সিন্থিয়া নাজনীন
১
পাহাড় ও অরণ্যে ঘেরা সুন্দর গ্রাম সোনারা। এই গ্রামেই তাবু ফেলল ভিনদেশি স্যাম ও তার পরিবার। সে চমৎকার বাঁশি বাজায়। ঝুলিতে তার নানান ধরনের বাঁশি। সেই সাথে একেকটা বাঁশিতে সে ভরে রাখে নিজের হাতে তৈরি অপূর্ব সব সুগন্ধী।
ঠাণ্ডার দেশ। সন্ধের মধ্যেই সকলের কাজ শেষ। ফায়ার ক্যাম্প জ্বালিয়ে তাকে ঘিরে বসে গেল সুন্দর সুরের আসর। সুগন্ধী মেশানো বাঁশির সুর যখন দূর থেকে দূরে ছড়িয়ে পড়ল, তখন দুঃখী মানুষ সুখী হল, আর সুখী মানুষ আনন্দে হাসল। সুর শুনতে শুনতে সুগন্ধে মাত হয়ে একসময় সকলেই ঘুমিয়ে পড়ল। সকাল হতেই ভালোবেসে কেউ বলল, ‘তুমি সুরের রাজা’, কেউবা বলল, ‘ঘুমের দেবতা’। কেউ দিল ফল, কেউবা সবজি, মাংস কিংবা সাধ্যমতন টাকাপয়সা।
এভাবেই দিন এগোয় বেশ। তবে সুর ও সুগন্ধ তৈরি যত না তার পেশা তার চেয়েও বেশি নেশা। মাঝেমাঝেই তাই আকাশ-বেলুনে চেপে হাসতে হাসতে সে উড়ে যায় পাহাড়সংলগ্ন আকাশে। পাহাড়ি মেঘ আর পাখিদের গান শুনিয়ে, ফুলের নির্যাস নিয়ে আবার সে ফিরে আসে গ্রামের জীবনে।
একদিন আচমকা ঝড় এল। আকাশ-বেলুন পড়ল গভীর খাদে। সে আর ফিরল না।
২
ভীষণ মনখারাপ হওয়ায় স্যামের ছেলে স্যামুয়েল কোনও সান্ধ্য সুরের আসর বসাল না। গাঁয়ের এককোণে চাষের জমিতে চাষ করেই জীবন চলতে থাকল তাদের। শুধু স্যামের নাতি ভেন দাদুর বাক্স ঘেঁটে নানান ধরনের সুগন্ধী বাঁশি পেল, তাই-ই সে শখে বাজায় কখনও-সখনও। ঠাকুমা বলল, “আমিই সুগন্ধী ভালোবাসতাম বলে তোর দাদু পাহাড়-অরণ্যে যেতেন ফুল সংগ্রহ করতে। ওঁর স্বপ্ন ছিল একদিন এমন এক সুগন্ধী বানাবেন যা মিশিয়ে সুর বাজালে তার প্রভাবে আচ্ছন্ন হবে পশুপাখিরাও। কিন্তু তা আর হল না। তোর দাদু আর এলেন না।”
ঠাকুমার পরম স্নেহ-ভালোবাসায় বড়ো হতে থাকল ভেন। সে যখন তেইশে পৌঁছাল, গ্রামে এক বিচিত্র মহামারী এল। অনেকেই মারা গেল। ভেন ও তার ঠাকুমা ছাড়া সেই পরিবারের আর কেউ বাঁচল না। মনের দুঃখে দাদুর একটা বাঁশি নিয়ে বাজাতে বাজাতে ঘুমিয়ে পড়ল ভেন। ভোররাতে স্বপ্ন দেখল, সে বাজাচ্ছে সম্পূর্ণ এক নতুন সুরভী বাঁশি। যার সুর এক স্কেল থেকে বদলে আরেক নির্দিষ্ট স্কেলে বাজালে সৌরভে মাত হয়ে যাচ্ছে শুধু মানুষ নয়, যেকোনও পশুপাখি। স্বপ্নের শেষের দিকে মনে হল দাদু যেন স্পষ্ট বলছে, “যা যা, সময় নষ্ট করিস না রে দাদা, চমৎকার বাজাচ্ছিস। এই সুরভী বাঁশির নাম যে ‘বাইরেন’। এখনই তো বসন্তকাল। বড়ো পাহাড়ের ঝরনার পাশে গিয়ে দ্যাখ, গজিয়েছে লতানে গাছ ‘সোফিয়া’। সেই একই গাছে ফুল ফুটেছে পাঁচরকম যা কেবল প্রতি একুশ বছর পর পর একমাত্র এই বসন্তেই হয়। তাই দিয়ে বানিয়ে নিস সুগন্ধী। আনন্দের রেণু নিঃশ্বাস নিক সকলে। বাইরেন বাজা গিয়ে অরণ্যের সবচেয়ে বড়ো চেরিগাছটার কাছে। যা দাদা, শীগগির যা।”
স্বপ্ন ভাঙতেই ধড়ফড়িয়ে উঠল ভেন। বাইরেন? এমন সুরযন্ত্রের নাম তো সে কখনও শোনেনি। আর এমন মনমাতানো সুগন্ধ, সে সত্যিই পারবে তো বানাতে? তবুও দাদুর দেওয়া স্বপ্নাদেশ বলে কথা! ঝরনার পাশ থেকে আনা ফুলের নির্যাস দিয়ে সে বানিয়েই ফেলল সেই মাদকীয় সুগন্ধী। সেই সাথে অরণ্য থেকে কাঠ এনে তিনদিন দু’রাত জেগে তৈরি করে ফেলল নতুন এবং দুর্দান্ত সুরযন্ত্র বাইরেন। বাইরেন দেখতে অনেকটা সাপুড়ে-বাঁশির মতন। তবে আয়তনে আরেকটু বড়ো এবং একদিক দেখতে চোঙাসম। পুরোটা মিলে দেখতে ঠিক মোচার মতন। বাইরেন বাজালে সুর বেরোয় দারুণ গমগমে অথচ দিব্যি মনমাতানো এবং সুরেলা। বাইরেনে অনেকটা সুগন্ধ ভরে সে যখন সামান্যই ফুঁ দিল তখন সত্যিই মাদকীয় গন্ধে ভরে উঠল চারদিক। এমনকি গোয়ালের গরুটাও আনন্দে হাম্বা ডাকল। কাছেপিঠের পাখিরা সব কিচিরমিচির করে উঠল। খুশি মনে পুঁটুলিতে দিন সাতেকের শুকনো খাবার বেঁধে গাঁয়ের কাউকে কিছু না জানিয়ে শুধু ঠাকুমার আশীর্বাদ নিয়ে বাইরেন কাঁধে সে হাঁটা দিল সবচেয়ে বড়ো চেরিগাছের খোঁজে।
রঙচঙে টুপি মাথায়, গরম পোশাক গায়ে, কোমরে পুঁটুলি বাঁধা ভেন চলল সবুজ-হলুদ পাতা-পথ পেরিয়ে অরণ্যের গভীরে যেখানে চেরিগাছ হয়। আরও তিনদিন, তিনরাত পেরিয়ে হঠাৎ বেশ বড়ো চেরিগাছ তার নজরে এল। খাবারের পুঁটুলিটা পাশে রেখে গাছতলায় বসে মনভরে বাইরেন বাজাতে থাকল সে।
সেই চেরিগাছে ছিল দুই কাকাতুয়া – হ্যাপি আর জলি, আর এক দুষ্টু বাঁদর, মানকে। হ্যাপি, জলি আর মানকে তিনজনেই মহানন্দে দুলে দুলে নাচতে থাকল বাইরেনের সুরের তালে। সুর থামিয়ে ক্লান্ত ভেন যেই না গভীর ঘুম ঘুমিয়েছে, দুষ্টু মানকে সেই সুযোগে এক লাফিয়ে নিচে এসে ভেনের খাবারের পুঁটুলিটা নিয়ে পালিয়ে গেল। হ্যাপি আর জলি বারবার বলতে থাকল, “ওঠো, ওঠো। মানকেটা যে তোমার খাবার নিয়ে পালাল!”
ভেন কিছুই শুনতে পেল না। সে তখনও গভীর ঘুমে অচেতন। ঘুম ভাঙতেই তার দারুণ খিদে পেল। কিন্তু এদিক ওদিক তাকিয়ে খাবারের পুঁটুলি তো সে কোথাও পেল না। গাছের ওপর দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়ল দুই কাকাতুয়ার ওপর। চশমা ঠিক করে জলি বলল, “শুনেছি অনেক বছর আগে, তোমারই মতন সুর বাজিয়ে একজন ছিল যাকে সবাই ‘ঘুমের দেবতা’ বলত। আর তোমার সুরের সুগন্ধ যে অপরূপ! তুমি কে গো, ছেলে?”
ভেন তো অবাক। পাখিদের ভাষা ও কথা সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে। বলল, “সে তো আমার দাদুর কথা বলছ গো। আমি ভেন। তিনি তো বহুবছর আগেই পাহাড়ি ঝড়ে হারিয়ে গেছেন, আর ফেরেননি। তবে তাঁরই স্বপ্ন পেয়ে আজ আমি এখানে। আচ্ছা, তোমরা আমার খাবারের পুঁটুলিটা দেখেছ?”
“হ্যাঁ তো! দুষ্টু বাঁদর মানকে তোমার পুঁটুলি নিয়ে পালিয়েছে।”
“ঈশ্! এত ঘুমিয়ে গেছিলাম, না? কিন্তু, আমার যে এখন ভীষণ খিদে পেয়েছে। কী করি বলো তো?”
“আমরা তোমাকে খাবার দিতে পারি। বদলে আমাদের একটা উপকার করতে পার?”
খিদের জ্বালায় সায় দিয়েই দিল ভেন।
ব্যস! চেরিগাছটা ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে নাচাতে থাকল হ্যাপি আর জলি। ঝরঝরিয়ে ঝরতে থাকল সুস্বাদু চেরি ফল। সেই ফলের বেশ কিছু কোমরে বেঁধে, আরও কিছু জমিয়ে খেয়ে বেশ শান্তি হল ভেনের।
ভেন বলল, “বন্ধু, তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। এবারে বলো তো, আমি তোমাদের কোন উপকারে আসতে পারি?”
“ঐ যে দশ-বারো মাইল দূরে সারি দিয়ে দেখা যায় ওকগাছ, ঐ ওকের ঝাড় পেরোলেই পাবে এক খালি দুর্গ যেখানে একসময় জেঙ্কিন্স রাজাদের বংশধররা থাকত বেশ সুখেই। পাশেই রয়েছে মিষ্টি জলের ঝিল, নাম রুং টাং। সাথে মনোহর ঝর্না এবং দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকা ফারাং। উপত্যকা পেরোলেই ঠিক পৌঁছে যাবে সেই মফস্বল গ্রামে, যে গ্রামের নাম লাপাজ। লাপাজ গ্রামের সেরা আকর্ষণ জাদুকরী ডোরিথা বুড়ির চিড়িয়াঘর। সেখানে একবার গিয়ে দেখোই না, কী রকমারি কাণ্ডকারখানা চলছে। শুনেছি বিভিন্ন সাইজের খাঁচায় সে নাকি ধরে রেখেছে নানান ধরনের পশুপাখি। তারা নাকি জাদুবুড়ির ছড়ির তালে তালে খাঁচার সামনে ভিড় করে আসা দর্শকদের নানান খেলা দেখায়। বুড়ির এসব থেকে দারুণ আয়। সবথেকে কষ্টের কথা, সে ধরে রেখেছে আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে অ্যাঞ্জেলকে। সেখানের সব পাখিদের সেরা সুন্দরী যে কাকাতুয়া, সেই আমাদের মেয়ে।”
হ্যাপির বলা শেষ হতেই ডানার পালক দিয়ে চোখের কোনায় আসা জল মুছল জলি। সে বলল, “আমরা তো বেশ কয়েকবার মেয়ের কাছে যাবার চেষ্টা চালিয়ে ফিরে এলাম। ঐ যে ওকগাছের ঝাড় দেখছ, তার ওপারেই আদিবাসী উপজাতির বাস। ওদের তিরের নিশানা অব্যর্থ। নতুন কাউকে দেখলে শিকার হিসেবে ধরতে ওরা ওস্তাদ। মাটির দিক থেকে তিরের ভয় আর আকাশ জুড়ে উড়তে থাকা বাজপাখিদের চোখ এড়ানো দায়। একদম ছোঁ মেরে এসে খপাৎ করে ধরবে। আর পাহাড়ি উপত্যকা ফারাং শুনেছি দারুণ দুর্গম। তবে তোমায় দেখে ভরসা হল, ছেলে। তোমার সুগন্ধী সুরের যা জাদু! আমরা তো মোহিত হয়ে গেলাম। মনে হয়, পারলে তুমিই কিছু করতে পারবে।”
“বেশ তবে, তোমাদের মেয়ে আনতে আমিই চললাম।”
রওনা দিল ভেন, গ্রাম লাপাজের পথে।
৩
লাপাজ তো বহুদূর। ওকগাছের সারি পেরোতে না পেরোতেই তাকে ঘিরে ধরল তির-ধনুকধারী আদিবাসীর দল। কিন্তু সুরভীময় বাইরেন বাজিয়ে তাদের মাতিয়ে দিল ভেন। তারা গড় হয়ে তাকে প্রণাম করতে থাকল বারবার। আদিবাসী সর্দার তো খুব খুশি হয়ে হেলেদুলে এসে বলল, “তুমি কে গো, রাজপুত্তুর? এ তো সেই ঘুম-দেবতার সুর, সেই যে কিনা অনেকদিন আগে এই অরণ্যে এসে বাঁশি বাজাত। তার ওপর এই সুরে কী সুগন্ধ! আহা!”
ভেন বলল, “আমি তো সেই ঘুম-দেবতারই নাতি ভেন। এপথ দিয়ে চলেছি ফারাং পার হয়ে লাপাজ যাব বলে। কাকাতুয়াদের মেয়েকে আনতে হবে যে।”
সর্দার বলল, “তা আমরা কি তোমার কোন উপকারে আসতে পারি?”
“শুনেছি, ফারাং অতি দুর্গম। লাপাজ যাওয়া নাকি বেশ কঠিন।”
“ঠিকই শুনেছ। ঐ দুর্গম উপত্যকা পেরিয়ে লাপাজ যাওয়া মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। ওপারে যাওয়ার আর কোনও রাস্তাও যে নেই। আমাদের মাঝি মেন ঈগলদের আঁচড় এড়িয়ে তোমাকে ঠিক পার করে দিয়ে আসবে রুং টাং। তোমার ফেরার পথে বাঁশি বাজিয়ে ডেকো কিন্তু। আমরা ঠিক নিতে চলে আসব।”
“ঈগলের ভয় নেই। আমায় শুধু পার করে দাও রুং টাং।”
মাঝি মেন নৌকা টানে। ডিঙি নৌকা এগিয়ে চলে তরতর। ঈগলেরা মোহিত হয়ে ফিরে যায় বাইরেনের সুরভী সুরে। ভেন পৌঁছে গেল পাহাড়ি উপত্যকা ফারাংয়ের সামনে।
৪
ক্লান্ত ভেন আর এগোল না। সে বসে পড়ল মনোরম পাহাড়ি ছায়ায়। আপন মনে বাইরেন বাজাতে শুরু করল সে। মিষ্টি সুগন্ধময় সুর পৌঁছে গেল সবচেয়ে বড়ো পাহাড়ের গুহায় যেখানে একটি বাচ্চা ডাইনোসর মনের সুখে খেলা করছিল তার প্রিয় সাথী ভালুকছানা ভলুর সাথে। ভলু বলল, “আগে যাস না রে! কে এসেছে বল তো?”
ডাইনো বলল, “আরে, গিয়েই দেখি না রে।”
ভলু ডাক দিল, “যাস না। মনে হয়, মানুষ এসেছে রে, মানুষ!”
বাইরেনের অপূর্ব সুরে আনন্দে নাচতে নাচতে ডাইনো ততক্ষণে এসে পড়েছে ভেনের খুবই কাছে। ভেন তো অবাক। জীবনে সে কখনও ডাইনোসোর দেখেনি। এ এলই বা কোথা থেকে? ডাইনো কে সেকথা জিজ্ঞেস করায় সে বলল, সে একজন ক্লোন শিশু।
“ক্লোন শিশু! সে আবার কী?”
“সে কী! ক্লোন জানো না? ক্লোন মানে যে হুবহু একইরকম দেখতে গো! আমার বাবা যে ডাইনোসোরের ছবি দেখে আমাকে বানিয়েছেন, আমি যে তারই মতন দেখতে।”
“তা সে যাই হোক, তুমি এখানে এলে কী করে?”
“আর বোলো না! শহরের একদল দুষ্টু মানুষ খুঁজে খুঁজে আমার বাবাকে এসে ধরল। আমার বাবা মস্ত বিজ্ঞানী কিনা! তা তাদের আবদার, একটা ডাইনোসোর বানিয়ে দেবেন? নেহাত বাবা কারোর আবদার ফেলতে পারেন না! মানুষগুলোর কথা শুনে কয়েক লক্ষ বছর আগেকার মৃত ডাইনোসরের ডিম ও জীবাশ্ম থেকে বাবা বানিয়েও ফেললেন ক্লোন। সেই হলাম আমি।”
“এ তো আশ্চর্য ব্যাপার! এমনটাও হয় নাকি শহরে?”
“হ্যাঁ গো, হয়। আমার বাবা সব পারেন। তা প্রথমে তো আমার জন্ম হল বাবার গবেষণাঘরে। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন, মানুষগুলোর আসল উদ্দেশ্য আমার চোখে আলো ফেলে সিনেমা বানিয়ে পয়সা কামাবে, তখন তিনি কেঁদেই ফেললেন। আমাকে বড়োই ভালোবেসেছিলেন বাবা। মাত্র বারোদিনই ছিলাম বাবার কাছে। সেই ক’দিন বড়োই যত্ন করেছেন। তারপর আমি লম্বায় পাঁচ ফিট হয়ে যাওয়ায় আমার সুরক্ষার জন্য বাবা এমনিতেই আমায় কোথাও লুকিয়ে রাখার কথা ভাবছিলেন। একদিন খুব ভোর ভোর তিনি আমায় নিয়ে যেই না প্রাতঃভ্রমণে গেলেন বড়ো বড়ো গাছের পাতা চেনাতে ও খাওয়াতে, জঙ্গলে সেইসময় জাদুকরী ডোরিথা বুড়ি ঘুরছিল বোতল হাতে শিশির ভরতে। ব্যস, আমাকে দেখামাত্রই সঙ্গে সঙ্গে সে জাদুছড়িটা টুক করে ঘুরিয়ে দিল আমাদের ওপর। তারপর ভালোমতন জ্ঞান ফিরতে দেখি, আমি কিনা বন্দি ওর চিড়িয়াঘরে! বিজ্ঞানী বাবাকে তো কোথাও দেখলাম না। তবে বুড়ির কালাজাদুও আর আমার ওপর কাজ করল না। আমার যে খুব শক্তি সেটা দুষ্টু বুড়ি জানত না। সেই ভোররাতেই খাঁচা ভেঙে চোঁ চাঁ দৌড় দিয়ে একদম এসে থামলাম এই পার্বত্য এলাকায়। এখানে এসে যখন ছেলেমানুষ আমি বাবার জন্য কেঁদে অস্থির, তখন ভলু এসে আমার সাথে বন্ধুত্ব করল। আমাকে গুহাপথ চেনাল। খেতে দিল। সেই থেকেই তো গুহায় থাকি। শুধু মনখারাপ হয় বাবার জন্য। কতদিন তাকে দেখিনি। তবে এখানে কিন্তু কেউ আমায় নিজে থেকে খুঁজে পাবে না। আর বাবাও তো চেয়েছিলেন, সিনেমার লোকেরা যেন আমাকে খুঁজে না পায়। তাছাড়া সিনেমা বানানোর সময় যে আলো ফেলা হয় তা কী বাচ্চাদের চোখের জন্য ভালো, বলো তো? এমনিতেই ক্লোন শিশু হওয়ায় আমার চোখের পাওয়ারও একটু কম।”
“কিন্তু, কই? তোমার চোখে চশমা তো দেখছি না।”
“আরে, তা দেখবে কী করে! বাবা তো আমাকে জন্মের পরেই স্থায়ী চশমা-লেন্স পরিয়ে দিয়েছিলেন। তা তোমার কথা কিছু বলো। কী সুন্দর বাজাও তুমি! আর, তোমার সুরে তো দারুণ সুগন্ধ! এখানে এলে কী করে? এখানে তো সচরাচর কেউ আসে না।”
একে একে ভেন তাকে খুলে বলল অরণ্যের কাকাতুয়াদের কথা। সে বললো, “এই দুর্গম ফারাং পেরিয়ে লাপাজ গ্রামে যাবার সোজা কোনও উপায় জানো? আর চিড়িয়াখানা নাহয় গেলাম, কিন্তু সেখান থেকে বুড়ির জাদু এড়িয়ে কাকাতুয়াদের মেয়ে অ্যাঞ্জেলকে উদ্ধার করাও সহজ হবে কি?”
“তুমি দেখছি মানুষ বড়োই ভালো। দুষ্টুদের মতন মোটেও নও। কাকাতুয়াদের মেয়ে ফিরিয়ে দিতে চাও যখন, তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। আর, জাদুবুড়ি ডোরিথাটারও খুব জব্দ হওয়া দরকার। ওর জাদুছড়িটা সবার আগে নিয়ে নিও তো! ভাই ভেন, এসো আমার সাথে।”
ডাইনোর পিছু ধরে বড়ো এক পাহাড়ের গুহাপথ ধরে ভেন পৌঁছাল এক অভিনব অরণ্যে। কী বিশাল বিশাল গাছ, জন্তুজানোয়াররাও আকারে কত বড়ো। সবাই কিছু না কিছু কাজে ব্যস্ত। সে ডাইনোর বন্ধু এবং মস্ত অভিযানে যাচ্ছে শুনে এক বৃদ্ধা ব্যাঙ তাকে সস্নেহে উপহার দিল বিশাল এক ব্যাঙের ছাতা। খুশি হয়ে ভেন প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা ডাইনোর পিঠে চেপে, ব্যাঙের ছাতা মাথায় দিয়ে চলতে লাগল লাপাজের দিকে। একে একে সেই অরণ্য এবং আরও কিছু গুহাপথ ও ঝর্না পেরিয়ে শেষমেশ সে এসে পড়ল ফারাং শেষে, গ্রাম লাপাজের মুখে। ডাইনো বলল, “আমি তো আর যাব না, ভেনভাই। আমাকে মানুষেরা ধরে নেয় যদি, বাবা কিন্তু খুব বকবে।”
ভেন বলল, “তুমি চলো তো সাথে। আমি সুর শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব সকল মানুষকে। তাছাড়া তোমার বাবাকেও তো খুঁজে পেতে হবে। বুড়ির বাড়িই বা চেনাবে কে? চলো, শীগগির চলো। এস আমার সাথে।”
৫
ফারাং শেষ হয়ে লাপাজ শুরু হলেও বালুভূমি বিস্তৃত বহুদূর। আসল গ্রামই তো শুরু হয়েছে প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পর। ফাঁকা জায়গা বুঝে কালাজাদুর সুবিধার জন্য এখানেই বাসা বেঁধেছে বুড়ি ডোরিথা। দূরদূরান্ত থেকে রোজ নানান মানুষ এসে রীতিমতন লাইন লাগিয়ে টিকিট কেটে ঘুরে যায় বুড়ির বাসা-সংলগ্ন চিড়িয়াঘর।
জাদুর প্রভাবে চিড়িয়াখানার টিকিটঘরে বসে টাকা গোনে শিয়াল পণ্ডিত। বাকি পশুপ্রাণীরাও নানান কাণ্ডে ব্যস্ত বিভিন্ন খাঁচায়। ডাইনোকে ভেন লুকিয়ে এসেছে চিড়িয়াঘর থেকে একটু দূরে কিছু গাছগাছালির আড়ালে। আর নিজে তো চিড়িয়াঘরে ঢুকে এসব অভিনব ব্যাপার-স্যাপার দেখে রীতিমতন তাজ্জব। আচ্ছা, এমনটাও হয়? কোনও খাঁচায় বাঘে ডিগবাজি খাচ্ছে, কোনোটায় বা সিংহেরা ব্যায়াম করছে! কুমীরগুলো তো বারবার জলে ডুব দিয়ে দারুণ ফোয়ারা তুলছে। ভিড় করে আসা ছোটোবড়ো দর্শকদের তো হাততালি আর হাততালি। ওদিকে জাদুছড়ি হাতে ঘুরতে থাকা ডোরিথা বুড়ির খুশি দ্যাখে কে! তার চোখ যে আসলে সিন্দুকে জমা কত পড়ল, সেদিকে।
তবে চিড়িয়াঘরের সেরা আকর্ষণ গণক-পাখি, এক অপূর্ব সুন্দরী কাকাতুয়া। সে তার সামনে বিছিয়ে রাখা ট্যারট কার্ডগুলোর থেকে টেনে টেনে কার্ড তুলে মানুষজনদের একে একে ভাগ্য পড়ে শোনাচ্ছে। ফলে তার খাঁচার সামনেই ভাগ্যান্বেষী সাধারণ মানুষদের সবথেকে বড়ো লাইন। ভেনের বুঝে নিতে অসুবিধা হল না যে এই কাকাতুয়াই হল হ্যাপি আর জলির মেয়ে অ্যাঞ্জেল। নিজের ভাগ্য পরখ করে নিতে সেও দাঁড়িয়ে পড়ল লাইনে। তার নম্বর আসতেই কাকাতুয়া একে একে তিনটে কার্ড টেনে সেগুলো দেখিয়ে বলল, “এক, শত্রুর নাশ, দুই, নিরীহের মুক্তি, তিন, তোমার রাজযোগ।” বলেই সে মন দিল পরের ব্যক্তির ভাগ্য গণনায়।
এ মুহূর্তে শত্রু বলতে সে বুঝছে একমাত্র ডোরিথাকে। গণনা শুনে সে দারুণ আশাবাদী যে বুড়িকে বোধহয় সে জব্দ করতে পারবে।
ডাইনোকে গিয়ে চিড়িয়াঘরের সব ব্যাপার-স্যাপার খুলে বলল ভেন। কিছুক্ষণ তো বেশ শলাপরামর্শ হল দু’জনের। সেইমতন ডাইনোর পিঠে চেপে দূর থেকে বাইরেন বাজাতে বাজাতে চিড়িয়াঘরের দিকে পা পা করে এগোতে শুরু করল দু’জনে। মানুষকে মাতাল করে দেওয়ার সুর বাজাতেই সুগন্ধে মাত হয়ে গেল চিড়িয়াখানা। সকল দর্শক সুগন্ধীর নেশায় ঝিমোতে থাকল। বুড়ি ডোরিথা হায় হায় করে লাফাতে থাকল। তার ব্যাবসা যে পণ্ড! সে বুঝে উঠতে পারছে না, কোথা থেকে আসে এই সুর ও সুগন্ধ! এদিকে তার জাদুছড়িও যে আর কাজ দিচ্ছে না। তার বশে থাকা সমস্ত পশুপাখিরাও যে খেলা ভুলে সুরের তালে রীতিমতন শুরু করে দিল নাচন।
বাইরেন বাজাতে বাজাতে সাথী ডাইনোকে নিয়ে হাজির হল ভেন। ডাইনোকে দেখে ডোরিথা তো রেগে কাঁই! সে বলল, “আরে, তুই না সেই নতুন জন্তুটা? কত সাধ করে তোকে ধরে আনলাম ব্যাবসাটা বাড়াব বলে! আর, তুই কিনা আমার খাঁচা ভেঙে দুড়দাড় পালালি! সাথে করে আবার এই ছোঁড়াটাকেও এনেছিস? সুগন্ধী ছড়িয়ে তোরা আমার ব্যাবসা বন্ধের মতলব এঁটেছিস? আমার নামও ডোরিথা রে! দ্যাখ, তোদের কী হাল করি! দে, ঐ সুগন্ধীওলা বাজনাটা আমায় দে!”
এই বলে জাদুছড়ি উঁচিয়ে যেই না বুড়ি ভেনকে বশে আনতে গেছে, সুরের মূর্ছনায় টুক করে ছড়ি গেছে খসে। বুড়িও সুগন্ধে বেঁহুশ। ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ছড়িখানা কুড়িয়ে নিল ডাইনো। চমৎকার দেখতে রুপোলি রঙের এই ছড়ি যে তার দারুণ পছন্দ। খেলতে গিয়ে ছড়িও গেল পটাং করে ভেঙে, চিড়িয়াঘরের সব পশুপ্রাণীরাও ডোরিথার জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত হল। ডোরিথার দেহ কুঁকড়ে ছোটো হয়ে কাঁকড়ায় পরিণত হল। ভেন মানা করা সত্ত্বেও ডাইনো এক লাফ লাফিয়ে কাঁকড়াখানা খপ করে ধরে কপ করে গিলে নিল। সব পশুপাখিরাও আনন্দে হই হই করে উঠল। ডাইনোর কৃতিত্বকে সাব্বাস জানাল তারা সকলেই। দর্শক মানুষগুলো তখনও সুর-সুগন্ধে ঝিমিয়ে।
অ্যাঞ্জেলকে মুক্ত করে অরণ্যে ফিরে যাবার কথা বলতেই বাকি জন্তুরাও বলে উঠল, “আমাদেরও সাথে নাও গো, ভেন। বুড়ি সেই যে কবে অরণ্য থেকে ধরে এনে খাঁচায় ভরে দিয়েছিল, সেই থেকে যে বেরোতে পারিনি আজও। রোজ নানান মানুষ এসে আমাদের খেলা দেখে আনন্দ পেয়েছে। সাথে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদেরও নিয়ে এসেছে। আমাদের ছবি তুলেছে আর দেখিয়ে দেখিয়ে বলেছে, এটা হাতি, এটা বাঘ, খেলা দেখাচ্ছে, দ্যাখ দ্যাখ। আর আমরাও যে বুড়ির জাদুবশে খেলাই দেখিয়ে গেছি বহুকাল। ওদের সাথে যদি কেউ এমন করত, ওদের কেমন লাগত বলো তো? আমাদের নিয়ে চলো ভেন, আর যে বন্দী থাকতে মন চায় না।”
ভেনের বড়োই মায়া হল এদের কথা শুনে। খুব খারাপ লাগল এই ভেবে যে বুড়ি ডোরিথা কেবল টাকার লোভে এতগুলো প্রাণীকে আটকে এদের দিয়ে কেবল খেলাই দেখিয়ে গেছে এতকাল। তা তার গ্রাম লাগোয়া অরণ্যটিও বিশাল বটে। সবাই অনায়াসেই সেখানে থাকতে পারে।
সবাইকে সাথে নিয়ে চিড়িয়াখানা খালি করে বাইরেন বাজাতে বাজাতে বন-গাঁয়ের ছেলে ভেন যখন ফিরে যাবার পথ ধরল, তখনই ডাইনো আবিষ্কার করল টিকিটঘরের কোনায় বসে দারোয়ানের ময়লা পোশাক পরে ঝিমোচ্ছে যে মানুষটা সে আর কেউ নয়, তার নিরীহ ভালোমানুষ বিজ্ঞানী বাবা। চোখে মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানো হল তার।
সব শুনে তিনি বললেন, “ডাইনো তো ওর জন্মের পরের সবকথা জানে না। সে যখন সবেমাত্র দু’ইঞ্চির ক্লোন-শিশু তখনই তাকে ব্যাগে পুরে প্লেনে করে পালাচ্ছিলাম আমেরিকা ছেড়ে, যাতে সিনেমার লোকগুলো আমার এই ছোট্ট ছেলের কোনও হদিশ না পায়। কিন্তু ঝড়ের কারণে দিক বদলে প্লেন যেই না এই গ্রাম লাপাজের ওপর দিয়ে যেতে শুরু করল, প্লেনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল জাদুবুড়ির। বুড়ির বেশ লোভ হল অত বড়ো প্লেনটাকে হাতানোর। তাই সে জাদুছড়ি উঁচিয়ে বিকল করে দিল প্লেন। দুই ইঞ্চির ছেলেকে পকেটে নিয়ে প্যারাসুট করে নেমে এসেছিলাম সেদিন এই গ্রামে। একদিন ছেলে ডাইনোর সাথে যেই না বেরিয়েছি তাকে অরণ্যের গাছপাতা চেনাতে, তখনই বুড়ি জাদু করে ধরে আনল আমাদের। ছেলে তো দৌড়ে পালাল খাঁচা ভেঙে, রাগে আমায় দারোয়ান বানিয়ে বুড়ি রেখে দিল এই চিড়িয়াঘরে। এছাড়া আমার কাজকর্মে বুদ্ধির ছাপ দেখে আমার কাছে পরামর্শও নিত সে মাঝেমধ্যে। পশুপাখিদের দিয়ে আর কী কী খেলা দেখালে তার আরও পয়সা হবে ইত্যাদি। আমিও জাদুর প্রভাবে থাকায় পালাতে পারিনি বুড়ির ফাঁদ থেকে।”
“বুড়িটাকে দিয়েছি হজম করে। আমার বাবাকে দিয়ে দারোয়ানগিরি করানো? সে আর নেই, বাবা। তুমি চলো আমাদের সাথে।”
বিজ্ঞানীকেও সাথে নিয়ে সবাই তখন চিড়িয়াঘর ছেড়ে রাস্তায়। হঠাৎ এক সত্তোরোর্দ্ধ দাড়িগোঁফওলা মানুষ, বোঁটকা গন্ধসহ দৌড়ে এল। মানুষটা ভেনকে জড়িয়ে ধরল আকুলভাবে। “তুমি এসেছ, দাদা! আমি জানতাম তুমি আসবেই। ধ্যানে বসে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে তোমায় স্বপ্নে ডাকার চেষ্টা করেছি কত। এছাড়া যে আমার আর উপায় ছিল না।”
আশ্চর্য হয়ে গেল ভেন। অস্ফুটে সে বলল, “দাদু?”
“হ্যাঁ, দাদা! আমি বেঁচে আছি। সোফিয়াগাছের ফুলের রহস্য খুব কম জনই জানত। তোমার তখন বয়স দুই। আমি গেছিলাম ঝরনার পাশে পাহাড় বেয়ে বয়ে আসা লতানে গাছ সোফিয়া থেকে ফুলের নির্যাস আনতে। সেই নির্যাস নিয়ে ফেরার পথে আমাকে হতে হল জাদুবুড়ির মুখোমুখি। সে তার কালাজাদুর কাজে ব্যবহারের জন্য সেই মাদকীয় নির্যাস কেড়ে নিতে চাইল এবং তা বাঁচাতে আকাশ-বেলুনে চেপে আমি উড়ে পালালাম পাহাড়ের চুড়োয়। রেগে গিয়ে বুড়ি জাদুবলে ডেকে আনল আচমকা ঝড়। বুড়ির হাত থেকে বাঁচতে আকাশ-বেলুন ও ফুলের নির্যাস ফেলে দিলাম খাদে। আমি লুকিয়ে রইলাম গুহায়। ক্ষেপে গিয়ে বুড়ি আমার কান ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে এল তার চিড়িয়াঘরে। ফুলের নির্যাস না পাওয়ার প্রতিশোধ নিতে এত বছর ধরে সে আমাকে দিয়ে পশুপাখিদের মলমূত্র পরিষ্কার করিয়েছে। আর সিংহের খাঁচায় বোঁটকা গন্ধের মধ্যে শুতে দিয়েছে। সেই থেকে লুকিয়ে ধ্যান অভ্যাস করছি বহুকাল। অবশেষে পেরেছি তোমাকে স্বপ্নে ডাকতে। আমাকে নিয়ে চলো, দাদুভাই।”
দাদুর এই দশা দেখে চোখে জল চলে এল ভেনের। ঠাকুমা কি খুশিই না হবে এত বছর পর দাদুকে ফিরে পেলে। সবাইকে নিয়ে বাইরেন বাজিয়ে সে চলল তার ফেলে আসা পথে।
৬
সুরের মূর্ছনায় ভেসে গেল অরণ্যপথ। মেয়ের আসার পথে আশায় ডুবেছিল দুই পাখি-মন। ভালোবাসার সুর ও সুগন্ধে ধুয়ে গেল কষ্টবোধ। লেজ উঁচিয়ে পাখিদুটো গেয়ে উঠল হাসির গান। একমাত্র মেয়ে অ্যাঞ্জেলকে ফিরে পেয়ে তাদের খুশির নাম অন্তহীন।
আর অন্যদিকে? এত বছর পর দাদুকে দেখে, মানুষটাকে ফিরে পেয়ে ঠাকুমার যে হাপুস কান্না, হয়তো তা থামার ছিল না কিছুদিন। তবুও সুর শুনতে শুনতে শান্ত হয়ে যায়, মানুষদুটোর আজ সাথে সাথ।
ডাইনো বলল, সাথী ভলুকে ছেড়ে সে কোথাও যাবে না। সবার মিলোনৎসব শেষে বিজ্ঞানী বাবাকে নিয়ে সে ফিরে গেল ফারাং-এর গুহায়।
অ্যাঞ্জেলের করা ভবিষ্যৎবাণীও মিলে গেল! সকল পশুপাখির শখে ভেন হল পাহাড়-অরণ্যের নতুন রাজা। দাদু আর সে নতুন সুগন্ধী বানায় রোজ। সেসব দিয়ে চমৎকার বাইরেন বাজায় ভেন। সমস্ত প্রাণীরা আনন্দে নাচতে নাচতে একসময় মোহিত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পাহাড়-অরণ্য জুড়ে ম ম করে শান্তির সুবাস।
বহুদিন পর এমন সাবলীল রূপকথা পড়ে চুপ থাকতে পারলাম না, সিন্থিয়া। স্নিগ্ধ গন্ধমাখা অপূর্ব রচনা।
LikeLike
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়লাম।অসাধারণ লেখনী।অপূর্ব একটি রূপকথার গল্প।প্রশংসা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
LikeLike
খুব ভালো লেখা, আপনার লেখার ডালি আরও প্রসারিত হউক।
LikeLike
Bhishon bhalo laglo, eto din por shishu shahityer eminent shundor srishti porte pere shotti bhalo laglo.
LikeLike
অসাধারন
LikeLike
oonek din por aaktu aalada rokom golpo pore valo laaglo . aakrokm golpo shob shomay valo laage naa tai aaktu oony rokom golpo khub valo laaglo r porte giya odhoirjo laaglo naa . so this story was awsome …
LikeLike
It’s realy a good story .. and also interesting.Keep it up and create more story like this one.
LikeLike
Anek din pare abar rupkathar golpo porlam mone holo
LikeLike
ভালো, অনেকদিন পর ছোটদের গল্প পড়লাম , ছেলেবেলায় রূপকথার গল্প পড়তাম ,মায়ের কাছে ঘুম জড়ানো চোখে শুনতাম আর ঘুমের দেশে হারিয়ে যেতাম এ এক নস্টালজিক অনুভূতি .ছেলেবেলার দিনগুলো কিছুক্ষনের জন্যে মনে পরে গেল. ধন্যবাদ .
LikeLike
অনেকদিন পর আবার ফিরে পেলাম সেই ছেলেবেলা।স্বপ্নের রূপকথার দেশ,মিষ্টি সুরভি মেশানো মন ভালো করা কাহিনী।লেখিকার কাছে আবেদন এই রকম লেখা যেন ফিরে ফিরে আসে আমাদের কাছে।ভালোবাসা নিরন্তর।
LikeLike
Lekhika phiriye dilo sei chelebela ja somoyer abhab e hariye phelechi jibon juddhe.Asadharon sabolil lekha ,mon chuye gelo.Asha rakhi ei rokom lekha ro pabo lekhikar theke.
LikeLike