়ার্কি হচ্ছে? আকটার দিস ওভার আই ওন্ট গিভ্ য়ু আ সিঙ্গল ওভার ইন দ্য হোল ম্যাচ। মাইন্ড ইট। ”
উপায় নেই, আর উপায় নেই। বলটা ট্রাউজারে ঘষতে ঘষতে বিড়বিড় করে উপল। নিহালকর বাহাত্তর রানে লুটিয়ে পড়েছিল, কুলকার্নিও এখন বাহাত্তর। সেই ইডেন গার্ডেন, বোলার সেই উপল সরকার! বিদ্যুৎচমকের মতো হেডস্যারের কথাটা মনে পড়ে যায়, ‘হিস্টরি রিপিট্স ইটসেলফ্,’ দুলে ওঠে মাথাটা। মিড অফ-এ দাঁড়িয়ে ক্যাপটেন চেঁচাচ্ছে, “কাম অন উপল, টেক উইকেট।” মিড অন থেকে সুবিমল চিৎকার করছে, ‘‘গুড বল হবে ইয়ার।’’
চোখ তুলে একবার পাখিটাকে দেখার চেষ্টা করল। দৌড় শুরু করল উপল। স্টান্স নিয়ে কে দাঁড়িয়ে আছে? কুলকার্নি না নিহালকর? হিট করল বলটা। নিখুঁত বাউন্সার, ফণা তুলে সাপের মতো ছোবল মারতে গেল। মুহূর্তের মধ্যে ব্যাকফুটে গিয়ে হুক করার জন্য ব্যাট তুলল কুলকার্নি। চোখ বন্ধ করে ফেলল উপল। ব্যাটসম্যান কি লুটিয়ে পড়ল ক্রিজে? নিঃসঙ্গ রক্তের ধারা কি আবার নেমে আসছে?
খুলব না, খুলব না ভেবেও চোখটা খুলেই ফেলল উপল। কই, কেউ তো মাটিতে পড়ে নেই! ফিল্ডাররা সবাই তাকিয়ে আছে ডিপ স্কোয়ার লেগের দিকে। উপরে, অনেক উপর দিয়ে লাল চেরিটা বাউন্ডারি পেরিয়ে স্টেডিয়ামে গিয়ে পড়ছে। গত দশ মাস ধরে জমে থাকা কান্নাটা এবার নির্বাধ বেরিয়ে আসতে থাকে। চোখের জলে দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার আগে শুধু দেখতে পেল সেই পাখিটাকে – ক্লাব হাউসের উপর দিয়ে উড়তে উড়তে একবার যেন ঘাড় বেঁকিয়ে পেছনে তাকাল। তারপর নির্ভার ডানায় উচুঁতে, আরো উঁচুতে উড়তে উড়তে হারিয়ে গেল।
অলঙ্করণঃ মৌসুমী