অণুগল্প অচেনা ফুল রাজীবকুমার সাহা শরৎ ২০১৯

       জয়ঢাকের সমস্ত  অণুগল্প

অচেনা ফুল

রাজীবকুমার সাহা

বইয়ের ব্যাগ পিঠে তোয়া যে হেঁটে আসছে, সে কিন্তু তার স্কুলের পথ নয়। ও-বাড়ির নিলুদের লাল ঝুঁটিওলা মোরগ টুকটুকির সঙ্গে তার বেজায় ভাব। ঝগড়াও কম হয় না। কাল একপ্রস্থ ঝগড়া শেষে যখন টুকটুকি গলা উঁচিয়ে বলেছিল, “আমায় মোরগ ভেবে হেলাছেদ্দা করিস নে, তোয়াদিদি। জানিস, আমার নামে ফুল হয়? তোর হয়? আমার এই লেজ আর ঝুঁটি ওই ফুলের চেয়েও সুন্দর,” তোয়ার কিন্তু বিশ্বাস হয়নি। সন্দেহের গলায় জিজ্ঞেস করেছিল, “সে কী ফুল শুনি?”

টুকটুকি নাম ভাঙেনি তখনই। বলেছিল, “নিজেই দেখবি চল, কাল স্কুলে যাওয়ার সময়। বেশিদূর নয়।”

শালপিয়ালের এই বনটায় ঢুকতেই তিন লাফে কোত্থেকে সাদা ফুটফুটে এক খরগোশ এসে পড়ল সামনে। তোয়া কখনও এত কাছে থেকে খরগোশ দেখেনি। চোখদুটো চিকচিক করে উঠল খুশিতে। টুকটুকি জিজ্ঞেস করে, “কী রে খরু, আছিস কেমন বল। ও তোয়াদিদি, ক্লাস ফোরে পড়ে। আমার নামের ফুল দেখতে এসেছে।”

এইবারে তিনজন রওনা হয় বনের আরও গভীরে। যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, পথ আর শেষ হয় না, সে ফুলেরও দেখা মেলে না।আরও খানিক এগোতেই খরুর বাড়ি এল। খরু বলে, “তোয়াদিদি তোয়াদিদি, বলছি কী, একটু জলটল খেয়ে জিরিয়ে নাও খানিক। বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”

তোয়া কী একটা দেখতে পেয়ে দৌড়ে গেল এক গাছতলায়। চিৎকার করে উঠল, “কী সুন্দর দোলনা বেঁধেছ, খরু! আমি একটু বসি উঠে?”

বসে নয়, উঠে শুয়েই পড়েছে জালের দোলনায় সে। খরু হাসিমুখে অল্প অল্প দোল দেয়। তোয়ার একটু তন্দ্রামতো এসে থাকবে। হঠাৎ টের পেল দোল নয়, খরু রীতিমতো ঝাঁকাচ্ছে জোরে। পড়ে যাওয়ার আতঙ্কে মুহূর্তে চোখ খুলে দেখে খরু নয়, মা ঠেলছে তাকে। একহাতে পেস্ট লাগানো টুথব্রাশ। চোখ পাকিয়ে বলছে, “শীগগির দৌড়ে বাথরুমে ঢোক। আজকেও স্কুলবাস মিস করবি বলে দিলুম।”

তোয়ার ছানাবড়া চোখ সহজ হয়ে আসে। ঝপ করে মায়ের গলা বেড় দিয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “মোরগের নামে কী ফুল হয় গো, মা? বলো না!”

অলঙ্করণঃ অংশুমান

জয়ঢাকের সমস্ত গল্প ও উপন্যাস

2 thoughts on “অণুগল্প অচেনা ফুল রাজীবকুমার সাহা শরৎ ২০১৯

Leave a comment